সুয়েজ খাল
ইংরেজি: Suez Canal
আরবি: قناة السويس‎‎

ভূমধ্যসাগরলোহিত সাগরর মধ্যে সংযোগকারী একটি কৃত্রিম খাল। মূলত মিশরের
সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত। এই প্রণালী দ্বারা
আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক মিশর হয়ে গেছে। এর ভৌগোলিক অবস্থান ৩০°৪২'১৮'' উত্তর ৩২°২০'৩৯'' পূর্ব।

মূলত বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য এই খাল খনন করা হয়েছে। এই খাল খননের আগে সাগর পথে
জাহাজে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো। এর ফলে মালামাল পরিবহনে বহু সময় ব্যয় হতো। সেই সাথে পরিবহন খরচও বেড়ে যেতো অনেক।

কথিত আছে মিশরের অধিপতি ফারাও নেকো স্বপ্নে নীল নদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত দীর্ঘ্য একটি খাল খনন করার দৈববাণী পেয়েছিলেন। এরপর তিনি লক্ষাধিক দাস নিয়ে খাল কাটা শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন পরেই এই খনন বন্ধ হয়ে যায়। কথিত আছে নেকো অপর একটি দৈববাণীতে জেনেছিলেন যে- এই খাল মিশরের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনবে।

এরপর নেপোলিয়ন বনাপার্ট মিশর অভিযানের সময় এই খাল কাটার উদ্যোগ নেন। কিন্তু বিশাল ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে, তিনি খাল খননের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন।

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ এই খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং খালটির নকশা তৈরি করা হয়। এর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ‘ফারদিনান্দ দি লেসেন্স’। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস থেকে খাল খনন শুরু হয় এবং শেষ ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে।

খাল খননের শুরুতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার এবং গভীরতা ছিল ৮ মিটার। তবে বেশ কিছু সংস্কার ও সম্প্রসারণের পর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১৯০.৩ কিলোমিটার, আর গভীরতা ২৪ মিটার এবং সর্বনিম্ন সরু স্থানে এর প্রস্থ ২০৫ মিটার। এর ভিতরে উত্তর প্রবেশ চ্যানেল এর দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার (১৪ মাইল), মূল খালে দৈর্ঘ্য ১৬২.২৫ কিলোমিটার (১০০.৮২ মাইল) এবং দক্ষিণ প্রবেশ চ্যানেল এর দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার (৫.৬ মাইল)।

এটি একটি এক লেন বিশিষ্ট খাল। তবে দুটি বাই-পাসের স্থান আছে। এই বাই-পাস দুটোর নাম বাল্লাহ বাইপাস এবং গ্রেট বিটার লেক। সুয়েজ খালে পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন বিশেষ দ্বার নেই। তাই এই খালের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের পানি অবাধে প্রবাহিত হয়। সাধারণত, বিটার লেকের উত্তরদিকের খালে শীত কালে উত্তরমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মে দক্ষিণমুখী স্রোত প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে লেকের দক্ষিণ দিকের খালে স্রোত সুয়েজের জোয়ার-ভাটার সাথে পরিবর্তিত হয়।

শুরু থেকে এই খালের নিয়ন্ত্রণ ছিল মিশরের। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শিল্পপতি ‘রথচাইল্ড’ এই খালের কিছু শেয়ার কিনে নেন, এর পর থেকে ব্রিটিশরা এই খালের উপর তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে।

এরপর মিশরের প্রেসিডেন্ট ‘জামাল আব্দেল নাসের’ ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন। এর ফলেই সুয়েজ খালকে নিয়ে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। এই কারণে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুয়েজ খাল বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধের পর ১৯৬৭-১৯৭৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর এই সুয়েজ খাল বন্ধ ছিল। এ সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ৪০টি জাহাজ ডুবিয়ে সুয়েজ খালে নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেয় মিশর।


সূত্র: