নিয়োআর্কিয়ান যুগ
Neoarchean
era
২৮০ কোটি থেকে
২৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
আর্কিয়ান
কালের চতুর্থ
যুগ।
আগের
মেসোআর্কিয়ান যুগের শেষের দিকে
বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড অবলম্বনে
কেনোরল্যান্ড
মহা-মহাদেশ গড়ে উঠা শুরু হয়। এই সময়
ভাল্বারা মহা-মহাদেশ এবং
উর মহাদেশ সুস্থির অবস্থাতেই ছিল।
২৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে
ভাল্বারা
এবং
উর বড় বড় খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্ত হয়ে যায়।
এই যুগের দুটি বড় ঘটনা ছিল
কেনোরল্যান্ড
মহা-মহাদেশের উদ্ভব এবং
হুরোনিয়ান বরফযুগের
প্রাক্দশার সূচনা হয়। এছাড়া
এই সময়ের শেষের দিকে পৃথকভাবে
আর্ক্টিকা মহাদেশ-এর গঠন পর্বের সূচনা
হয়েছিল।
এই যুগের কালানুক্রমিক বিবর্তনসমূহ
২৮০-২৭০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময়ের ভিতরে
ভাল্বারা মহা-মহাদেশের
কাপ্ভাল
এবং
পিল্বারা
ক্র্যাটনের
কেনোরল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
২৭৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
পিল্বারা
ক্র্যাটনের
দক্ষিণাঞ্চলে হ্যামারস্লে বেসিন (Hamersley
Basin) আত্মপ্রকাশ করে।
আর
কাপ্ভাল ক্র্যাটনের
উত্তর প্রান্তে ২৭৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়
রেনোস্কটের্কোপ্পিস গ্রিনস্টোন বেল্ট তৈরি হয়। ২৭৩ কোটি ৬০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
বর্তমান কানাডার টেমাগামি গ্রিনস্টিন বেল্ট তৈরি হয়।
২৭০ কোটি ৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তৈরি হয় ব্ল্যাকল রিভার মেগাক্যাল্ডেরা
কম্প্লেক্স তৈরি হয়।
এই অঞ্চল বর্তমানে কানাডার ওন্টারিও এবং
কুইবেক অংশ উৎপন্ন হয়।
এসকল প্রক্রিয়ার ভিতর
দিয়ে বিশালাকারে
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশের উদ্ভব হয়েছিল।
২৭০-২৫০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময় প্রবল বৃষ্টিপাত
হয়েছিল দীর্ঘসময় ধরে। ফলে ভূভাগের উপর প্রবল পানির চাপসহ প্রবল স্রোতের কারণে
মহা-মহাদেশটির বিভাজনকে সহজ করে দিয়েছিল। বৃষ্টিপাতের ফলে বাতাসের
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
দ্রবীভূত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে শীতলীকরণে পথে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে পৃথিবীর প্রথম
বরফ যুগ হুরোনিয়ান-
আবির্ভাবকে
ত্বরান্বিত করেছিল। এই সময়ের শেষের দিকে পৃথকভাবে
আর্ক্টিকা মহাদেশ-এর গঠন পর্বের
সূচনা হয়েছিল।
জীবজগৎ
আদি জীবকোষে
প্রাণকেন্দ্র
যুক্ত হয়ে, জীবজগতের
নতুন ধারার সূচনা হয়। এই জাতীয় কোষকে বলা হয়
সু-প্রাণকেন্দ্রিক
কোষ (Eukaryotic cell)।
১৯৯৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভূতত্ত্ববিদরা উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিছু পাথরের সন্ধান
এদের সন্ধান পান। এই পাথরগুলো ২৭০ কোটি বৎসর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। এই পাথরের গায়ে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এই তেলের ভিতর পাওয়া গেছে স্টেরয়েড এ্যালকোহল। যেহেতু এই এ্যালেকোহল
যুক্ত ফ্যাটি এ্যাসিড একমাত্র
প্রাণকেন্দ্র-যুক্ত জীবকোষে পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা যায়—
প্রাণকেন্দ্র-যুক্ত জীবকোষের সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ
উদ্ভব এই যুগেই হয়েছিল। এর অর্থই হলো
সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ-এর অন্যতম উপাদান
ডিএনএ
[deoxyribonucleic acid (DNA)]
তৈরি হয়েছিল আরও আগে।
জীবের ক্রমবিকাশের ধারায়-
এই যুগের শেষের দিকে, সাগরের
জলে এই ব্যাক্টেরিয়া থেকে আদিম শৈবালের উদ্ভব হয়েছিল। তখনও এদের দেহে
সুগঠিত
প্লাস্টিডের
আবির্ভাব ঘটেনি।
কিন্তু কোষে ক্লোরোফিল সৃষ্টি হয়েছিল। এই ক্লোরোফিলের
মাধ্যেম এরা সূর্যের আলো,
পানি
ও
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
(CO2)
সাহায্যে,
সালোকসংশ্লেষণ
পদ্ধতিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করতে পারতো। এরাই প্রথমবারের জৈবিক
প্রক্রিয়ায় মুক্ত
অক্সিজেন
বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এই
অক্সিজেন
লৌহের সাথে বিক্রিয়া করে আয়রন অক্সাইড (Fe3O4)
বা ম্যাগনেটাইট উৎপন্ন করতে থাকে এবং তা সাগরতলের মাটিতে জমা হয়। এই সময়
ক্রমবিবর্তনের ধারায়
সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার
দেহ কিছুটা আঠালো হয়ে উঠেছিল। এই আঠালো দেহের সাথে জলে ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
কণা এবং এবং তা ম্যাগনেটাইট আটকে গিয়ে সাগরতলের মাটিতে জমা হওয়া শুরু হয়েছিল।
ধীরে ধীরে এই পতিত অংশসাগর তলে নরম তুলতুলে লালবর্ণের জাজিমের মতো আবরণ তৈরি
করে ফেলেছিল। কালক্রমে তা শক্ত হয়ে শিলায় পরিণত হয়। একে বিজ্ঞানীরা
স্ট্রোমাটোলাইটস
নামে
চিহ্নিত করে থাকেন। এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ার
পশ্চিমাঞ্চলের পিলবারা অঞ্চলে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে,
প্রাণকেন্দ্র-যুক্ত কোষের আবির্ভাব ঘটেছিল দুটি পৃথক ধরনের একক জীব কণিকার সমন্বয়ে। এই ধরনের জীব-কণিকাগুলো পারস্পরিক স্বার্থে একটি অপরটি ভিতরে জায়গা করে নিত। এদের একটি
অক্সিজেন থেকে
চিনি জাতীয় জৈবিক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারতো এবং এই
চিনি অপর জীবকণিকাকে প্রদান করতো। অপর জীবকণিকা এই
চিনি গ্রহণ করে, তা থেকে শক্তি উৎপাদন করতো এবং তা উভয় জীবকণিকা ভাগাভাগি করে নিত।
চিনি উৎপাদনকারী
এই জীবকণিকা বা ব্যাক্টেরিয়াগুলো অর্গানেলস (organelles)
বলা হয়ে থাকে। এরা নিজেদের বংশ বিস্তার করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল।
সূত্র
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleogene