তুর পাহাড়
মিশরের
সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ সাইনা জেলায় অবস্থিত পাহাড় বিশেষ। এর অপর নাম সিনাই। এর অন্যান্য নাম-হোরেব পর্বত, মুসা পর্বত, গাবাল মুসা তথা জাবাল মুসা।
পাহাড়টির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৮৫ মিটার। ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ২৮°৩২''২৩' উত্তর ৩৩°৫৮''২৪' পূর্ব।
ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র পাহাড়। এই পাহাড়ের পাদদেশে হজরত মুসা (আ.)-এর ভাই হজরত হারুন (আ.)-এর কবর রয়েছে।
কায়রো থেকে এই পাহাড়ের যাওয়ার দু’টি পথ রয়েছে।
এরভিতরে সোজা রাস্তার দূরত্ব কায়রো থেকে ৪৩০ কিলোমিটার। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে রাস্তাটি বন্ধ। অন্য রাস্তাটি হলো- কায়রো থেকে শারমুশ শাইখ হয়ে তুরে যাওয়ার
পথ। এ পথের দূরত্ব ৭৪০ কিলোমিটার।
এই পাহাড়ের চূড়ায় একটি গুহা আছে।
কোরান শরীফের সূরা আরাফ: ১৪২-১৪৩ আয়াতে বলা হয়েছে-
'‘আমি মুসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (এ রাতসমূহে তুর পাহাড়ে এসে ইতিকাফ করবে)। তারপর আরও দশ রাত বৃদ্ধি করে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ দিন হয়ে গেল এবং মুসা তার ভাই হারুনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সবকিছু ঠিকঠাক রাখবে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে এসে পৌঁছল এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দিন আমি আপনাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তা যদি আপন স্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে তাজাল্লি ফেললেন ( জ্যোতি প্রকাশ করলেন) তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল এবং মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। পরে যখন তার সংজ্ঞা ফিরে আসল, তখন সে বলল, আপনার সত্তা পবিত্র। আমি আপনার দরবারে তওবা করছি এবং (দুনিয়ায় কেউ আপনাকে দেখতে সক্ষম নয়- এ বিষয়ের প্রতি) আমি সবার আগে ঈমান আনছি।'
আবার -সূরা কাসাস: ২৯-৩০-এ বলা হয়েছে-
'মুসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করল এবং নিজ স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, তখন
সে তুর পাহাড়ের দিকে এক আগুন দেখতে পেল। সে নিজ পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা
অপেক্ষা কর। আমি এক আগুন দেখেছি, হয়ত আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব
কোনো সংবাদ অথবা আগুনের একটা জ্বলন্ত কাঠ, যাতে তোমরা উত্তাপ গ্রহণ করতে পার।
সুতরাং সে যখন আগুনের কাছে পৌঁছল, তখন ডান উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বরকতপূর্ণ
ভূমির একটি বৃক্ষ থেকে ডাকা হলো- হে মুসা! আমিই আল্লাহ, জগৎসমূহের প্রতিপালক।
হযরত মুসা (আঃ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খ্রিস্টান বাদশাহ কনস্টানটাইন ৩৬৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে
এই স্থানে একটি গীর্জা নির্মাণ করেন।