আয়োনিয়ান আমল
Ionian age
৭.৮১- ১.২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ

প্লেইস্টোসিন অন্তঃযুগের তৃতীয় আমল। এই আমলের শুরু হয়েছিল ৭ লক্ষ ৮১ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এবং শেষ হয়েছি ১ লক্ষ ২৬ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই আমলের শেষে শুরু হয়েছিল টারান্টিয়ান আমল

এই আমলে
কোয়াটার্নারি বরফ যুগের অন্তর্গত পেনুল্টাইমেট হিমবাহ আমল ১ লক্ষ ৯৪  হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সংঘটিত হয়েছিল । এই আমল শেষ হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এরপর ক্রমে ক্রমে পৃথিবী উষ্ণতর দশায় পৌঁছায়। এই সূত্রে শুরু হয়েছিল ইমিয়ান আন্তঃ হিমবাহ আমল
(Eemian interglacial)

এই হিমবাহ যুগের বরফশীতল পরিবেশে ম্যামোথ নামক স্তন্যপায়ী বসবাস করতো। এ ছাড়া এই আমলে ৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আফ্রিকায় হোমো হাইডেলবার্গেনসিস-দের আবির্ভাব ঘটেছিল

হোমো হাইডেলবার্গেনসিস-এর আবির্ভাব
ধারণা করা হয় লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এরা আফ্রিকাতেই ছিল। খাদ্য সংকট এবং প্রাকৃতি পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকা ইউরেশিয়ার দিকে চলে আসে। এরা জর্মান, ইতালি, স্পেন, গ্রিস প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের একটি শাখা ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা যায়। এরা বর্তমান পাকিস্তানের সোয়ান উপাত্যাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের সীমান্ত বরাবর সম্প্রসারিত শিবালিক পাহাড়ী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে এদের একটি শাখা উত্তর ভারতের নর্মদা নদীর তীরে এদের একটি অংশ বসতি স্থাপন করেছিল।

সোয়ান উপত্যাকার আডিয়ালালা অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে পাথুরে যন্ত্রপাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর প্রকৃতি ছিল আশুলিয়ান যন্ত্রপাতি'র অনুরূপ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, এগুলো প্রায় ৫ থেকে ১২.৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ব্যবহৃত হত।

ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং সমগ্র সাইবেরিয়া অঞ্চলে ব্যাপক শৈত প্রবাহ বিদ্যমান ছিল। ইউরোপের হিমশীতল পরিবেশে হোমো হাইডেলবার্গেনসিস
 টিকে থাকার জন্য আগুনের ব্যবহারটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। সম্ভবত এই সময় এরা শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মোটা পশুর চামড়া ব্যবহার করা শিখেছিল। এরূপ হিমশীতল পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে মাংস, হাড়, চামড়া সংগ্রহের জন্য বড় বড় পশু শিকার করতো দলবদ্ধভাবে। তখন এদের শিকারের তালিকায় ছিল- গণ্ডার, জলহস্তি, ভল্লুক, ঘোড়া, নানা ধরনের হরিণ।

হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস -এর আবির্ভাব
প্রায় ৫
লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আফ্রিকায় এদের আবি্ভাব হয়েছিল। এই সময় এদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল মরক্কো'র টান-টান নগরীর আশপাশ জুড়ে। খ্রিষ্টাপূর্ব ৪,৫০,০০০ অব্দের ভিতরে হোমো ইরেক্টাস-দের পাশাপাশি এরা মিশ্র সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল।  সম্ভবত প্রায় ৪ থেকে সাড়ে লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে এরা এশিয়া এবং ইউরোপে প্রবেশ করেছিল। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ বৎসর আগে এর পুরোপুরি নিয়ানডার্থালের প্রজাতিগত গুণাবলী অর্জন করেছিল  ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫,০০০ অব্দের ভিতরে এরা মেসোপটেমিয়ায় অনেকটা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছিল

আফ্রিকার আদিম প্রস্তর যুগের সূচনায়
হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো হাইডেলবার্গেনসিস-দের সম-অংশভাগী ছিল। আফ্রিকার আদিম হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-দের ভিতরে শিল্পবোধের বিকাশ ঘটেছিল। এরা সঙ্গীত ও ভাস্কর্যের প্রতি অনুরক্ত ছিল। তবে সঙ্গীত-যন্ত্রে কোনো নমুনা পাওয়া না গেলেও ভাস্কর্যের একটি আদিম নমুনা পাওয়া গেছে, মরক্কোর টান-টান নগরীর কাছে। এই ভাস্কর্যটি  টান-টানের ভেনাস নামে বিশেষভাবে পরিচিত।

অনেকে মনে করেন এই মূর্তিটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছিল। পরে হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-রা এই মনুষ্যাকৃতির প্রস্তরখণ্ডকে সংস্কার করে মনুষ্য মূর্তিতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরা এর গায়ে লালচে রঙ করার জন্য লৌহ এবং ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত রঙ ব্যবহার করেছিল। সম্ভবত ঘটনা ঘটেছিল ৫ থেকে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।


ইউরেশিয়ায় হোমো ইরেক্টাসদের বিচরণ
ইউরেশিয়ায় যখন
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস, ও  হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-দের পদচারণ মুখর হয়ে উঠেছিল।  সে সময় আগের হোমো ইরেক্টাসরা এই অঞ্চলে সগৌরবে বসবাস করতো। সম্ভবত
২,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আফ্রিকা থেকে আগত হোমো ইরেক্টাসরা, বর্তমান ইস্রায়ে অধিকৃত গোলন মালভূমির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রাম হ্রদে কাছে বসতি স্থাপন করেছিল। এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে একটি নারীর মূর্তির  ভাস্কর্য। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন 'বেরেখাত রামের ভিনাস' (Venus of Berekhat Ram)। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে গোলান মালভূমি থেকে, হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় অফ জেরুজালেম-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ নামা গোরেন-ইনবার এই ভাস্কর্যটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই মূর্তিটির উচ্চতা ৩৫ মিলিমিটার (.৪ ইঞ্চি। একটি  অমশৃণ লালচে পাথরের টুকরো কেটে ছেঁটে এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল।

হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাব
ধারণা করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বৎসর আগে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের হোমো গণের অন্তর্গত Homo sapiens এর আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার মরোক্কোর জেবেল ইর্হৌদ (Jebel Irhoud) -তে। উল্লেখ্য আগে মনে করা হতো, দুই লক্ষ বৎসর আগে আদি মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল ইথিওপিয়া অঞ্চলে।
        [বিস্তারিত:
হোমো]

হোমো স্যাপিয়েন্সের একটি উপ-প্রজাতি ১ লক্ষ ৬০ হাজার বৎসর আগে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকশিত হয়েছিল। এই প্রজাতিটি হলো
Homo sapiens idaltu। আধুনিক মানুষের মূল প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়-  Homo sapiens sapiens উপ-প্রজাতিকে।

আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Homo sapiens । ল্যাটিন sapiens -এর অর্থ হলো জ্ঞানী মানুষ। হোমো গণের আগের প্রজাতিগুলোর থেকে এই প্রজাতির মূল পার্থক্য হলো- এর বুদ্ধিমত্তা। এমন কি নিয়ানডার্থালদের (হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস) সাথে মস্তিষ্কের পরিমাপগত মিল (১৭০০ সিসি) থাকলেও বুদ্ধিমত্তার বিচারে Homo sapiens আরও অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে।

প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এ
দের একটি দল আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং কালক্রমে এরা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।  পরবর্তী ৭৫ থেকে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদেরই একটি শাখা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল।
 

 


সূত্র :