|
![]() |
Engis 2 |
![]() |
Gibraltar 1 |
|
Homo neanderthalensis Shanidar 1 |
১৯০৯ ফ্রান্সের
Le Moustier
অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় অপর একটি মাথার খুলির জীবাশ্ম। এর আনুমানিক বয়স ধরা হয়েছে- ৪৫
হাজার বৎসর। তবে আবিষ্কারকের নাম জানা যায় নাই। এই জীবাশ্মটি
Homo neanderthalensis_lLe Moustier
নামে
পরিচিত। এছাড়া উত্তর ইরাকের শানিদার গুহায় এই প্রজাতির একটি
খুলির জীবাশ্ম পাওয়া যায় ১৯৫৩-৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রালফ সোলেকি
(Ralph Solecki)।
প্রাপ্তিস্থানের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে-
Shanidar 1।
নিয়ানডার্থালদের অভিযাত্রা
ধারণা করা হয়,
হোমো গণ থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আফ্রিকায় এই প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছিল। এই সময় এদের প্রধান
বিচরণক্ষেত্র ছিল মরক্কো'র টান-টান নগরীর আশপাশ জুড়ে। খ্রিষ্টাপূর্ব ৪,৫০,০০০
অব্দের ভিতরে
হোমো ইরেক্টাস-দের পাশাপাশি এরা মিশ্র সভ্যতার
পত্তন ঘটিয়েছিল। সম্ভবত
প্রায়
৪ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে এরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি
এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে এরা এশিয়া এবং ইউরোপে প্রবেশ করেছিল।
প্রায় ১ লক্ষ ৩০
বৎসর
আগে এরা
পুরোপুরি নিয়ানডার্থালের
প্রজাতিগত
গুণাবলী অর্জন করেছিল।
ধারণা
করা
হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব
৩৫,০০০ অব্দের ভিতরে এরা
মেসোপটেমিয়ায়
অনেকটা স্থায়ী আবাস গড়ে
তুলেছিল।
আফ্রিকা থেকে উদ্ভুত মানবগোষ্ঠীর এশিয়া এবং ইউরোপগামী সকল দলই এই অঞ্চল হয়ে
অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সভ্যতাকে নিম্ন পাথুরে সভ্যতা হিসেবে
উল্লেখ করে থাকেন। মধ্য পাথুরে যুগা
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস
-রা এই অঞ্চল দখল করে
নিয়েছিল পুরোপুরি।
উত্তর ইরাকের শানিদার গুহায় এই প্রজাতির একটি
খুলির জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রালফ সোলেকি
(Ralph Solecki)।
প্রাপ্তিস্থানের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে-
Shanidar 1।
এই বিচারে বলা যায়
প্রাচীন ইরাক তথা
মেসোপটেমিয়া
নিয়ানডার্থালেনসিস-মানবগোষ্ঠী
বসতি স্থাপন করেছিল।
এদেরই একটি শাখা প্রবেশ করেছিল
আফগানিস্তানে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দারা-ই কুর- এ লুই ডুপ্রি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলির খননের
সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলে আদি বসতি স্থাপন করেছিল-
হোমো
নিয়ানডার্থালেনসিস-রা
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ হাজার অব্দের দিকে। এখানে পাওয়া গেছে- এদের টেম্পোরাল হাড়ের একটি টুকরো-সহ ৮০০টি পাথরের সরঞ্জাম।
এখানকার কারা কামার নামে একটি গুহায় ৩৪,০০০ বছরের
প্রস্তরযুগের পাথুরে ফলক
।
নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে প্রাক্-প্রস্তরযুগের সূচনা
হয়েছিল। এরা পাথুরে অস্ত্র ব্যবহার করতো। এই সূত্রে এরা শিকারে দক্ষ হয়ে উঠেছিল।
এক্ষেত্রে তারা কুঠার, বর্শা ব্যবহার করতো। বর্শাফলকের সাথে তারা কাঠের দণ্ড
ব্যবহার করার কৌশল আয়ত্ব করেছিল। এদের অস্ত্রের গঠন দেখে ধারণা করা হয়েছে যে, এরা
ম্যামথ (বিলুপ্ত হাতীজাতীয় প্রাণী) বড় বড় প্রাণী হত্যা করতে পারতো।
৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে হোমো
স্যাপিয়েন্সদের সাথে সংঘাত
এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর যন্ত্রপাতি
শিকার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী কাজের উপযোগী পাথুরে যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের উন্নয়ন ও
ব্যবহার শিখেছিল প্রায় ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। প্রায় ৩.১৫ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এদের যন্ত্রপাতি পাওয়া গিয়েছে মরোক্কোতে।
নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর
শিল্পকর্ম
আগেই উল্লেখ করেছি
যে, সম্ভবত
প্রায়
৪ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি
এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে, নিয়ানডার্থালদের
একটি অংশ ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করেছিল।
জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার তাগিদে এরা নানা ধরনের পাথুরে অস্ত্রশস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি
তৈরি করার কৌশল আয়ত্ত করেছিল। এর বাইরে সৌন্দর্য-সুখের তাড়নায় এরা নানা ধরনের
শৈল্পিক সৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়েছিল।
এদের হাতে গড়ে উঠেছিল আদিম
প্রস্তরযুগের সভ্যতা। এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে আদিম ভাস্কর্য
টান-টানের ভেনাস। ৫ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে নিয়ানডার্থালদের একটি দল আফ্রিকার মরোক্কোর বর্তমান টান-টান নগরীর অদূরে বসতি
স্থাপন করেছিল। সম্ভবত এই সময় আদি মাতৃদেবীর ধারণা বিকশিত হয়েছিল। সেই সূত্রে
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মানবীর আকৃতির প্রস্তর খণ্ডকে এরা মাতৃদেবীর প্রতীক হিসেবে
গ্রহণ করেছিল। পরে এই মূর্তিটি সংস্কার করে নতুন রূপ দিয়েছিল।
স্ফটিক পাথরের নির্মিত এই মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় ৬ ইঞ্চি, প্রস্থ প্রায়
২.৬ ইঞ্চি। ওজন প্রায় ১০ গ্রাম।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই মূর্তিটি আবিষ্কার করেছিলেন জার্মানির প্রত্নতত্ত্ববিদ লুৎজ ফিয়েডলার (Lutz Fiedler)
।
মরক্কোর টান-টান নগর থেকে কিছু দূরে ড্রা নদীর তীরে এই মূর্তিটি তিনি পেয়েছিলেন। পরে টান-টান নগরের নামানুসারে
এর নামকরণ করেছিলেন টান-টান-এর ভেনাস (Venus
of Tan-Tan)।
নিয়ানডার্থালরা মোটামুটি ১
লক্ষ ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
ইউরেশিয়া
আসা শুরু করেছিল। এই সময় থেকে
পরবর্তী ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরেশিয়া এরা যে সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল
মৌস্টেরিয়ান সংস্কৃতির।
খ্রিষ্টপূর্ব ৭০ থেকে ৪০
হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের পারব্ত্য অঞ্চলে বসতি
স্থাপন করেছিল। এখানে এদের দ্বারা এখানে পত্তন হয়েছিল মস্টারিন সভ্যতার। এই
সময় এরা আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। সম্ভবত এরা শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পশুর
চামড়া গায়ে জড়িয়ে রাখতো। হিংস্র পশু এবং প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
পর্বত গুহায় বসবাস করতো। নিজেদের ভিতরে তথ্য আদান প্রদানের মতো নিম্নস্তরের ভাষার
বিকাশ ঘটেছিল। এদের খাদ্য তালিকায় ছিল পশুর মাংস এবং নানা ধরনের ফলমূল। এদের ভিতরে
মৃতদেহ কবরস্থ করার রীতি গড়ে উঠেছিল।
সম্ভবত
এদের ভিতরে আদিম গান এবং নৃত্যের চর্চা ছিল। এছাড়া চিত্র অঙ্কনের অভ্যাস গড়ে
উঠেছিল। এরা গুহারে পাথুরে দেওয়ালে পেয়ালার অবয়ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। এগুলো
এরা তৈরি করেছিল গুহাগুলোকে শৈল্পিকভাবে সাজানোর তাগিদে। এর অন্যতম নমুনা স্থান
হিসেবে উল্লেখ করা যায়- ফ্রান্দের লা ফেরাসসিয়ের গুহাকে। ধারণা করা হয়, এই দেওয়াল
সজ্জার নমুনা'র বয়স ধরা হয়েছে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই দেওয়াল সজ্জার নাম
দেওয়া হয়েছে
সূত্র: