পিরামিড

ইংরেজি : Pyramid
পিরামিড মূলত এক ধরনের ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিক নকশা। এই নকশার ভূমি হয় একটি বহুভুজাকৃতির ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রের প্রতিটি বাহু থেকে ত্রিভুজাকার ক্ষেত্র উপরের দিকে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। এর ফলে যে ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি হয়, তাকেই বলা হয় পিরামিড নকশা।

দেখুন : পিরামিড (জ্যামিতিক)

পিরামিডের এই নকশার ধারণা গণিত শাস্ত্রে প্রবেশ করেছে প্রাচীন মিশরের স্থাপনা অনুসরণে। মূলত পিরামিড বলতে জ্যামিতিক নকশার চেয়ে অধিকতর প্রাধান্য পায়, মিশরের পিরামিড নামক স্থাপত্য। যদিও পিরামিড বলতে মিশরের পিরামিডকেই মনে পড়ে। কিন্তু প্রাচীন বহুস্থানেই প্রাচীন মানুষেরা পিরামিড তৈরি করেছিল। এই স্থাপনাগুলোর সবই চতুর্ভুজাকৃতির পিরামিড।

দেখুন : মিশর

পিরামিড (মিশর)
প্রাচীন মিশরের ফারাও রাজাদের সমাধির উপর নির্মিত চতুর্ভুজাকার পিরামিডের স্থাপত্যকর্মই সাধারণভাবে মিশরের পিরামিড নামে পরিচিতি। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিশরে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ১৩৫টি পিরামিড পাওয়া গেছে। এই পিরামিডগুলোর অধিকাংশই মিশরের রাজধানী কায়রোর কাছে। একটি রাজকীয় পিরামিড কায়রো থেকে দূরে। এর অবস্থান কায়রোর দক্ষিণে। এর ভিতরের সবচেয়ে বড় পিরামিডটির গিজা'র পিরামিড বা খুফু'র পিরামিড।

মিশরবাসী মনে করতো, মানুষ মারা যাবার পর তাদের দেহ নষ্ট হলেও আত্মা বেঁচে থাকে। মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মা যাতে সুখে থাকতে পারে, সে জন্য সুরক্ষিত বিশাল আয়তনের সমাধিক্ষেত্র তৈরি করতো। মৃত্যুর পর দেহ অক্ষুণ্ণ থাকলে, আত্মা সে দেহে ফিরে আসতে সক্ষম হবে, এমনটাই তারা বিশ্বাস করতো। তাই তারা মৃতদেহকে মমি বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রা
খতো। সাধারণ মানুষের জন্য এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল হলেও সম্রাটদের জন্য তা ছিল না। তাই তারা তাদের সমাধিতে নিজেদের দেহ তো বটেই, তাঁদের দাসদাসীদের পর্যন্ত হত্যা করে, মমি বানিয়ে পিরামিডের ভিতর রেখে দিতো। সম্রাটদের মৃতদেহের সাথে, তাদের ব্যবহার্য মূল্যবান সামগ্রীও পিরামিডের ভিতরের সুনির্দিষ্ট কক্ষে রাখা হতো। এই সব মূল্যবান সামগ্রীর বেশিরভাগই অবশ্য পরবর্তী সময়ে চোরের দল সুরঙ্গ কেটে নিয়ে গিয়েছে।

  গিজা'র পিরামিড বা খুফু'র পিরামিড
  পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহদাকারের পিরামিড। প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের তালিকায় মূলত এই পিরামিডকেই উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এই পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৬০-২৫৪০ অব্দের ভিতর। এর পিরামিডটির অবস্থান ৩১.১৩১০১৩ দ্রাঘিমাংশ এবং ২৯.৯৭৬৯৭৭ অক্ষাংশে। [সূত্র : গুগল ম্যাপ (maps.google.com) “29.976977, 31.131013”]। ভূমির সাথে পিরামিডের উপরিতলের ঢাল হচ্ছে ৫১°৫০'৪০" (৫১ ডিগ্রী ৫০ মিনিট ৪০ সেকেন্ড)।

এটাকে মূলত যথার্থ পিরামিড (True Pyramid) হিসাবে গবেষকরা আখ্যায়িত করেছেন। ধারণা করা হয়, এই পিরামিডটির নির্মাণ কালে যে উচ্চতা ছিল, বর্তমানে তা নেই। উল্লেখ্য বর্তমানে এর উচ্চতা ৪৫৫.৫ ফুট।  এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। তবে পিরামডটির ভিত্তির ক্ষেত্রফল ৫,৬৮,৫০০ বর্গফুট। ভিত্তির বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি বাহু গড়ে ৭৫৪ ফুট দীর্ঘ, যদিও বর্তমানে তা ৭৪৫ ফুট পর্যন্ত টিকে আছে। ধারণা করা হয় এই পিরামিডটি তৈরি করতে প্রায় লক্ষ শ্রমিক, ১৪ থেকে ২০ বছর ধরে কাজ করেছিল।

পুরো পিরামিড তৈরিতে চুনাপাথরের ব্লক ব্যবহার করা হলেও এর ভিতরে রাজার কক্ষ এবং তার উপরের অংশটি গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এই পিরামিডে প্রায় ২৩,০০,০০০ লাইমস্টোন ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি পাথরের গড় ওজন ২.৫ টন এবং কোন পাথরের ওজনই ২ টনের কম না। রাজার কক্ষের ওপর ছাদ হিসাবে সর্বোচ্চ ৯ টন ওজনের গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো পিরামিডটির ওজন প্রায় ৬০লক্ষ টন। প্রায় ৫০০ মাইল দূরের আসওয়ান থেকে নৌপথে (নীল নদ দিয়ে) ৫৫ লক্ষ টন লাইমস্টোন এবং ৫০,০০০ টন গ্রানাইড আমদানি করা হয়েছিল।

ঠিক কি পদ্ধতিতে এই পাথরের ব্লকগুলো উপরে উঠিয়ে ধাপে ধাপে বসানো হয়েছিল, তা সবই অনুমান করা হয় মাত্র। তবে বেশিরভাগ অনুমানকারীদের মতে- অনেক দূর থেকে মাটির ঢাল তৈরী করে সেই ঢালের উপর দিয়ে টেনে টেনে পাথরগুলো উপরে তোলা হতো। এক্ষেত্রে কপিকল ব্যবহৃত হতো। ফরাসী স্থপতি 'জিন পিয়েরে হডিন'-এর (Jean-Pierre Houdin) মতে পিরামিডের ভিতর ঢালু সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল এবং এই সুরঙ্গ পথে টেনে টেনে পাথরগুলো উপরে নেয়া হয়েছে। পরে পিরামিড তৈরি হওয়ার পর সুরঙ্গ ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

প্রাচীন মিশরীয়রা যে পরিমাপ করতো, তাকে একালের বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন 'রয়াল কিউবিট'। ১ রয়াল কিউবিট ছিল ২০.৬ থেকে ২০.৬৪ ইঞ্চির সমান।
 


সূত্র :

http://www.usatoday.com/tech/science/2007-05-16-pyramid-theory_N.htm
http://www.world-mysteries.com/mpl_2.htm