হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস
প্রায় ৫ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ায় বসবাসকারী হোমো গণের একটি প্রজাতি বিশেষ। ধারণা করা হয়, হোমো স্যাপিয়েন্স আগ্রাসন বা জলবায়ুর পরিবর্তন বা কোনো কারণে সংঘটিত মহামারীতে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

এদের গড় উচ্চতা ছিল ১৬৪ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি)। গড় উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১ ইঞ্চি (১৫৫ সেন্টিমিটার)। এদের মাথার খুলির মাপ ছিল ১২০০-১৭০০ সিসি। এদের নাক ছিল বেশ বড়।  আধুনিক মানুষের খুলির গড় মান হলো ১৪০০ সিসি। এই বিচারে নিয়ানডার্থালদের মস্তিষ্ক বড় ছিল।

নিয়ানডার্থাল-মানব নিম্ন্ প্রস্তরযুগের অংশভাগী ছিল। এরা পাথুরে অস্ত্র ব্যবহার করতো। এই সূত্রে এরা শিকারে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। এক্ষেত্রে তারা কুঠার, বর্শা ব্যবহার করতো। বর্শাফলকের সাথে তারা কাঠের দণ্ড ব্যবহার করতো। এদের অস্ত্রের গঠন দেখে ধারণা করা হয়েছে যে, এরা ম্যামথ (বিলুপ্ত হাতীজাতীয় প্রাণী) বড় বড় প্রাণী হত্যা করতে পারতো।

প্রায় ৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা আফ্রিকার মরক্কো অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিল এবং  প্রায় ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালী জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। এদের একটি শাখা ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করেছিল এবং ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অংশে এদের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এই প্রজাতিকে আধুনিক মানুষের ঠিক পূর্ববর্তী প্রজাতি হিসাবে গণ্য করা হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন এরা ছিল আধুনিক মানুষের (হোমো স্যাপিয়েন্স) সমান্তরাল প্রজাতি।

মূলত এদের সাথে আধুনিক মানুষের ডিএনএর মিল ছিল প্রায় ৯৯.৭%। সেই কারণে এরা মানুষের কাছাকাছি প্রজাতি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।


জীবাশ্মপ্রাপ্তি এবং গবেষণা
নিয়ানডার্থাল মানবের প্রথম মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে। ডাচ প্রকৃতি বিজ্ঞানী ফিলিপ্পে-চার্লেস Philippe-Charles Schmerling বেলজিয়ামের স্ক্মের্লিং গুহায় এই খুলিটি পেয়েছিলেন।

Engis 2

তিনি ভেবেছিলেন এটি হোমো স্যাপিয়েন্ের মাথার খুলি। এটি ছিল করোটির ভগ্নাংশ বিশেষ। এর নামকরণ করা হয়েছিল- Engis 2 । উল্লেখ্য, এর আগে হোমো স্যাপিয়েন্স একটি করোটি আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রায় অক্ষত অবস্থায়। সে সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল- Engis 1 । এই সূত্রে বেলজিয়ামের স্ক্মের্লিং গুহায় প্রাপ্ত খুলিটি আধুনিক মানুষের মনে করে নামকরণ করা হয়েছিল Engis 2

Gibraltar 1

১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ, জিব্রাল্টার থেকে একটি খুলি পাওয়া যায়। এই খুলিকে সাধারণ ভাবে জিব্রাল্টার খুলি নামে পরিচিত। খুলিটি জিব্রাল্টার বিজ্ঞান সমাজের পক্ষ থেকে জনসমক্ষে প্রকাশ করেছিলেন লেফট্যান্ট এডমুন্ড হেনরি রেনে। এর নমুনার নাম
Gibraltar 1 । সে সময়ে এ খুলিটিকে প্রাচীন মানুষের খুলি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছিল।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির নিয়ানডার্টাল (Neandertal) উপত্যাকায় প্রাপ্ত ফসিলের সূত্রে- এই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মান ভাষায় এর বানান ছিল Neanderthal । এই সূত্রে এই প্রজাতিকে বলা হতো- Neanderthaler । সে সময় এই জীবাশ্মকে আধুনিক মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সদের আদিপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এ্যাঙলো-আইরিশ ভূবিজ্ঞানী উইলিয়াম কিং (William King) এই জীবাশ্মগুলোকে পৃথক প্রজাতি হিসেবে নামকরণ করেন- নিয়ানডার্টাল উপত্যাকায় প্রাপ্ত জীবাশ্মকে আধুনিক মানুষের আদ্য প্রজাতি হিসেবে Homo neanderthalensis অভিহিত করেন। উল্লেখ্য,
১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এ্যাঙলো-আইরিশ ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম কিং (William King) এই প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন Homo neanderthalensis । পরে অবশ্য তিনি একে একটি পৃথক গণের অন্তর্গত প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে বক্তব্য প্রকাশ করেন।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে একটি নিয়ানডার্থাল শিশুর চোয়ালের কিছু অংশ, বিলুপ্ত কিছু প্রাণীর জীবাশ্ম এবং কিছু ব্যবহার্য যন্ত্রপাতির  নমুনা পাওয়া যায়। এরপর দুটি নর-নারীর পূর্ণাঙ্গ জীবাশ্ম পাওয়া যায় বেলজিয়ামের স্পাই অঞ্চলে। ১৬ ফুট মাটির গভীরে প্রাপ্ত এই জীবাশ্মের সাথে পাওয়া গিয়েছিল কিছু যন্ত্রপাতি।

১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্রোয়েশিয়ার ক্রাপিনা পাহাড়ের পাদদেশে পাওয়া যায় কিছু খণ্ডিত অস্থি পাওয়া যায়। ক্রাপিনা পাহাড়ের আশপাশে মাটি খুঁড়ে প্রায় ৫০০০ প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী, মানুষ এবং যন্ত্রের নমুনা পাওয়া যায়।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্টের ৩ তারিখে ফ্রান্সের লা চ্যাপেল-অক্স-সেন্ট
(La Chappelle-aux-Saints) নামক একটি গুহা থেকে এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন A. and J. Bouyssonie এবং L. Bardon । এই জীবাশ্মটির মাথার খুলি, বুকের হাড় এবং অন্যান্য অংশ বেশ অক্ষতই ছিল। সম্প্রতি এই জীবাশ্মগুলির বয়স নিরূপণ করা হয়েছে- ৬০ হাজার বৎসর।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে, ফ্রান্সের ডোর্ডোগ্‌নে
(Dordogne) উপত্যাকার লেস এইজিয়েস (Les Eyzies) গ্রামের নিকটবর্তী La Ferrassie অঞ্চলে এই প্রজাতির ৮টি এই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এর আবিষ্কারক ছিলেন R. Capitan এবং D. Peyrony । এর ভিতর শিশু, বয়ষ্ক ব্যক্তির অস্থি ছিল।

Homo neanderthalensis Shanidar 1

১৯০৯ ফ্রান্সের Le Moustier অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় অপর একটি মাথার খুলির জীবাশ্ম। এর আনুমানিক বয়স ধরা হয়েছে- ৪৫ হাজার বসর। তবে আবিষ্কারকের নাম জানা যায় নাই। এই জীবাশ্মটি Homo neanderthalensis_lLe Moustier নামে পরিচিত। এছাড়া উত্তর ইরাকের শানিদার গুহায় এই প্রজাতির একটি খুলির জীবাশ্ম পাওয়া যায় ১৯৫৩-৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রালফ সোলেকি (Ralph Solecki)। প্রাপ্তিস্থানের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে- Shanidar 1

নিয়ানডার্থালদের অভিযাত্রা

ধারণা করা হয়, হোমো গণ থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আফ্রিকায় এই প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছিল। এই সময় এদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল মরক্কো'র টান-টান নগরীর আশপাশ জুড়ে। খ্রিষ্টাপূর্ব ৪,৫০,০০০ অব্দের ভিতরে হোমো ইরেক্টাস-দের পাশাপাশি এরা মিশ্র সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল।  সম্ভবত প্রায় ৪ থেকে সাড়ে লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে এরা এশিয়া এবং ইউরোপে প্রবেশ করেছিল। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ বৎসর আগে এর পুরোপুরি নিয়ানডার্থালের প্রজাতিগত গুণাবলী অর্জন করেছিল  ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫,০০০ অব্দের ভিতরে এরা মেসোপটেমিয়ায় অনেকটা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছিল

আফ্রিকা থেকে উদ্ভুত মানবগোষ্ঠীর এশিয়া এবং ইউরোপগামী সকল দলই এই অঞ্চল হয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সভ্যতাকে নিম্ন পাথুরে সভ্যতা হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। মধ্য পাথুরে যুগ হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস -রা এই অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল পুরোপুরি। উত্তর ইরাকের শানিদার গুহায় এই প্রজাতির একটি খুলির জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন রালফ সোলেকি (Ralph Solecki)। প্রাপ্তিস্থানের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে- Shanidar 1। এই বিচারে বলা যায় প্রাচীন ইরাক তথা মেসোপটেমিয়া নিয়ানডার্থালেনসিস-মানবগোষ্ঠী বসতি স্থাপন করেছিল।

এদেরই একটি শাখা প্রবেশ করেছিল আফগানিস্তানে। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দারা-ই কুর- এ লুই ডুপ্রি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলির খননের সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলে আদি বসতি স্থাপন করেছিল-
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-রা খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ হাজার অব্দের দিকে। এখানে পাওয়া গেছে- এদের টেম্পোরাল হাড়ের একটি টুকরো-সহ ৮০০টি পাথরের সরঞ্জাম। এখানকার কারা কামার নামে একটি গুহায় ৩৪,০০০ বছরের প্রস্তরযুগের  পাথুরে  ফলক
 
নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর জীবনযাপনের  মধ্য দিয়ে প্রাক্-প্রস্তরযুগের সূচনা হয়েছিল। এরা পাথুরে অস্ত্র ব্যবহার করতো। এই সূত্রে এরা শিকারে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। এক্ষেত্রে তারা কুঠার, বর্শা ব্যবহার করতো। বর্শাফলকের সাথে তারা কাঠের দণ্ড ব্যবহার করার কৌশল আয়ত্ব করেছিল। এদের অস্ত্রের গঠন দেখে ধারণা করা হয়েছে যে, এরা ম্যামথ (বিলুপ্ত হাতীজাতীয় প্রাণী) বড় বড় প্রাণী হত্যা করতে পারতো। ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের সাথে সংঘাত এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়।  

নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর যন্ত্রপাতি
শিকার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী কাজের উপযোগী পাথুরে যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের উন্নয়ন ও ব্যবহার শিখেছিল প্রায় ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। প্রায় ৩.১৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এদের যন্ত্রপাতি পাওয়া গিয়েছে মরোক্কোতে।

নিয়ানডার্থাল-মানবগোষ্ঠীর
শিল্পকর্ম

আগেই উল্লেখ করেছি যে,
সম্ভবত প্রায় ৪ থেকে সাড়ে লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সাথে খাদ্যাভাবের কারণে,  নিয়ানডার্থালদের একটি অংশ ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করেছিল। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার তাগিদে এরা নানা ধরনের পাথুরে অস্ত্রশস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করার কৌশল আয়ত্ত করেছিল। এর বাইরে সৌন্দর্য-সুখের তাড়নায় এরা নানা ধরনের শৈল্পিক সৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়েছিল।

এদের হাতে গড়ে উঠেছিল আদিম প্রস্তরযুগের সভ্যতা। এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে আদিম ভাস্কর্য টান-টানের ভেনাস। ৫ থেকে সাড়ে লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে নিয়ানডার্থালদের একটি দল আফ্রিকার মরোক্কোর বর্তমান টান-টান নগরীর অদূরে বসতি স্থাপন করেছিল। সম্ভবত এই সময় আদি মাতৃদেবীর ধারণা বিকশিত হয়েছিল। সেই সূত্রে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মানবীর আকৃতির প্রস্তর খণ্ডকে এরা মাতৃদেবীর প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পরে এই মূর্তিটি সংস্কার করে নতুন রূপ দিয়েছিল। স্ফটিক পাথরের নির্মিত এই মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় ৬ ইঞ্চি, প্রস্থ প্রায় ২.৬ ইঞ্চি। ওজন প্রায় ১০ গ্রাম। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই মূর্তিটি আবিষ্কার করেছিলেন জার্মানির প্রত্নতত্ত্ববিদ লুৎজ ফিয়েডলার (Lutz Fiedler) । মরক্কোর টান-টান নগর থেকে কিছু দূরে ড্রা নদীর তীরে এই মূর্তিটি তিনি পেয়েছিলেন। পরে টান-টান নগরের নামানুসারে এর নামকরণ করেছিলেন টান-টান-এর ভেনাস (Venus of Tan-Tan)

নিয়ানডার্থালরা মোটামুটি ১ লক্ষ ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরেশিয়া আসা শুরু করেছিল। এই সময় থেকে পরবর্তী ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরেশিয়া এরা যে সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল মৌস্টেরিয়ান সংস্কৃতির।

 
খ্রিষ্টপূর্ব ৭০ থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের পারব্ত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। এখানে এদের দ্বারা এখানে পত্তন হয়েছিল মস্টারিন সভ্যতার।  এই সময় এরা আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। সম্ভবত এরা শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পশুর চামড়া গায়ে জড়িয়ে রাখতো। হিংস্র পশু এবং প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্বত গুহায় বসবাস করতো। নিজেদের ভিতরে তথ্য আদান প্রদানের মতো নিম্নস্তরের ভাষার বিকাশ ঘটেছিল। এদের খাদ্য তালিকায় ছিল পশুর মাংস এবং নানা ধরনের ফলমূল। এদের ভিতরে মৃতদেহ কবরস্থ করার রীতি গড়ে উঠেছিল।

সম্ভবত এদের ভিতরে আদিম গান এবং নৃত্যের চর্চা ছিল। এছাড়া চিত্র অঙ্কনের অভ্যাস  গড়ে উঠেছিল। এরা গুহারে পাথুরে দেওয়ালে পেয়ালার অবয়ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। এগুলো এরা তৈরি করেছিল গুহাগুলোকে শৈল্পিকভাবে সাজানোর তাগিদে। এর অন্যতম নমুনা স্থান হিসেবে উল্লেখ করা যায়- ফ্রান্দের লা ফেরাসসিয়ের গুহাকে। ধারণা করা হয়, এই দেওয়াল সজ্জার নমুনা'র বয়স ধরা হয়েছে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই দেওয়াল সজ্জার নাম দেওয়া হয়েছে
'La Ferrassie Cave Cupules' টান-টানের ভেনাস-এর মতো এখানে কোনো নারী মূর্তি পাওয়া যায় নি বটে, তবে দেওয়াল খোদিত করে নারী যোনী'র চিত্র অঙ্কন করেছিল। সম্ভবত এটিও ছিল আদি দেবীর প্রতীক।

সঙ্গীতের প্রতি এদের আকর্ষণ ছিল এবং এর চর্চা করতো। এদের মাধ্যমে পাতার তৈরি রিড জাতীয় বাদ্যকৌশলের স্থান করেছিল নলাকার বাশি। এই ধারণা সুদৃঢ় হয়ে ওঠে এদের তৈরি ডিভ্‌জে বাবে বাঁশির নমুনা দেখে। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে স্লোভেনিয়ার ডিভ্‌জে বাবে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের একটি অনুভূমিক গুহা থেকে এদের তৈরি একটি বাঁশির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বাঁশি ডিভ্‌জে বাবে বাঁশি নামেই প্রচলিত। উল্লেখ্য, প্রায় ৪১,৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাঁশিটি তৈরি হয়েছিল।  প্রাপ্ত বাঁশিটি তৈরি হয়েছিল গুহাভল্লুকের উরুর অস্থি থেকে।
 


সূত্র: