প্যালেয়োআর্কিয়ান যুগ
Paleoarchean
Era
৩৬০ কোটি
থেকে ৩২০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
আর্কিয়ান
কালের দ্বিতীয়
যুগ।
উল্লেখ্য, প্রথম যুগটি ছিল
ইয়ো-আর্কিয়ান যুগ
(৪০০ কোটি থেকে ৩৬০ কোটি
পূর্বাব্দ)। গ্রিক Palaios
শব্দের অর্থ প্রাচীন। এই শব্দ থেকে এই যুগের নামকরণ করা হয়েছে।
এই যুগকে বলা যায় ক্র্যাটনের সুস্থির যুগ। পূর্বর্তী
ইয়ো-আর্কিয়ান যুগের
অধিকাংশ ক্র্যাটনের আদি ভিত্তিভূমি তৈরি হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে এই ক্র্যাটনগুলোই জোড়া লেগে তৈরি হয়েছিল বৃহদাকারের মহাদেশীয় ভূ-পাত।
মহাদেশ সৃষ্টির প্রাথমিক যুগ হিসেবে একে চিহ্নিত করা যায়। কারণ
এই যুগেই সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মহামহাদেশ
ভাল্বারা।
এছাড়া নতুন কিছু ক্র্যাটন সৃষ্টি হয়েছিল এই যুগে। এই যুগে জীবজগতে
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ উদ্ভব হয়েছিল
জৈবিক-পদার্থের সমন্বয়ে। এছাড়া
আর্কেব্যাক্টেরিয়া,
ব্যাক্টেরিয়া
এবং
আর্কিয়া
সৃষ্টি
হয়েছিল এই যুগে।
ক্র্যাটন সৃষ্টি এবং ক্রমবিবর্তন
এই যুগের শুরুতে অর্থাৎ ৩৬০ কোটি পূর্বাব্দের দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ক্র্যাটন তৈরি প্রক্রিয়া সচল হয়ে উঠেছিল। একালের পৃথিবীর মহাদেশীয় অবস্থান অনুসারে যদি ক্র্যাটনগুলোকে সাজানো যায়, তাহলে দেখা যায়, এসকল ক্র্যাটন সকল সময় একই জায়গায় ছিল না। পরিচয়ের সুবিধার জন্য যদি একালের মহাদেশীয় বা উপমহাদেশীয় অবস্থানের বিচারে উল্লেখ করা যায়, তাহলে- ক্র্যাটনগুলোকে আমরা নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করে- এদের উৎপত্তির সময় বিবেচনা করতে পারি। যেমন
আফ্রিকান
ক্র্যাটনসমূহ: একালের আফ্রকা মহাদেশের ভিত্তিভূমি
হিসেবে পাওয়া যায় পাঁচটি ক্র্যাটনের নাম। এগুলো হলো-
কঙ্গো
ক্র্যাটন,
পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন,
সাহারা মেটাক্র্যাটন,
তাঞ্জানিয়া
ক্র্যাটন ও
কালাহারি ক্র্যাটন।
ধারণা করা হয় ৩৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সৃষ্টি হয়েছিল
কঙ্গো
ক্র্যাটন,
পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন
। উল্লেখ্য,
এই
ক্র্যাটনটি সুস্থির দশায় পৌঁছেছিল ২০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। এই
ক্র্যাটনের সাথে
কাপ্ভাল,
জিম্বাবুয়ে,
তাঞ্জানিয়া
এবং
পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন মিলিত হয়ে- বর্তমান আফ্রিকা মহাদেশ তৈরি করেছে।
এই
যুগের শুরুতে অর্থাৎ ৩৬০ কোটি পূর্বাব্দের দিকে
পিল্বারা
ক্র্যাটনটি
আদি দশা নিয়ে
কাপ্ভাল ক্র্যাটনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। পরে পিলবারা
ক্র্যাটন পূর্ণতা লাভ করেছিল ২৭০ কোটি পূর্বাব্দের ভিতরে। উল্লেখ্য পিলবারা
ক্র্যাটন এখন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার অংশ। উভয় ক্র্যাটনের মিলিত হয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর
প্রথম মহা-মহাদেশ
ভাল্বারা।
এই দুই ক্র্যাটনের নামানুসারে, ১৯৯৬
খ্রিষ্টাব্দে এই মহা-মহাদেশের নামকরণ করা হয় উভয় ক্র্যাটনের চারটি করে বর্ণ নিয়ে।
Kaapvaal
+ Pilbara =Vaalbara
ধারণা করা
হয় ৩৬০ থেকে ৩২০ কোটি বৎসরে দিকে কাপ্ভালা ক্র্যাটনের বার্বের্টোন গ্রিনস্টোন বলয়ে
উদ্ভব হয়েছিল মাখোঞ্জওয়া পর্বতমালা। এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার এবং
প্রস্থ প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এর শৃঙ্গগুলোর উচ্চতা ৬০০ থেকে ১৮০০ মিটার। অন্যদিকে
৩৫০-৩২০ কোটি পূর্বাব্দে ভাল্বারার পিলবারা অঞ্চলের এই রুক্ষ প্রান্তরে হঠাৎ আঘাত
হেনেছিল ছিটকে পড়া অন্তত চারটি কার্বন-সমৃদ্ধ গ্রহাণু। এর ফলে বিপুল উত্তাপ
এবং ধুলোবালি বায়ুমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। বাতাসে ছড়িয়ে
পড়েছিল নানা ধরনের গ্যাসীয় উপকরণ। উভয় প্রক্রিয়ার ভিতরে এই সময় পুরো ভাল্বারা জুড়ে
ছিল এবড়ো থেবড়ো বন্ধুর ভূমি। কোথায় মাথা উঁচু করে ছিল আদিম পর্বতশৃঙ্গ। আবার পাথুরে
ভূত্বকের কোথাও জমেছিল বিপুল পরিমাণ জমেছিল ধুলোর স্তর। কোথাও কিম্বা বৃষ্টিতে
পানিতে ভিজে তৈরি হয়েছিল কাদার আস্তরণ।
৩২০ কোটি পূর্বাব্দে
প্যালেয়োআর্কিয়ান যুগ
শেষ হয়। এর পর শুরু হয়
মেসোআর্কিয়ান যুগ (৩২০ কোটি থেকে ২৮০ কোটি পূর্বাব্দ)। এই
যুগের শুরুতে উর মহাদেশের প্রাথমিক গঠন সম্পন্ন হয় এবং ধীরে ধীরে মহাকাশীয় অবয়ব
ধারণের পথে অগ্রসর হয়।
জীবজগৎ
ইয়ো-আর্কিয়ান যুগের
(৪০০ কোটি থেকে ৩৬০ কোটি
পূর্বাব্দ) ৩৯০ কোটি বছর আগের আদি জীবকণিকাগুলোর দেহে তৈরি হয়েছিল
কেমো-অটোট্রোপ্স
(chemoautotrophs)
উপকরণ। এর সাহায্যে এরা বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে কার্বন সংগ্রহ করতো এবং
অক্সিজেন-ঘটিত পদার্থ ত্যাগ করতো। এই জীবকণিকা থেকে তৈরি হয়েছিল
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ উদ্ভব হয়েছিল
জৈবিক-পদার্থের সমন্বয়ে। এদের
দেহে সৃষ্টি হয়েছিল গ্লাওকোলাইসিস
Glycolysis
প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তি জীবকণিকাগুলোর ভিতরে সঞ্চালিত হতো।
আদি জীবকোষগুলো ছিল
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক (Prokaryotes)।
অর্থাৎ
এই জাতীয় কোষে
কোনো সুষ্পষ্ট
প্রাণকেন্দ্র
ছিল না।
অধিকাংশ প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষযুক্ত জীবদেহ একটি মাত্র
কোষ দ্বারা গঠিত হয়েছিল।
এই কোষে সুসংগঠিত
ডিএনএ,
মাইটোকন্ড্রিয়া,
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম,
লাইসোজোম,
গোল্গি বস্তু ছিল না। সাধারণত এই
জাতীয় কোষের আকার
এক থেকে দশ মাইক্রোমিটার (µm)
এর মধ্যে হয়ে থাকে।
৩৮০ কোটি বছর আগে
এই আদি জীবকোষেরই একটি প্রজাতি হিসেবে
আর্কেব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ঘটেছিল।
প্রায় ৩০০ কোটি বছর
আগের পুরানো জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে, এই ব্যাক্টেরিয়ার পূর্বপুরুষদের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
এরা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সালোকসংশ্লেষণের কাজ করতো।
কার্বন ,
হাইড্রোজেন,
অক্সিজেন,
নাইট্রোজেন
ও
ম্যাগনেশিয়াম-এর একটি যৌগিক অণুর সাথে- হাইড্রোকার্বন যৌগ যুক্ত হয়ে তৈরি
হয়েছিল
ক্লোরোফিল।
৩৫০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে, প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-ভিত্তিক আদি জীবকণিকা বিভাজিত হয়ে ৩টি ধারার জীবজগতের সূচনা করে। এই ভাগ দুটি হলো− ব্যাক্টেরিয়া এবং আর্কিয়া। জীববিজ্ঞানের শ্রেণিকরণে এই দুই জাতীয় জীবকে জীব-স্বক্ষেত্র (Domain) বলা হয়।
Pyrococcus Abyssi -নামক আর্কিব্যাকটেরিয়া |
আর্কিব্যাক্টেরিয়ার প্রাচীনতম নমুনা পাওয়া গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Yellowstone National Park.-এ |
বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে
ব্যাক্টেরিয়া
এবং
আর্কেব্যাক্টেরিয়া
মধ্যে কোনো পার্থক্য স্পষ্ট ছিল না। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে Carl Woese
এবং
George Fox
উভয় জীবকণিকার পার্থক্য নিরূপণ করে
আর্কেব্যাক্টেরিয়াকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে সমর্থ হন। উল্লেখ্য আর্কেব্যাক্টেরিয়ার
প্রাচীনতম নমুনা পাওয়া
গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Yellowstone National Park.-এ।
এই বিজ্ঞানীদ্বয় কিছু জীবকণিকা প্রাপ্তির সূত্রে
আর্কিয়া এবং
ব্যাক্টেরিয়া ডোমেইন হিসেবে ভাগ
করেন।
ধারণা করা হয়,
৩০০ বৎসর থেকে
২৫০
কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর
জীবজগতের প্রতিনিধি ছিল
ভাইরাস,
ব্যাক্টেরিয়া'র
এবং
আর্কিয়া।
এই ব্যাক্টেরিয়াগুলোতে ছিল
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ।
অর্থাৎ এই সকল কোষে কোন নিউক্লিয়াস,
ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষ গহ্বর
ইত্যাদি ছিল না।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে,
বিবর্তনের প্রাথমিক স্তরে
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষের
সূত্রে জীবজগতের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এদের কোষে ছিল
মাইটোকন্ড্রিয়া,
গোল্গি বস্তু। এই বিচারে ধারণা করা হয়,
২৫০-১৬০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে
মাইটোকন্ড্রিয়া
এবং
গোল্গি বস্তু
যুক্ত হয়েছিল।
এর পরবর্তীয় যুগ হলো মেসোআর্কিয়ান যুগ
(৩২০ কোটি থেকে ২৮০ কোটি পূর্বাব্দ)।
সূত্র
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleogene