কোয়াটার্নারি বরফ যুগ
Quaternary
Ice Age
পৃথিবীর পঞ্চম
এবং শেষ বরফযুগ। এই বরফ সংঘটিত
হয়েছিল কোয়াটার্নারি
অধিযুগ-এর প্রথম অন্তঃযুগ
প্লেইস্টোসিন
অন্তঃযুগে (২৫.৮ লক্ষ -১১ হাজার ৭ শত খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। কোয়াটার্নারি
অধিযুগের নামে এই বরফযুগকে
কোয়াটার্নারি
বরফযুগ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
প্লেইস্টোসিন
অন্তঃযুগের
শুরুতে অর্থাৎ
২৫.৮ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে, প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তর গোলার্ধের
মেরু সংলগ্ন এলাকার জলস্থল বরফ ঢেকে গিয়েছিল। এই অন্তঃযুগের
গেলাসিয়ান আমলের
শেষভাগ অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ১৮ লক্ষ ৬ হাজার অব্দের ভিতরে বরফের আগ্রাসন বিষুব অঞ্চল
পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এর ফলে এই সময়ে উত্তর মহাসাগর বিশাল বরফ-প্রান্তরে
পরিণত হয়। পরবর্তী
ক্যালাব্রিয়ান আমলের
শেষে অর্থাৎ ৭ লক্ষ ৮১ হাজার অব্দের ভিতরে শৈত-প্রবাহের সূত্রে এ্যান্টার্ক্টিকা মহাদেশে এবং গ্রিনল্যান্ডে
পুরু বরফস্তরের সৃষ্টি হয়েছিল। উল্লেখ্য এখনো এই বরফস্তর বিদ্যমান আছে।
আয়োনিয়ান আমলে
(৭.৮১- ১.২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং সমগ্র সাইবেরিয়া
অঞ্চলে ব্যাপক শৈত প্রবাহ বিদ্যমান ছিল। এই অবস্থাকে
কোয়াটার্নারি
বরফযুগের প্রথম ধাপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এরপর পৃথিবীর তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি
হয়েছিল
পেনুল্টাইমেট হিমবাহ অধিযুগ
(Penultimate Glacial Period)।
-
পেনুল্টাইমেট হিমবাহ অধিযুগ
(Penultimate Glacial Period)।
এর শুরু হয়েছিল ১ লক্ষ ৯৫ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ আর শেষ হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
উল্লেখ্য
কোয়াটার্নারি
বরফযুগের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে এই হিমযুগের নামকরণ করা হয়েছে
পেনুল্টাইমেট হিমবাহ অধিযুগ
।
এর শুরু দিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল।
এর ফলে বিষুব অঞ্চলে বরফের প্রভাব কমে গিয়েছিল। এর
ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে
সাগরের জলরাশি বৃদ্ধি করেছিল। এছাড়া বিশাল বিশাল বরফের স্তূপগুলোর
তলদেশ দুর্বল হয় পড়ার কারণে বড় বড়
হিমবাহ সচল হয়ে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে সূচিত ১ লক্ষ ৯৫ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
হিমযুগের আবির্ভাব হয়েছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ১ লক্ষ ৩৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে পৃথিবীর তাপামাত্রা আরও কমে গি্য়েছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল ইমিয়ান
আন্তঃ হিমবাহ অধিযুগ
।
- ইমিয়ান আন্তঃ
হিমবাহ অধিযুগ (Eemian
interglacial)। এই অধিযুগের শুরু
হয়েছিল ১,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। এই অধিযুগের তাপমাত্রা বর্তমান
পৃথিবীর তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। বর্তমান কালের উত্তর
মেরু অঞ্চলের তাপামাত্রার চেয়ে প্রায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস
বেশি ছিল। ফলে উত্তর মেরুতে বনভূমিতে কাষ্ঠাল বৃক্ষের উদ্ভব হয়েছিল। নরওয়ের
তুন্দ্রা অঞ্চল এবং ফিনল্যান্ড অঞ্চলে হ্যাজেল ও ওক গাছের বিস্তার ঘটেছিল।
১,২৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল।
পৃথিবীর হিমবাহগুলো নিঃশেষ হয়ে না গেলে, ব্যাপক হ্রাস পেয়েছিল। এই সময়
জলহস্তিদের একটি অংশ জার্মানির রাইন এবং ইংল্যান্ডের টেমস নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল।
আর ক্যানাডার বাফিন দ্বীপ এবং মেরুসংলগ্ন দ্বীপগুলোতে বৃক্ষের সম্প্রসারণ
ঘটেছিল। গ্রীষ্মকালে বর্তমান আলাস্কার উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তাপমাত্রা বৃদ্ধির
ফলে জমাট বরফের অস্তিত্ব ছিল না।
