চান্দ্র-পঞ্জিকা
পার্থিব জীবনে মানুষ সময় নিরুপণ করার ক্ষেত্রে, বহুকাল আগে থেকে চন্দ্রের গতি প্রকৃতি ভিত্তিক বর্ষ গণন পদ্ধতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। চন্দ্র-কেন্দ্রিক এই বর্ষ-গণন পদ্ধতিই চান্দ্র-বৎসর নামে অভিহিত হয়ে থাকে। প্রকৃত চান্দ্র পঞ্জিকা ব্যাপকভাবে অনুসরণ করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। ইসলামি এই পঞ্জিকার নাম হিজরি

ভারতীয় জ্যোতির্বজ্ঞানীদের মতে- চন্দ্র ১২টি রাশি ও ২৭টি নক্ষত্রকে অতিক্রম করতে সময় নেয় মোট ২৭ দিন।  এই সময়কে বলা হয় চান্দ্রমাস। অন্য বিচারে একটি পূর্ণিমা থেকে অপর পূর্ণিমার পূর্বদিন পর্যন্ত ১ চান্দ্র মাস বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি চান্দ্রমাসকে ৩০টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ৩০টি ভাগের প্রত্যেকটিকে বলা হয় তিথি। এর ভিতরে অমাবশ্যার পরবর্তী তিথি থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫টি তিথি নিয়ে গঠিত ভাগটি শুক্লপক্ষ বলা হয়। পক্ষান্তরে পূর্ণিমার পরবর্তী তিথি থেকে অমাবশ্যা পর্যন্ত ১৫টি তিথি নিয়ে গঠিত ভাগটির নাম কৃষ্ণপক্ষ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। তিথিগুলো সৌরদিনের চেয়ে কিছুটা ছোটো। তাই চান্দ্রমাস সৌরমাসের চেয়ে কিছুটা ছোটো হয়ে থাকে।  প্রায় সাড়ে ২৯ সৌরদিনে দিনে এক চান্দ্রমাস হয়
। এই রূপ ১২টি চান্দ্রমাস নিয়ে তৈরি হয় ১টি চান্দ্র-বৎসর।

সৌর বৎসরকে সাধারণভাবে গণনা করা হয় ৩৬৫ দিনে। পক্ষান্তরে চান্দ্র বৎসর হয় ৩৫৫ দিনে। ফলে প্রতি চান্দ্র বৎসরের সাথে সৌরবৎসরের ১০ দিনের পার্থক্য হয়। তিন বৎসরে এই পার্থক্যের পরিমাণ হয় ৩০ দিন। এই কারণে ভারতের বৈদিকযুগে প্রতি তিন বৎসর অন্তর অতিরিক্ত একটি বাড়তি মাস যুক্ত করে চান্দ্র বৎসরের সাথে সৌর বৎসরের সমন্বয় করা হতো। এই বাড়তি মাসকে বলা হয়েছে মলিম্লুচ বা মলমাস।

অমাবস্যার পর থেকে চাঁদের এই আলোকিত অংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পূর্ণিমাতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আবার পূর্ণিমা থেকে চাঁদের আলোকিত অংশ হ্রাস পেতে পেতে অমাবস্যায় পৌঁছায় চাঁদের এই আলোকিত অংশের হ্রাস- বৃদ্ধির এক একটি অধ্যায়কে কলা বা চন্দ্রকলা বলা হয়

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে- এই কলাগুলি বিভিন্ন দেবতারা পান করে থাকেন নিচে এই কলাগুলোর নাম ও তার পানকর্তা দেবতাদের নামের তালিকা দেওয়া হলো-

 

শুক্লপক্ষীয় কলা 

 
     

কলা সংখ্যা  

 নাম

 দেবতা

প্রথমা কলা 

 পূষা

অগ্নি 

দ্বিতীয়া কলা

যশা

সূর্য 

তৃতীয়া কলা

সুমনষা

বিশ্বদেবগণ

চতুর্থী কলা 

রতি 

বরুণ

পঞ্চমী কলা  

প্রাপ্তি

বষ্‌টকার 

ষষ্ঠী কলা 

ধৃতি

চন্দ্র

সপ্তমী কলা 

ঋদ্ধি  

স্বর্গীয় ঋষিগণ

অষ্টমী কলা 

সৌম্যা 

বিষ্ণু 

     
 

কৃষ্ণপক্ষীয় কলা

 
     

নবমী কলা

মরীচি

যম

দশমী কলা

অংশুমালিনী

বায়ু 

একাদশী কলা

অঙ্গিরা

উষা

দ্বাদশী কলা 

শশিনী

অগ্নিস্বাত্তাদি

ত্রয়োদশী কলা

ছায়া

কুবের

চতুর্দশী কলা 

সম্পূর্ণমণ্ডলা

শিব

পঞ্চদশী কলা

তুষ্টি 

ব্রহ্মা 

ষোড়শী কলা 

অমৃতা 

পানিতে প্রবেশ করে


    উল্লেখ্য অমৃতা নামক কলা পানিতে প্রবেশ করে বলে অমাবস্যার উদ্ভব হয়
এই কলা ঔষধিতে পরিণত হওয়ার পর গাভী খায় ফলে দুধ ও ঘি উৎপন্ন হয় সেই দুধ-ঘি দিয়ে ব্রাহ্মণেরা যজ্ঞ সম্পন্ন করে বলে- অমৃতের উৎপত্তি হয় এবং সেই অমৃতে চন্দ্রকলা পুনরায় পূর্ণ হয়