মাইটোকন্ড্রিয়া
Mitochondria
এক প্রকার কোষীয় অঙ্গাণু বিশেষ। এই অঙ্গাণু পাওয়া যায়
সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ
(Eukaryotic cell)
-এ।
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিষ্কারক নিয়ে মতভেদ আছে।
কারো কারো মতে- বিজ্ঞানী অল্টম্যান ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার
করেন। অন্যমতে গ্রিক বিজ্ঞানী সি.বেন্ডা ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মাইটোকন্ড্রিয়া
আবিষ্কার করেন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদরা
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৭০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন কিছু পাথরের
গায়ে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ পেয়েছিলেন। এই তেলের ভিতর ছিল
স্টেরোয়েড এ্যালকোহল। যেহেতু এই এ্যালেকোহল-যুক্ত
ফ্যাটি এ্যাসিড একমাত্র
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষে
পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা যায়— নিউক্লিয়াসযুক্ত
জীবকোষের উদ্ভব
হয়েছিল
২৫০-১৬০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে,
বিবর্তনের প্রাথমিক স্তরে
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষের
সূত্রে জীবজগতের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এদের কোষে ছিল
মাইটোকন্ড্রিয়া,
গোল্গি বস্তু।
এই বিচারে ধারণা করা হয়,
২৫০-১৬০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে
মাইটোকন্ড্রিয়া এবং
গোল্গি বস্তু
যুক্ত হয়েছিল। কোষের
সাইটোপ্লাজমে ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া যায়। এর বর্ণ ধূসর। কোষের সকল জৈবিক
কার্যাবলী সম্পাদনের জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি মাইটোকন্ড্রিয়া উৎপন্ন করে। কোষভেদে
এটি দণ্ডাকার, গোলাকার বা সুত্রাকার হতে পারে। এরূপ আকারের কারণে মাইটোকন্ড্রিয়া
বিভিন্ন পরিমাপে পাওয়া যায়। যেমন-
- দণ্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়া দৈর্ঘ্য ৯ মাইক্রন, প্রস্থ ০.৫ মাইক্রন
- গোলাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২-২ মাইক্রন বা সামান্য বেশি
- সূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়া দৈর্ঘ্য ৪০ মাইক্রন
প্রতিটি কোষে এদের সংখ্যা ২০০ থেকে
৪০০টি থাকে। এগুলো কোষের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। একটি আদর্শ মাইটোকন্ড্রিয়ার কতকগুলো অংশের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। এগুলো হলো-
-
আবরণী:
প্রতিটি মাইটোকণ্ডিয়ার দেহ লিপোপ্রোটিন নির্মিত দুই স্তর বিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে
ঘেরা থাকে। এই দুই স্তরের মাঝখানের ফাঁকাস্থানকে বলা হয় বহিঃস্থ কক্ষ বা
আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেনকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ বা
ম্যাট্রিক্স। এদের বাইরের স্তরটি মসৃণ এবং প্রায় সমান। কিন্তু এর ভিতরের স্তরটি
কেন্দ্রের দিকে ভাজ সৃষ্টি করে। ভেতরের দিকের এ ভাঁজগুলোকে বলা হয় ক্রিষ্টি।
ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে
ATP-Synthesis নামক গোলাকার বস্তু
আছে। এডেসিন ট্রাইফসফেট
ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া থাকে অনেক
ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম
(ETS)
থাকে। উল্লেখ্য, পুর্বে এদের একসাথে
অক্সিজোম নামে অভিহিত করা হতো।
মাইটোকন্ড্রিয়ায় ৬০-৭০% প্রোটিন, ২৫-৩৫%
লিপিড, ০.৫% আরএনএ এবং সামান্য পরিমাণ
ডিএনএ থাকে। একে বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ। এছাড়া
মাইটোকণ্ডিয়াতে এনজাইম সংশ্লেষের জন্যে
70S
রাইবোজোম পাওয়া যায়।
মাইটোকণ্ড্রিয়ার কাজ
- কোষের সমস্ত কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা।
- শ্বসনের জন্যে প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করা। একই সাথে
শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ
ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।
- নিজস্ব
ডিএনএ ও
আরএনএ তৈরি করা।
- স্নেহ-বিপাকে সাহায্য করা।