মিশর
 

জাতীয় পতাকা জাতীয় প্রতীক








প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি হিসাবে খ্যাত এই দেশটি ফারাও সম্রাট এবং পিরামিডের সাথে জড়িত।
আফ্রিকা মহাদেশের প্রান্তদেশে অবস্থিত এই দেশটি এশিয়ার সাথে সংযুক্ত। এই কারণে একে আফ্রিকার প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দেশটি বাংলাভাষাভাষীদের কাছে সাধারণভাবে মিশর নামে পরিচিত।
 

মিশরের পৌরাণিক কোষ

মিশরের ইতিহাস

ইংরেজি : Egypt
দাপ্তরিক নাম :  Arab Republic of Egypt
স্থানীয় নাম :  জুমহুরিয়াত মিশর আল-আরাবিয়াহ। পূর্বে এর নামে ছিল : সংযুক্ত আরব তন্ত্র।

রাজধানী :  কায়রো।  আফ্রিকার সব থেকে বড় শহর।


জাতীয় প্রতীক : সালাদিনের ঈগল। (‘সালাদিন’ ছিলেন মিশর এবং সিরিয়ার প্রথম সুলতান।)

জাতীয় পাখিঃ সোনালি ঈগল
জাতীয় ফুলঃ
মিশরের জাতীয় ফুল ‘মিশরীয় পদ্ম’। এইটা জল পদ্ম নামেও পরিচিত।
জাতীয় খেলাঃ ফুটবল।

সর্বোচ্চ আদালত :
 
Supreme Constitutional Court

স্থানীয় সময় : আন্তর্জাতিক সময়ের সাথে (গ্রিনউইচ সময় মান জিএমটি/ইউটিসি) ২ ঘন্টা যোগ করলে মিশরের স্থানীয় সময় পাওয়া যায়।

 

আয়তন : দেশটির মোট আয়তন ১,০০১,৪৫০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৯৯৫,৪৫০ বর্গকিলোমিটার এবং অবশিষ্ট ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার জলাশয়।

প্রধান নদী: নীলনদ

ভৌগলিক অবস্থান ও সীমানা : উত্তর আফ্রিকায় গাজা এবং লিবিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর এবং এশিয়ার সিনাই উপসাগরের বেষ্টন করে আছে। এর অক্ষাংশ ২৭.০০ ডিগ্রি উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ ৩০.০০ ডিগ্রি পূর্ব। আফ্রিকার সাথে সমগ্র পূর্ব-গোলার্ধের মধ্যে স্থলপথে সংযোগরক্ষাকারী সিনাই অঞ্চল, ভারত মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগর-এর মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগের পথ সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ মিশর করে। মোট ২,৬৬৫ কিলোমিটার ভূসীমানার মধ্যে গাজার সাথে ১১কিমি, ইসরাইলের সাথে ২৬৬ কিমি, লিবিয়ার সাথে ১,১১৫ কিমি এবং সুদানের সাথে ১,২৭৩ কিমি।

ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু : সুবিশাল মরুভূমির মাঝে রয়েছে নীলনদের  উপত্যকা এবং ব-দ্বীপ। সমুদ্র সমতল থেকে সর্বনিম্ন বিন্দুর উচ্চতা ১৩৩ মিটার (কাত্তারা অঞ্চল) এবং সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতা ২,৬২৯মিটার (ক্যাথেরিন পর্বত)। দেশটি শুষ্ক এবং মরুময়। এবং গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম পড়ে। শীতকালে খুব তীব্র শীত অনুভূত না হলেও বৃষ্টি হয়। দক্ষিণ কায়রোতে অনেক বছর পর পর বৃষ্টি হয় এবং বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ০.১ থেকে ০.২ ইঞ্চি। অক্টোবর থেকে মার্চ মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর সমুদ্রতীরের মরু অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয় এবং কখনো কখনো তা ১৬.১ ইঞ্চি পরিমাণ হয়ে থাকে। সিনাই পর্বতমালা এবং কিছু উত্তর সমুদ্রতীরবর্তী শহর যেমন দামিয়েত্তা, বাল্টিম, সিদি বাররানি এবং কখনো আলেক্সান্দ্রিয়াতে তুষারপাত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ২৭° - ৩২° সেন্টিগ্রেড এবং লোহিত সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে ৪৩° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতকালে গড় তাপমাত্রা ১৩-২১° সেন্টিগ্রেড। উত্তর-পশ্চিমের বাতাস প্রবাহের ফলে ভূমধ্যসাগর তীরে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। বসন্তকালে দক্ষিণা ঝড়ো বাতাসের সাথে ধুলা-বালু প্রবাহের ফলে কখনো কখনো মরুভূমির তাপমাত্রা ৩৮° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত পৌছায়। এই ঝড়ো বাতাস ‘খামেসিন’ নামে পরিচিত।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : পর্যায়ক্রমিক খরা, ঘনঘন ভূমিকম্প, হঠাৎ বন্যা, ভূমিধ্বস, গরম, ঘুর্ণিঝড় (খামসিন), ধূলিঝড়, বালুঝড়।

মোট জনসংখ্যা : ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী ৮৩,৬৮৮,১৬৪ জন। আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। প্রতি ১০০ জন মহিলার বিপরীতে ১০৩ জন পুরুষ।

শিক্ষিতের হার : মোট জনসংখ্যার ৭১.৪% শিক্ষিত কিন্তু পুরুষ শিক্ষিতের হার ৮৩% এবং মহিলা শিক্ষিতের হার ৫৯.৪% (২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। মিশরে রয়েছে আফ্রিকা এবং আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশী নোবেল বিজয়ী।

মুদ্রাঃ মিশরের মুদ্রার নাম মিশরীয় পাউন্ড।

ভাষা এবং ভাষাভিত্তিক জাতিসত্ত্বা : দাপ্তরিক ভাষা আরবি। কিন্তু ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ শিক্ষিত সম্প্রদায়ে প্রায় সবাই বুঝতে পারে। মিশরীয় আরবি ভাষাভাষীর সংখ্যা ৯৯.৬% এবং অন্যান্য ০.৪%

ধর্মঃ মিশর  সুন্নি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ। সুন্নি মুসলমান ৯০%, কপ্টিক ৯%, অন্যান্য খ্রিষ্টান ১% রাষ্ট্রভাষা ইসলাম। মিশরে ৩টি স্বীকৃত ধর্ম রয়েছে। এই তিনটি ধর্ম হলো- ইসলাম, খ্রিষ্টান এবং ইহুদি। এছাড়া বাহাই ধর্মানুসারী অল্প কিছু থাকলেও স্বীকৃতি পায় না।

জাতির জনকঃ মিশরের প্রধানমন্ত্রী ‘সাদ জঘলুল’ এবং প্রেসিডেন্ট ‘গামাল আব্দেল নাসের’-কে (১৯৫৪-১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) জাতির জনক বলা হয়।

জাতীয় সঙ্গীতঃ  রচয়িতা ইউনিস-আল ক্বাদি এবং সুরকার সায়েদ দারউইস (সায়েদ দারউইস-কে মিশরের আধুনিক সঙ্গীতের জনক বলা হয়।) ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এই গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়।

আরবিঃ

بلادي بلادي بلادي

لكِ حبي وفؤادي

بلادي بلادي بلادي

لك حبي وفؤادي

ইংরেজি ভাষায়ঃ

My homeland, my homeland, my homeland,

You have my love and my majesty.

My homeland, my homeland, my homeland,

You have my love and my majesty.

 যোগাযোগ
রেলপথ :  মোট ৫,০৮৩ কিমি (স্ট্যান্ডার্ড গেজ ১.৪৩৫মি) রেলপথের মধ্যে ৬২ কিমি পথ বিদ্যুতায়িত (২০১০)।
সড়কপথ
: মোট ৬৫,০৫০কিমি রাস্তার ৪৭,৫০০কিমি পাকা। অবশিষ্ট ১৭,৫৫০কিমি কাঁচা রাস্তা। (২০০৯)
জলপথ
: ৩,৫০০কিমি (
নীলনদ, নাসের হ্রদ, আলেক্সান্দ্রিয়া-কায়রো জলপথ এবং নীলনদের দ্বীপের অন্যান্য অসংখ্য ছোট ছোট খাল; সুয়েজ খাল) নাব্য। এইসব জলপথ দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করতে পারে।
বন্দর
: আয়েন সুখনাহ, আলেক্সান্দ্রিয়া, দামিএত্তা, এল দেখেইলা, সেইদ, সিদি কুরায়র, সুয়েজ।
 

প্রাকৃতিক সম্পদ: পেট্রোল জাত দ্রব্য, প্রাকৃতিক গ্যাস, লোহার আকরিক, ফসফেট, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, জিপসাম, ট্যালক, এসবেসটস, সীসা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ, জিংক।
কৃষি পণ্য: তুলা চাউল, ভুট্টা, গম, ফল, শাকসবজি, গরু, জলজ মহিষ, ভেড়া, ছাগল।
শিল্প:  সুতা ও সতীবস্ত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ,পর্যটন, রাসায়নিক দ্রব্য,ঔষধ, হাইড্রোকার্বন, নির্মাণ শিল্প, সিমেন্ট, ধাতু,
রপ্তানি: অপরিশোধিত তেল এবং পেট্রোলিজাত দ্রব্য, সুতা, ধাতব পণ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য।
আমদানি: যন্ত্রপাতি, খাদ্যদ্রব্য, রাসায়নিক দ্রব্য, কাঠের তৈরী পণ্য, জ্বালানি।

উল্লেযোগ্য স্থান
কায়রো : মিশরের রাজধানী।
আলেকজান্দ্রিয়া : মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এবং মিশরের সর্ববৃহৎ সমুদ্রবন্দর।

দর্শনীয় স্থানঃ
তুর পাহাড়, পিরামিড, স্পিংক্স, আবু সিম্বেল, কমকের মন্দির, ভ্যালী অফ দ্যা কিংস ইত্যাদি।

বিলুপ্ত ঐতিহ্য :
আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর


 

তথ্য সূত্রঃ