কোষ (জীবিবজ্ঞান)
ইংরেজি : cell
| 
		
		কোষ-বিবর্তনের ধারা | 
জীবদেহের গঠনোপযোগী ও কার্যক্ষম এমন একটি একক সত্ত্বা, যা সুনির্দিষ্ট পরিমাণ জৈব উপকরণ আবরণী দ্বারা বেষ্টিত এবং যা পূর্ববর্তন কোনো কোষ থেকে সৃষ্টি হয়।
কোষ-বিবর্তনের ধারা
কোষের উৎপত্তি নিয়ে 
নানাবিধ মত প্রচলিত আছে। 
১. অনেকের মতে বাইরে থেকে আগত উল্কাখণ্ডের সাথে আদি জীবকণিকা হিসাবে কোষের আবির্ভাব 
ঘটেছিল পৃথিবীতে।
২. আদি সমুদ্রের জীবকোষের বিকাশ ঘটেছিল।
৩. আদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিদ্যুৎক্ষরণের ভিতর দিয়ে জীবকোষের বিকাশ ঘটেছিল। কিন্তু 
আদৌও এমন কোন বায়ুমণ্ডল আদিতে সৃষ্টি হয়েছিল কিনা, এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ করে থাকেন।
সত্যিকার অর্থে আদি কোষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, তার কোনো যথার্থ তথ্য পাওয়া যায় না। এটাও জানা যে, কিভাবে কোষগুলো বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। সাধারণত ধারণা করা হয় আরএনএ (RNA) আদিতে বংশবৃদ্ধির গুণ লাভ করেছিল। এই যৌগিক পদার্থ বংশগত তথ্য ধারণ করতে সক্ষম ছিল এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া বিশেষ উদ্যেশ্যে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল।
ধারণা করা হয়, হেডিন (Hadean) কালে ৪০০ কোটি থেকে ৪১৫ কোটি বৎসরের ভিতরে আদি সমুদ্রে আদি জীবকোষের আদ্য উপকরণ তৈরি হয়েছিল। আর ২৫০-১৬০ কোটি বৎসর পূর্বে পালিওপ্রোটারোজোয়িক যুগে তৈরি হয়েছিল সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ।
কোষের আবিষ্কার
১৬৬৫ 
খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট হুক (Robert Hooke)
অণুবীক্ষণযন্ত্রের 
সাহায্যে প্রথম কোষ আবিষ্কার 
করেন। তিনি একটি বোতলের কাষ্ঠাল ছিপিকে পরীক্ষা করে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষ 
দেখতে পান। উল্লেখ্য ছিপির কোষগুলো মৃত থাকায় তিনি এই কোষগুলোর অভ্যন্তরে ফাঁকা 
জায়গা দেখতে পেয়েছিলেন। তাই এই কক্ষগুলোকে 
cell
নামে
অভিহিত
করেছিলেন। 
বাংলায় এর পারিভাষিক শব্দ হিসাবে 'কোষ' গ্রহণ করা হয়েছে।
লিউয়েন হুক (Antonie van Leeuwenhoek (1632 – 1723)) কোষে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব আছে এমনটা ধারণ দিয়েছিলেন। ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে এই সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছিলেন Franz Bauer। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) একটি অর্কিড পাতা পরীক্ষা করে কোষে নিউক্লিয়াসের উপস্থিতির বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। অনেকে এই কারণে রবার্ট ব্রাউন-কে অনেকে কোষের নিউক্লিয়াসের আবিষ্কারক হিসাবে উল্লেখ করেন।
১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে জ্যাকব 
স্লিডেন (Matthias Jakob Schleiden 
) এবং থিওডোর শোয়ান (Theodor 
Schwann) কোষ সম্পর্কিত এক ব্যাখ্যায় জানান যে- সকল প্রকার জীব দেহ 
এক বা একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত এবং যা পূর্ববর্তন কোনো কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। 
জীববিজ্ঞানে এই সূত্রটি কোষ মতবাদ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
কোষের আকার ও আয়তন
কোষ সাধারণত আণুবীক্ষণিক হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু কোষ বড় আকারের হয়ে 
থাকে। যেমন পাখির ডিম। তবে সাধারণ কোষের আকৃতি ০.১ মাইক্রোন থেকে ১ মিলি মাইক্রোন 
হয়ে থাকে। সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কোষটির ব্যাস হলো- ০.১ মাইক্রোন। আর সবচেয়ে বড় 
কোষের ব্যাস হলো ১৫ সেমি। স্তন্যপায়ীদের স্নায়ুকোষ দৈর্ঘ্যে এক মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কোষের আকার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন গোলাকার, স্তম্ভাকার, নলাকার, আয়তাকার প্রভৃতি। কোষের এরূপ বিভিন্ন আকার হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো– কোষের নির্দিষ্ট কার্য, প্রোটোপ্লাজমের ঘনত্ব ও কোষের উপাদান, পৃষ্ঠটান ইত্যাদি।
কোষের প্রকারভেদ 
কোষের নানা দিক বিচার করে, কোষকে বিভিন্নভাগে ভাগ করা হয়। কোষ আবিষ্কৃত হওয়ার 
দীর্ঘদিন পরে
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ডগহার্টি নামক একজন 
জীববিজ্ঞানী, জীবকোষে প্রাণকেন্দ্রের গঠন প্রকৃতি এবং এর অস্তিত্বের উপর ভিত্তি করে 
দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগ দুটি হলো–  
    
১. প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (
Prokaryotes)
   
২. 
সু-প্রাণকেন্দ্রিক  
    কোষ (Eukaryotic cell)।
আবার জীবজগতের রাজ্যের বিচারে কোষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগদুটি হলো–  
    ১. প্রাণী কোষ
    ২. উদ্ভিদকোষ
কোষের উপাদান  
নানা ধরনের উপাদান নিয়ে কোষ গঠিত হয়। এর কিছু কিছু উপাদান সকল ধরনের কোষেই পাওয়া 
যায়। আবার কোনো কোনো উপাদান বিশেষ বিশেষ ধরনের কোষে পাওয়া যায়। সকল ধরনের কোষের 
বিচারে একটি কোষে যে সকল উপাদান পাওয়া যায়, সেগুলো হলো–  
| এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কোষ-গহ্বর কোষ-পর্দা কোষ প্রাচীর গোল্গি বস্তু নিউক্লিয়াস | প্রোটোপ্লাজম প্লাস্টিড রাইবোজোম লাইসোজোম মাইটোকন্ড্রিয়া সাইটোপ্লাজম সেন্ট্রোজোম | 
	কোষ বিভাজন
	বহুকোষীয় জীব পুর্ণতা পায় বহুকোষের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে। কিন্তু 
	বহুকোষীয় জীবের সূচনা ঘটে একটি মাতৃকোষ থেকে। মাতৃকোষ জীবের বংশগতির 
	সূত্রানুসারে বিভাজিত হয়। যে জীব যত বড়, তার কোষের সংখ্যাও বেশি এবং আবার কোষের 
	প্রকরণও বেশি। এর সবই একটি ধারাক্রম অনুসরণ করে তৈরি হয়।
প্রাথমিকভাবে একটি মাতৃকোষ 
	থেকে দুটি অপত্যকোষের জন্ম হয়। এরপর প্রতিটি অপত্যকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি কোষ 
	তৈরি করে। এই কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
	জীবকোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াসের অস্তিত্বের বিচারে কোষকে দুটি ভাগে ভাগ করা 
	হয়েছে। ভাগ দুটি হলো— 
	
	 প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ
	 
	এবং 
	
	সু-প্রাণকেন্দ্রিক  
	কোষ। 
	কোষ বিভাজন কোষবিভাজন প্রক্রিয়াকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ 
	৩টি হলো–  
	
    ১. এ্যামাইটোসিস
	    ২. মাইটোসিস 
    ৩. মাইয়োসিস।