এরপর পৃথিবীর তাপমাত্রা আবার কমা শুরু করেছিল।
১,১৫,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমে গিয়ে আবার বরফের স্তূপ জমে
উঠা শুরু হয়েছিল। এবং এই সূত্রে শুরু হয়েছিল শেষ হিমবাহ অধিযুগ।
- শেষ হিমবাহ
অধিযুগ (Last Glacial Period)।
১,১০,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তাপমাত্রা এই অধিযুগের শুরু হয়েছিল।
এরই ভিতরে
৯৫,০০০ থেকে ২০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে উত্তর আমেরিকা এবং কানাডার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
জুড়ে বরফে ঢাকা পড়েছিল। বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলের বরফ-আবরণের নাম দিয়েছেন- লাউরেন্টিড বরফ আবরণ (Laurentide Ice
Sheet)। জমাটবদ্ধ বরফের বিশাল আবরণের
ফলে ভূপ্রকৃতিতে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটেছিল। সেই সাথে
গ্রীষ্মকালে সৃষ্টি হয়েছিল বিশালাকার হিমবাহ। তবে আলাস্কার উপকূলীয় ভাগে বরফ
মুক্ত ছিল। তবে আমেরিকার রকি পর্বব্তমালা বরফে ঢেকে গিয়েছিল। সাইবেরিয়ার নেভাদা
তুষারটুপির উদ্ভব হয়েছিল এই সময়। এছাড়া স্ক্যান্ডেনেভিয়ান তুষার ক্ষেত্রে
ব্রিটেন, ইউরোপের মূল ভূখণ্ড, উত্তর-পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছিল।
এই সময় এ সকল দেশসংলগ্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে হিমশৈলের আধিক্য ঘটেছিল। অন্যদিকে
দক্ষিণ মেরু এবং এর সংলগ্ন সাগর জল বিশাল বরফক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এর প্রভাবের
অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ বরফের আবরণে ঢাকা পড়েছিল। এই বরফ বলয়ে আটকা পড়েছিল
নিউজিল্যান্ড এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপপুঞ্জগুলো। দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, পশ্চিম
নিউ গায়না,
ইন্দোনেশিয়াতে এর প্রভাব পড়েছিল ব্যাপকভাবে।
১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে
এই হিমবাহ অধিযুগ শেষ হয়ে যায়। এই সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার
দক্ষিণাংশ থেকে ধীরে ধীরে বরফ অপসারিত হওয়া শুরু হয়েছিল। তবে সাগরের পানি এখনকার সময়ের বিচারে
প্রায় ১৫০ ফুট নিচে ছিল।
এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল বর্তমান
সাহারা মরুভূমি
অঞ্চলে।
ক্রমাগত তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার সূত্রে এই অঞ্চল ধীরে ধীরে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হতে থাকে। ১২০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে এই অঞ্চলের মাটি উর্বতা লাভ করেছিল। এই সূত্রে এই অঞ্চলে
সৃষ্টি হয়েছিল বৃহৎ অরণ্য। ফলে এই অঞ্চল তৃণভোজী প্রাণীর বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এদের ভিতরে
উল্লেখযোগ্য প্রাণী ছিল এন্টিলোপ ও গবাদি পশু। আবার তৃণভোজীদের সূত্রে এই অঞ্চলের জলভূমিগুলো কুমিরে
ভরে গিয়েছিল। সেই সাথে ডাঙ্গায় ছিল সিংহ, হায়না জাতীয় মাংশাসী প্রাণীকূল।
১৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সাইবেরিয়া এবং আলাস্কা থেকে নৌকায় চড়ে কিছু মানুষ উত্তর
আমেরিকার রোসি দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করেছিল। এদেরকে আর্লিংটন স্প্রিং ম্যান
(Arlington
Springs Man)
নামে অভিহিত করা হয়। ১০,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে উত্তর আমেরিকার ঊর্ধ্ব গ্রেটলেকের জমাটবাধা বরফ
গলতে শুরু করলে, এর বিপুল পরিমাণ জলরাশি নাইগ্রা নদী এবং নায়েগ্রা জলপ্রপাতের
সৃষ্টি করেছিল।
এশিয়ার
হিমালয় এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলের
বরফগলা জলে, হ্রদ এবং
নদ-নদী সৃষ্টি হয়েছিল।
কোয়াটার্নারি (Quaternary)
অধিযুগের
অন্তর্গত
হোলোসিন (Holocene)
অন্তঃযুগের সাব-বোরিয়াল (Subboreal)
পূর্বকালে মধ্যবর্তী সময়ে, অর্থাৎ প্রায় ৪,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপটির
উত্থান শুরু হয়েছিল এই বরফযুগের পরোক্ষ প্রভাবে।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org