ইউক্যারিয়োটা
Eukaryota

সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষভিত্তিক জীবজগতের আদি তিনটি জীব-স্বক্ষেত্রের একটি। গ্রিক εὖ  (Eu উত্তম বা যথার্থ) এবং κάρυον  (karyon শাঁস) এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের  ফরাসি বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড চ্যাট্ন (Édouard Chatton, 1883-1947) এই স্বক্ষেত্রের নামকরণ করেছিলেন। এই জীব-স্বক্ষেত্রে সকল জীবের কোষে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস এবং ঝিল্লী-আবদ্ধ অর্গানেল থাকে। এর মাধ্যমে এটি প্রোক্যারিয়োটা (ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া) থেকে স্বতন্ত্র জীব-স্বক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

ইউক্যারিয়োটা কোষের বৈশিষ্ট্য হৃয়াসিয়ান অধিযুগে (২৩০-২০০.৫ কোটি খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ) হুরোনিয়ান বরফযুগের শেষের দিকে, ২১০-১৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি জীবকণিকাগুলোর একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ যুক্ত জীবে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, ২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবির্ভূত গ্রাইপেনিয়া  
(Grypania) নামক শৈবালের জীবাশ্মে এই জাতীয় কোষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কিছু গবেষণায় বলা হয় এটি প্রোক্যারিয়োট (যেমন সায়ানোব্যাকটেরিয়া) হতে পারে, যদিও অধিকাংশের মতে এটিকে ইউক্যারিয়োট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
 
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদরা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৭০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন কিছু পাথরের গায়ে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ পেয়েছিলেন। এই তেলের ভিতর ছিল স্টেরোয়েড এ্যালকোহল। যেহেতু এই এ্যালেকোহল-যুক্ত ফ্যাটি এ্যাসিড একমাত্র নিউক্লিয়াস- যুক্ত কোষে ওয়া যায়।

১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পিলবারা ক্র্যাটনে প্রায় ২৭০ কোটি বছরের পুরোনো শিলায় স্টেরেন নামক বায়োমার্কার পাওয়া গিয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল যে, ইউক্যারিয়োটিক কোষের উদ্ভব ২৭০ কোটি বছর আগেই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় (২০০৮০-২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) প্রমাণিত হয় যে, এই স্টেরেনগুলো আধুনিক তেলের দূষণ থেকে এসেছিল। ফলে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই প্রমাণ প্রত্যাখ্যান করেন। বর্তমানে সর্বাধিক গৃহীত সময়রেখা হলো: প্রায় ২১০-১৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে আদি প্রোক্যারিয়োটিক কোষের একটি শাখা বিবর্তিত হয়ে সু-প্রাণকেন্দ্রীয় (ইউক্যারিয়োটিক) কোষে পরিণত হয়।

এই সময়ের মধ্যেই মাইটোকন্ড্রিয়া, গোল্‌গি বস্তু এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ইত্যাদি অর্গানেলও একই সময়ের মধ্যে (বা কিছুটা পরে) উদ্ভূত বা পরিপূর্ণতা লাভ করে।

আদি ;সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল- অজ্ঞাত কোনো প্রজাতি। এই প্রজাতি থেকে ১৯০-১৭০ কোটি খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে  উদ্ভব হয়েছিল প্রভোরা থাকের শিকারী প্রজাতি।  এবং  এই প্রজাতি থেকে প্রায় ১৮৫-১৬৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে উদ্ভব হয়
LECA (Last Eukaryotic Common Ancestor) নামক একটি সম্পূর্ণ আধুনিক ধরনের ইউক্যারিয়োটিক এককোষী জীব। এই LECA -র কোষে ইতিমধ্যেই ছিল নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, লাইসোসোম, সাইটোস্কেলেটন, ফ্ল্যাজেলা (৯+২ গঠন), এমনকি যৌন প্রজননের (মেইওসিস) ক্ষমতাও।

এই ঘটনা ঘটেছিল ওরোসিরিয়ান অধিযুগ ১৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউক্যারিয়েটা জীবকণিকাগুলো পরিবেশের সাথে অভিযোজনের সূত্রে, সাগর জলের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করেছিল। এই সময়ে প্রজননের ক্ষেত্রে যৌন ও অযৌন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। ফলে এদের দেহের সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ গুলো জটিলতর হয়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়- যৌন প্রজনন শুরু হয়েছিল ১২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। স্বাভাবিকভাবেই আকারের বিচারে প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষের চেয়ে এই কোষগুলো অনেক বড় আকার লাভ করেছিল। এ সকল কোষের প্রাণকেন্দ্রের বাইরে দুই স্তরের আবরণী পর্দার উদ্ভব হয়েছিল।

এই সময়ে সাগরজলে ভাসমান ইউক্যারিয়োটা স্বক্ষেত্রের জীবকুলের কিছু কিছু প্রজাতি জন্য চলাচল, পরিবেশগত সঙ্কেত গ্রহণ এবং খাদ্যকে আকর্ষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই সূত্রে এদের দেহে ফ্ল্যাজেলা তৈরির ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত ফ্লাজেলা হলো এক ধরনের সূত্রাকার প্রোটোপ্লাজমীয় অঙ্গ। ব্যাক্টেরিয়ার-সহ কিছু এককোষী জীবের দেহের কোষপ্রাচীর ভেদ করে ফ্লাজেলার উদ্ভব হয়েছিল। যে সকল জীবের দেহে  কোনো ফ্ল্যাজেলার উদ্ভব ঘটলো না, তারা চলাচল করতে না পেরে জলস্রোতের সাথে ভেসে বেড়াত। কোনো কোনো ফ্লাজেলাবিহীন জীব দেহকে গড়িয়ে চলাচলা করা শিখেছিল।

ক্যালিম্মিয়ান অধিযুগের (১৬০-১৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) শুরুর দিকে নিউক্লয়াসযুক্ত জটিল কোষযুক্ত জীবের আবির্ভাব ঘটে। এদের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিল বহু ইউক্যারিয়েটিক এককোষী প্রজাতি।  নানাবিধ পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে ইউক্যারিয়োটা স্বক্ষেত্রের আদিম জীবগুলো নানা বৈশিষট্যের প্রজাতিতে পরিণত হয়েছিল। আদিম
LECA (সর্বশেষ ইউক্যারিয়োটিক সাধারণ পূর্বপুরুষ)-দের অস্তিত্বকাল ছিল ১৮০০-১৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এর ছোট লেজের সাহায্যে সাগর জলে ভিসে বেড়াতো। প্রথম দিকে এদের একটি লেজ ছিল। বিবর্তনের সূত্রে এদের কিছু কিছু প্রজাতির লেজ সংখ্যা দুটি হয়েছিল।  ঘটনাটি ঘটেছিল ১৪০-১২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এই সূত্রে ইউক্যারিয়োটা স্বক্ষেত্রের জীবকুল দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। ভূতাত্তিক কালবিভাজনের বিচারে এই বিভাজন ঘটেছিল এক্টাসিয়ান  ও স্টেনিয়ান  যুগের সন্ধিক্ষণে বা স্টেনিয়ানের শুরুর দিকে (মেসোপ্রোটেরোজোয়িক যুগের মাঝামাঝি সময়)। প্রথমাবস্থায় বিজ্ঞানীরা এই ভাগের নাম দিয়েছিলেন