হিজরত
আরবি هِجْرَة শব্দের অর্থ
হলো—
দেশান্তর বা মাতৃভূমি ত্যাগ। উল্লেখ্য বিধর্মীদের অত্যাচারের
কারণে মুসলমানরা ধীরে ধীরে মক্কা
থেকে মদিনায় চলে যান। এক সময় বিধর্মীরা
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-কে
হত্যা করার পরিকল্পনা
গ্রহণ করে। এই অবস্থায়, ইনি
৬২২ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে
মদিনায় চলে যান।
হযরতের জন্মভূমি মাতৃভূমি পরিত্যাগ করে মদিনায় যাওয়াকেই সাধারণত হিজরত নামে অভিহিত হয়ে থাকে। তবে
স্বদেশভূমি পরিত্যাগ অর্থে হিজরতের সূচনা হয়েছিল আরও আগে থেকে। ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে
হজরতের নবুয়ত লাভের পঞ্চম বৎসরে,
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর
নির্দেশ হজরত ওসমান (রাঃ) ও তাঁর স্ত্রী রোকাইয়া-সহ মোট ১৫ জন আবসিনিয়ায় চলে যান।
একে অনেক সময় প্রথম হিজরত নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর হিজরতের ঘটনা ঘটে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে।
আল্লাহ'র নির্দেশ আসার পর,
তিনি হজরত আলী-কে ডেকে, তাঁরে শয্যার উপর চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে নির্দেশ দেন
এবং রাতের অন্ধকারে হজরত
আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন।
৯
সেপ্টেম্বর, ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ (বৃহস্পতিবার),
রাতের অন্ধকারে হজরত
আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-কে সাথে
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)
নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন। মরুভূমির
ভিতর দিয়ে তাঁর প্রথমে মক্কার দক্ষিণে অবস্থিত ছওর নামক পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয়
নেন। এই সময় এই গুহার সামনে ঝুঁকে পড়া পাহাড়ি গাছপালায় কবুতর বাসা বাঁধতে শুরু করে
এবং গুহার মুখে মাকড়শা জাল তৈরি করে। হজরতদের পলায়নের পর, ভোর বেলায় বিধর্মীরা
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)
হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তাঁর বিছানয় হজরত আলী (রাঃ)-কে শুয়ে
থাকতে দেখে তারা হজরতের অনুসন্ধানে চারদিকে লোক প্রেরণ করে। একদল লোক ছওর পর্বতের
গুহায় এসে, গুহার মুখে কবুতরের বাসা ও মাকড়শার জাল দেখে ফিরে যায়। তারা ভেবেছিল এই
রকম মাকড়শার জাল দিয়ে ঢাকা কোনো গুহায় মানুষ প্রবেশ করে নি। এই গুহায় এঁরা তিনদিন
অতিবাহিত করেন। এই সময়
হজরত
আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-এর ছোটো কন্যা হজরত আসমা (রাঃ) গোপনে সন্ধ্যার দিকে
তাঁদের খাবার সরবরাহ করতেন।
হজরতেদের না পেয়ে বিধর্মীর হতাশ হয়ে পড়ে এবং তাদের অনুসন্ধানের কার্যক্রম অনেকটা শিথিল হয়ে যায়। এই অবস্থায় ১৩ সেপ্টেম্বর, ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ (সোমবার), তাঁরা এই গুহা পরিত্যাগ করে মদিনার পথে অগ্রসর হন। এই সময়ে মদিনা যাওয়ার প্রচলিত পথ ত্যাগ করে, তাঁরা লোহিত সাগর বরাবর অচেনা পথ ধরে অগ্রসর হন। ২২ শে সেপ্টেম্বর লোহিত সাগরের পাড় ঘেঁষে এবং কিছুটা ঘুরে তাঁরা কুবা নগরে পৌঁছান। তিনদিন পর হজরত আলী (রাঃ) কুবাতে উপস্থিত হন। ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁরা মদিনাতে গিয়ে পোঁছাতে সক্ষম হন।