হোমিনোইডিয়া
Hominoidea

প্রাইমেট বর্গের প্রাণীর একটি উর্ধ্বগোত্র বিশেষ। ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ করেন ব্রিটিশ প্রাণিবিজ্ঞানী গ্রে  এই ঊর্ধ্বগোত্রের নামকরণ করেন। সাধারণত এই ঊর্ধ্বগোত্রের প্রাণীকুলকে এপ জাতীয় প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

উল্লেখ্য, প্রাচীন ইংরেজিতে এপ শব্দটি দিয়ে বুঝানো হতো -লেজ বিহীন এবং মানুষ নয় এমন প্রাইমেট। এই বিচারে এক সময় শুধু বেবুনকে এপ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। পরবর্তী সময়ে লেজবিহীন  macaque-এর দুটি প্রজাতিকে এপ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
 

বৃহৎ এপ-এর ভিতরে গরিলা এবং মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সকল এপই প্রধানত বৃক্ষচারী। এরা মূলত সর্বভুক। এদের প্রধান খাদ্য গাছের ফল জাতীয় খাবার, ঘাস বা এই জাতীয় উদ্ভিদের বীজ। কিন্তু প্রয়োজন সাপেক্ষে এরা মাংস খেয়ে থাকে। মাংসের জন্য এপরা ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে থাকে। ওরাংওটাং ছাড়া এদের সকলেরই আদি বাসস্থান আফ্রিকা। বৃহৎ এপদের ভিতরে একমাত্র মানুষই তাদের আদি বাসস্থান থেকে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

হোমিনোইডিয়া ঊর্ধবগোত্রে শ্রেণিবিন্যাসের ক্রতমবিবর্তন
 

লিনিয়াসের শ্রেণিবিভাজনের সময় (১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত Hominoidea অধিগোত্রের বিভাজন-বিন্যাস

জীববিজ্ঞানীরা  প্রাণিকূলের শ্রেণি বিভাজনের ক্ষেত্রে বারবার মত পরিবর্তন করেছেন। সেই সূত্রে এপ বা এর সাথে সম্পর্কিত প্রাণীর শ্রেণিবিভাজনেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।  লিনিয়াসের শ্রেণিবিভাজনের সময় (১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত Hominoidea ঊর্ধ্বগোত্রকে দুটি গোত্রে বিভাজিত করা হয়েছিল। এই  গোত্র দুটি ছিল হোমিনিডি ও  Pongidae (এই গোত্রটিকে পরে বাতিল করা হয়েছে)। এক্ষেত্রে হোমিনিডি গোত্রের অধীনে রাখা হয়েছিল এক মাত্র গণ রাখা হয়েছিল হোমো। অন্যদিকে  Pongidae গোত্রের অধীনে রাখা হয়েছিল চারটি গণ। এই গণগুলো হলো- Pan, Gorilla, Pongo এবং Hylobates

 

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে Goodman -এর  Hominoidea অধিগোত্রের বিভাজন

১৯৬০ ি পরে গবেষণার সূত্রে জীববিজ্ঞানের শ্রেণি বিভাজন নতুন রূপ লাভ করেছিল। উন্নতর যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনের কারণে শ্রেণিকরণে সূক্ষবিচার করা সম্ভব হয়ে উঠেছিল। এই বিচারে দেখা গেলো গিবোনের ঠিক  গরিলা বা  শিম্পাঞ্জিদের মতো নয়। তাই ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে Goodman  বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে হোমিনোইডিয়া ঊর্ধগোত্রকে তিনটি গোত্রে বিভাজনের প্রস্তাব করেন। এক্ষেত্রে গিবনদের জন্য পৃথক গোত্র তৈরি করা হলো। এই গোত্রের নামকরণ করা হয়েছিল Hylobatidae। ফলে আগের  Hylobates গণটি স্থান পেলো এই নতুন গোত্রের অধীনে।

 

 ১৯৭৪ সালে M. Goodman -এর প্রস্তাবিত শ্রেণিবিভাজন

কিন্তু এই ধারণাও বেশিদিন কার্যকরী রইল না। বিজ্ঞানীরা হোমো, গরিলা, প্যান, পোঙ্গো গণের প্রকৃতি বিচার করে দেখলেন, এদের কিছু প্রজাতির ভিতর সুষ্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই কারণে  ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে M. Goodman একটি নূতন প্রস্তাব উপস্থাপন করলেন এই বিষয়ে। এই বিন্যাসে হাইলোবাটাইডি গোত্রের ভিতরে গিবোনেদের জন্য Hylobates গণ রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাসে হোমিনিডি  গোত্রকে দুটি উপগোত্রে ভাগ করা হয়েছিল।  এই উপগোত্র দুটির নাম রাখা হয়েছিল  হোমিনিনাই ও  Ponginae এর ভিতরে Ponginae উপগোত্রের অধীনে রাখা হলো Pongo গণ। অন্যদিকে  হোমিনিনাই উপগোত্রের ভিতর রাখা হলো  হোমো (Homo), প্যান (Pan) এবং গোরিল্লা (Gorilla) গণ।

 

এরপর বিজ্ঞানীরা প্যান এবং  গোরিল্লা -র  সাদৃশ্য দেখে  হোমিনিনাই উপগোত্রকে দুটি গোষ্ঠীতে (tribe) ভাগ করলেন। এই গোষ্ঠী দুটির নামকরণ করা হলোহোমিনিনি  ও  গোরিল্লিনি (Gorillini)। এর ভিতরে হোমিনিনি গোষ্ঠীর অধীনে রাখা হলো হোমো গণ, আর গোরিল্লিনি গোষ্ঠীর ভিতরে রাখা হলো প্যান এবং Gorilla গণ।  উল্লেখ্য এই বিভাজন থেকেই মানুষকে গরিলা নামক প্রাণীদেরকে দূরের জ্ঞাতি হিসাবে নির্দেশিত করা হয়েছিল।
 

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে M. Goodman  এবং অন্যান্য প্রাণিবিজ্ঞানীদের নবতর শ্রেণিবিন্যাস

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেল হোমো গণের সাথে প্যান গণের যতটা গভীর মিল রয়েছে, ততটা মিল গোরিল্লা গণের সাথে নেই। তাই  M. Goodman  এবং অন্যান্য প্রাণিবিজ্ঞানীরা আগের বিন্যাসে একটু পরিবর্তন করে  গোরিল্লা গণকে পৃথকভাবে রেখে হোমিনিনি গোষ্ঠীর ভিতরে প্যান গণকে টেনে আনলেন। ফলে হোমিনিনি গোষ্ঠীর সদস্য হলো হোমো এবং প্যান আরও বিস্তারিত গবেষণার সূত্রে দেখা গেল হোমিনোইডিয়া ঊর্ধ্বগোত্রের অধীনস্ত মানুষ, গরিলা  এবং শিম্পাঞ্জি'র মধ্যে অনেক মিল। এই প্রস্তাব মতে-   এই শ্রেণিবিভাজনে গোরিল্লিনি গোষ্ঠীর অধীনে রাখা হলো গোরিল্লা গণ। আর হোমিনিনি গোষ্ঠীর অধীনে রাখা হলো হোমো এবং প্যান গণ।


২০০৫ সালের দিকে এসে চূড়ান্তভাবে হোমিনোইডিয়া ঊর্ধবগোত্রের বিবর্তনের ধারা ও প্রকৃতি অনুসারে যে বিভাজন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা হলো-

 


সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Hominoidea