অরিগ্ন্যাসিয়ান ভাস্কর্য
এরা ছিল অপেক্ষাকৃত উন্নতর শিল্পবোধ সম্পন্ন মানুষ। এরা পাথুরে যন্ত্রপাতির
ব্যাবহারের পাশাপাশি, হাতির দাঁত ও অস্থি, হরিণারে শিং ইত্যাদি
দিয়ে অস্ত্র এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি তৈরি করা শিখেছিল। এছাড় নানা ধরনের চিত্রকর্ম
ও ভাস্কর্য তৈরিতে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। এই স্তরে এরা শিকারের অস্ত্রগুলোর
অগ্র ও প্রান্তভাগ তীক্ষ্ণ করেছিল বেশ সুচারুরূপে। এদের হাতে তীরধনুক এবং
বর্শা'ত উন্নতি ঘটেছিল। এদের শিকারে তালিকায় ছিল ম্যামথ.
রাইনোসেরোস গণের গণ্ডার, টারপান জাতীয় আদিম ঘোড়া।
সুচালো ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে হাতির দাঁতের গায়ে নকশা তৈরি
করার মতো যন্ত্রপাতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। এরা নানা রঙের ব্যবহার করে গুহার
পাথুরে দেওয়ালে ছবি আঁকতো।
এদের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে
বিবেচিত নমুনা হলো-
হোহলে ফেল্স ভেনাস।
এটি হাতির দাঁতের
উপর খোদিত আদিম মাতৃদেবী।
ধারণা করা হয়,
ক্রো-ম্যাগনানরা
এই দেবীকে পূজা করতো উর্বরতার দেবী হিসেব। ধারণা করা হয় ৪০ থেকে
২৬ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল। এই গুহাতেই পাওয়া গিয়েছিল
গ্রিফোন শকুনের
ডানার হাড় থেকে তৈরিকৃত
হোহলে
ফেল্স বাঁশি। ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব
৪০০০০ থেকে ৩৫০০০ অব্দ এই বাঁশিটি
তৈরি হয়েছিল।
এর কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির সোয়াবিয়ান অঞ্চলের হোহলেনস্টেইন পর্বত
গুহায় পাওয়া গিয়েছিল
হোহলেনস্টেইনের সিংহমানব।
এটি ছিল ম্যামোথের হাড় দিয়ে তৈরি একটি সিংহ-মুণ্ডু মানব অবয়ব। ধারণা করা হয়, এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল
৪০ থেকে ৩৮ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
ম্যামোথের দাঁতের বিরাট ভাণ্ডার পাওয়া গেছে ভোগেলহের্ড গুহায়।
ভোগেলহের্রড-এর মূর্তির
ভিতরে ছিল ম্যামোথের মূর্তি, ঘোড়ার মূর্তি, গুহা-সিংহের মূর্তি, শুকর,
বাইসন, মৎস। এছাড়া পাওয়া গেছে নানা ধরনের অলঙ্কার
ও অস্ত্র। ম্যামোথের দাঁতের তৈরি এ সকল শিল্পকর্ম তৈরি হয়েছিল ৩৫-৩০ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এই গুহায়
কিছু কিছু
হরিণের শিংয়ের অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছে।
অরিগ্নাসিয়ান সভ্যতার
মাঝামাঝি সময়ের দিকে (৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) নির্মিত অপর একটি পাথরের তৈরি মূর্তি পাওয়া গিয়েছে
অস্ট্রিয়ায়। উল্লেখ্য,
১৯৮৮
খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার স্টার্টজিং-এর নিকটবর্তী
গালগেনবার্গে এই মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে
ক্রো-ম্যাগনানদের
ব্যবহৃত
অসংখ্য ব্যবহার্য
জিনিসপত্র পাওয়া গেলেও, কোনো চিত্রকর্ম পাওয়া যায় নি। তবে অনুসন্ধানকারী দল
সবুজ সর্পমণির বেশ কিছু টুকরো খুঁজে পান। পরে এই টুকরোগুলো জোড়া দিয়ে একটি নারী
মূর্তির রূপ দিতে সক্ষম হন। এই মূর্তিটিই হলো
গালগেনবার্গের ভেনাস।
গালগেনবার্গের এই মূর্তিটি থেকে ধারণা করা যায়,
অরিগ্নাসিয়ান সভ্যতার
মানুষের ভিতরে নৃত্যের বিকাশ ঘটেছিল। সম্ভবত এই সময় মাতৃদেবীর পাশাপাশি সঙ্গীত
ও নৃত্যের দেবীর উদ্ভব হয়েছিল।
এই সময়ে জারমানির গেইসেঙ্ক্লোস্টের্লে (Geissenklösterle) গুহায় পাওয়া গিয়েছিল হাতির দাঁতের তৈরি বাঁশি।
অরিগ্ন্যাসিয়ান
শিল্পকর্ম
ক্রো-ম্যাগনান সভ্যতার
অরিগ্ন্যাসিয়ান স্তরে বহু
গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে। মূলত এরা ছিল তখন গুহাবাসী।
তাদের বসবাসে গুহাগুলোর গায়ে এবং এরা চিত্রকর্ম করেছিল
শিল্পসৃষ্টির তাড়নায়। নিচের
এদের অঙ্কিত বা খোদিত চিত্রকর্মের কালানুক্রমিক তালিকা দেওয়া হলো।