অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ
ইংরেজি Australia
দক্ষিণ প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্রতম মহাদেশ ।
এই মহাদেশের ভিতর রয়েছে, অস্ট্রেলিয়া নামক মূল ভূখণ্ড, তাসমানিয়া, নিউগিনি, আরু
দ্বীপপুঞ্জ, রাজা আম্পাট দ্বীপপুঞ্জ, নিউজিল্যান্ড। এর দক্ষিণে ভারত মহাসাগর,
পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর ও তাসমান সাগর। এর মোট আয়তন ৮৫, ৪৭,০০০ বর্গকিলোমিটার।
১০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে ৪৪ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ১১৩ ডিগ্রি পূর্ব
দ্রাঘিমা থেকে ১৫৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাদেশের প্রায় মধ্যভাগ
দিয়ে মকরক্রান্তি রেখা গিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ক্রমবিবর্তন
৩৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
পিল্বারা ক্র্যাটন
সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই মহাদেশের পত্তন ঘটেছিল।
বর্তমানে এই ক্র্যাটনটি বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে
অবস্থিত। পিল্বারা ক্র্যাটনটি, এই সময়ে
কাপ্ভাল ক্র্যাটনের
সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবীর প্রথম
মহা-মহাদেশ
ভাল্বারা উৎপত্তি হয়।
৩৫০-৩২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ভাল্বারা
মহা-মহাদেশের পিলবারা অঞ্চলের রুক্ষ প্রান্তরে হঠাৎ
চারটি কার্বন-সমৃদ্ধ গ্রহাণু আঘাত হেনেছিল। এর ফলে বিপুল উত্তাপ এবং ধুলোবালি বায়ুমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল নানা ধরনের গ্যাসীয় উপকরণ।
ইতিমধ্যে
৩২০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
ভারতের পশ্চিম
কর্ণাটক ক্র্যাটন এবং
সিংভূম ক্র্যাটন
বা উড়িষ্যা ক্র্যাটন যুক্ত হয়ে একটি অখণ্ড ভূখণ্ড তৈরি
হয়েছিল। ৩০০ কোটি পূর্বাব্দে এই
ক্র্যাটন
দুটি সুস্থির দশায় পৌঁছেছিল। এর ফলে
উর মহাদেশের
উৎপত্তি হয়েছিল। এর সাথে উত্তর দিকে আদি ভারতের বর্ধিত অংশ, পূর্বে
পিল্বারা ক্র্যাটন
ব্যতীত অস্ট্রেলিয়ার বর্ধিত অংশ, দক্ষিণ এন্টার্ক্টিকা এবং পশ্চিমে
কাপ্ভালা
ক্র্যাটন ব্যতীত আফ্রিকার বর্ধিত অংশ।
২৯০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাল্টিক ক্র্যাটন অবলম্বনে গড়ে ওঠা
বাল্টিকা
মহাদেশ। এই মহাদেশকে কেন্দ্র করে কেনোরল্যাণ্ড মহামহাদেশে সূচনা হয়। এই সময়
ভাল্বারা মহা-মহাদেশ এবং উর মহাদেশ সুস্থির অবস্থাতেই ছিল।
২৮০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
উর এবং
ভাল্বারা উভয়েরই
ভাঙন শুরু হয়।
২৭৭ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ভাল্বারার
পিলবারা ক্র্যাটনের তথা আদি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হ্যামারস্লে
বেসিন (Hamersley Basin)
আত্মপ্রকাশ করে। এর ফলে আদিম অস্ট্রেলিয়া আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরপর এর সাথে ধীরে
ধীরে এন্টার্কটিকা অংশবিশেষ, চীন, ব্রাজিল, উত্তর আমেরিকা, সাইবেরিয়া এবং বাল্টিক
অংশ যুক্ত হয়ে
কেনোরল্যান্ড-এ
মহা-মহাদেশ গঠিত হয়। অন্যদিকে উর
এই সময়
অস্ট্রেলিয়ার
পিল্বারা ক্র্যাটন
অংশ
কেনোরল্যান্ড-এর
সর্ব উত্তরে যুক্ত ছিল।
আর এর উত্তরে ভারত ছিল
উর মহাদেশের অংশ হিসেবে
বিচ্ছিন্ন।
২৭০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আর্কিয়ান কাল-এর
নিয়ো-আর্কিয়ান যুগে,
উর মহাদেশটির
বৃহৎ অংশ
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশের
সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এই সময় ভারত-সংলগ্ন অষ্ট্রেলিয়া এবং
পিল্বারা ক্র্যাটন
অংশের অস্ট্রেলিয়া একত্রিত হয়ে যায়।
এই সময় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল দীর্ঘসময়
ধরে। ফলে ভূভগের উপর প্রবল পানির চাপসহ প্রবল স্রোতের কারণে মহা-মহাদেশটির বিভাজনকে
সহজ করে দিয়েছিল। বৃষ্টিপাতের ফলে বাতাসের
কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত হয়ে পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলকে শীতলীকরণে পথে ঠেলে দিয়েছিল। এই সূত্রে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল, প্রথম বরফ
যুগ (ice age,
এই যুগ ভূতাত্ত্বিক সময়-মানের একক নয়)
সুচনা ঘটেছিল। একে বলা হয়
হুরোনিয়ান বরফযুগ বলা হয়।
ওরোসিরিয়ান অধিযুগে
(২০০.০৫-১৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এই মহা-মহাদেশে একটি গ্রহাণু আঘাত
হানে। এর ফলে
পৃথিবীর গায়ে বিরাট
ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকায়
এর চিহ্ন পাওয়া যায়। এই ক্ষতটির
নাম ভ্রেডেফোর্ট (Vredefort)
খাত। গ্রহাণুর আঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে
তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে বায়ুমণ্ডল অস্বাভাবিক রকমের উত্তপ্ত হয়ে
উঠেছিল।
২১০
কোটি বৎসর আগের
হুরোনিয়ান
বরফ যুগ
-এর শীতলতা যাও ছিল, এই গ্রহাণুর আঘতজনীত কারণে তা মিলিয়ে গিয়েছিল। একই
সাথে সেকালের
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ
-এর
পুনর্বিন্যাসকে ত্বরান্বিত করেছিল।
প্লেইস্টোসিনে যখন পৃথিবী বরফে যখন সাগরের পানির উচ্চতা নেমে
গিয়েছিল, তখন এই মহাদেশের ভূভাগ একত্রিত হয়ে একটি বিশাল স্থলরাশিতে পরিণত হয়েছিল।
বরফ-আমল অতিক্রান্ত হওয়ার পর, এর উচ্চ-ভূমির বড় অংশ মূল অস্ট্রেলিয়া ভূখণ্ড তৈরি
করেছিল। আর নিচু ভূমি পানিতে ডুবে যাওয়ার পর দূরবর্তী দুটি পৃথক ভূখণ্ড দ্বীপের
আকার প্রাপ্ত হয়েছিল। এই দুটি ভূখণ্ড নিউগিনি ও তাসমানিয়া নামে পরিচিত।
নিউজিল্যান্ড মূলত অষ্ট্রেলিয়ার মূল ভূভাগের অংশ নয়। মূলত, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের
নিকটবর্তী হওয়ায় একে সাধারণভাবে অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এই মহাদেশটি প্রধানত ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে অবস্থিত। একসময়
এই প্লেট দক্ষিণাঞ্চলীয় মহামহদেশ গোণ্ডোওয়ানার সাথে যুক্ত ছিল। এই মহাদেশের
উত্তর-পূর্ব উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে ১৯৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রবাল প্রাচীর রয়েছে।
এই মহাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের নাম কোসিয়াস্কো। এর উচ্চতা ২,২৩০ মিটার। এই
শৃঙ্গটি নিউ সাউথ ওয়েলস-এ অবস্থিত। এই মহাদেশের পশ্চিমে রয়েছে ২২৫ থেকে ৪৫০ মিটার
উঁচু একটি বিশাল মালভূমি। তবে এর অধিকাংশ স্থানই শুষ্ক ও মরুময়।
প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে এশিয়া হয়ে কিছু মানুষ এই মহাদেশে প্রবেশ করেছিল। এরাই
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী। খ্রিষ্টীয় ১৭শ শতাব্দীর পূর্বকাল পর্যন্ত এশিয়া ও
ইউরোপবাসীদের কাছে অস্ট্রেলিয়া অজ্ঞাত ছিল। ধারণা করা হয় ১৭০১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
পোর্তগিজ নাবিকরা অষ্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াতে অবতরণ করেছিল। ১৭৭০
খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ নাবিক ক্যাপ্টেন জেমস কুক প্রথম এই মহাদেশে পা রাখেন বলে দাবি
করা হয়।
ব্রিটিশরা এই মহাদেশে অপরাধীদের নির্বাসনের স্থান হিসাবে নির্বাচন করেছিল। ১৭৮৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট জ্যাকসনে প্রথম ব্রিটিশরা স্থায়ী উপনিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এটিই পরবর্তীতে সিডনী শহরে পরিণত হয়। ১৯০১ সালে এগুলি একত্র হয়ে স্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গঠন করে।
১.
Atlas of the world/ Charles E. Tuttle Company,
Inc.1993।
২. বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ (প্রথম খণ্ড)। আষাঢ় ১৪০৫/জুন
১৯৯৮।