চন্দ্র
ইংরেজি :
Moon
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  { | উপগ্রহ | হাকাশীয় বস্তু | প্রাকৃতিক লক্ষ্যবস্তু | সমগ্র | দৈহিক লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের নাম। যা দীপ্ত করে এই অর্থে- এর নাম- চন্দ্র, চন্দ্রক, চন্দর, চাঁদ।  এবং সংস্কৃতজাত শব্দের সূত্রে চাঁদের বিবিধ নাম বাংলাতে অল্প-বিস্তর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেখুন : চাঁদ (অভিধান)   

 

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে জর্জ ডারউইন চাঁদের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রথম বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে তরল পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘোরার কারণে, একসময় এর পৃষ্ঠদেশ থেকে কিছু অংশ মহাকাশে ছিটকে পড়েছিল। এই ছিটকে পড়া অংশ পৃথিবীর আকর্ষণ উপেক্ষা করে দূরে চলে যেতে পারে নি এবং শেষ পর্যন্ত এই অংশ পৃথিবীর উপগ্রহ হিসাবে স্থিতি লাভ করেছে।

 

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ডারউইনের এই তত্ত্বকে অগ্রাহ্য করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Reginald Aldworth Daly বলেন যে, মহাকাশীয় বস্তু সংঘাতে সৃষ্টি হয়েছে। পরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা নানা রকমের মতামত ব্যক্ত করতে থাকেন। পরে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী William R. Ward ও ক্যানাডিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Alastair G. W. Cameron মতামত দেন যে, মঙ্গল গ্রহের মতো একটি মহাকাশীয় বস্তুর আঘাতের কারণে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে। এই মত অনুসারে বলা হয়  ৪৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পৃথিবী উত্তপ্ত এবং ঘন তরল দশায় পৌঁছেছিল। সেই সময় সেই তরল পৃথিবীর সাথে অপর একটি তরলগ্রহের সংঘর্ষ ঘটেছিল। এর ফলে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা কাল্পনিক অপর তরল গ্রহটির নাম দিয়েছেন থেইয়া।  বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, এই গ্রহটির আকার ছিল মঙ্গল গ্রহের মতো। কিন্তু এই অংশ মহাকাশে হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, পৃথিবীর আকর্ষণে বাধা পড়ে যায় এবং তা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। সেই সূত্রে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহে পরিণত হয়। চাঁদের ভূতাত্ত্ব্বিক কাল নিরুপণে, আদি সময়কালকে বলা হয় প্রি-নেক্টেরিয়ান অধিযুগ (Pre-Nectarian Period)। এই যুগের সময় ধরা হয় ৫৪৩৩ কোটি বৎসর থেকে ৩৯২০ কোটি বৎসর।


চাঁদ একটি ঘূর্ণায়মান মহাকাশীয় লক্ষ্যবস্তু হলেও এর আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একটি দিক দেখতে পাই। মূলত পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পারি।
 

সৌর জগতের চাঁদ পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল। এর ব্যাস পৃথিবীর ৪ ভাগের ১ ভাগ (৩,৪৭৪.৯ কিলোমিটার) এবং  এর ভর পৃথিবীর ৮ ভাগের ১ (৭.৩৪৭৭x১০২২ কিলোগ্রাম)। এর বিষুব অঞ্চলের ব্যাস ১,৭৩৮.১৪ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলে এর ব্যাস ১,৭৩৫.৯৭ কিলোমিটার। এই বিচারে চাঁদ গোলকারই বলা যেতে পারে। এর উপরিতলের স্থানের পরিমাণ ৩,৭৯৩ বর্গ কিলোমিটার। বিষুব অঞ্চলে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ১.৬২২,মিটার/সেকেন্ড
 

পৃথিবীকে পূব থেকে পশ্চিম দিকে আবর্তিত হয়। প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে  ২৭ দিন, ৭ ঘন্টা, ৪৩ মিনিট এবং ১১ সেকেন্ড সময় নেয়।
 

জোয়ার-ভাটায় চাঁদের প্রভাব

পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের দিকে থাকে, সে অংশের সমুদ্রের পানি স্ফীত হয়ে উঠে, এর ফলো সমুদ্রে জোয়ারের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আবর্তনের  সূত্রে পৃথিবী দিক পরিবর্তন করলে, আকর্যণ হারিয়ে সমুদ্রের পানি আবার নিচে নেমে যায়। এর ফলে ভাটার সৃষ্টি হয়।

 

চন্দ্রাভিযান
চন্দ্রাভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা লাভের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন (সাধারণভাবে রাশিয়া নামে পরিচিত) পৃথক পৃথকভাবে কার্যক্রম চালায়। এক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য লাভ করে লুনা কার্যক্রমের
ধারাবাহিকতার সূত্রে। কিন্তু চাঁদে মানুষ নামতে সক্ষম হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত এ্যাপেলো কার্যক্রম।


চান্দ্র-বৎসর
পার্থিব জীবনে মানুষ সময় নিরুপণ করার ক্ষেত্রে, বহুকাল আগে থেকে চন্দ্রের গতি প্রকৃতি ভিত্তিক বর্ষ গণন পদ্ধতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। চন্দ্র-কেন্দ্রিক এই বর্ষ-গণন পদ্ধতিই চান্দ্র-বৎসর নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
                    দেখুন :
চান্দ্র-বৎসর, চন্দ্রগ্রহণ