বাল্টিক ঢালভূখণ্ড
Baltic
Shield
এটি প্রাচীন
মহাদেশ।
প্রিক্যাম্ব্রিয়ান মহাকালের গঠিত শিলামণ্ডল দিয়ে এই বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল।
বর্তমান
ইউরোপের
স্ক্যান্ডিনেভিয়া
অঞ্চল এই
ঢাল খণ্ডের উপর গড়ে উঠেছিল। এর ভিতরে ছিল
সুইডেন,
পূর্ব
নরওয়ে
ও
ফিনল্যান্ড।
প্রাথমিকভাবে
বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড
প্রকাশ ঘটেছিল পূর্ব ইউরোপীয় ক্র্যাটনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বর্ধিত অংশ রূপে।
এই ঢাল-ভূখণ্ডের প্রাথমিক গঠন-পর্ব শেষ হয়েছিল ৩৪০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। মূলত এই সময় থেকে এর
সুস্থির দশায় পৌঁছানোর পর্ব শুরু হয়।
৩১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড কোলা সাগরের নিচে ডুবে যায়। ২৪৫ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই ঢাল খণ্ড বিষুব রেখা বরাবর ছিল। উল্লেখ্য এই সময়
কানাডিয়ান ঢাল-ভূখণ্ড
তৈরি হয়েছিল কোলা এবং কারেল্লা ক্র্যাটনের সমন্বয়ে।
২৯০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড অবলম্বনে ধীরে ধীরে
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ সূচনা হয়।
এই সময় ভাল্বারা মহা-মহাদেশ এবং
উর মহাদেশ সুস্থির অবস্থাতেই ছিল। কিন্তু ২৮০ কোটি
পূর্বাব্দে উর এবং ভাল্বারা উভয়েরই ভাঙন শুরু হয়। এর ভিতরে
উর মহাদেশটির
বৃহৎ অংশ
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশের
সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে
ভাল্বারা মহা-মহাদেশের
কাপ্ভাল ক্র্যাটন
এবং অষ্ট্রেলিয়ার
পিল্বারা ক্র্যাটন
কেনোরল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। ২৭৭ কোটি পূর্বাব্দে
পিল্বারা ক্র্যাটনের
দক্ষিণাঞ্চলে হ্যামারস্লে বেসিন (Hamersley
Basin) আত্মপ্রকাশ করে।
আর
কাপ্ভাল ক্র্যাটনের উত্তর প্রান্তে ২৭৫, কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়
রেনোস্কটের্কোপ্পিস গ্রিনস্টোন বেল্ট তৈরি হয়। ২৭৩ কোটি ৬০ লক্ষ পূর্বাব্দে কানাডার
টেমাগামি গ্রিনস্টিন বেল্ট তৈরি হয়। ২৭০ কোটি ৭ লক্ষ পূর্বাব্দে তৈরি হয় ব্ল্যাকল
রিভার মেগাক্যাল্ডেরা কম্প্লেক্স তৈরি হয়। এই অঞ্চল বর্তমানে কানাডার ওন্টারিও এবং
কুইবেকের অংশ।
এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে ২৭০ কোটি পূর্বাব্দে কেনোরল্যাণ্ড একটি বিশাল আকার লাভ
করে। এরপর
২৪৫ কোটি পূর্বাব্দে লাউরেনশিয়া ক্র্যাটন কেনোরল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যায়।
২০০ কোটি ৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
কেনোরল্যান্ড
মহা-মহাদেশে একটি গ্রহাণু আঘাত
হানে। এর ফলে
পৃথিবীর গায়ে বিরাট
ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকায়
এর চিহ্ন পাওয়া যায়। এই ক্ষতটির
নাম ভ্রেডেফোর্ট (Vredefort)
খাত। গ্রহাণুর আঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে
তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে বায়ুমণ্ডল অস্বাভাবিক রকমের উত্তপ্ত হয়ে
উঠেছিল।
২১০
কোটি বৎসর আগের
হুরোনিয়ান
বরফ যুগ
