গোলগি বস্তু
Golgi apparatus, Golgi complex, Golgi body

এক প্রকার কোষীয় অঙ্গাণু বিশেষ। এই অঙ্গাণু পাওয়া যায় সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-এ। এই অঙ্গাণুগুলো কোষের আন্তঃআবরণীতন্ত্রের অংশ। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতালিয়ান বিজ্ঞানী ক্যামিল্লো গোলগি এই অঙ্গাণুগুলো প্রথম শনাক্ত করেন বিড়াল ও পেঁচার কোষে। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এই বিজ্ঞানীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় গোলগি বস্তু। সব ধরনের গলজি বস্তুর প্রাচীর প্রোটিন ও লিপিড নিয়ে গঠিত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বিবর্তনের প্রাথমিক স্তরে নিউক্লিয়াস-যুক্ত কোষের সূত্রে জীবজগতের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এদের কোষে ছিল মাইটোকন্ড্রিয়া, গোল্‌গি বস্তু। এই বিচারে ধারণা করা হয়, ২৫০-১৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং গোল্‌গি বস্তু যুক্ত হয়েছিল। জীবজগতে এদের পাওয়া যায় প্রাণীর জীবকোষে। উচ্চতর উদ্ভিদের কোষে এদের পাওয়া যায় না। তবে নিম্নস্তরের উদ্ভিদের কোষে এদের অল্প বিস্তর পাওয়া যায়। গোড়ার দিকে জীবজগতের প্রজাতিগুলোর ভিতরে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। তাই আদিকালের জীবকণিকাতে গোল্‌গি বস্তু ছিল।

কোষের শারীরবৃত্তীয় কাজ অনুসারে গোল্‌গি বস্তু তিন ধরণের হয়ে থাকে। এগুলো হলো-

১. সিস্টারনি: এগুলো সমান্তরালভাবে লম্বালম্বিভাবে থাকে। প্রস্থের দিকে চাপা এবং দৈর্ঘ্যের বিচারে সবগুলো সমান হয় না। তবে এরা নালিকার মতো হয়ে থাকে।

২. বড় গহ্বর: এগুলো সিস্টারনির কাছেই থাকে। তবে এদের আকার হয় গোলাকার থলির মতো। মূলত সিস্টারনির প্রাচীর চওড়া হয়ে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি হয়।

৩. ক্ষুদ্র গহ্বর: এগুলো সিস্টারনির নিচের দিকে থাকে। এরা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও গোলাকার হয়ে থাকে।

গোলগি বস্তু হরমোন নিঃস্বরণ ও ভিটামিন তৈরিতে সহায়তা করে। কোনো কোনো গোলগি বস্তু ভিটামিন সি সঞ্চিত করে। পুরুষ প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাণুর অ্যাকোসোম তৈরিতে সহায়তা করে। এর বাইরেএ বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে অংশগ্রহণ করে। লাইবোসোম তৈরিতে এদের প্রয়োজন হয়। লাইসোসোম উৎপাদন করে বলে গোলগি বস্তুকে অনেক সময় লাইপোকন্ড্রিয়া বা লিপোকন্ড্রিয়া বলা হয়। কোষপ্রাচীর গঠনে এদের বিশেষ ভূমিকা আছে। তাছাড়া কোষ বিভাজনের সময় কোষ প্লেট তৈরিতে এরা সাহায্য করে। কোষস্থ অপ্রয়োজনীয় জল বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে এরা সাহায্য করে।