ওরাংওটাং
Orangutan

লেজবিহীন বানর জাতীয় প্রাণী বিশেষ। মালয় শব্দ ওরাং (ব্যক্তি) এবং ইন্দোনেশিয়ান শব্দ ওটাং (অরণ্য)। উভয় মিলে ওরাংওটাং-এর অর্থ দাঁড়ায় অরণ্যের মানুষ।

প্রাইমেট বর্গের হোমিনিডি গোত্রের গণ হলো পোঙ্গো (Pongo)। এই গণের  দুটি প্রজাতিকে সাধারণভাবে ওরাংওটাং বলা হয়।  

উল্লেখ্য হোমিনিডি গোত্রের প্রাণীকুলের একটি অংশ ১ কোটি ৪০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে পৃথক হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এই বিভাজিত অংশের নামককরণ করেছেন পোঙ্গো গণ।  হিিি গোত্রের অবশিষ্ট ধারা থেকে উদ্ভব হয় হোমিনিনাই উপগোত্রের প্রজাতিসমূহ। এই অবশিষ্ট ধারা থেকে পরবর্তী সময়ে উদ্ভব হয়েছিল বৃহৎ এপসমূহ। এই এপদের তালিকায় রয়েছে  গরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং এবং মানুষ

মানুষের সাথে ওরাংওটাং-এর ডিএনএর ৭০% মিল রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালোয়েশিয়া, বোর্নিও এবং সুমাত্রা দ্বীপের বর্ষণঅরণ্যে (rainforest) এদের দেখা যায়।

বোর্নিয়ান ওরাংওটাং

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে ধারণা করা হতো ওরাংওটাং-এর একটি মাত্র প্রজাতি রয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে এর দুটি প্রজাতি রয়েছে। এই প্রজাতি দুটি হলো বোর্নিয়ান ওরাংওটাং ও সুমাত্রান ওরাওটাং ধারণা করা হয়ে, প্রায় ৪ লক্ষ বৎসর আগে Pongo গণের এই প্রাণীটি দুটি প্রজাতিতে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল।

এদের গায়ে লালচে বা বাদামী বর্ণের লম্বা এবং ঘন ঝাঁকড়া চুল থাকে। তবে মুখমণ্ডলে কোনো চুল থাকে না।
এদের কোনো লেজ নেই।

প্রাইমেটদের ভিতর
 গরিলার পরে এদেরকে বড় আকারের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উভয় প্রজাতির ওরাংওটাং-এর ভিতরে সুমাত্রান ওরাংওটাংগুলো আকারে অপেক্ষাকৃত ছোটো হয়। পুরুষ ওরাংওটাং-এর  গড় ওজন ৭৫ কেজি। এদের ওজনের পার্থক্য ৫০-১০০ কেজি। সর্বোচ্চ ১৬৫ কেজি ওজনের ওরাংওটাং দেখা গেছে। লম্বায় এরা সর্বোচ্চ ৪.৬ ফুট পর্যন্ত হয়। স্ত্রী ওরাংওটাং-এর গড় ওজন ৩৮.৫ কেজি। এদের ওজনের পার্থক্য ৩০-৫০ কেজি। লম্বায় ৩.৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মানুষের তুলনায় এদের স্বরতন্ত্র বড় হয়ে থাকে। এই স্বরতন্ত্র চিবুকের নিচে থলের মতো দেখায়।

এদের দেহ ভারি হলেও স্বচ্ছন্দে এবং দ্রুত গাছে উঠতে পারে। দেহ ভারি হওয়ার কারণে বানরদের চেয়ে এদের গতি অনেকটা শ্লথ হয়ে থাকে। চলাচলের সময় এরা চার হাত-পাই সমানভাবে ব্যবহার করতে পারে। এদের হাত পায়ের চেয়ে বড়।

এদের প্রিয় খাদ্য বন্য ডুমুর। এছাড়া এরা বিভিন্ন গাছের কচি পাতা, ফুল, ফল ও গাছের নরম বাকল খায়। উদ্ভিজ খাবার ছাড়া এরা পাখির ডিম, মধু, কীটপতঙ্গ খায়। কখনো কখনো অগভীর জলাশয় থেকে এরা মাছ ধরে খায়। শক্ত বাদাম জাতীয় ফল অদ্ভুদ কৌশলে ভেঙে খায়।

স্ত্রী ওরাংওটাং-এর ঋতুচক্র ২০-২২ দিন। ১১ বৎসর থেকে ঋতুচক্র শুরু হয় এবং ঋতু বন্ধ হয় ৪৮ বৎসরের দিকে। ৯ মাস গর্ভধারণের পর এরা একটি সন্তানের জন্ম দেয়। ছোট্ট শাবকগুলো তাদের মায়েদের সাথে কয়েক বছর অবস্থান করে। এই সময় বানর প্রজাতির অন্যান্য প্রাণীদের মতোই শাবক মায়ের চলাচলের সময় পিঠের সাথে লেপ্টে থাকে। শাবকগুলো অত্যন্ত চঞ্চল হয়।