|
প্লেইস্টোসিন
অন্তঃযুগের আমলের শুরু হয়েছিল ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে দিকে।
এই আমলের ২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে,
কোয়াটার্নারি
বরফযুগ' শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এই বরফযুগের প্রভাবে উত্তর গোলার্ধের
মেরু সংলগ্ন এলাকার জলস্থল বরফ ঢেকে গিয়েছিল। এর ফলে এই সময়ে উত্তর মহাসাগর বিশাল
বরফ-প্রান্তরে পরিণত হয়। এই বরফযুগের প্রভাবে আফ্রিকার পরিবেশ শীতল দশায় পৌঁছেছিল।
হোমো হ্যাবিলিস এবং হোমো ইরেক্টাসদের ঊর্ধতন কোনো সাধারণ প্রজাতি অভিযোজনের
সূত্রে ২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে হোমো ইরেক্টাস
স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
হোমো ইরেক্টাসরাই প্রথম মাটির উপরে সটান দাঁড়ানো শিখেছিল এবং এদের আকারও আধুনিক মানুষের মতই ছিল। এই
কারণে এদের নামকরণ করা হয়েছে। এরা দুই পায়ে ভর করে মাটিতে চলাফেরা করতে
পারতো। এছাড়া গাছে গাছে দোল খেয়ে চলার মতও ক্ষমতা ছিল। মানুষের মতই এদের উচ্চতার হেরফের ছিল।
এদের মস্তিষ্ক
অস্ট্রালোপিথেকাসদের চেয়ে বড় ছিল। সটান মাটির উপর দাঁড়াতে বা চলাফেরা করার বিশেষ গুণের কারণে এরা চলাফেরায়
স্বচ্ছন্দ গতি পেয়েছিল। এই বিশেষ গুণের কারণেই এরা হাতে, মাথায় ভারি বস্তু বহন করতে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়া মস্তিষ্কের ও দেহের কাঠামোগত পরিবর্তনের দিক দিয়ে এরা অনেকটাই আধুনিক মানুষের মতো হয়ে উঠেছিল।
এদের গড় উচ্চতা ছিল ১.৮ মিটার। এদের গড় ওজন ছিল ৬০ কেজি। খুলির গড়ন ছিল আধুনিক মানুষের মতো। খুলির পরিমাপ ছিল
৯০০-১১০০ সিসি। এরা আধুনিক মানুষের মতো দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতো এবং হাত ও
পায়ের আনুপাতিক দৈর্ঘ্য ছিল আধুনিক মানুষের মতো।
সম্ভবত এরা
আফ্রিকা
মহাদেশের
তান্জানিয়ার ওল্ডুভাই জর্জ
(Olduvai Gorge)
অঞ্চলেই
হোমো হ্যাবিলিস মতো আবির্ভূত হয়েছিল।
হোমো হ্যাবিলিস মতোও নিম্নপ্রস্তর-যুগ বিকাশে এরা ভূমিকা
রেখেছিল।
প্রায় ১৭ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই প্রজাতিটিই
আফ্রিকার বিভিন্ন
অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের একটি শাখা ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করে। পরে এই শাখাটি
বিভাজিত হয়ে একটি শাখা ইউরোপের ককেশাশ অঞ্চলে থেকে যায়। অবশিষ্ট অংশের একটি দল
প্রথমে চীনে প্রবেশ করে। পরে এর একটি দল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপাঞ্চলে চলে
যায়। বিশাল অঞ্চল জুড়ে এই প্রজাতিটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে, বিভিন্ন স্থানে এই
প্রজাতিটির বিবর্তিত হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন ধারায়। এসকল প্রজাতির জীবাশ্মগুলোকে
বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে এবং নানা নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন-
জাভা মানব,
সোলো মানব,
পিকিং মানব
১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের সোলো নদীর তীরে হোমো ইরেক্টাসদের আরও কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। শুরুর দিকে এদেরকে হোমো ইরেক্টাস হিসেবে গণ্য করা হয় নি। পরে এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, দেখা গেছে প্রাচীন জাভা মানবদের চেয়ে এদের করোটির পরিমাপ ছিল বেশ বড়। উল্লেখ্য, প্রাচীন জাভা মানবদের মস্তিষ্কের পরিমাপ ছিল ৯০০ সিসি, পক্ষান্তরে সোলো নদীর তীরস্থ হোমো ইরেক্টাসদের মস্তিষ্কের পরিমাপ ছিল ১০১৩ সিসি। ফলে এরা জাভা মানবদের চেয়ে সাংস্কৃতিক বিকাশে অগ্রসর ছিল। এসকল বৈশিষ্ট্য বিচার করে বিজ্ঞানীরা একে হোমো ইরেক্টাসদের একটি উপপ্রজাতি হিসেবে ঘোষণা দেন। বর্তমানে এই উপপ্রজাতিটি
Homo erectus soloensis নামে চিহ্নিত করেছেন। সোলো নদীর তীরে এদের পাওয়া গিয়েছিল বলে, এদেরকে সোলো মানব (Solo Man) নামেও অভিহিত করা হয়। ১৯২৩-২৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে চীনে পাওয়া হোমো ইরেক্টাসের কিছু জীবাশ্ম। প্রথমে এর বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছিল- Sinanthropus pekinensis । পরে এর নামকরণ করা হয়েছে Homo erectus pekinensis । এই প্রজাতি সাধারণ নাম হলো পিকিং মানব।প্রথম দিকে
জাভা মানব
এবং
পিকিং মানবকে পৃথক
প্রজাতি হিসাবে হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময় উভয় নমুনা পরীক্ষা করে
এদেরকে হোমো ইরেক্টাসের উপপ্রজাতি হিসেবে হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একই
প্রক্রিয়ায় সোলো নদীর তীরস্থ ইরেক্টাসদের নাম রাখা হয়েছিল
সোলো মানব।
টেরনিফাইন ইরেক্টাস
আলজেরিয়ার মাস্কারার ২০ কিলোমিটার পূর্বদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক
খননের ফলে হোমো ইরেক্টাস-সহ নানা ধরনের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই
অঞ্চলে খনিজ বালির জন্য খননের ফলে এ সকল জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। এর ফলে
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদল এই অঞ্চলের জীবাশ্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ক্রমাগত
খননকার্য চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৫৪-৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই কার্যক্রম পরিচালনার
মধ্য দিয়ে পাওয়া গিয়েছিল কিছু মানব-চোয়ালে অস্থি। কিন্তু সে সময়ে সংঘটির বন্যার
কারণে এই খননকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এই অঞ্চলের ভূস্তরের জরিপ অনেকটাই সম্পন্ন
করতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানীরা এ সকল জীবাশ্মের বয়স নিরূপণ করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৭
লক্ষ অব্দ।
১৯৫৪-৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ভারি চোয়ালের অস্থি পাওয়া গিয়েছিল। প্রাপ্ত চোয়ালের
দাঁতগুলো ছিল মানুষের চেয়ে অনেক বড়। এরপর পাওয়া গিয়েছিল আরও কিছু চোয়ালের জীবাশ্ম।
প্রথম দিকে এই জীবাশ্ম অনুসরণে এদের নামকরণ করা হয়েছিল
পাথরের কুঠারের নমুনা |
এরা পাথর বা পাথরের অস্ত্র ব্যবহার করতে শিখেছিল। এবং গাছের গুড়ি খণ্ড-বিখণ্ড করার
জন্য পাথরের কুঠার ব্যবহার করতো। এছাড়া মটির ভিতর থেকে মূল-জাতীয় খাদ্য সংগ্রহের
জন্য। এছাড়া পশু হত্যার জন্য এই কুঠারের ব্যবহার ছিল। আর শিকারের জন্য বর্শা হিসাবে
ব্যবহার করতো সুচালো গাছের ডাল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথুরে সুচালো অংশ ডালের
সাথে বেঁধে ব্যবহার করতো। এছাড়া বড় বড় প্রাণীর হাড়,শিঙ-কেও অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার
করতো। খাদ্যের জন্য দলবদ্ধভাবে বড় বড় পশু শিকার করতো এবং মাংস আগুনের পুড়িয়ে
খাওয়া শিখেছিল। এছাড়া ফলমুল খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতো।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইথিওপিয়ার মধ্য আওয়াশ
অঞ্চলে ডাব্লিউ হেনরি গিলবার্ট কিছু জীবাশ্ম নমুনা পাওয়া গেছে। এর নাম-Daka
BOU-VP-2/66। এর বয়স ধরা হয়েছে ১০
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।