টারান্টিয়ান আমল
Tarantian
age
১.২৬ লক্ষ-১১.৭ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
প্লেইস্টোসিন
অন্তঃযুগের চতুর্থ এবং শেষ আমল। এই আমলের শুরু হয়েছিল ১ লক্ষ ২৬ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
এবং শেষ
হয়েছি ১১ হাজার ৭ শত
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই আমলের
শেষে শুরু হয়েছিল
হোলোসিন অন্তঃযুগ।
প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
হোমো স্যাপিয়েন্স
-এর একটি দল
আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং কালক্রমে এরা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে
পড়েছিল। ৭৫ থেকে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদেরই একটি শাখা
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল।
এই আমলকে
কোয়াটার্নারি
বরফযুগের শেষ ধাপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কোয়াটার্নারি বরফ যুগের শেষের দিকে, আনুমানিক ১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। এর ফলে হিমবাহ অধিযুগ শেষ হয়ে যায়। এই সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দক্ষিণাংশ থেকে ধীরে ধীরে বরফ অপসারিত হওয়া শুরু হয়েছিল।
এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল বর্তমান
সাহারা মরুভূমি
অঞ্চলে।
ক্রমাগত তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার সূত্রে এই অঞ্চল ধীরে ধীরে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হতে থাকে।
বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সে কালের
সাহারা
উর্বর ভূমিতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ফলে
হোমো স্যাপিয়েন্স
-দের একটি বড় অংশ এই
অঞ্চলে চলে এসেছিল।
১২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে এই অঞ্চলের মাটি উর্বতা লাভ
করেছিল। এই সূত্রে এই অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছিল বৃহৎ অরণ্য।
ফলে এই অঞ্চল তৃণভোজী প্রাণীর বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এদের ভিতরে
উল্লেখযোগ্য প্রাণী ছিল এন্টিলোপ ও গবাদি পশু।
আবার তৃণভোজীদের সূত্রে এই অঞ্চলের জলভূমিগুলো কুমিরে ভরে গিয়েছিল। সেই সাথে
ডাঙ্গায় ছিল সিংহ, হায়না জাতীয় মাংশাসী প্রাণীকূল।
এই সূত্রে বর্তমান
আলজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের
সাহারা মরুভূমিতে মানব বসতি গড়ে উঠেছিল।
এরা এই অঞ্চলের
তাসিলি ন'আজের গুহাচিত্র
পার্বত্য এলাকায় প্রস্তর যুগের সূচনা
করের্ছিল। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তাসিলি ন'আজের পার্বত্য এলাকা থেকে প্রায় ১৫০০ শিল্পকর্মের নমুনা পাওয়া গেছে।
এর ভিতরে রয়েছে
প্রস্তর-খোদিত চিত্র
এবং পাথরে উপরে অঙ্কিত চিত্র। এছাড়া পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে এই অঞ্চলে।
প্রস্তর চিত্রে পাওয়া যায়, এন্টিলোপ, জিরাফ, উট, কুকুর, গবাদি পশু, নানা ধরনের
মনুষ্য চিত্র, শিকারের দৃশ্য, পৌরাণিক প্রাণীর ছবি ইত্যাদি। মনুষ্য ছবিগুলোতে দেখা
যায় নৃত্যরত মানুষ। অর্থাৎ এই সময় সঙ্গীতের উদ্ভব হয়েছিল। এছাড়া কিছু ছবিতে দেখা
যায় পোশাক পরিহিত মানুষ। নারীরা অলঙ্কার পরতো এবং নারী-পুরুষ উভয়ই সাজসজ্জায়
অভ্যস্থ ছিল। কিছু কিছু চিত্র থেকে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, এরা পশু পালন করতো এবং
ঘোড়ায় চড়া শিখেছিল।
এই আমলে আধুনিক মানুষ
হোমো স্যাপিয়েন্স
-এর একটি উপপ্রজাতি আফ্রিকার ইথিওপিয়া অঞ্চলে বসবাস করতো। এই
উপ-প্রজাতিটির নাম ছিল
হোমো স্যাপিয়েন্স ইডালটু।
অস্ট্রেলিয়ায় মনুষ্য বসতি
প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
হোমো স্যাপিয়েন্স
-এর একটি দল
আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং কালক্রমে এরা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে
পড়েছিল। ৭৫ থেকে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদেরই একটি শাখা
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। পরবর্তী ৫৩ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। ৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে উত্তর
অস্ট্রেলোয়ার আর্হেম অঞ্চলের পাথুরে অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছি। এই অঞ্চলের উবির (Ubirr)
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভিতরে তিনটি পর্যায়ে শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছিল।
অবশ্য এসব নমুনার ভিতরে হিসেবে শুধুই কিছু চিত্রকর্মের কথা জানা যায়।
এই আমলের ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে শেষে বর্তমান
ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী
হোমো স্যাপিয়েনর্স-রা
পর্বতগুহায় চিত্র অঙ্কনের সূত্রপাত করেছিল। বর্তমানে এগুলোকে
মারোস-এর গুহাচিত্র
নামে অভিহিত করা হয়।
সূত্র: