ইথিওপিয়া
গ্রিক: Αἰθίοψ> ইংরেজি ভাষা Ethiopia
সরকারি নাম:
Federal Democratic Republic of Ethiopia
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক : ৩ থেকে ১৫উত্তর ৩৩ থেকে ৪৮পূর্ব
রাজধানী: আদ্দিস আবাবা

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। উঁচু পর্বত আর মরুভূমি দিয়ে গড়া একটি রুক্ষ দেশ। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৭০টিরও বেশি জাতিগত ও ভাষাগত গোষ্ঠীর মানুষের বাস।

বিংশ শতাব্দী পর্যন্তও দেশটি আবিসিনিয়া নামে পরিচিত ছিল। আফ্রিকার অন্যান্য দেশের তুলনায়, ইথিওপিয়া আফ্রিকার প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র।

খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে এখানে আকসুম নামের একটি শক্তিশালী খ্রিষ্টান সাম্রাজ্যের পত্তন হয়। ১৬শ শতকের পরে ইথিওপিয়া অনেকগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৮৮০-র দশকে রাজা ২য় মেনেলিক-এর অধীনে এগুলি পুনরায় একত্রিত হয়।

১৯৫০-এর দশক থেকে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়ার একটি অংশ ছিল, কিন্তু ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরিত্রয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। দেশটি নয়টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে প্রধান জাতিগত গোষ্ঠী বাস করে। আদ্দিস আবাবা ইথিওপিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বে ইরিত্রিয়া এবং জিবুতি, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে সোমালিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে কেনিয়া এবং পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে সুদান। এর মোট আয়তন ১১,০৪,৩০০ বর্গ কিলোমিটার। এর ভিতরে স্থলভাগের আয়তন প্রায় ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার আর জল ভাগের আয়তন ১,০৪,৩০০ বর্গ কিলোমিটার। সীমান্তরেখা ৫,৩২৮ কিলোমিটার। এর ভিতরে জিবুতির সাথে ৩৪৯ কিলোমিটার, ইরিত্রিয়ার সাথে ৯১২ কিলোমিটার কেনিয়ার সাথে ৮৬১ কিলোমিটার, সোমালিয়ার সাথে ১,৬০০ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুদানের সাথে ৮৩৭ কিলোমিটার এবং সুদানের সাথে ৭৬৯ কিলোমিটার। দেশটির সাথে কোনো সমুদ্রের যুক্ত নাই। এই অর্থে দেশটি ভূবেষ্টিত। দেশটিকে গ্রেট রিফ উচ্চ মালভূমি দ্বারা বিভাজিত। দেশটির সর্ব নিম্নাঞ্চল দানাকিল ডিপ্রেশান (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৫ মিটার নিচে) এবং সর্বোচ্চ স্থান রাজ দেজেন (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৫৩৩ মিটার)।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই হিসাব অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা, ৯,৩৮,৭৭,০২৫। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব অনুসারে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছিলো ওরোমো। সমগ্র দেশের ৩৪.৫% এই জাতিগোষ্ঠীর লোক। এরপর দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী হলো আমারা, জনসংখ্যা ২৬.৯%। এছাড়া রয়েছে সোমালি (৬.২%), টিগারাওয়ে (৬.১%), সিডামা (৪%), গুরেজ (২.৫%), ওয়েলাইটা (২.৩%), হাদিয়া (১.৭%), আফার (১.৭%), গেডো (১.৩%)।

ভাষা: সরকারি ভাষা ওরোমিগ্না এবং আমারিগ্না। এছাড়া রয়েছে সোমালিগ্না, টিগ্রিগ্না, সিডামিগ্না, গুরাগিগ্না, আফারিগ্না, হাডিয়িগ্না। বাইরের ভাষা হিসেবে প্রচলিত আছে আরবি এবং ইংরেজি। 

ধর্ম: ৪৩.৫% ইথিওপিয়ন অর্থোডক্স, মুসলমান ৩৩.৯%, প্রোটেস্ট্যান্ট ১৮.৬%, প্রথাগত ২.৬% এবং ক্যাথোলিক ০.৭%।

ভূতাত্ত্বিক অবস্থা: দেশটির গ্রেট রিফ অঞ্চলে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে। সেখান থেকে প্রায়ই লাভা স্রোত প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চলকে প্লাবিত করে।

খনিজ সম্পদ :
প্লাটিনাম, তামা, পটাশ, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং সামান্য স্বর্ণ রয়েছে।

যোগাযোগ :
দেশটিতে ৫৮টি বিমানবন্দর আছে (২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত)। রেলওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৮১ কিলোমিটার। সড়কপথ ৩৬,৪৬৯ কিলোমিটার।

প্রাণিকূল: ইথিওপিয়াকে এক সময় মানবগোষ্ঠীর সূতিকাগার বলা হতো। তখন মনে করা হতো ইথিওপিয়া অঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষ বৎসর আগে আদি মানুষ (
Homo sapiens , হোমো স্যাপিয়েন্স)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল। ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার থেকে মানুষ অভ্যন্তর ভাগে এবং অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। নানা ধরনের প্রত্নতাত্তিক নমুনা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের দ্বারা এই ধারণা পাল্টে গেছে। বর্তমানে করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বৎসর আগে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের হোমো গণের অন্তর্গত Homo sapiens এর আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার মরোক্কোর জেবেল ইর্হৌদ (Jebel Irhoud) -তে

প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার বৎসর আগে আদিম মানুষ ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। এই দলটি আরব উপদ্বীপ ও পারশ্য অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার থাকে ১ লক্ষ বৎসরের ভিতরে। এরপর এদের কিছু মানুষ মঙ্গোলিয়া ঘুরে চীন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল। অপর দলটি পারশ্য হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ভারতবর্ষে এরা প্রবেশ করে প্রায় প্রায় ৭৫-৬০ হাজার বৎসর আগে। ভারতবর্ষে প্রবেশ করা আদি মানবগোষ্ঠীকে নেগ্রিটো নামে অভিহিত করা হয়।

বর্তমানে এই দেশে পাওয়া যায়,
Equus quagga (সমতলভূমির জেব্রা), পার্বত্য নিয়ালা, নুবিয়ান আইবেক্স, আফ্রিকান বন্য কুকুর, আফ্রিকান হাতি, এ্যামোডাইল, এ্যান্টিলোপ, চিতা, সিংহ, বিভিন্ন ধরনের বাদুর ইত্যাদি।

ইথিওপিয়াতে নিজেদের পঞ্জিকা আছে। একে বলা হয় গে'এজ পঞ্জিকা। এটি প্রাচীন  মিশরীয় পঞ্জিকা' অনুসরণে তৈরি হয়েছিল। আধুনিক গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকা'র পাশাপাশি স্থানীয় লোকেরা এই পঞ্জিকা অনুসরণ করে থাকেন।


সূত্র :
https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/et.html
http://en.wikipedia.org/wiki/Ethiopia