মেসোআর্কিয়ান যুগ
Mesoarchean Era
৩২০-২৮০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
আর্কিয়ান কালের তৃতীয়
যুগ। এই যুগের পূর্ববর্তী যুগ হলো-
প্যালেয়োআর্কিয়ান যুগ
৩৬০-৩২০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ >।
এই যুগে উদ্ভব হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মহাদেশ
উর। অন্য দিকে
ভাল্বারা মহা-মহাদেশ ভেঙে ছোটো ছোটো মহাদেশ গঠন
করেছিল। এই সময়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেকটা বর্তমান সময়ের মতই ছিল। এই সময়ে পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলকে অক্সিজেন খুবই কম ছিল। সাগর জলে সাইনোব্যাক্টেরিয়ার আবির্ভাব হয়েছিল এই
যুগের শেষে। এদের প্রভাবে বাতাসে কার্বন অক্সাইডের পরিমাণ কমে গিয়ে অক্সিজেনের
পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল। ফলে এই যুগের
শেষে একটি একটি ছোট হিমযুগ এসেছিল। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন পোঙ্গোলা।
এই সময়ে ভূত্বকে লৌহ-ঘটিত পদার্থের অধঃক্ষেপ সাগর তলের ভূমিতে পতিত হয়ে হয়ে আবরণের
সৃষ্টি করেছিল।
এই
যুগের শুরুতে
উর মহাদেশ
প্রাথমিক গঠন সম্পন্ন হয় এবং ধীরে ধীরে মহাকাশীয় অবয়ব
ধারণের পথে অগ্রসর হয়। মূলত ৩২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
ভাল্বারা মহা-মহাদেশের উত্তরাংশে একটি পৃথক স্থলভূমি তৈরির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে
পৌঁছেছিল। এর আকার ছিল বর্তমান
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের চেয়েও ছোট।
ভাল্বারার বিচারে তুলনা
করে বিজ্ঞানীরা একে মহাদেশ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। উল্লেখ্য, নতুন এই মহাদেশকে
বিবেচনা করা হয়, পৃথিবীর প্রথম মহাদেশ। জর্মান
'Ur'
শব্দের অর্থ হলো আদি বা মূল। প্রথম মহাদেশে হিসেবে বিজ্ঞানীরা 'উর
(Ur)'
গ্রহণ করেছেন। বাংলায় Ur
>ntinent - এর অর্থ হয় 'আদি মহাদেশ'। ১৯৯৩
খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ করেছিলেন Rogers, John J.W.
এই যুগের কালানুক্রমিক বিবর্তনসমূহ
- ৩২০-৩১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ের ভিতরে ভারতের পশ্চিম
কর্ণাটক ক্র্যাটন এবং
সিংভূম ক্র্যাটন
বা উড়িষ্যা ক্র্যাটন যুক্ত হয়ে একটি অখণ্ড ভূখণ্ড তৈরি হয়েছিল।
ধারণা করা হয় ৩১০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই ভূখণ্ডের সাথে ভারতের বর্ধিতাংশ,
আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার অংশ বিশেষ এবং এন্টার্ক্টিকা যুক্ত হয়ে এই
মহাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সব মিলিয়ে এর আয়তন ছিল বর্তমান অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের চেয়েও
ছোটো। এই সময়ে বর্তমান অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্গত ইল্গার্ন ক্র্যাটনের আদি রূপ
স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ্য,
৩২০-২৮০ কোটি খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই ক্র্যাটনের ভিত্তি শিলাসমূহ একত্রিত
হয়ে, বড় ধরনের ভূখণ্ডের সূচনা করেছিল। তবে এই ক্র্যাটনটি সুস্থির দশায় পৌঁছেছিল
২৯৪-২৬৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এই শিলাসমূহের মধ্যে প্রধান উপদান ছিল-
গ্রানাইট,
নাইস এবং গ্রিনস্টোন। অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ মূল্যবান খনিজদ্রব্য এই
ক্র্যাটনে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ স্বর্ণ এবং নিকেলও এই অঞ্চল থেকে
পাওয়া যায়।
- ৩১০-৩০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
৩১০ কোটি
খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে
ভাল্বারা একটি পরম আকার লাভ করেছিল। কিন্তু এরপর থেকে এর বড় বড় ভূখণ্ডগুলো
বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। এই সময়
৩৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সৃষ্ট
বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড,
৩১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে কোলা সাগরের নিচে ডুবে যেতে শুরু করে এবং ৩০০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সম্পূর্ণ ডুবে যায়।
- ৩০০-২৯৪ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
৩০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ভাল্বারা ভেঙে যেতে থাকে।
এই সময়
তাঞ্জানিয়া ক্র্যাটন
ক্র্যাটনের প্রাথমিক শিলাস্তর তৈরি হয়।
এই ক্র্যাটনটি বর্তমান আফ্রিকা মহাদেশের অংশ। উল্লেখ্য, বর্তমান
আফ্রিকা
মহাদেশের
মধ্য তাঞ্জানিয়া এই
ক্র্যাটনের উপর অবস্থিত।
কাপ্ভাল,
জিম্বাবুয়ে,
তাঞ্জানিয়া
এবং
পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন মিলিত হয়ে- বর্তমান আফ্রিকা মহাদেশ তৈরি করেছে।
- ২৯৪-২৯০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ের ভিতরে ছোটো ছোটো ভূখণ্ড মিলে তৈরি
হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ইল্গার্ন
ক্র্যাটন। এই ক্র্যাটনটি পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছিল পরবর্তী ৩০ কোটি বৎসর পরে।
- ২৯০-২৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই
সময়ের ভিতরে
বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড অবলম্বনে
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ গড়ে উঠা শুরু হয়। এই সময়
ভাল্বারা মহা-মহাদেশ এবং
উর মহাদেশ সুস্থির অবস্থাতেই ছিল।
২৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে
ভাল্বারা
এবং
উর বড় বড় খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্ত হয়ে যায়।
এর ভিতরে
উর মহাদেশটির
বৃহৎ অংশ
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশের
সাথে যুক্ত হয়েছিল আরও পরে।
এর ভিতর দিয়ে মেসোআর্কিয়ান যুগ-এর অবসান ঘটে। এরপর শুরু হয়
নিয়ো-আর্কিয়ান যুগের।
জীবকোষের নতুন ধারা: সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ
এই
যুগের
৩০০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ
থেকে আবির্ভূত হয়েছিল
ব্যাক্টেরিয়ার
এবং
ভাইরাস। প্রথম দিকের
ব্যাক্টেরিয়াগুলো
ছিল অবাতজীবী (Anaeorbic)।
আদিম পৃথিবীর কর্দমাক্ত পরিবেশে এরা সবুজ এবং
লোহিতনীল বর্ণের গন্ধক অঞ্চলে বসবাস করতো এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া হাইড্রোজেন সালফাইড ব্যবহার করতো। ফলে অক্সিজেনের পরিবর্তে এরা বাতাসে গন্ধক পরিত্যাগ করতো। এই কারণে এদের শরীরের
চিনি তৈরি হতো না।
৩০০ বৎসর থেকে
১৬০
কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর
জীবজগতের প্রতিনিধি ছিল-
আর্কিপ্লাস্টিডা'র,
ভাইরাস,
ব্যাক্টেরিয়ার
এবং
আর্কিয়া।
এই সময়
আর্কিপ্লাস্টিডা'র
থাকের
প্রজাতিরা
ব্যাক্টেরিয়ার
গ্রাস করে
প্লাস্টিড,
মাইটোকন্ড্রিয়াতে
পরিণত করে অঙ্গাণুতে পরিণত হয়েছিল।
সূত্র
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleogene