আফগানিস্তানের ইতিহাস
আফগানিস্তানের ইতিহাসের সাথে প্রাচীন অধ্যায়
শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০-২৩৫০ অব্দের মধ্য বিকশিত হেলমান্দ সভ্যতার মাধ্যমে।
দক্ষিণ আফগানিস্তান এবং পূর্ব ইরানের হেলমান্দ নদী উপত্যকায় অবস্থিত এই প্রাচীন
সভ্যতাকে ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তবে এই অঞ্চলে প্রাক্-মানবগোষ্ঠীর
আবির্ভাব ঘটেছিল আরও আগে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দারা-ই কুর- এ লুই ডুপ্রি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলির খননের
সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলে আদি বসতি স্থাপন করেছিল-
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-রা
।
এদের একটি শাখা প্রবেশ করেছিল
আফগানিস্তানে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দারা-ই কুর- এ লুই ডুপ্রি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলির খননের
সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলে আদি বসতি স্থাপন করেছিল-
হোমো
নিয়ানডার্থালেনসিস-রা
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ হাজার অব্দের দিকে। এখানে পাওয়া গেছে- এদের টেম্পোরাল হাড়ের একটি টুকরো-সহ ৮০০টি পাথরের সরঞ্জাম।
এখানকার কারা কামার নামে একটি গুহায় ৩৪,০০০ বছরের
প্রস্তরযুগের পাথুরে ফলক।
খ্রিষ্টপূর্ব
৫০০০ অব্দের
দিকে আধুনিক মানুষ তথা হমো স্যাপিয়েন্সরা এই অঞ্চলে প্রবেশ করে। এদের একটি শাখার
দ্বারা সিন্ধু সভ্যতার পত্তন হয়েছিল। এর অপর শাখা আফগানিস্তানে জনপবস্তি গড়ে
তুলেছিল। ধারণা করা এরা আফগানিস্তানে প্রথম চাযাবাদ এবং পশুপালন শুরু করেছিল।
কালক্রমে এদের ছোট ছোট গোষ্ঠীরা স্থানীয় রাজ্যের সূচনা করেছিল। ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে নগরায়ন শুরু হতে পারে।
এই সময় এই অঞ্চলের মানুষ তৈরি করেছিল মন্দির ও প্রাসাদ। এই নমুনার সূত্রে এই অঞ্চলে
ব্রোঞ্চ যুগের নগরসভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়।
এই অঞ্চলের হেলমান্দ সভ্যতার কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে
পাওয়া যায় প্রাচীন মুণ্ডিগক নগরী। এটি বর্তমান কান্দাহার শহর থেকে ৫৫ কিমি (৩৪ মাইল)
উত্তর পশ্চিম দিকে। এই নগরটির স্থানে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জিন মারি ক্যাসাল ১৯৫০-এর
দশকে খনন কার্য চালিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে এই নগরীটির বিকাশ ঘটেছিল খ্রিষ্ট[পূর্ব
৫ম-২য় সহস্রাব্দের ভিতরে। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত মৃৎশিল্প এবং অন্যান্য নিদর্শনগুলি সময়
ধরা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের পরে। এই যুগের মৃৎশিল্পগুলিতে ছিল রঙিন জ্যামিতিক নিদর্শন, প্রাণী এবং গাছপালার
চিত্রকর্ম।
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল ইন্দো-ইরানিয়ান জনগোষ্ঠী।
সাধারণভাবে এদেরকে আর্যজনগোষ্ঠী নামে অভিহিত করা হয়। ঐতিহাসিকরা এই সময়ের এই
অঞ্চলের নামকরণ করেছেন আরিয়ানা।
ব্যাকট্রিয়া-মার্গিয়ানা প্রত্নতাত্ত্বিক কমপ্লেক্স ধারণা অনুসারে অনুমান করা
হয়- খ্রিষ্টাপূর্ব ২০০০ এবং ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে (প্রায়) এদের দ্বারা বলখ শহর (ব্যাকট্রা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই শহরের কেন্দ্রস্থললের একটি পাহাড়ের উপর ছিল একটি প্রাসাদ। এই ভবনটি ঘিরে ছিল
প্রাচীর। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বাড়িগুলোর জন্য চূড়াভাগকে সমতল করা হয়েছিল। এই
প্রাসাদের পাশে ছিল একটি মন্দির।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে পেশোয়ার উপত্যকা এবং সোয়াত নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে
গড়ে উঠেছিল গান্ধার সাম্রাজ্য। বৃহত্তর গান্ধার-এর সাংস্কৃতিক প্রভাব সিন্ধু নদী পেরিয়ে পোতোহার মালভূমির তক্ষশিলা অঞ্চল পর্যন্ত
বিস্তৃত হয়েছিল। অন্যদিকে পশ্চিমে আফগানিস্তানের কাবুল এবং বামিয়ান উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের দিকে ইরানি বা ভারতীয় জনগোষ্ঠীরা কম্বোজ রাজ্য স্থাপন
করেছিল ধারণা করা এদের রাজধানী ছিল রাজাপুরা (আধুনিক রাজৌরি)।
খ্রিষ্টপূর্ব পারশ্য সম্রাট দারিয়াস (৫৫০-৪৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আফগানিস্তানের
বিতীর্ণ স্থান দখল করে নেয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে
আলেকজান্ডার আরিয়ান সাম্রাজ্যের সম্রাটকে পরাজিত করে পূর্ব আরিয়ান পর্যন্ত দখল করে
নেয়। ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজাণ্ডরের মৃত্যুর পর আফগানিস্তান বিভিন্ন
সম্রাজ্যের মধ্যে বিভাজিত হয়ে যায়।