হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস -এর আবির্ভাব
প্রায় ৫
লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আফ্রিকায়
এদের আবি্ভাব হয়েছিল।
এই সময় এদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল মরক্কো'র টান-টান নগরীর
আশপাশ জুড়ে। খ্রিষ্টাপূর্ব ৪,৫০,০০০
অব্দের ভিতরে
হোমো ইরেক্টাস-দের পাশাপাশি এরা মিশ্র সভ্যতার
পত্তন ঘটিয়েছিল। সম্ভবত
প্রায়
৪ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে এরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি
এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে এরা এশিয়া এবং ইউরোপে প্রবেশ করেছিল।
প্রায় ১ লক্ষ ৩০
বৎসর
আগে এরা
পুরোপুরি নিয়ানডার্থালের
প্রজাতিগত
গুণাবলী অর্জন করেছিল।
ধারণা
করা
হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব
৩৫,০০০ অব্দের ভিতরে এরা
মেসোপটেমিয়ায়
অনেকটা স্থায়ী আবাস গড়ে
তুলেছিল।
আফ্রিকার
আদিম প্রস্তর যুগের সূচনায়
হোমো ইরেক্টাস
এবং
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস-দের
সম-অংশভাগী ছিল। আফ্রিকার আদিম
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-দের ভিতরে শিল্পবোধের বিকাশ
ঘটেছিল। এরা সঙ্গীত ও ভাস্কর্যের প্রতি অনুরক্ত ছিল। তবে সঙ্গীত-যন্ত্রে কোনো নমুনা
পাওয়া না গেলেও ভাস্কর্যের একটি আদিম নমুনা পাওয়া গেছে, মরক্কোর টান-টান নগরীর কাছে।
এই ভাস্কর্যটি
টান-টানের ভেনাস
নামে বিশেষভাবে পরিচিত।
অনেকে মনে করেন এই মূর্তিটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি
হয়েছিল। পরে
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-রা এই মনুষ্যাকৃতির প্রস্তরখণ্ডকে
সংস্কার করে মনুষ্য মূর্তিতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরা এর গায়ে লালচে রঙ করার
জন্য লৌহ এবং ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত রঙ ব্যবহার করেছিল। সম্ভবত ঘটনা ঘটেছিল ৫ থেকে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
ইউরেশিয়ায়
হোমো ইরেক্টাসদের বিচরণ
ইউরেশিয়ায় যখন
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস,
ও
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-দের পদচারণ মুখর হয়ে উঠেছিল।
সে সময় আগের
হোমো ইরেক্টাসরা এই অঞ্চলে সগৌরবে বসবাস করতো। সম্ভবত ২,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আফ্রিকা থেকে আগত হোমো ইরেক্টাসরা, বর্তমান
ইস্রায়েল অধিকৃত গোলন মালভূমির
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত
রাম হ্রদে কাছে
বসতি স্থাপন করেছিল। এই অঞ্চলে
পাওয়া গেছে একটি নারীর মূর্তির ভাস্কর্য। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন 'বেরেখাত
রামের ভিনাস'
(Venus of Berekhat Ram)। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে
গোলান মালভূমি থেকে, হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় অফ জেরুজালেম-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ নামা
গোরেন-ইনবার এই ভাস্কর্যটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই মূর্তিটির উচ্চতা ৩৫ মিলিমিটার (১.৪
ইঞ্চি। একটি অমশৃণ লালচে পাথরের টুকরো কেটে ছেঁটে এই মূর্তিটি তৈরি করা
হয়েছিল।
হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাব
ধারণা করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বৎসর আগে
প্রাইমেট
বর্গের অন্তর্গত
হোমিনিডি
গোত্রের
হোমো
গণের অন্তর্গত
Homo sapiens
এর আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার মরোক্কোর জেবেল ইর্হৌদ (Jebel
Irhoud)
-তে। উল্লেখ্য আগে মনে করা হতো, দুই লক্ষ বৎসর আগে আদি মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল
ইথিওপিয়া অঞ্চলে।
[বিস্তারিত:
হোমো]
হোমো স্যাপিয়েন্সের একটি উপ-প্রজাতি ১ লক্ষ ৬০ হাজার বৎসর আগে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
নিয়ে বিকশিত হয়েছিল। এই প্রজাতিটি হলো
Homo sapiens idaltu।
আধুনিক মানুষের মূল প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়-
Homo
sapiens
sapiens উপ-প্রজাতিকে।
আধুনিক মানুষের
বৈজ্ঞানিক নাম হলো-
Homo sapiens
। ল্যাটিন
sapiens
-এর অর্থ হলো জ্ঞানী মানুষ। হোমো গণের আগের প্রজাতিগুলোর থেকে এই প্রজাতির মূল
পার্থক্য হলো- এর বুদ্ধিমত্তা। এমন কি নিয়ানডার্থালদের (হোমো
নিয়ানডার্থালেনসিস)
সাথে মস্তিষ্কের পরিমাপগত মিল (১৭০০ সিসি) থাকলেও বুদ্ধিমত্তার বিচারে
Homo sapiens
আরও অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে।
প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদের
একটি দল
আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং কালক্রমে এরা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে
পড়ে। পরবর্তী ৭৫ থেকে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদেরই একটি শাখা
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল।