হোমো
Homo
প্রাণিজগতের
হোমিনিডি গোত্রের
একটি গণ বিশেষ। ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে লিনিয়াস
(Linnaeus)
এর নামকরণ করেছিলেন। আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভাষায় এটি শুধুই গণ নয়। সামগ্রিকভাবে হোমো হলো মানুষের সমার্থক শব্দ।
এর ভিতরে আধুনিক মানুষ হলো-
Homo sapiens
হোমো স্যাপিয়েন্স। এর বাইরে অন্যান্য প্রজাতিগুলোকে বলা যায় প্রাচীন মানুষ।
হোমো গণের প্রজাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- পরিবেশ অনুসারে বিশেষ
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। এর ভিতরে প্রকাশ পায় বুদ্ধিমত্তার। এই ক্ষমতার বিশেষ
প্রকাশ ঘটেছিল
হোমিনিডি আদিম প্রজাতিগুলোর
ভিতরে। এই বুদ্ধিমত্তার বিশেষ প্রকাশ দেখতে পাই, মানুষের নিকটবর্তী প্রজাতিগুলোর ভিতরে। বিশেষ করে শিম্পাঞ্জী, গোরিলা
এবং বানরকুলের ভিতরে।
জীবজগতের ক্রমবিবর্তনের ধারায় অনেক পথ পেরিয়ে এসে
প্রাইমেট
বর্গের উদ্ভব হয়েছিল ১ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। আর ক্রমবিবর্তনের ধারায় হোমো গণের উদ্ভব হয়েছিল ২৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
হোমোনিডি থেকে হোমো
১ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
প্রাইমেট
বর্গের
হোমিনোইডিয়া
ঊর্ধগোত্র তথা
এপরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি
হলো-
হোমিনিডও
হাইলোবাটাইডি।
Hylobates,
Hoolock, Nomascus
এবং
Symphalangus)
এবং
গিবোনের
১২টি প্রজাতি। এদের একত্রে বলা হয় ক্ষুদ্র এপ
(lesser apes)
হোমিনিডি
গোত্রের প্রাণীসমূহ।
এর ভিতরে রয়েছে
গরিলা,
শিম্পাঞ্জি,
ওরাংওটাং এবং
মানুষ।
- ১.৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হোমিনিডি গোত্রের প্রাণীকুলের বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
-
পোঙ্গো গণ: এই গণের প্রাণীদের সাধারণ নাম
ওরাংওটাং।
-
হোমিনিনাই
উপগোত্র: ৬০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
হোমিনিনাই
উপগোত্রটি দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
-
গোরিল্লিনি গোষ্ঠী: এই গোষ্ঠী থেকে উদ্ভব হয়েছে গরিলা।
-
হোমিনিনি গোষ্ঠী:
৫০.৬-২১ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই গোষ্ঠী থেকে
অষ্ট্রালোপিথেকিনা
উপগোষ্ঠী পৃথক হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট প্রজাতি থেকে উদ্ভব
হয়েছিল ৩টি গণ। এগুলো হলো-
কেনিয়ান্থ্রোপাস
গণ: এই গণ থেকে উদ্ভব হয়েছিল
Kenyanthropus platyops
নামক প্রজাতি।
হোমো গণ:
এই গণ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল আদিম থেকে আধুনিক মানবগোষ্ঠী।
এক সময় মনে করা হতো-
হোমো গণের
প্রজাতি বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছিল সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে। এরা নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে
নিজেদের প্রয়োজনীয় জীবনধারণের উপকরণ প্রকৃতি থেকে
সংগ্রহ করতে শিখেছিল এবং উপাদানসমূহ থেকে নানাবিধ উপকরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়া নিজেদের অভিজ্ঞতাকে তার স্বজাতির কাছে প্রকাশ করার কৌশল আয়ত্ব করতে পেরেছিল।
ফলে এরা বহুজনের জ্ঞানকে একীভূত করে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে কেনিয়ার তুরকানা কাউন্টির
লোমেক্উইযখন
কেনিয়ান্থ্রোপাস
গণের
Kenyanthropus platyops
প্রজাতির ব্যবহৃত পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হলো, তখন দেখা গেল সৃজনশীল
ক্ষমতার গুণ শুধু
হোমো গণের
প্রজাতির ভিতর বিকাশিত হয়েছিল, এমনটা নয়। ৪৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
আফ্রিকাতে আবির্ভুত
অস্ট্রালোপিথেকাসের ভিতরে
এই বিশেষ ক্ষমতার স্ফূরণ দেখা গিয়েছিল। তবে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ করতে পারে নি। এর পরে
হোমিননি গোষ্ঠীর Kenyanthropus platyops
প্রজাতিটির ভিতর সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ ঘটেছিল। তূলনমূলকভাবে এরা বুদ্ধিমত্তা দিক
থেকে
কেনিয়ান্থ্রোপাসরা
অস্ট্রালোপিথেকাদের চেয়ে
অগ্রসর ছিল।
হোমো গণের
আদিম প্রজাতিগুলো গোড়াতেই সুগঠিত ভাষার ব্যবহার শিখে উঠতে পারে নি বটে, কিন্তু এরা অঙ্গসঞ্চালন
এবং কিছু ধ্বনি ব্যবহার করে, যোগাযোগ এবং ভাব বিনিময় করতে শিখেছিল। এই ধারায় হোমো গণের
আদিম কোন প্রজাতির আবির্ভাব হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে হোমো গণের প্রজাতিসমূহের
সর্বপ্রাচীন জীবাশ্ম হিসেবে
হোমো হ্যাবিলিসদের বিবেচনা করা হয়।
২৬
লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আফ্রিকাতে এই প্রজাতির
উদ্ভব হয়েছিল।
আর
১৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
হোমো হ্যাবিলিস
(Homo habilis)
অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে- প্রায় ২৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
হোমিনিনি
গোষ্ঠী থেকে
হোমো গণের
আবির্ভাব হয়েছিল। আর ২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আফ্রিকাতে এই গণের
নাম প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল।
এরা আফ্রিকা
মহাদেশের
তান্জানিয়ার
ওল্ডুভাই জর্জ
(Olduvai Gorge)
অঞ্চলে নিম্নপ্রস্তর-যুগের সূচনা ঘটিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা একে
ওল্ডুভিয়ান সভ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এই সভ্যতার পত্তনকারী হোমো হ্যাবিলিসদের উচ্চতা ছিল মাত্র ১-১.৫ মিটার এবং ওজন ছিল ৩০-৩২ কেজি। আধুনিক মানুষের চেয়ে
এদের হাত ছিল অপেক্ষাকৃত বড়। এরা হাতের সাহায্যে হাতিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই কারণে এদের নামকরণ করা হয়েছে হাতুরে মানব
(habillis=handy
man)।
কারণ এদের আবিষ্কৃত জীবাশ্মের কাছে কিছু পাথুরে অস্ত্র পাওয়া
যায়।
এদের মুখ ছোট হলেও,
নাক ততটা নিচু ছিল না এবং চোয়ালের গড়নও ছিল এপদের চেয়ে পাতলা। এদের মাথার খুলির
মাপ ছিল ৫০০-৬৫০ সিসি। বলাই বাহুল্য আধুনিক মানুষের চেয়ে এদের করোটির মাপ ছিল কম। এই বিচারে বলাই যায় এরা বুদ্ধিমত্তা এবং সৃজনশীল ক্ষমতার বিচারে
আধুনিক মানুষের সমকক্ষ ছিল না। এছাড়া এরা দুই পায়ে ভর করে মাটির উপরে সোজা দাঁড়াতে পারতো না।
হোমো রুডোলফেনসিস
প্রায় ২৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল এবং ১৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এরা পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলে বসবাস করতো। সম্ভবত এর বাইরে তাঞ্জানিয়া এবং মালউই-এর উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত
ছড়িয়ে পড়েছিল। এদেরকে অনেকে মনে করেন যে, এরা ছিল হোমো ও
অস্ট্রালোপিথেকাসদের
মধ্যবর্তী কোনো প্রজাতি। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ১.৫ মিটার, খুলির মাপ ছিল ৬০০-৮০০ সিসি।
তুলনামূলকভাবে
হোমো হ্যাবিলিসদের চেয়ে এরা বেশি বুদ্ধিমান ছিল।
কারণ
হোমো হ্যাবিলিসদের মাথার খুলির মাপ ছিল ৫০০-৬৫০ সিসি।
এরা সটান মাটির উপর দাঁড়তে পারতো না।
হোমো ইরেক্টাস
২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বরফশীতল পরিবেশের ভিতরে এই প্রজাতির চেয়ে এক ধাপ উন্নত প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল
হোমো ইরেক্টাস।
পৃথিবীর ক্রমবিবর্তনের ধারায় তখন চলছিল
প্লেইস্টোসিন অন্তঃযুগ।
এই অন্তঃযুগের ২৫.৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে শুরু হয়েছিল
কোয়াটার্নারি
বরফযুগ'। প্রাথমিক পর্যায়ে এই বরফযুগের প্রভাবে উত্তর গোলার্ধের মেরু সংলগ্ন এলাকার জলস্থল বরফ ঢেকে গিয়েছিল।
২০.৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের পরে বেশকিছু
হিমযুগ
ও আন্তঃ হিমযুগ সংঘটিত হয়েছিল। এর ফলে এই সময়ে উত্তর মহাসাগর বিশাল
বরফ-প্রান্তরে পরিণত হয়েছিল।
এই বরফশীতল পরিবেশের ভিতরে ২০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আফ্রিকার পরিবেশ ও
শীতল দশায় পৌঁছেছিল। এই পরিবেশে
২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
হোমো ইরেক্টাস স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
এদের গড় উচ্চতা ছিল ১.৮ মিটার। এদের গড় ওজন ছিল ৬০ কেজি। খুলির গড়ন ছিল আধুনিক মানুষের মতো। খুলির পরিমাপ ছিল
৯০০-১১০০ সিসি। এরা আধুনিক মানুষের মতো দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতো এবং হাত ও
পায়ের আনুপাতিক দৈর্ঘ্য ছিল আধুনিক মানুষের মতো।
প্রায় ১৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই প্রজাতিটিই
আফ্রিকার বিভিন্ন
অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের একটি শাখা ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করে। পরে এই শাখাটি
বিভাজিত হয়ে একটি শাখা ইউরোপের ককেশাশ অঞ্চলে থেকে যায়। অবশিষ্ট অংশের একটি দল
প্রথমে চীনে প্রবেশ করে। পরে এর একটি এর একটি দল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপাঞ্চলে চলে
যায়। বিশাল অঞ্চল জুড়ে এই প্রজাতিটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে, বিভিন্ন স্থানে এই
প্রজাতিটির বিবর্তিত হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন ধারায়। এসকল প্রজাতির জীবাশ্মগুলোকে
বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে এবং নানা নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন-
জাভা মানব,
সোলো মানব,
পিকিং মানব ইত্যাদি।
হোমো এর্গাস্টার
প্রায় ১৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবিরর্ভূত হয়েছিল
হোমো এর্গাস্টার
নামক অপর একটি প্রজাতি। আর ১৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূরআব্দে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এরা মাটির উপর দুই পায়ে সটান দাঁড়াতে পারতো। তাই প্রথম দিকে কোনো কোনো বিজ্ঞানী একে
হোমো ইরেক্টাস-এর
উপ-প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। বর্তমানে একে একটি পৃথক প্রজাতি হিসাবেই
স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হোমো গণের আগের প্রজাতিগুলো অপেক্ষা এদের বুদ্ধি ছিল
বেশি। এদের মাথার খুলির মাপ ছিল ৭০০-৮৫০ সিসি।
ধারণা করা হয় এদের গড় উচ্চতা ছিল ১.৯ মিটার।
এদের নিতম্বের হাড়ের গড়ন দেখে মনে হয়- এরা দীর্ঘপথ
হাঁটতে বা দৌড়াতে পারতো। এদের হাতের ও পায়ের গড়ন ছিল আধুনিক মানুষের মতো।
আত্মরক্ষা এবং শিকারের জন্য এরা পাথুরে কুঠার ব্যবহার করতো।
তবে এই কুঠারের আকার ছিল অনেকটা নাশপাতির মতো। এই বিশেষ ধরনের
যন্ত্রকে বলা হয়
আশুলিয়ান যন্ত্রপাতি।
১৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবিরর্ভূত হয়েছিল হোমো
গণের আরও দুটি প্রজাতি।
সম্ভবত এরা আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। এই কারণে,অনেকে এদেরকে সরাসরি মানুষের পূর্ব-পুরুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকেন।
মূলত এদের সাথে
হোমো ইরেক্টাসের
অনেক মিল থাকলেও- ধারণা করা এরা পূর্ববর্তী কোনো অজ্ঞাত প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে আত্মপ্রকাশ
করেছিল।
হোমো গটেনজেনসিস
হোমো এর্গাস্টারদের
পাশাপাশি
১৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এই প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছিল
আফ্রিকার কেনিয়া অঞ্চলে।
উদ্ভিদজাত খাদ্য খাওয়ার
উপযোগী এদের বেশ বড় বড় দাঁত ছিল। আধুনিক মানুষের চেয়ে এদের খুলি ছিল বেশ ছোট।
ধারণা করা হয়- এরা হাতিয়ার হিসাবে পাথর ব্যবহার করতে পারতো এবং আগুন ব্যবহার করতে
শিখেছিল। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ৩ ফুট এবং ওজন ছিল ১১০ পাউন্ড (৫০ কিলোগ্রাম)। এরা মাটিতে দুই
পায়ে হাঁটতো, তবে অধিকাংশ সময় এরা গাছে বসবাস করতো।
৬
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
হোমো জর্জিকাস:
সম্ভবত এদেরও আবির্ভাবকাল ১৮
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। অবশ্য এর যে খুলিটি পাওয়া গেছে, তা
১৭.৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
পুরানো। এদের মাথার খুলির মাপ
৬০০ ঘন-সেন্টিমিটার।
হোমো এন্টেসেসর:
প্রায় ১২ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে আফ্রিকা স্পেন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে আবির্ভূত হয়েছিল। ৮
লক্ষ বৎসর আগে এরা ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইউরোপে যে কয়েকটি মনুষ্য- প্রজাতি বসবাস
করতো- হোমো এন্টেসেসর ছিল তার মধ্যে একটি। ধারণা করা হয় এরা ছিল
হোমো এর্গাস্টার
এবং
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস
-এর মধ্যবর্তী একটি প্রজাতি। কিন্তু Richard
Klein-সহ আরও অনেক বিজ্ঞানী মনে
করেন
হোমো এর্গাস্টার
থেকে বিবর্তিত হয়ে এই প্রজাতিটির উদ্ভব হয়েছিল। বৈশিষ্ট্যে বিচারে এরা
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস-এর
কাছাকাছি ছিল। আবার অনেকে মনে করেন
হোমো এন্টেসেসর আর
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস
একই প্রজাতি।
হোমো আটল্যান্থ্রোপাস
ধারণা
করা হয়,
১২ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
এই প্রজাতির বিকাশ ঘটেছিল
আফ্রিকার
মৌরতানিয়া অঞ্চলে । এদের উচ্চতা ছিল ১.৭-১.৮
মিটার এবং ওজন ছিল ৬০ কেজি। এদের মস্তিস্কের পরিমাণ ছিল ১০০০-১১০০
ঘন-সেন্টিমিটার।
হোমো সেপ্রানেনসিস
প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল এই প্রজাতিটি
৯-৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে জীবিত ছিল। এই সময় এর সাথে
হোমো
ইরেক্টাস-এর খুলির অনেক মিল লক্ষ্য করে, অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো এই খুলিও
হোমো
ইরেক্টাস-এর। পরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা
করে অনুমান করেছেন, হয়তো এরা ৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বৎসর আগে পৃথক প্রজাতি
হিসেবে বিকশিত হয়েছিল।
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস
প্রায় ৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবিরর্ভূত হয়েছিল।
ধারণা করা হয় ৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এরা আফ্রিকাতেই
ছিল। খাদ্য সংকট এবং প্রাকৃতি পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে
৪-৩ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকা ইউরেশিয়ার দিকে চলে আসে।
এরা জর্মান, ইতালি, স্পেন, গ্রিস প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের একটি শাখা
ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা যায়। উত্তর ভারতের নর্মদা নদীর তীরে এদের
একটি অংশ বসতি স্থাপন করেছিল।
এই দলটি পরে দুটি স্বতন্ত্র দলে পরিণত হয়। এই দল দুটি হলো-
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস
ও
ডেনিসোভান মানব।
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস
প্রায় ৫
লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আফ্রিকা
এবং ইউরেশিয়ায় বসবাসকারী
হোমো
গণের একটি প্রজাতি বিশেষ। ধারণা করা হয়,
হোমো স্যাপিয়েনদের্
আগ্রাসন বা জলবায়ুর পরিবর্তন বা কোনো কারণে সংঘটিত মহামারীতে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
হোমো
নালেডি
৩.৩৫-২.৩৬
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিলে এরা দক্ষিণ আফ্রিকা গটেনবার্গ প্রদেশে বসবাস করতো।
এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য অস্ট্রালোপিথেকাস এবং হোমো গণের প্রজাতিগুলোর সাথে বেশি মিল
ছিল।
এদের গড়
উচ্চতা ছিল মাত্র ১৪৬
সেন্টিমিটার এবং গড়
ওজন ছিল ৩৯-৫৫
কেজি।
এদের করোটির পরিমাপ হলো ৪৬০-৬১০ ঘনসেন্টিমিটার।
এরা শিকারী ছিল। মাংসের পাশাপাশি এরা বনজ ফলমূল আহার করতো।
হোমো রোডেসিয়েনসিস
প্রতায়
৩ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবিরর্ভূত হয়েছিল। এদের অপর নাম
রোডেশিয়া মানবে।
এদের সাথে
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস
সাথে এর মিল পাওয়া
যায়।
কিন্তু মাথার খুলির মাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- রোডেশিয়া মানবের খুলির মাপ
ছিল হাইডেলবার্গেনসিস-এর চেয়ে বড়।
এই বিচারে বলা যায়, এর স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
সূত্র:
http://humanorigins.si.edu/evidence/human-fossils/species/homo-rudolfensis