মিশরের ইতিহাস

খ্রিষ্টপূর্ব ২ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে, বর্তমান মিশরের নীল নদের উভয় প্রান্ত জুড়ে ছিল বিস্তীর্ণ ঘাসে ঢাকা প্রান্তর। এই সময় এই অঞ্চলে প্রচুর উদ্ভিদভোজী প্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। আদি মানবগোষ্ঠীর একদল এখানে প্রবেশে করেছিল এই সব পশু শিকারের জন্য। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০০ বৎসরের দিকে এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়। এই সময় নীলনদের উভয় প্রান্তে বরাবর নলখাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ ছাড়া বেশিরভাগ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই অঞ্চলের শিকারীরা ক্রমে ক্রমে চাষাবাদ শিখে কৃষিনির্ভর জীবনে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। এই সময় এদের বসতি গড়ে উঠে মধ্য মিশর এবং নীল-বদ্বীপ অঞ্চলে।

খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ থেকে ৬০০০ অব্দের ভিতরে ঊর্ধ্ব মিশরে বদারিয়ান সভ্যতার (Badari culture) পত্তন ঘটে। পরবর্তী প্রায় ৪৫০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ পর্যন্ত, অন্যকোনো জাতির বড় ধরনের আক্রমণ ছাড়াই প্রায় নির্বিবাদে এই অঞ্চলে বসবাস করেছিল। কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। এরা মাটির পাত্র তৈরি করা শেখে। এই সময় এরা Turquoise নামক রত্নের নানারকম রূপ দিয়ে পণ্যে পরিণত করা শেখে। এই কারণে এই রত্নটিকে মিশরের আদি রত্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নাডাক সভ্যতার মাটির পাত্র

খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের ভিতরে এই অঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সাথে বদারিয়ান সভ্যতার দ্রব্যাদির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এই পৃথক সভ্যতার নামকরণ করা হয়েছে নাকাডা (Naqada)। এই সভ্যতার মানুষেরা বদারিয়ান সভ্যতার মানুষদের বিতারিত করে নতুন সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল, না কি  বদারিয়ান সভ্যতার মানুষেরা এই সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল, তা স্পষ্টভাবে বলা যায় না। এরা কৃষিকাজের পাশাপাশি মৃত্তিকা-পাত্র তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী ছিল। এছাড়া কাঠ হাতির দাঁতের তৈরি নানারকমের চিত্তাকর্ষক পণ্য তৈরি করতে পারতো। বাইরে থেকে Lapis Lazuli নামক রত্ন আমদানি করতো এবং এই রত্ন থেকে নানা ধরনের সৌখিন পণ্য তৈরি করতো।

খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩৫০০ অব্দের ভিতরে নাকাডা সভ্যাতার মানুষের  জীবনযাত্রায় নানাভাবে পরিবর্তন ঘটে। এদের ছোটো ছোটো দল ছোটো রাজত্ব গড়ে তোলে। এবং প্রতিটি গোত্রের মানুষ পৃথক পৃথকভাবে ছোটো ছোটো কেন্দ্রীয় অঞ্চল হিসেবে সুগঠিত হয়ে উঠে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দের দিকে এরা আন্তঃবাণিজ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এরই সূত্রে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও ঘটতে থাকে। ছোটো ছোটৌ গোষ্ঠীগুলো মিলে বড়ধরনের প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিণত হতে থাকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দের দিকে পুরো মিশর দুটি প্রশাসনিক পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো- উচ্চ মিশর ও নিম্ন মিশর।

প্রাগৈতিহাসিক মিশরের ইতিহাসে শাসক হিসেবে যাদের নাম পাওয়া যায়, পৌরাণিক কাহিনিতে। পৌরাণিক চরিত্রগুলো মূলত দেবতা। এরা কিভাবে মিশরের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং এদের ভিতরের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কিভাবে কাজ করেছিল এসব নিয়ে মিশরের পৌরাণিক ইতিহাস রচিত হয়েছিল। এই ইতিহাস মানুষের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবনযাত্রা, ধর্মীয় বিধি ইত্যাদির সাথে জড়িত পরবর্তী বহুদিনের মানুষের কার্যক্রমকে প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রণ করেছিল।

জন শাসকের সূত্রে মিশরের রাজতন্ত্রের ইতিহাস পাওয়া যায়। এই বিচারে মিশরের আদি ইতিহাসকে পৌরাণিক যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরা মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনিতে দেবতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই যুগের দেবতারা ছিলেন

নিম্ন মিশরে এরূপ কিছু পৌরাণিক রাজার নাম পাওয়া যায়। এদের ভিতরে এদের দেবতারা ছিল- হেসকিউ (Hsekiu), খায়ু (Khayu), তিউ (Tiu), থেশ (Thesh), নেহেব (Neheb), ওয়াজনের (Wazner), মেখ (Mekh), দ্বি ফ্যালকন (Double Falcon)।

এর পরের পর্যায়ে কিছু শাসকের নাম পাওয়া যায়। এরাও ঠিক পূর্ণ মানবসত্তা নয়। খ্রিষ্ট-পূর্ব ২৩শ অব্দের ভিতরে তিন জন রাজার নাম পাওয়া যায়। এরা সবাই ছিলেন উচ্চ মিশরের শাসক। এরা হলেন-

ফারাও প্রথম রাজবংশ: নার্মার
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দের দিকে দক্ষিণাঞ্চলের রাজা স্কর্পিয়ন উত্তরাঞ্চল দখল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিকভাবে এই অভিযান ব্যর্থ হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ অব্দের দিকে তারা উত্তরাঞ্চল দখল করতে সক্ষম হয় এবং প্রথমবারের মতো উভয় মিশর একত্রিত হয়। এই যুদ্ধ জয়ের অধিনায়ক ছিলেন মেনেস। উল্লেখ্য মেনেসের অপর নাম নার্মার। এই রাজাই স্থাপন করে প্রথম ফারাও সাম্রাজ্য। নার্মার মেমফিস নামক স্থানে তার রাজধানী স্থাপন করে। নার্মার-এর পরে এই রাজ্যের রাজ হন তাঁর পুত্র হোর-আহা। নার্মার তাঁর পুত্র হোর-আহা-র হাতে রাজ্য সমর্পণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০৫০ অব্দ পর্যন্ত তিনি রাজ্য শাসন করেন। এরপর রাজ্য লাভ করেন দ্‌জের (
Djer)। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৩০৯১ অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।  দ্‌জের -এর পুত্র দ্‌জে (Djet) রাজত্ব করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০১ অব্দ পর্যন্ত। এরপর রাজত্ব লাভ করেন মেরনেইথ। তিনি কতদিন রাজত্ব করেন তা স্পষ্ট জানা যায় না। এরপর তার পুত্র ডেন রাজত্ব করেন ৪২ বৎসর। ডেন-এর পুত্র আনেদ্‌জিব রাজত্ব করেন ১০ বৎসর। এরপর এঁর পুত্র রাজা হন সেমেরখেৎ। এঁর রাজত্বকাল ছিল ৯ বৎসর। এরপর রাজত্ব লাভ করেন তাঁর পুত্র কা'আ। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৯০ অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ....

আখেনআতেন

ক্রমশ