গোরিলা, গরিলা
Gorilla

হোমিনোইডিয়া ঊর্ধ্বগো নে হোমিনিডি গোত্রের অন্তর্গত একটি গণ।  মার্কিন চিকিৎসক এবং মিশানরি Thomas Staughton Savage এবং প্রকৃতিবিদ  Jeffries Wyman প্রথম পশ্চিমাঞ্চলীয় গরিলা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন Troglodytes gorilla। তাঁরা গরিলা নামটি গ্রহণ করেছিলে গ্রিক Γόριλλαι (Gorillai) থেকে। এর অর্থ ছিল 'লোমশ নারীর গোত্র'। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে I. Geoffroy গরিলা নামক গণের প্রস্তাব করেন এবং বর্তমানে এই নামেই এই গণকে অভিহিত করা হয়।

এদের ডিএনএ-এর সাথে মানুষের ডিএনএ-এর ৯৫-৯৯% মিল আছে। এই কারণে বোনোবো এবং সাধারণ শিম্পাঞ্জির মতো গরিলাকে মানুষের নিকট আত্মীয় বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাসের বিচারে গরিলা মানুষের দূরের জ্ঞাতি।

১ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাইমেট বর্গের হোমিনোইডিয়া ঊর্ধগোত্র তথা এপরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো- হোমিনিডি হাইলোবাটাইডি। আর হোমিনিডি গোত্র থেকে হোমিনিনাই উপগোত্রের উদ্ভব হয়েছিল ১.৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।

প্রায় ১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে,
হোমিনিনাই উপগোত্র থেকে গোরিল্লিনি গোষ্ঠী পৃথক হয়ে যায়। এই গোষ্ঠীর আদিম প্রজাতিকে Chororapithecus abyssinicus আদিম গোরিলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হোমিনিনাই উপগোত্রের অবশিষ্টাংশ ৭২-৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ২টি গোষ্ঠীতে বিভাজিত হয়ে যায়। এই গোষ্ঠী দুটি হলো- হোমিনিনি এবং গ্রাসিয়োপিথেকিনি

০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসাবে পার্বত্য গরিলার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। এই বিভাজনের মধ্য দিয়ে, এই গরিলা তাঁর নিকটতম জ্ঞাতি শিম্পাঞ্জিএবং মানুষ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল।

৪ লক্ষ বৎসর আগে 'পার্বত্য গরিলা' থেকে 'পূর্বাঞ্চলীয় নিম্ন-ভূমির গরিলা' পৃথক হয়ে গিয়েছিল। আর প্রায় ২ লক্ষ বৎসর আগে পশ্চিমা গরিলা (G. gorilla) পৃথক হয়ে গিয়েছিল।

M. Goodman  এবং অন্যান্য প্রাণিবিজ্ঞানীদের নবতর শ্রেণিবিন্যাস

ক্রমবিবর্তনের ধারায় গরিলা নামক প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছিল আফ্রিকায় এবং প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে নাই। বর্তমানে এরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা আধা-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাস করে। গরিলার প্রজাতি এবং উপজাতিগুলো আফ্রিকার যে সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। পশ্চিমা গরিলাদের দেখা যায় মধ্য আফ্রিকার এ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, গায়না এবং গ্যাবন বনাঞ্চলে। পূর্বাঞ্চলীয় গরিলা পাওয়া যায় আফ্রিকার ভার্জিনিয়া আগ্নেয় পর্বতমালার বনাঞ্চল, কঙ্গো'র (গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) বনভূমি, কাহুযি-বিয়েগা (Kahuzi-Biega) এবং মাইকো জাতীয় উদ্যান এবং তৎসংলগ্ন টায়না গরিলা সংরক্ষিত (Tayna Gorilla Reserve) বনভূমি ও উসালা বনে অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়।

Gorilla গণের প্রজাতিগুলো মূলত প্রাইমেট হিসাবে সুপরিচিত। এরা স্থলচর এবং প্রধানত উদ্ভিদভোজী। গাছের পাতা, ফল, কচি বাঁশ ইত্যাদি প্রধান খাদ্য। তবে মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ শ্রেণীর ছোট ছোট প্রাণী খায়।

পুরুষ গরিলার  উচ্চতা, ওজন, দৈহিক শক্তি ইত্যদি স্ত্রী গরিলার চেয়ে অনেক বেশি।
পুরুষ গরিলার গড় ওজন প্রায় ১৬০-২০০ কেজি। স্ত্রী গরিলার ওজন ৮০-১০০ কেজি। সটান দাঁড়ানো অবস্থায় পুরুষ গরিলা লম্বায় প্রায় ৬ ফুট আর স্ত্রী গরিলা লম্বায় ৫.৩ ইঞ্চি হয়।

এর মূলত উদ্ভিদভোজী। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গাছের পাতা খায়। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে এদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া। কোনো গাছেরই সকল পাতা খেয়ে শেষ করে গাছটিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় না। কোনো সুনির্দিষ্ট গাছের কিছু পাতা খেয়ে ত্যাগ করে। ফল ছাড়া এরা খায় ফল, বীজ, কচি বাঁশ। এছাড়া কখনো কখনো পতঙ্গ বা সরীসৃপ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণী আহার করে।

এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। এক একটি দলে ৫-৩০টি পর্যন্ত সদস্য দেখা যায়। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি শক্তিশালী পুরুষ গরিলা। নেতা দলের সদস্যদের খাদ্য, বাসস্থানের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন ভাবে, তেমনি শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে। প্রতিটি নেতার অধীনে ৪-৫টি স্ত্রী গরিলা যৌনসঙ্গিনী হিসাবে থাকে। দলের ভিতরে পুরুষ শাবকরা যখন প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়, তখন তারা নিজেদের জন্য যৌন সঙ্গিনী সংগ্রহ করে এবং ধীরে নিজেদের একটি দল গঠন করে। এক্ষেত্রে বিষয়টি দলের ভিতর থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে ঘটে থাকে।

স্ত্রী গরিলা ১০-১১ বৎসর বয়সে সন্তানধারণ ক্ষমতা লাভ করে। সাড়ে আট মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গরিলা ১ট বা দুটি শাবক প্রসব করে। প্রায় ১ বছর পর্যন্ত শাবক মাতৃদুগ্ধ পান করে। ৯ সপ্তাহ বয়সে এরা হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করে এবং চার হাত-পায়ে বা দুই পায়ে হাটা শিখতে সময় লাগে ৩৫ সপ্তাহ। শাবকগুলো ৩-৪ বৎসর মায়ের সাথে সাথে ঘুরে।

গরিলা গণের প্রজাতিগুলোকে প্রাথমিকভাবে দুটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়। এই প্রজাতি দুটি হলো Gorilla gorilla, Gorilla beringei। বর্তমানে প্রতিটি প্রজাতিকে আরও দুটি উপ-প্রজাতিকে ভাগ করা হয়। নিচে এর প্রজাতিগত তালিকা তুলে ধরা হল।


সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/