-এর শীতলতা যাও ছিল, এই গ্রহাণুর আঘতজনীত কারণে তা মিলিয়ে গিয়েছিল। একই
সাথে সেকালের
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ
-এর
পুনর্বিন্যাসকে ত্বরান্বিত করেছিল।
২০০ কোটি পূর্বাব্দে পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন এবং দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয়
অনেকগুলো ক্র্যাটন নিয়ে তৈরি হয়েছিল আটলান্টিকা মহাদেশটি। এর উত্তরাংশে ছিল
পশ্চিম আফ্রিকা, ব্রাজিল ও গায়না। দক্ষিণ দিকে ছিল বর্ধিত এন্টার্ক্টিকা, কঙ্গো
কাসাই ক্র্যাটন, রিও ডি লা প্লাটা ক্র্যাটন এবং সাঁও ফ্রান্সিসকো ক্র্যাটন।
মেসোপ্রোটারোজোয়িক যুগ-এর
তৃতীয়
এবং শেষ অধিযুগ যুগের
১৯০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কিছু আর্কিয়ান ক্র্যাটন এবং আমাজোনিয়া ক্র্যাটন, বাল্টিকা
এবং পূর্ব- এন্টার্ক্টিকা নিয়ে
তৈরি হয়েছিল
নেনা মহাদেশ।
সূচনার দিকে এই মহাদেশ
আট্লান্টিকা মহাদেশের
সাথে প্রায় গায়ে গায়ে লেগেছিল।
১৮০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের দিকে
আট্লান্টিকা মহাদেশ
থেকে এই মহাদেশ
পৃথক হতে শুরু করে। এই বিভাজনের সূত্রে সাইবেরিয়া, বাল্টিকা, গ্রিনল্যান্ড এবং
উত্তর আমেরিকা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ নেনা মহাদেশের অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ভূতত্ত্ববিদ
J.J.W. Rogers
এবং M. Santosh
এর মতে, ১৮০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
নেনা মহাদেশ টিকে ছিল। ধারণা করা হয়, এই মহাদেশটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ছিল ১২,৯০০ কিলোমিটার (৮০০০ মাইল)
এবং পাশাপাশি ছিল ৪৮০০ কিলোমিটার (৩০০০ মিটার)।
১৫০ থেকে ১৪০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
নেনা মহাদেশ
মহাদেশটি
আট্লান্টিকা মহাদেশ
থেকে পৃথক হয়ে যায়। এরপর
উর, নেনা এবং আটলান্টিকার খণ্ড
খণ্ড অংশগুলো একত্রিত হয়ে তৈরি হয় কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ।
৫৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
প্যান্নোশিয়া মহা-মহাদেশ বিভাজিত হতে শুরু করে এবং
৫০.৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই মহা-মহাদেশ ভেঙে যায় এবং
ভূখণ্ডগুলো নতুনভাবে সজ্জিত হয়ে চারটি প্রধান মহাদেশে পরিণত হয়। এই মহাদেশগুলো
হলো— লাউরেনশিয়া (Laurentia),
বাল্টিকা (Baltica),
সাইবেরিয়া (Siberia)
এবং গণ্ডোওয়ানা (Gondwana)।
এই সময়ের বাল্টিকা মহাদেশের ভিত্তি ছিল , বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড।
৪৮.৮-৪৪.৩৭ কোটি পূর্বাব্দের ভিতরে লাউরেনশিয়া সঙ্কুচিত হয়ে যায়, পাশাপাশি বাল্টিকা নামক ভূখণ্ড
বিশাল আকার ধারণ করে।
৪১.৬-৩৫.৯৩ কোটি পূর্বাব্দের
ভিতরে
লাউরেনশিয়ার সাথে বাল্টিকার সংঘর্ষ হয়।
৩০ কোটি বৎসরে আগে লাউরেনশিয়া (Laurentia), বাল্টিকা (Baltica), এ্যাভেলোনিয়া ক্রেটন (Avalonia cratons)-এর মধ্যে সমন্বয় হয়। এই সজ্জার ফলে একটি ক্ষুদ্রাকার মহা-মহাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এই নবগঠিত ভূখণ্ডকে নাম দিয়েছেন ইউরোমেরিকা (Euramerica)।