আলেকজান্দ্রিয়া
অন্যান্য ভাষায় এর নাম—
আরবি :
الإسكندرية
al-Iskandariyyah (আল্-ইসকান্দারিয়াহ),
ইংরেজি :
Alexandria,
ইতালি : Alessandria,
গ্রিক : Αλεξάνδρεια
(Alexándria), তুর্কি : İskenderiye,
ফরাসি :
Alexandrie।
বর্তমান
মিশরের দ্বিতীয়
বৃহত্তম নগরী এবং মিশরে সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর। এর জন্য সংখ্যা প্রায় ৪১ লক্ষ
(২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ)। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২১°১২′
উত্তর দ্রাঘিমাংশ ২৯°
৫৫′
পূর্ব অক্ষাংশ।
মিশরের
উত্তর-মধ্যাঞ্চলে এই নগরীটি অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে
প্রায় ৩২ কিলোমিটার জুড়ে এই নগরীটি গড়ে উঠেছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে গড়ে উঠা শহরগুলোর
ভিতরে আলেকজান্দ্রিয়া সব চেয়ে বড়। মিশরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় বন্দর। এই
বন্দর দিয়ে মিশরের ৮০ ভাগ আমাদানি রফতানি হয়। পর্যটন শহর হিসাবেও এই নগরীটি বিশেষ
গুরুত্ব বহন করে।
মিশরের
কেন্দ্রীয় শিল্প নগরী হিসাবে আলাকজান্দ্রিয়াকে বিবেচনা করা
হয়।
অজ্ঞাত শিল্পীর আঁকা প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া নগরী |
৬৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই নগরী মিশরের রাজধানী ছিল। উল্লেখ্য ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে ফুসতাত (Fustat) নগরে মিশরের রাজধানী স্থানান্তরিত হয়, পরে তা কায়রো নগরীর ভিতরে মিশে গেছে।
ইতিহাস
এই নগরীর প্রাচীন নাম ছিল রাকোটিশ (Rhacotis)।
কবে এখানে নগর পত্তন হয়েছিল, তা জানা যায় না। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে গ্রিক মহাবীর
আলেকজান্ডার (Alexander
the Great) এই নগরীকে
নতুনভাবে সাজান। পরে তাঁর নামানুসারে এই নগরীর নাম হয় আলেকজান্দ্রিয়া।
আলেকজান্ডার-এর
প্রধান স্থপতি ডাইনোক্র্যাটেস (Dinocrates)-এর
উপর এই নগর নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত
আলেকজান্ডার
মিশরের নাউক্রেটিস (Naucratis)
নগরীরর উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য এবং গ্রিস নীল-উপত্যাকার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের
জন্য এই নগরী স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই নগরীর ভিত্তি স্থাপন করে,
আলেকজান্ডার
মিশর ত্যাগ করেন। এরপরে
তিনি আর মিশরে ফিরে আসেন নি। এরপর এই নগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ক্লিওমেনেস (Cleomenes।
তিনি এই নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দের ১১ বা
১২ অব্দে ব্যবিলনের আলেকজান্ডার দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যবরণ করেন।
আলেকজান্ডার-এর
একজন অন্যতম সেনাপতি টলেমি (Ptolemy)
আলেকজান্ডারের মৃতদেহ আলাকজান্দ্রিয়াতে নিয়ে আসেন। এই সময়ে এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন
ক্লিওমেনেস।
আলেক্জাণ্ডারের মৃত্যুর পর,
তাঁর বিশাল রাজ্য নিয়ে বিভিন্ন সেনাপতিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়।
অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রে ক্লিওমেনেস মিশর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন এবং সেনাপতি টলেমি
মিশরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্রমে ক্রমে মিশর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রধানে পরিণত
হয়। তাঁর মাধ্যমেই মিশরে টলেমি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা পায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দে
গ্রিক সম্রাট অক্টাভিয়ান (Octavian)-এর
মিশর জয়ের মধ্য দিয়ে টলেমি রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই সময়
ক্ষমতায় আসার পর টলেমি এই নগরীর উন্নয়নে হাত দেন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় গ্রন্থাগার
এবং যাদুঘর তৈরি করেন। এই রাজবংশের পতন ঘটে রানি ক্লিওপেট্রার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে।
কালক্রমে আলেকজান্দ্রিয়া ব্যাপকভাবে বিস্তৃত নগরীতে পরিণত হয়েছিল এবং এক শতাব্দীর
ভিতরে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ নগরীতে পরিণত হয়েছিল।
আলেকজান্দ্রিয়া গ্রিক সভ্যতার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছিল। এই সময় ইহুদিদের কেন্দ্রীয় নগরী হিসাবে স্বীকৃত ছিল এই নগরী। এই নগরী থেকে হিব্রু বাইবেল The Septuagint প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া মিশরের অন্যতম নগরীতে পরিণত হওয়ায়, এই নগরীতে মিশরের জনগণেরও অত্যন্ত প্রভাব ছিল। আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের সাথে মূল ভূখণ্ড এবং ফারাওই দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কারণে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি বাণিজ্য নগরে পরিণত হয়েছিল। ফলে আলেকজন্দ্রিয়া একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরীর মর্যাদা লাভ করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে জুলিয়াস সিজার এবং মিশরের রাজা টলেমি ত্রয়োদশ (Ptolemy XIII) -এর মধ্যে যুদ্ধের সময়, সিজারের সৈন্যরা জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই আগুনে আলেকজান্দ্রিয়ার প্রখ্যাত গ্রন্থাগার পুড়ে যায়।
১১৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান-ইহুদী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধকে কিটোস যুদ্ধ (Kitos War) নামে অভিহিত করা হয়। এই যুদ্ধের সময় আলেকজান্দ্রিয়ার একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধে রোমানরা জয় লাভ করার পর রোমান সম্রাট হাড্রিয়ানের (Hadrian) নির্দেশে স্থপতি দেক্রিয়ান্নাস (Decriannus) এই নগরী পুনঃনির্মাণ করেন। ২১৫ খ্রিষ্টাব্দে রোম-সম্রাট ক্যারাক্যাল্লা (Caracalla) এই নগরী পরিদর্শন করেন। ৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ২১ জুলাইতে ক্রেট (Crete)-এ ভূমিকম্প হয়। এর ফলে একটি ভূমধ্যসাগরীয় সুনামি আলাকজান্দ্রিয়ায় আঘাত হানে এবং এর ফলে নগরীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে রোমান-খ্রিষ্টান শক্তি প্রবল হয়ে উঠে এবং ৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে রোম সম্রাট থিওডোসাস প্রথম (Emperor Theodosius I.)-এর নির্দেশে, আলেকজান্দ্রিয়ার কপটিক অর্থোডক্স চার্চের সাধু থিওফিলাস (Patriarch Theophilus) আলেকজান্দ্রিয়ার অন্যান্য সকল ধর্মের প্রাচীন মন্দিরগুলো ধ্বংস করেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপর খ্রিষ্টীয় শাসকদের অত্যাচরের কারণে, খ্রিষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার ইহুদি ও অন্যান্য ধর্মের জনবসতিগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।
৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের সেনাবাহিনী জেরুজালেমসহ মিশরের বিশাল অংশ অধিকার করে। পারস্যের সেনাপতি শাহরবরাজ (Shahrbaraz) এবং শাহিন (Shahin) ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের এই অভিযানে প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ নগরী জেরুজালেম দখল করেন। আর আলেকজান্দ্রিয়া দখল করেন ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে। পরে রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস (Heraclius) আলেকজান্দ্রিয়া থেকে পারস্য সেনাদের বিতারিত করেন। ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে আরব মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনে আল-আস মিশর দখল করেন। এই সময় আলেকজান্দ্রিয়া ১৪ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর, আরব-সেনাদের কাছে আলেকজান্দ্রিয়া পতন হয়। এরপর থেকে আরব-মিশরীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আলেকজান্দ্রিয়া ছিল দীর্ঘদিন। ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে রিদানিয়া যুদ্ধের (Battle of Ridaniya) পর, এই অঞ্চল তুর্কিদের দখলে চলে যায়। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আলেকজান্দ্রিয়া তুর্কি শাসনাধীন ছিল। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ নেপোলিয়ান মিশর দখল করেন। তাঁর সৈন্যর এই নগরী দখল করে ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২রা জুলাই। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে ব্রিটিশ সৈন্যরা আলেকজান্দ্রিয়া যুদ্ধে (Battle of Alexandria) ফরাসী সৈন্যদের পরাজিত করে। কিন্তু পূর্ণ দখলে আসে ২ সেপ্টেম্বরে। এই যুদ্ধে মিশরের অটোম্যান সরকারের আরবীয় গভর্নর মোহাম্মদ আলী ব্রিটিশদের সহায়তা করেছিল।
যুদ্ধের পর আলেকজান্দ্রিয়ার উপর মোহাম্মদ আলী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মোহাম্মদ আলী এই নগরীকে পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই নগরীর আবার শ্রী ফিরে আসে। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ব্রিটিশ নৌসেন্যরা এই নগরীতে গোলাবর্ষণ করে এবং দখল করে নেয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইজারাইল বিমান বাহিনী এই নগরে বোমা বর্ষণ করে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর তারিখে ব্রিটিশ বাহিনী প্রত্যাহার উপলক্ষে, এই নগরীর মানশেয়া চত্বরে (Mansheyya Square) আয়োজিত এক সভায় গামেল আবদেল নাসের যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন মোহাম্মদ আবদেল লতিফ নামক ব্রাদারহুডের একজন সদস্য তাঁকে গুলি করেন। ২৫ ফুট দূর থেকে ৮টি গুলি করা হয়। কিন্তু কোনো গুলিও তাঁকে আঘাত না করায়, তিনি বেঁচে যান।
আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার
ইংরেজি :
Library
of Alexandria,
The Royal Library
of Alexandria, Ancient Library of Alexandria
Carl Sagan নির্মিত টিভি ধারাবাহি Cosmos দেখানো আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের ভিতরের দৃশ্য |
প্রাচীন
মিশরের বিখ্যাত এবং সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার। এটি ছিল মিশরের টলেমি রাজবংশের রাজকীয়
গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল
Letter of
Aristeas
থেকে। টলেমি বংশীয় রাজা
টলেমি প্রথম সোটের (Ptolemy
I Soter)-এর
সময় এই গ্রন্থাগারটি স্থাপনে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন,
এ্যারিস্টোটল-এর
শিষ্য ডেমেট্রিয়াস (Demetrius)।
ডেমেট্রিয়াস এই গ্রন্থাগারটি তৈরি করেছিলেন
এ্যারিস্টোটল-এর
লাইসিয়াম
(Lyceum)
এর অনুকরণে। এই পরিকল্পনায় ছিল, পাঠকক্ষ, ভাষণ-কক্ষ, সভাকক্ষ। এর সাথে ছিল খাবারের
ঘর, বাগান। কম্পিউটার সুবিধা ছাড়া, বর্তমানে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের
মতোই এর সুযোগ সুবিধা ছিল। এই গ্রন্থাগারের বইগুলো ছিল তৎকালীন প্যাপিরাস কাগজে
লিখা এবং
বইগুলো গোল করে গুটানো থাকতো।
এই গ্রন্থাগারে সকল ধরনের বিজ্ঞান, সাহিত্য দর্শন ইত্যাদির বিশাল সংগ্রহ ছিল। এর জন্য রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বিপুল পরিমাণ। বহু গ্রন্থের মূল কপি ছিল। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে বই সংগ্রহ করে, তার অনুলিপি তৈরি করে রাখা হতো। অনেক সময়ই মূল কপিটি গ্রন্থাগারে রেখে অনুলিপিটি গ্রন্থের মালিককে দেওয়া হতো। আলেকজান্দ্রিয়ায় এই সময় বিপুল পরিমাণ প্যাপিরাস উৎপন্ন হতো। ফলে গ্রন্থ তৈরির ক্ষেত্রে আলেকজান্দ্রিয়া একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে নিয়েছিল। এই সময় নানা দেশ থেকে পণ্ডিতরা এই গ্রন্থাগারে লেখাপড়ার জন্য আসতেন। টলেমি রাজারা এদের থাকার খাওয়া সুবিধা দিতেন, একই সাথে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য দিতেন। এত সব সুবিধার কারণে— গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান-সহ প্রায় সকল বিষয়ের গ্রন্থ দ্বারা এই গ্রন্থাগারটি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। রাজা টলেম দ্বিতীয় ফিলাডেলফাসের সময় প্রায় ৫,০০,০০০ গুটানো বই ছিল। ক্লিওপেট্রাকে বিবাহের সময়, মার্ক এ্যান্টোনি পের্গামাম (Pergamum) গ্রন্থাগার থেকে, বিবাহের উপহার হিসাবে প্রায় ২,০০,০০০ গ্রন্থ উপহার দিয়েছিলেন।
এই গ্রন্থাগারটি ছিল আলেক্জান্দ্রিয়ার যাদুঘরের একটি অংশ। গ্রন্থাগারটি মূলত ব্যবহৃত হতো গবেষণার জন্য। মূল যাদুঘরের সাথে ছিল— জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অঙ্গ সংস্থানবিদ্যার জন্য পৃথক গবেষণা কক্ষ। প্রাণিকূলের উপর গবেষণার জন্য ছিল চিড়িয়াখানা। এই গ্রন্থাগারে অন্যতম গবেষকরা ছিলেন ইউক্লিড (Euclid), আর্কিমিডিস (Archimedes), এরাটোস্থেনেস ( Eratosthenes), হেরোফিলয়াস (Herophilus), এরাসিস্ট্রাটাস (Erasistratus), হিপ্পার্কাস (Hipparchus), এইডেসিয়া (Aedesia), পাপ্পাস (Pappus), হাইপাটিয়া (Hypatia), এ্যারিস্টার্কাস (Aristarchus), সাধু ক্যাথেরিনে (Saint Catherine)।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে জুলিয়াস সিজার
এবং মিশরের রাজা টলেমি ত্রয়োদশ (Ptolemy
XIII)
-এর মধ্যে যুদ্ধের সময়, সিজারের সৈন্যরা জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই সময় জাহাজ সংলগ্ন এই গ্রন্থাগারে
আগুন ধরে যায়। এই গ্রন্থাগারটি পুড়ে যাবার পর, বিশেষজ্ঞরা মূল গ্রন্থাগারের
উপগ্রন্থাগার হিসাবে একটি ছোটো গ্রন্থাগার ব্যবহার করতেন। মূলত এই ছোটো
গ্রন্থাগারটি ছিল অন্য শহরে। এর নাম ছিল
Serapeum।
এই সময় প্রায় ৪০,০০০ গ্রন্থ পুড়ে যায় এবং প্রায় সম পরিমাণ বই সম্পূর্ণ পুড়ে না
গেলেও পাঠের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।
আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর
ইংরেজি :
Lighthouse of Alexandria।
ছবি : http://mynewspapercut.blogspot.com |
সমুদ্রবন্দর থেকে বন্দরে প্রবেশ বা নির্গমণের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা প্রদায়ী একটি বাতি ঘর। এ বাতিঘরটিকে প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মিশরের সম্রাট প্রথম টলেমি ফ্যারোসে দ্বীপে এই বাতিঘর তৈরি করিয়েছিলেন। এই বাতিঘরটিই আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর নামে খ্যাত। উল্লেখ্য প্রাচীন যুগে সমুদ্রপথে জাহাজ ঘনকুয়াশা কিংবা রাতের অন্ধকারে নাবিকরা পথ হারিয়ে বন্দরে পোঁছুতে পারতো না। এই অসুবিধার জন্য নাবিক এবং ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত থাকতো। এই অসুবিধা দূর করার জন্য ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে ভূমধ্যসাগর উপকূলে আলেকজান্দ্রিয়া নামক স্থানে এই বাতিঘর স্থাপন করা হয়।
এই বাতিঘরটির মূল
ভিত্তিভূমির আয়তন ছিল ১১০ বর্গফুট। এর বাইরে ছিল দেওয়াল উচ্চতা ছিল ৪৫০ ফুট। মূল স্তম্ভটিকে ঘিরে পেঁচানো
সিঁড়ি ছিল। কোনো কোনো মতে, এই সিঁড়ির বাইরে দেয়াল ডিল। এ সিঁড়ি বেয়েই উপরে ওঠে ৪৫০ ফুট উঁচুতে রক্ষিত একটি বেদিতে বিশাল
অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। রাত্রিবেলায় খোলা সমুদ্র প্রায় ৫০ মাইল দূর থেকে এই
অগ্নিকুণ্ড দেখা যেতো।
১২০০ শতকে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্পে বাতিঘরটি ভেঙে যায়। এখন এই বাতিঘর সম্পর্কে কিছু
পুরানো লেখকদের রচনা থেকে জানা যায়।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Egypt
http://mynewspapercut.blogspot.com