আফ্রিকার মানুষ
সাধারণভাবে বলা হয় আফ্রিকার মানুষ মূলত নিগ্রোয়েড। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের গণনা
অনুসারে এই মহাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১০৩,২৫,৩২,৯৭৪।
আফ্রিকাকে মানবজাতির সূতিকাগার বলা হয়।
প্রায় ৩ কোটি ৩০
লক্ষ বৎসর আগে এপদের আদি পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। জীবাশ্মের বিচারে এই
আদি-এপের নামকরণ করা হয়েছে-ঈজিপটোপিথেকাস জেউক্সিস
(Aegyptopithecus
zeuxis)।
২ কোটি ৩০ লক্ষ বৎসর থেকে ২ কোটি বৎসরের ভিতরে
এপ
জাতীয় প্রাণী পূর্ণতা লাভ করেছিল। রূপান্তরের এই পুরো ঘটনাই
ঘটেছিল আফ্রিকাতে। পরে এরা এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে পড়েছিল। ১
কোটি বৎসরের দিকে এই আদি এপদের কিছু অংশ প্রাকৃতিক কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কিছু
অংশ বিবর্তিত হয়ে নূতন প্রজাতির এপ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই পরিবর্তিত এপদের
উত্তরপুরুষ হলো-
মানুষ,
গরিলা
,
শিম্পাঞ্জি ইত্যাদি।
ধারণা করা হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ বৎসর আগে
প্রাইমেট
বর্গের অন্তর্গত
হোমিনিডি
গোত্রের
হোমো
(Homo)
গণের অন্তর্গত
Homo sapiens
এর আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার মরোক্কোতে অঞ্চলে। আর ১ লক্ষ ৬০ হাজার বৎসর আগে মূল
প্রজাতি থেকে একটি উপ-প্রজাতি পৃথকভাবে বিকশিত হয়। এই প্রজাতিটি হলো
Homo sapiens idaltu।
কালক্রমে মানুষ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আফ্রিকা একটি বিচিত্র মহাদেশ। এখানে রয়েছে
নিবিড় সবুজ অরণ্য, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, জনমানবহীন মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বত এবং
খরস্রোতা নদী। এখানে বহু বিচিত্র জাতির লোকের বাস, যারা শত শত ভাষায় কথা বলে।
আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে জীবন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই রয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক
শহরে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এশিয়া এবং ইউরোপের মানুষের কাছে আফ্রিকা ছিল একটী
ভয়ঙ্কর মহাদেশ। আধুনিক মানুষেরা আফ্রিকা আসার পর, এরা হয়ে উঠেছিল আফ্রিকার
আদিবাসীদের জন্য ভয়ঙ্কর।
আফ্রিকার নৃগোষ্ঠীসমূহের তালিকা
আফ্রিকার সৃষ্টি ও ভূপ্রকৃতির ক্রমবিবর্তন
বর্তমান আফ্রিকা মহাদেশ ৫টি ক্র্যাটনের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। এই ক্র্যাটনগুলো হলো-
কাপ্ভাল, জিম্বাবুয়ে, তাঞ্জানিয়া, কঙ্গো এবং পশ্চিম আফ্রিকান। এই
ক্র্যাটনগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল ৩৬০ কোটি থেকে ২০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
প্রাচীনত্বের বিচারে
কাপ্ভালকে
আফ্রিকার আদি
ক্র্যাটন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৩৭০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
এই ক্র্যাটনের সূচনা হয়েছিল,
আর ৩৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই ক্র্যাটন
সুস্থির দশায় পৌঁছায়। ধারণা করা হয় ৩৬০ থেকে ৩২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে কাপ্ভালা ক্র্যাটনের বার্বের্টোন
গ্রিনস্টোন বলয়ে উদ্ভব হয়েছিল মাখোঞ্জওয়া পর্বতমালা। এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ১২০
কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এর শৃঙ্গগুলোর উচ্চতা ৬০০ থেকে ১৮০০
মিটার।
৩৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে অপর একটি ক্র্যাটন
পিল্বারা
তার আদি দশা নিয়ে এর সাথে যুক্ত হয়ে যায় এবং উভয়
ক্র্যাটন মিলিত
হয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর প্রথম মহা-মহাদেশ
ভাল্বারা।
৩৪৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে টোকুয়ে এবং ক্ষুদ্রাকার র্হডেস্ডালে ভূখণ্ডের সৃষ্টি
হয়েছিল। ৩৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে টোকুয়ে ভূখণ্ড সুস্থির দশায় পৌঁছায়। এই
সময় এর উত্তরে র্হডেস্ডাল ভূখণ্ড যুক্ত হয়ে এই জিম্বাবুয়ে ক্র্যাটন তৈরি করেছিল।
একই সময়ে উচ্চমানের রূপান্তরিত শিলা দিয়ে ২৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত
লিম্পোপো বলয় তৈরি হয়েছিল। মূলত এই বলয় দ্বারাই বর্তমানে
জিম্বাবুয়ে
ক্র্যাটন
ও
কাপ্ভাল ক্র্যাটনের
সাথে যুক্ত অবস্থায় রয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০,৫০০ বৎসর আগে বরফযুগের শেষ,
আফ্রিকার
সাহারা
অঞ্চল ছিল উর্বর ভূমি। আর খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বৎসরের দিকে সেই
সাহারা
মরুভূমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
এ মহাদেশের ৬১টি রাষ্ট্র কিংবা সমমানের প্রশাসনিক অঞ্চলে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ১৪% বসবাস করে। আফ্রিকার প্রায় মাঝখান দিয়ে বিষুবরেখা চলে গেছে। এর বেশির ভাগ অংশই ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০ অব্দের দিকে আফ্রিকার
মিশর এবং তৎসংলগ্ন
অঞ্চলে ফারাও সভ্যতার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপর গ্রিক, রোমান, পারশিক, বার্বার, আরব
ইত্যাদির দ্বারা মিশর এবং আফ্রিকার পূর্বাঞ্চল অধিকৃত এবং হাতবদল হয়েছে বহুবার।
এই মহাদেশের ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর. ইউরোপীয় এবং আরব বণিকেরা
লক্ষ লক্ষ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয়
দ্বীপপুঞ্জের পাঠিয়েছিল। একই সাথে ইউরোপীয়রা আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের
দেশের কলকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিষ্কাশনের জন্য আফ্রিকার
বিভিন্ন অংশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ ইউরোপীয়রা প্রায়
সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ দখল করে এবং একে ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত করে।
কোথাও সহিংস যুদ্ধ, আবার কোথাও বা ধীর সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় সমস্ত আফ্রিকা ১৯৫০
এবং ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে উপনিবেশ-পরবর্তী
আফ্রিকার অবস্থান দুর্বল। এখানকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত এবং
রাষ্ট্রগুলির সীমানা যথেচ্ছভাবে তৈরি। নতুন এই দেশগুলির নাগরিকদের ইতিহাস ও
সংস্কৃতিগত দিক থেকে একতা বলতে তেমন কিছুই ছিল না।
বর্তমানে আফ্রিকাতে মোট ৫৩টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ৪৭টি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে
এবং ৬টি আশেপাশের দ্বীপগুলিতে অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির মাধ্যমে মহাদেশটিকে দুইটি
অংশে ভাগ করা হয়। সাহারা বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি; এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর
অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে বিস্তৃত। সাহারার উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলকে উত্তর আফ্রিকা
বলা হয়। সাহারার দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকাকে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা বলা হয়।
সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাকে অনেক সময় কৃষ্ণ আফ্রিকাও বলা হয়।
আফ্রিকার রাষ্ট্রসমূহ
আইভরি কোস্ট আলজেরিয়া ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়া উগান্ডা এ্যাঙ্গোলা কঙ্গো প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (গণপ্রজাতন্ত্রী) কেনিয়া কোমোরোস ক্যামেরুন গাবন গাম্বিয়া গিনি গিনি-বিসাউ ঘানা চাদ |
জাম্বিয়া
টোগো |
মরক্কো |
সূত্রঃ
http://www.amarbornomala.com/details8733.html
https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/af.html