হিজরি
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা   {| বৎসর | পর্যায় কাল |মৌলিক পরিমাপ | পরিমা | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি প্রতিপালনের জন্য ব্যবহৃত ধর্মীয় পঞ্জিকা বিশেষ। এটি সম্পূর্ণ চান্দ্র-বৎসর। এই বৎসর গণন-পদ্ধতি আরবদেশে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। হিজরি নামের সন প্রচলিত হয় এই, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর হিজরতের স্মরণে। 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাঃ-এর খিলাফতকালে, ইরাক ও কুফার প্রশাসক হজরত আবু মুছা আশয়ারি (রাঃ), একটি নতুন ইসলামি সন প্রচলনের জন্য আবেদন করেন। তিনি খলিফাকে জানান যে, রাষ্ট্রীয় আদেশ ও বিভিন্ন দিক-নির্দেশনার সময় কোনো সন-তারিখ উল্লেখ না থাকায়, অনেক সময় আদেশনামা কার্যকর করতে অসুবিধা হয়। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে, খলিফা কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে মজলিসে শুরা গঠন করেন এবং মুসলিম জাতির সুবিধার্থে একটি ইসলামি সন-তারিখ নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। খলিফার উত্থাপিত এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে, সন নির্ধারণের বিষয়ে নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই সকল বক্তব্য অনুসারে যে প্রস্তাবগুলো পাওয়া যায়, তা হলো

১. হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর জন্মকাল থেকে বৎসর গণনা হবে।
২.
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুকাল থেকে বৎসর গণনা হবে।
৩.
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর নবুয়ত লাভের সময় থেকে বৎসর গণনা হবে।

খলিফা  হজরত ওমর (রাঃ) উল্লিখিত মতামত শোনার পর, যে মতামত প্রকাশ করেন তা হলো

১.  যেহেতু খ্রিষ্টানরা হজরত ঈসা আঃ-এর জন্মগ্রহণের মাস থেকে তাদের ঈসায়ী সন শুরু করেছে। এজন্য তাদের মতো করে ইসালামি সন হওয়া উচিত হবে না।
২.
হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুকাল মুসলমানদের জন্য শোকের সময়। এই স্মৃতি স্মরণ করে ইসলামি সন চালু করলে, তা জাহেলি যুগের অন্ধ প্রথা জীবিত করা হবে।
৩. নবুওয়াতের মাস থেকে বর্ষ গণনা সম্পর্কে তিনি জানান যে, নবী-রাসুলগণ জন্মগ্রহণের মাধ্যমে শারীরিক জীবন শুরু হয়। আর নবুয়তের মাধ্যমে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু হয়। তাই রাসুল সাঃ-এর শুধু নবুওয়াতি জীবন থেকে হিজরি সন করাটা সমীচীন হবে না।

হজরত ওমর রাঃ-এর এই মত হজরত ওসমান (রাঃ) ও হজরত আলী (রাঃ) তাঁর কথার প্রতি সমর্থন করেন। এবং তাঁরা হিজরতের সময় বর্ষ গণনা শুরু করার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হলে, হিজরতের সময় থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব গৃহীত হয়। হিজরত শব্দ থেকে এই পঞ্জিকার নামকরণ করা হয় হিজরি।

বর্ষ গণনার সময় নির্ধারণের পর, বৎসরের প্রথম  মাস নির্ধারণের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। যেহেতু হজরত মুহম্মদ (সাঃ) রবিউল আউয়াল মাসে গৃহত্যাগ করেছিলেন। তাই প্রথমে রবিউল আউয়াল-কে হিজরি সনের প্রথম মাস হিসাবে গণনার জন্য সভায় প্রস্তাব উঠে। কিন্তু ইসলামপূর্ব যুগ থেকে মহররম মাস আরবে বিশেষ সম্মানিত মাস হিসেবে বিবেচিত ছিল। তাছাড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারটি মাসকে বিশেষ মর্যাদার মাস হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই মাসগুলো হলো- জিলকদ, জিলহজ ও মহরম এবং রজব। তাছাড়া মাসের ধারাবাহিকতা ও সার্বিক সুবিধার কথা চিন্তা করে মহররমকেই হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে ধরা হয়।

মহরম মাসকে হিজরি সনের প্রথম মাস ধরে বাকি ১২টি মাসকে যেভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে, তা হলো

১. محرم, মহরম
২.
صفر, শফর
৩.
ربيع الأول, রবি উল আউল
৪.
ربيع الثاني, রবি অল সানি
৫.
جمادى الأولى, জমাদা অল আউল
৬.
جمادى الآخرة, জমাদা অল সানি
৭.
رجب, রজব
৮.
شعبان, শাবান
৯.
 رمضان, রমজান
১০.
شوال, শওয়াল
১১.
ذو القعدة, জেল্‌কদ
১২.
ذو الحجة, জেলহজ্জ

প্রথম হিজরি সন গণনা শুরু হয় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। আর দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শুরু করে।