ল্যাটিন nucleus বা nuculeus [শাঁস (kernel)]>ইংরেজি : nucleus
বাংলা : প্রাণকেন্দ্র।
সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষের
(Eukaryotic cell
)
অভ্যন্তরে দৃশ্যমান
সর্বাপেক্ষা ঘন, অস্বচ্ছ, ঝিল্লী পরিবেষ্টিত একটি অংশকে নিউক্লিয়াস বলা হয়।
লিয়েনহুক (Antonie van Leeuwenhoek (1632 –
1723) সালমান মাছের
লোহিত কণিকা পর্যবেক্ষণ করে নিউক্লিয়াস দেখতে পান। ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঞ্জ
বায়ুয়ের তাঁর গবেষণায় জীবকোষে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্বের কথা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু
এঁরা কেউই নিউক্লিয়াস সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন নি।
১৭৩১ খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী
রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown)
নিউক্লিয়াস সম্পর্কে
Linnean Society of London-তে সর্বপ্রথম নিউক্লিয়াস সম্পর্কে
বিস্তারিত ধারণা দেন। কিন্তু তিনি নিউক্লিয়াসের যাবতীয় কার্যক্রমের ব্যাখ্যা দিতে
সমর্থ হন নি। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাথিয়াস স্ক্লেইডেন (Matthias
Schleiden) এক
প্রস্তাবনায় দাবি করেন যে, নিউক্লিয়াস জীবকোষের বিভাজনে নিউক্লিয়াস অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর থেকে নিউক্লিয়াস সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী
বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
নিউক্লিয়াসের আকার ও আয়তন
কোষের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে বড়। একটি কোষের প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ
অঞ্চল জুড়ে নিউক্লয়াস থাকে। কোষভেদে এদের আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার, লম্বাটে হতে
পারে। এদের আয়তন ডিএনএ -এর পরিমাণের উপর নির্ভর করে। কোষ ভেদে এর ব্যাস হয়ে থাকে
১০ থেকে ২০ মাইক্রোন।
সাধারণত একটি কোষে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। তবে কিছু কিছু শৈবাল ও ছত্রাকে একাধিক নিউক্লিয়াস দেখা যায়।
নিউক্লিয়াসের
ভৌত গঠন
প্রতিটি নিউক্লিয়াসের বাইরে একটি পর্দা থাকে। একে বলা হয়- নিউক্লীয় পর্দা (nuclear
membrane)। এই পর্দা
স্বচ্ছ অর্ধভেদ্য কোমল। এর বাইরের দিকে দুটি পর্দা রয়েছে। এই পর্দা ১০ থেকে
৫০ ন্যানোমিটার পুরু হয়ে থাকে। এই পর্দা দুটি স্তরে বিভক্ত থাকে। এর বাইরের অংশে
অসংখ্য ছিদ্র থাকে। একে বলা হয় নিউক্লিয়ার রন্ধ্র। এর ভিতরের অংশে কোনো ছিদ্র থাকেন। এই পর্দা লাইপোপ্রোটিন দ্বারা
গঠিত। কোষের বাইরের সাইটোপ্লাজমেরর ভিতর যখন কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তখন তার
প্রভাব থেকে এই পর্দা নিউক্লিয়াসকে মুক্ত রাখে। একইভাবে এই পর্দা নিউক্লিয়াসের
ভিতরে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল সাইটোপ্লাজমে প্রবেশে বাধা দেয়।
সাইটোপ্লাজমের সাথে নিউক্লিয়াসের যোগাযোগ রক্ষিত হয় এই পর্দার দ্বারা। এই পর্দার
ছিদ্রের ভিতর দিয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে।
নিউক্লিয়াসের মধ্যেকার দানাকৃত স্বচ্ছ, সমসত্ব, তরল, আঠালো পদার্থকে নিউক্লিওপ্লাজম (nucleoplasm) বলে। এর মধ্যে নিক্লওপ্রোটিন ব্যতীত নিউক্লিক এ্যাসিড, এনজাইম, খনিজ লবণ ইত্যাদি পাওয়া যায়। এর রাসায়নিক গঠন অত্যন্ত জটিল। এটি নিউক্লিয়াসের জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। রাইবো নিউক্লিয়িক এ্যাসিড ও ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক এ্যাসিড তৈরিতে সাহায্য করে।
নিউক্লিওপ্লাজম-এর
ভিতরে ক্ষুদ্র ঘন গোলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস (nucleolus)
বলে। এটি প্রোটিন, লিপিড, ডি.এন.এ, আর.এন.এ দ্বারা গঠিত। এ ছাড়া এতে পানি ও বিভিন্ন
প্রকারের এনজাইম পাওয়া যায়। এটি রাইবোজোম প্রস্তুত করে, কোষ বিভাজনে অংশ নয়,
প্রোটিন সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে ও আর.এন.এ. সংরক্ষণ করে। সাধারণত একটি কোষে একটি
নিউক্লিওলাস থাকে। তবে কোনো কোনো প্রজাতির কোষে একাধিক নিউক্লিওলাস দেখা যায়। তবে
যে সকল কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণ হয় না, সে সকল কোষে (যেমন- শুক্রাণু,
শ্বেতকণিকা ইত্যাদি)
নিউক্লিওলাস থাকে না।
নিউক্লিওপ্লাজমের অভ্যন্তরে জালের মতো ছড়ানো, বেশকিছু তন্তুকে ক্রোমাটিন তন্তু
(Chromatin fiber)
বলে। এই তন্তু নিউক্লিওপ্লাজমের ভিতর ভাসমান অবস্থায় থাকে।
এদের এক একটি খণ্ডকে ক্রোমোজোম (chromosome)
বলে। এগুলি ডিএনএ. ও আরএনএ. হিষ্টোন ও নন হিষ্টন দ্বারা গঠিত। এছাড়া এতে থাকে কিছু
ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। এতে ডি. এন. এ ও হিষ্টনের পরিমাণ প্রায় ৩৫%- ৫৫%। এটি
ডিএনএ ধারণ করে, প্রাটিন সংশ্লেষণ করে, কোষ বিভাজনে সাহায্য করে। এর গায়ে বংশগতির
বাহক হিসাবে অংসখ্য জিন (gene)
থাকে ।