জল/পানি
সমার্থক শব্দাবলি :
অপ, অম্বু,
অম্ভ, ইরা, উড়ু, উদ, উদক, জল, তোয়, নীর, পয়, পানি, পুষ্কর, বারি, সরঃ, সলিল।
ইংরেজি
water।
রাসায়নিক সঙ্কেত
H2O।
বিজ্ঞানসম্মত :
dihydrogen monoxide।
যুগ্ম-যৌগিক
পদার্থ।
পানির
প্রতিটি
অণু একটি
অক্সিজেন
পরমাণু এবং
দু'টি
হাইড্রোজেন
পরমাণুর সমযোজী
বন্ধনে গঠিত। এই কারণে একে রসায়ন বিজ্ঞানে বলা হয়
dihydrogen monoxide।
পৃথিবীতে পানিকে বিভিন্ন দশায় পাওয়া যায় এবং এই সকল দশায় পানিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি স্বচ্ছ, রঙবিহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন তরল পদার্থ। পানির কঠিনতম রূপকে বলা হয় বরফ (ice)। ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচের তাপমাত্রায় এটি বরফে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে ১০০ ডিগ্রি নিচের তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়। ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পানি সবচেয়ে বেশি ঘনত্বে পৌছায়। তখন এক ঘন সেন্টিমিটার পানির ওজনকে ১ গ্রাম ধরা হয়। পানি বরফে পরিণত হলে এর আয়তন বৃদ্ধি পায়। এই কারণে বরফ পানিতে ভাসে। ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাযুক্ত যুক্ত পানির আপেক্ষিক গুরত্ব ১ ধরা হয়। বিশুদ্ধ পানি নিকৃষ্ট ধরনের বিদ্যুৎ পরিবাহী। পানির সাথে এ্যাসিড মিশ্রণ করে বিদ্যুৎ সুপরিবাহী করা হয়।
জলীয় বাষ্প আকাশে ঘন কু্য়াশার সৃষ্টি করলে ভূপৃষ্ঠ থেকে পুঞ্জাকারে দৃষ্ট হয়। এই আকাশে পঞ্জীভূত এবং দৃষ্টিগ্রাহ্য জলীয় বাষ্পকে বলা হয় মেঘ। আর মেঘের বাষ্পীয় কণা জলবিন্দুতে পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়লে, ওই ঝরে পড়া পানিকে বলা হয় বৃষ্টি। কখনো কখনো মেঘের জলকণা অতিমাত্রায় শীতল হয়ে বরফের টুকরো হয়ে ঝরে পড়ে, তখন তাকে বলা হয় শিলাবৃষ্টি। আর বরফের টুকরোগুলোকে বলা হয়, শিল বা শিলা। শীতপ্রধান দেশে বাতাসের জলীয় বাষ্প বরফে কণায় পরিণত হয়ে পেঁজা তুলোর মতো ভূপৃষ্ঠে ঝরে পরলে, তখন তাকে বলা হয় তুষারপাত।
ভূপৃষ্ঠের উপরে পানি
স্বাভাবিকভাবে বাষ্প হিসাবে থাকে । পৃথিবীর উষ্ণতর স্থানে পানি ভূপৃষ্ঠের উপরিতলে
এবং ভূগর্ভে তরল অবস্থায় থাকে। মেরু অঞ্চলে, পাহাড়ের উচ্চ শিখরে পানি পাওয়া যায়
বরফের রূপে। ভূপৃষ্ঠের উপরিতলে
তরল দশাযুক্ত H2O-এর
সবচেয়ে বড় আধার মহাসাগর এবং তৎসংলগ্ন সাগর উপসাগর। বিভিন্ন নদী বাহিত পানির পরিমাণ
বিপুল হলেও এর শেষ আশ্রয়স্থান সাগরই হয়ে থাকে।
জলচক্র
প্রতিনিয়ত পৃথিবীর পানি স্থান ও দশা পরিবর্তন করে চলেছ পর্যায়ক্রমে। এর সাথে
রয়েছে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি, ঋতু পরিবর্তন তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ। এই
নিয়ামকগুলো আবার পরস্পরের সাথে সম্পর্ক রেখে একটি চক্র সৃষ্টি করছে। এই চক্রের
স্বাভাবিক দশাকে যদি তরল
H2O-
ধরা যায়। তাহলে
দেখা যায়, পৃথিবীর কোনো অংশে সূর্যের উত্তাপে পানি বাষ্প হয়ে বায়ুমণ্ডলে স্থান করে
নিচ্ছে। আবার কোনো অংশে দেখা যাবে, পানি শীতল হয়ে বরফ দশায় পৌঁছে গেছে। বাষ্প হয়ে
বায়ুমণ্ডলে
মিশে
যাওয়া
পান মেঘ হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে। এই পানি যেমন সরাসরি সমুদ্রে
পতিত হয়, তেমনি ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থান থেকে নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়। মেরু বা শীত
প্রধান অঞ্চলের জলাধারগুলো বরফে পরিণত হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে তা গলে গিয়ে সাগরে মিশে যায়। হিমালয়, আল্পস বা অন্দিজ পর্বতমালার মতো উঁচু পাহাড়ের মাথায় যে বরফ
জমে, তাই গ্রীষ্মকালে গলে তরল হয় এবং তা নদী পথে সাগরে ফিরে যায়। এই চক্র পৃথিবী
সৃষ্টির পর থেকে নানা ভাবে সংঘটিত হয়ে চলেছে। প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত এই চক্রকে কখনো
কখনো মানুষ সাময়িকভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বটে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে জলচক্র
অব্যাহতই থাকে।
পানির প্রকার ভেদ
তরল, কঠিন বাষ্পীয় ভেদ ছাড়াও মানুষ তার ব্যবহারের বিচারে পানিকে নিজের মতো করে দুটি
প্রধান ভাগে ভাগ করেছে। এই ভাগ দুটি হলো–
লবণাক্ত পানি : যে পানিতে এক বা একাধিক লবণ থাকে। সাধারণ লবণাক্ত পানি বলতে
সাগরের পানিকেই বুঝায়। কারণ এই পানিতে নানাবিধ লবণ দ্রবীভূত থাকে এবং এর স্বাদ
নোনতা।
মিঠা পানি : যে পানিতে কোনো ধরনের লবণ থাকে না। স্বাভাবিকভাবে এই পানি স্বাদ
নোনতা হয় না। লবণাক্তের বিচারে এই জাতীয় পানিকে মিঠা পানি বলা হয়।
পানি
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় স্বচ্ছ, রঙবিহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন একটি তরল পদার্থ।
পানির এই স্বাভাবিক রূপটিকে বলা হয় বিশুদ্ধ। মিঠা পানি বিশুদ্ধ নাও হতে পারে। যেমন
নদী, ঝর্না, কূপের পানিতে কিছু খনিজ পদার্থ থাকে। এক্ষেত্রে ওই সকল উৎসের পানি
বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু স্বাদ, গন্ধ বা বর্ণের বিচারে এই
সকল উৎসের
পানিকে মিঠা পানি বলা হয়।
পানিতে ম্যাগনেশিয়াম বা ক্যালসিয়ামের বাই-কার্বোনেট বা কার্বনেট থাকলে, ওই পনিকে
খর-পানি
বলা হয়। এক্ষেত্রে বাই-কার্বোনেটযুক্ত পানিকে বলা হয় অস্থায়ী খর পানি। পানি
ফুটালে বা চুন মিশালে এই অস্থায়ী খরত্ব দূরীভূত হয়।
সূত্র :
বাংলা বিশ্বকোষ। তৃতীয় খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। জুলাই ১৯৭৩।