হেডিন কাল
(৪৬০ থেকে ৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
Hadean eon

পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক কাল বিভাজনের বিচারে এই কালটিকে প্রিক্যাম্ব্রিয়ান মহাকাল-এর প্রথম ভাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়১৯৭২ খ্রিষ্টব্দে এই কালের নামকরণ করেছিলেন ভূতত্ত্ববিদ প্রিস্টোন ক্লাউড (Preston Cloud )ক্লাউড এই কালের নাম গ্রহণকরণ করেছিলেন- গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র হেডিজ (Hades) নামানুসারেউল্লেখ্য, গ্রিক পুরাণ মতে হেডিজ ছিলেন পাতাল বা যমপুরীর অধিপতির নাম

আন্তর্জাতিক ভূস্তর কমিশন (International Commission on Stratigraphy)-এর মতে প্রায় ৪৬০ কোটি বৎসর খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে এই কালের আর্ম্ভ। এই কালে সমাপ্তি কাল ধরা হয় ৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।

হেডিন কাল (৪৬০-৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)

জড় থেকে জীবনের প্রকাশ
এই যুগের শুরুর দিকে মহাসাগর-সাগরগুলোর তরল পদার্থের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছিল নানা যৌগিক পদার্থ মিশ্রিত জলরাশি পৃথিবীর আদিম সমুদ্রের জলে নানা ধরনের দ্রবাদি মিশে গিয়ে এক ধরনের জটিল দ্রবণ তৈরি করেছিল। এই সময় অতি-বেগুনি রশ্মি, পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা নানা ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি, পার্থিব মেঘে থেকে সৃষ্ট মহাবজ্রপাত এবং তৎকালীন সমুদ্রজলের চাপ ও তাপের প্রভাবে সাগরজলের রাসায়নিক উপকরণগুলোতে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে চলেছিল অবিরাম।

হেডিন কালের শেষভাগে পৃথিবীর আদিম মহাসমুদ্রে এসে যে সকল যৌগিক বা যৌগমূলক পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, তার সবগুলো জীবজগতের আদি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে সে সময়ে জীবদেহগঠনের সহায়ক যে সকল অণু তৈরি হয়েছিল, তাদেরকে বলা হয় জৈব-অণু (biomolecule)। সাধারণভাবে দেখা যায় এ সকল জৈব-অণুতে ২৫টিরও বেশি মৌলিক পদার্থ থাকে। তবে এর ভিতরে ছয়টি মৌলিক পদার্থকে জৈবঅণুর সাধারণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সকল মৌলিক পদার্থের ইংরেজি বানানের আদ্যাক্ষর নিয়ে যে শব্দসংক্ষেপ করা হয়েছে- তা হলো CHNOPS (Carbon, Hydrogen, Nitrogen, Oxygen, Phosphorus, and Sulfur)

জৈবঅণুর সবচেয়ে সরল জৈবযৌগ তৈরি হয় হাইড্রোজেন কার্বন দিয়ে এবং জৈবযৌগের প্রথম সদস্য হলো মিথেন। উল্লেখ্য, চার হাত বিশিষ্ট কার্বন, যখন এক হাত বিশিষ্ট হাইড্রোজেনের সাথে মিলিত হয়ে মিথেনের উদ্ভব হয়। এই কারণে, মিথেনের রাসায়নিক প্রতীক হয়  (CH4) কার্বনের সাথে  হাইড্রোজেনের বন্ধুত্ব হতে পারে নানা ধরনের এবং বন্ধুত্বের প্রকৃতি অনুসারে এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও হয় নানা ধরনের। সাধারণভাবে হাইড্রোজেন ও কার্বনের বন্ধুত্বের দ্বারা সৃষ্ট অণুগুলিকে হাইড্রোকার্বন বলা হয়। আবার কোনো হাইড্রোকার্বনের সাথে যখন অন্য কোনো মৌলিক বা যৌগমূলক যুক্ত হয়, তখন নবাগত এই অতিথির সূত্রে নতুন অণু তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও অতিথির প্রকৃতি অনুসারে হাইড্রোকার্বনগুলো নতুন শ্রেণিগত রূপ পায়।

আদিম মহাসমুদ্রের জলের অনুকুল পরিবেশে এই জৈব-অণুগুলোর ভিতরে অন্য পদার্থের সাথে আসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল নানা ভাবে। ফলে  তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের যৌগিক পদার্থ। এর ভিতরে কিছু অণু তৈরি হয়েছিল কার্বন ভিত্তিক। কার্বনের সাথে বিশেষ কিছু অন্য পদার্থের মিলনে তৈরি হয়েছিল, নানা ধরনের জৈব কার্যকরীমূলক। এর ফলে জৈব-অণুগুলো নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য লাভ করেছিল। জৈব-অণুর ক্ষেত্রে মোট ছয়টি কার্যকরীমূলক বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং সালফাইটের সাথে কার্বনের বন্ধন সৃষ্টির বিবেচনায় একে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো-

১. অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকের ভিত্তি হলো অক্সিজেন ও কার্বনের বন্ধন। কার্বনের সাথে অক্সিজেনের বন্ধন তিনভাবে সংঘটিত হয়েছিল। এ সকল কার্যকরীমূলককে এদের  প্রকৃতি অনুসারে তিনভাগে ভাগ করা হয়।

  • ১.কার্বোনিল (Carbonyl): এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক এককভাবে অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে অক্সিজেন দুটি বাহু কারবনের দুটি বাহুকে অধিকার। রসায়নবিজ্ঞানে এর প্রতীক ব্যবহার করা হয়  C=O

  • ২. হাইড্রোক্সিল (Hydroxyl):  এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে অক্সিজেনের সাথে থাকে হাইড্রোজেন। মূলত একটি অক্সিজেন ও একটি হাইড্রোজেন মিলিত হয়ে −OH মূলক সৃষ্টি করে। এই মূলকই কার্বনের সাথে মিলিত হয়ে জৈবযৌগের সৃষ্টি করে।

  • ৩. কার্বোক্সিল (Carboxyl): এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে থাকে কার্বন, অক্সিজেন ও  হাইড্রোজেন। এতে একই কার্বনের সাথে কার্বনিল ও হাইড্রোক্সিল যুক্ত হয়। এর সাধারণ সংকেত    HO−C=O। সাধারণভাবে এই সংকেত প্রকাশ করা হয় (-COOH) হিসেবে।
     

  • ৪. কার্বোহাইড্রেড: সাধারণত একটি কার্বনের সাথে দুটি হাইড্রোজেন এবং একটি অক্সিজেন অণু যুক্ত হয়ে কার্বোহাইড্রেড তৈরি হয়। এই বিচারে এর সাধারণ রাসায়নিক সূত্র হলো- Cm(H2O)n

স্বাদের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেডকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-

  • মিষ্টি: এই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডের সাধারণ নাম চিনি। সাধারণ চিনি ছাড়া এই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডের ভিতরে রয়েছে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুকরোজ ইত্যাদি
  • মিষ্টিহীন: এই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডে স্বাদের বিচারে মিষ্টি নয়। এদের ভিতরে রয়েছে স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাকোজেন ইত্যাদি।

আণবিক গঠনের বিচারে কার্বোহাইড্রেডকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-

  • মোনোস্যাকারাইড: একটি কার্বন শৃঙ্খলের দ্বারা এই কার্বোহাইড্রেড তৈরি হয়। এই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা যায় না। এ্‌ই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডে ৩ থেকে ১০টি  কার্বন থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কার্বনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে মনোস্যাকারাইডকে ভাগ করা হয়। যেমন-
    • ট্রায়োজ: তিনটি কার্বন থাকে। যেমন- গ্লিসার্যাল্ডিহাইড, ডাইঅক্সি এ্যাসিটটোন ইত্যাদি।
    • টেট্রোজ: চারটি কার্বন থাকে। যেমন- ডি এরিথ্রোজ, ডি-থ্রেওজ ইত্যাদি।
    • পেন্টোজ: পাঁচটি কার্বন থাকে। যেমন- রাইবোজ, ডিঅক্সিরাইবোজ, রাইবুলোজ ইত্যাদি।
    • হেক্সোজ: ছয়টি কার্বন থাকে। যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, ম্যানোজ, সুক্রোজ ইত্যাদি।
    • হেপ্টোজ: সাতটি কার্বন থাকে। যেমন-সেডোহেপ্টুলোজ, মান্নোহেপ্টোলোজ ইত্যাদি।
    • অক্টোজ: আটটি কার্বন থাকে। যেমন- মেথিল্থোইলিনোকোসামাইড
  • ওলিস্যাকারাইড: এই জাতীয় কার্বোহাইড্রেডকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। যেমন- সুক্রোজ, মল্টোজ, র্যাফিনোজ ইত্যাদি। আর্দ্র বিশ্লেষণের ফলে যে সকল কার্বোহাইড্রেড পাওয়া যায়, তার সংখ্যার উপর ওলিস্যাকারাইডকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-
    • ডাইস্যাকারাইড: আর্দ্র বিশ্লেষণের দ্বারা দুটি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। যেমন-সুক্রোজ, মল্টোজ।
    • ট্রাইস্যাকারাইড: আর্দ্র বিশ্লেষণের দ্বারা তিনটি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। যেমন-র্যাফিনেজ।
  • পলিস্যাকারাইড: দুইয়ের অধিক মনোস্যাকারাইড অণু নিয়ে গঠিত কার্বোহাইড্রেডকে পলিস্যাকারাইড বলা হয়।

এত ধরনের কার্বোহাইড্রেডের মধ্যে পেন্টোজ-এর যেমন- রাইবোজ ডিঅক্সিরাইবোজ আদি জীবকণিকা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। তাই এই দুটি উপকরণ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।

  • রাইবোজ (Ribose): এটি একটি মোনোস্যাকারাইড জাতীয় কার্বোহাইড্রেড। এতে পাঁটি কার্বন থাকায়, একে 'পেন্টোজ' শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আণবিক সঙ্কেত C5H10O5Phoebus Levene নামক একজন রাশিয়ান বায়োকেমিষ্ট ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি ইস্ট থেকে পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট একটি শর্করা অনু নিষ্কাষণ করেন এবং এর নাম দেন রাইবোজ।

    এতে একটি অ্যালডিহাইড গ্রুপ (-CHO) থাকায় একে এ্যাল্ডোপেন্টোজ বলা হয়। এর গলনাঙ্ক ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ফারফিউরাল এ্যাসিড উৎপন্ন করে।
     

  • ডিঅক্সিরাইবোজ (Deoxyribose): এটি একটি মোনোস্যাকারাইড জাতীয় কার্বোহাইড্রেড। এতে পাঁটি কার্বন থাকায়, একে 'পেন্টোজ' শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আণবিক সঙ্কেত- C5H10O4

    Phoebus Levene
     নামক একজন রাশিয়ান বায়োকেমিষ্ট ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি প্রাণীর থাইমাস গ্লান্ডের নিউক্লিয়াস থেকে পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট একটি কার্বোহাইড্রেড অণুর সন্ধান পান। কিন্তু এই অণুতে রাইবোজ অণুর চেয়ে একটা অক্সিজেন অণু কম ছিল। তাই তিনি এই দ্বিতীয় অণুটির নাম দিয়েছিলেন ডিঅক্সিরাইবোজ। উল্লেখ্য ডিঅক্সি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল 'অক্সিজেন নাই' অর্থে।

    এর রং সাদা এবং কঠিন। এর গলনাঙ্ক ৯১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লেভুলিনিক এ্যাসিড উৎপন্ন করে।

২. নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও কার্বন বন্ধন:  এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে থাকে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন নিয়ে গঠিত পদার্থ।  এ্যামোনিয়া (Ammonia, NH3)-এর হাইড্রোজেন জৈব-মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে- এ্যামিন তৈরি হয়। কিন্তু -NH2 মূলকটি α কার্বনের সাথে যুক্ত হওয়ার সূত্রে যে জৈবঅণু সৃষ্টি করে, কার্যকরী মূলকের বিচারে তাকে বলা হয় এ্যামিনো (Amino)

ক্রমবির্তনের ধারায় আদিম সাগর জলে তৈরি হয়েছিল এ্যামিনো এ্যাসিড। এ্যামিনো এ্যাসিড মূলত একটি শ্রেণিগত নাম। এই এ্যাসিডে α কার্বনের সাথে থাকে এ্যামিনো মূলক -NH2 এবং (-COOH) মূলক। এটি হচ্ছে এ্যামিনো এ্যাসিডের মূল কাঠামো। এই মূল কাঠামোর সাথে অতিরিক্ত কোনো একক পরমাণু বা যৌগমূলক যুক্ত হয়ে এ্যামিনো এ্যাসিড পূর্ণরূপ পায়। অতিরিক্ত পার্শ্ব শিকল এই উপাদানকে রসায়ন বিজ্ঞানে একে R বর্ণ দ্বারা প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সব মিলে এর গাঠনিক রূপটি পাশের চিত্রের মতো।

এ্যামিনো এ্যাসিডের কার্বোক্সিল কার্যকরী মূলকের কার্বনকে বলা হয় ১ কার্বন। এর সাথে যুক্ত পরবর্তী কার্বনটিকে বলা হয় আলফা-কার্বন। এই আলফা কার্বনের সাথেই থাকে এ্যামিনো মূলক। এরপর এই কার্বনের সাথে অন্য কার্বন যুক্ত হলে, তাকে বলা হয় বিটা কার্বন। এরূপ কার্বনের সাথে কার্বন জুড়ে যখন জৈবঅণুটি দীর্ঘ হয়, তখন কার্বনের নাম হয় যথাক্রমে গামা, ডেল্টা ইত্যাদি। পাশের চিত্রে এর একটি নমুনা দেখানো হলো। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের নামকরণও করা হয়, গ্রিক বর্ণানুসারে। যেমন- আলফা এ্যামিনো এ্যাসিড, বিটা এ্যামিনো এ্যাসিড ইত্যাদি।


উল্লেখ্য, এক সময় মনে করা হতো যে, এ্যামিনো এ্যাসিডের মতো জটিল অণু রসায়নাগারে তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র স্ট্যানলি মিলার এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।  আদি সমুদ্রে নানা ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রাকৃতিক নিয়মে। স্ট্যানলি মাত্র এক ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আদি সাগরজলে কত ধরনের এ্যামনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল, তা জানা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০০ ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিডকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।


৩. নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষার: কার্বন, হাইড্রোজনে ও নাইট্রোজেন নিয়ে এই জাতীয় নানা ধরনের ক্ষার তৈরি হয়েছিল। জীবজগতের সাথে সম্পর্কিত নাইট্রোজন ভিত্তিক ক্ষারের দুটি বিশেষ প্রকরণকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এই প্রকরণ দুটি হলো

৪.ফসফরাস ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক তৈরি হয় কার্বনের সাথে ফসফরাসের বন্ধনে। ফসফেটের যোজ্যতা ৫। অক্সিজেনের সাথে ফসফরাসের বন্ধনে তৈরি হয় ফসফেট (PO43−)। এই ফসফেটের ফসফরাসের সাথে কার্বনের সংযোগ ঘটে।

হাইড্রোজেনের সাথে ফসফেটের সম্মিলনে সৃষ্টি হয় ফসফরিক এ্যাসিড (H3PO4 )। এই এ্যাসিড থেকে একটি হাইড্রোজেনের বিচ্যুতি ঘটলে তা (H2PO4 ) আয়োনিত অবস্থায় পৌঁছায়। এই অবস্থায় পুনরায় আয়োনিত হলে, এর অবস্থা হয়- (HPO42− )। পর্যাক্রমিক ধারায় এই যৌগটি থেকে ফসফেট (PO43−) তৈরি হয়। এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক দেখা যায় ডিএনএ, আরএনএ এবং কিছু লিপিড-এ।


আদিম জীবকণিকা সৃষ্টির এসব উপকরণ তৈরি হতে হতে, হেডিন কাল শেষ দশায় চলে এসেছিল। পরবর্তী আর্কিয়ন কালের প্রথম ভাগে
ইয়ো-আর্কিয়ান যুগে (৪০০-৩৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) জড় পৃথিবীর পরিবর্তনের সূত্রে আদিম জীবকণিকা সৃষ্টির পূর্ব-সময়ে এসব উপকরণ মিলে তৈরি হয়েছিল বড় বড় জৈব অণুর। আর এসব অণু তৈরি বিষয় নিয়েও আলোচনা করবো 'ইয়ো-আর্কিয়ান যুগ' অধ্যায়ে।

এই কালের শেষ কথা
৪০০ কোটি বৎসর শেষে, পৃথিবী হেডিন কাল শেষ করে প্রবেশ করেছিল আর্কিয়ান কালে। বিজ্ঞানীরা এই কালের সময় সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন ৪০০ কোটি বৎসর থেকে ২৫০ কোটি বৎসর।

সূত্র :