ডেনিসোভান মানব
Denisovan man

হোমো গণের একটি হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির উপ-প্রজাতি বিশেষ। আপাতত এর বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে-
Homo sp. Altai বিকল্পে Homo sapiens ssp. Denisova


২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের সাইবেরিয়ার আল্টাই
পর্বতের ডেনিসোভা গুহায় এই প্রজাতির আঙুলের একটি অস্থি পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই অস্থির বয়স নিরূপণ করেছেন ৪১০০০ বৎসর।  উল্লেখ্য, ডেনিসোভা গুহা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এক সময় মানুষ এবং নিয়ানডার্থেলদের বিচরণভূমি ছিল। বিজ্ঞানীরা মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ পরীক্ষার পর জানতে পারেন যে, মানুষ এবং নিয়ানডার্থেলদের থেকে এই প্রজাতিটি স্বতন্ত্র ছিল। বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়ার জিনোম পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, নিয়ানডার্থাল এবং ডেনিসোভান মানবের আদি উৎস একই ছিল।

 

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রাপ্ত ডেনিসোভান প্রজাতির আঙুলের জীবাশ্মটি ছিল একজন যুবতীর। এর পাশে পাওয়া গেছে ৪০,০০০ বৎসরের প্রাচীন ব্রেসলেট। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে পাওয়া যায় রাশিয়ার অন্য এক অনুসন্ধানী দল পায় ডেনিসোভান দাঁত। এই দাঁত ছিল বেশ বড় আকারের। এই আকার থেকে অনুমান করা যায়, এদের চোয়াল বেশ বড় ছিল।

নৃবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৪-৩ লক্ষ বছর পূর্বে
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস একটি দল আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করে। এই দলটি পরে দুটি স্বতন্ত্র দলে পরিণত হয়। এই দল দুটি হলো- নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভান। এদের ভিতরে নিয়ানডার্থাল মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পাড়ি দেয়। অন্যদিকে ডেনিসোভানরা পূর্ব দিকে যায়। এদের একটি দল সাইবেরিয়ার দিকে চলে যায়। এই দলেরই জীবাশ্ম নমুনা পাওয়া গেছে আল্টাই পর্বতের ডেনিসোভা গুহায়। ডেনিসোভানদের অপর দলটি চলে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে।

এদিকে হোমো স্যাপিয়েন্সরা আফ্রিকার মরোক্কো অঞ্চলে আবির্ভুত হয় ৩ লক্ষ বৎসর আগে। এরপর দীর্ঘদিন মরোক্কো ও ইথিওপিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এরা ৭০-৬০ হাজার বছর আগে আরব উপদ্বীপে হাজির হয়। এরপর ৫০ হাজার বৎসর পূর্বে এরা ইউরেশিয়ার দিকে চলে আসে এবং এক সময় এরা নিয়ানডারথাল এবং ডেনিসোভানদের সংস্পর্শে আসে। ধারণা করা হয়, ডেনিসোভানদের সাথে হোমো স্যাপিয়েন্সদের রক্তের সংমিশ্রণ ঘটেছিল পাপুয়া নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জে। এই কারণেই হয়তো এই অঞ্চলের অধিবাসীদের ডিএনএ'র ডেনিসোভানদের কিছু মিল পাওয়া যায় । আফ্রিকা থেকে আগত হোমো হাইডেলবার্গেনসিসর প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে

 

 

 

 

 

 

অনেকে মনে করেন, একই আদি উৎস থেকে ডেনিসোভানদের এবং স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব হয়েছিল। তাই কিছু জিনগত মিল থাকতেই পারে। সাধারণভাবে দেখতে একই রকমের ভিন্ন ধরনের প্রজাতির ভিতরে যৌনক্রিয়ার কারণে উৎপন্ন নতুন প্রজন্ম বংশবিস্তারে সক্ষম হয় না। তাই ডেনিসোভানদের এবং স্যাপিয়েন্সদের মধ্যে যৌনক্রিয়া হলেও তাদের সন্তানদের প্রজনন ক্ষমতা জন্মাতো না। যেমনটা ঘোড়া ও গাধার মিলনে খচ্চর হয়। এদের কোনো প্রজনন ক্ষমতা থাকে না।
 

প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে ডেনিসোভানরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত স্যাপিয়েন্সদের সাথে ভূমি দখলের যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। এবং স্যাপিয়েন্সরা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ডেনিসোভানদের হত্যার দ্বার নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল।

 

 

 

 

 


সূত্র: