|
হোমো এর্গাস্টার
Homo ergaster
হোমো
গণের একটি প্রজাতি।
প্রাপ্ত জীবাশ্মের সূত্রে প্রাথমিকভাবে এই প্রজাতির আবির্ভাব কাল ধরা হয়েছিল ১৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
পরে নানা ধরনের পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন যে,
প্রায় ১৯ লক্ষ বৎসর পূর্বে এদের উদ্ভব হয়েছিল দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকাতে এবং
এই প্রজাতি প্রায় ১৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
এরা মাটির উপর দুই পায়ে সটান দাঁড়াতে পারতো। তাই প্রথম দিকে কোনো কোনো বিজ্ঞানী একে
হোমো ইরেক্টাস-এর
উপ-প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। বর্তমানে একে একটি পৃথক প্রজাতি হিসাবেই
স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হোমো গণের আগের প্রজাতিগুলো অপেক্ষা এদের বুদ্ধি ছিল
বেশি। এদের মাথার খুলির মাপ ছিল ৭০০-৮৫০ সিসি।
মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে ছিল ছোটো চক্ষু-গহ্বর। এই গহ্বরের উপরে ছিল বাঁকানো
ভ্রূ-রেখা।
ধারণা করা হয় এদের গড় উচ্চতা ছিল ১.৯ মিটার।
তুলনামূলকভাবে এদের পা দেহের উপরের অংশের চেয়ে বড় ছিল।
এদের নিতম্বের হাড়ের গড়ন দেখে মনে হয়- এরা দীর্ঘপথ
হাঁটতে বা দৌড়াতে পারতো। এদের হাতের ও পায়ের গড়ন ছিল আধুনিক মানুষের মতো।
আত্মরক্ষা এবং শিকারের জন্য এরা পাথুরে কুঠার ব্যবহার করতো। কারো কারো মতে
এরা আগুন ব্যবহার করতেও শিখেছিল। এই কারণে,
এদেরকে সরাসরি মানুষের পূর্ব-পুরুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকেন।
এছাড়া
কথা বলার উপযোগী স্বরতন্ত্র
এবং বাগ্-প্রত্যঙ্গের বিকাশ
হয়েছিল। এরা শিকারের জন্য নিক্ষেপণযোগ্য বর্শা ব্যবহার করতো।
মূলত এদের সাথে
হোমো ইরেক্টাসের
অনেক মিল থাকলেও- ধারণা করা এরা পূর্ববর্তী কোনো অজ্ঞাত প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে আত্মপ্রকাশ
করেছিল। আদিতে এরা আফ্রিকার কেনিয়া অঞ্চলে বসবাস করতো। পরে এদের দু একটি দল- মিশর
পেরিয়ে এশিয়া অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল।
প্রায় ২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার আদিম কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছিল
প্রক্রিয়া রপ্ত করেছিল
হোমো
হ্যাবিলিসরা।
ওল্ডুভিয়ান সভ্যতার বিচারে
এদের সৃষ্ট যন্ত্রপাতি 'ওল্ডুয়ান' নামে পরিচিত। সম্ভবত এরই ধারাবাহিকতায় হোমো এর্গাস্টারা পাথুরে অস্ত্রপাতির উন্নতি করেছিল,
নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে। এদের তৈরি করা হাতিয়ার আকার ছিল অনেকটা নাসপাতির মতো। বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যর
হাতিয়ারের নামকরণ করেছেন 'আশুলিয়ান হাতিয়ার বা
আশুলিয়ান যন্ত্রপাতি। প্রায় ১৭.৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা এই সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতো।
ফ্রান্সে প্রাপ্ত আশুলিয়ান কুঠারের নমুনা |
১৯৭১
খ্রিষ্টাব্দে কেনিয়ার কুবি ফোরা অঞ্চলে এর চোয়ালের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রিচার্ড
লিকি
(Richard Leakey)।
KNM ER3733 |
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে
Colin Groves
এবং
Vratislav Mazák
একে একটি পৃথক প্রজাতি হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব রাখেন। গ্রিক
ergaster
অর্থ শ্রমিক।
এদের জীবাশ্মের কাছে কিছু পাথুরের যন্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাওয়ার কারণে,
কর্মঠ মানুষ অর্থে
এই নামের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে কেনিয়ার কুবি ফোরা অঞ্চলে এর জীবাশ্ম
আবিষ্কার করেন বার্নাড এনজেনেও। এর নমুনা সংখ্যা
KNM ER 3733।
এর বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ধারণা করা হয়,
এটি একটি পরিণত নারীর খুলি।
3883 |
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কেনিয়ার কুবি ফোরা অঞ্চলে এর অপর একটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রিচার্ড লিকি
(Richard Leakey)।
এর নমুনা সংখ্যা
3883 এর বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ১৫ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
প্রথম দিকে একে
হোমো ইরেক্টাস-এর
খুলি মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এই ধারণা বাতিল করে হোমো এর্গাস্টার-এর
খুলি হিসাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
Homo ergaster 15000 |
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে অগাস্ট কেনিয়ার পশ্চিম তুর্কানা (West Turkana) অঞ্চল থেকে বিজ্ঞানী কামোয়া কিমেউ (Kamoya Kimeu) একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন। এর নমুনা সংখ্যা Homo ergaster 15000। এর বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ১৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এটি ছিল একটি ৯-১২ বৎসরের একটি বালকের কঙ্কাল। এর বাম উরু ও হাতের উর্ধাংশের অস্থি ছিল না। এই অপরিণত বালকের কঙ্কালের আকার ছিল আধুনিক শিম্পাঞ্জির মতো। এর মৃত্যুর সময় উচ্চতা ছিল মাত্র ৫ ফুট। ধারণা করা হয় পরিণত বয়সে এর উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট পরিমিত হতো।