হজরত মুহম্মদ সাঃ-এর ছবি

হজরত মুহম্মদ সাঃ-এর কোনো সত্যাশ্রয়ী ছবি পাওয়া যায় না। মুসলমানরা কালক্রমে তাঁর ছবিকে মূর্তিপূজায় পর্যবেশিত করতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে, তাঁর ছবি সংরক্ষণ করা হয় নি। তাঁর মৃত্যুর বহু পরে কেউ কেউ তাঁর কাল্পনিক ছবি এঁকেছেন, কিন্তু মুসলমানদের প্রবল আপত্তির কারণে সে সকল ছবি ধ্বংস করে ফেলা হয়।

কথিত আছে তৈমুর লঙ-এর পৌত্র জাহির-উল্লাহ বেগ-এর আদেশে জনৈক শিল্পী মুহম্মদ সাঃ-এর ১৪৩৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি ছবি এঁকেছিলেন। 

১৩৩৭ বঙ্গাব্দের দিকে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের পুস্তক প্রকাশক ভোলানাথ সেন  'প্রাচীন কাহিনী' পাঠ্যপুস্তকে এই ছবিটি ছাপিয়েছিলেন। বইটি ছাপার আগে টেক্সটবুক কমিটির মুসলমান সদস্যরা আপত্তি করেছেলেন বলে জানা যায় না। বইটি ছাপার পর, সাড়া ভারতবর্ষে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এরপর ভোলানাথ পাঠ্যপুস্তক থেকে এই ছবি প্রত্যাহার করেন এবং 'ছোলাতান' পত্রিকায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে দুইজন পাঞ্জাবী মুসলমান ভোলানাথ সেন ও তাঁর দুই কর্মচারীকে হত্যা করে। পরে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য এই দুইজন পাঞ্জাবী মুসলমানের মৃত্যুদণ্ড হয়।
সূত্র:
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও প্রবাসী। শঙ্করীপ্রসাদ বসু। দেশ সাহিত্য সংখ্যা, ১৩৯৭

মুহম্মদ সাঃ, হজরত

ইসলাম ধর্মের প্রচারক। ্য নাম আহমদ।
আরবের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের
বনি হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। এঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ ও মাতার নাম আমিনা।

এঁর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিরোধ আছে। এ সম্পর্কে মোহাম্মদ আকরাম খাঁ প্রণীত মোস্তফা চরিত নামক গ্রন্থে লিখিত হয়েছে- 'সোমবার, ৯ই রবিউল্-আওয়াল, ২০শে এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ ১লা জ্যৈষ্ঠ, ৬২৮ বঙ্গাব্দ, ব্রহ্মমুহূর্ত বা ছোব্‌হ-ছাদেকের অব্যবহিত পরে জন্মগ্রহণ করিলেন। ...তাবারি, এবনে-খাল্লেদুন, এবনে-হেশাম, কামেল প্রভৃতি ১২ই রবিউল-আউওল তারিখ নির্দেশ করেছেন। কিন্তু আবুল-ফেদা বলেন, ঐ মাসের ১০ই তারিখে হজরতের জন্ম হইয়াছিল। তবে সমস্ত লেখকই এক বাক্যে স্বীকার করিতেছেন যে, রবিউল্ আউওল মাসে সোমবারে হজরতের জন্ম হয়। আধুনিক মুছলমান লেখকগণ সূক্ষভাবে হিসাব করিয়া দেখাইয়াছেন যে, ১২ই বা ১০ই তারিখে সোমবার পড়িতে পারে না। উহা ৯ই ব্যতীত অন্য কোন তারিখ হইতে পারে না। মিসরের স্বনাম খ্যাত জ্যোতির্বিদ পণ্ডিত মাহমুদ পাশা ফারুকী, স্বতন্ত্র একখানা পুস্তক রচনা করিয়া ইহা অকাট্যরূপে প্রতিপন্ন করিয়াছেন। পাশা মহোদয়ের প্রমাণগুলির সংক্ষিপ্ত সার নিম্নে উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি। তিনি বলেন :

১. ছহী হাদীছে বর্ণিত আছে, হজরতের শিশুপুত্র এব্রাহিমের মৃত্যুর দিন সূর্য গ্রহণ হইয়াছিল।
২. হিজরী ৮ম সালের জিলহজ মাসে এব্রাহিমের জন্ম হয়
, ১৭ বা ১৮ মাস বয়সে হিজরীর দশম সালে তাঁহার মৃত্যু হইয়াছিল।
৩. অঙ্ক কষিয়া দেখিলে বুঝিতে পারা যাইবে যে
, উল্লিখিঁত সূর্যগ্রহণ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তারিখে ৮টা ৩০ মিনিটের সময় লাগিয়াছিল।
৪. এই তারিখ ধরিয়া হিসাব করিয়া দেখিলে জানা যায় যে
, হজরতের জন্ম সনে ১২ই এপ্রিল তারিখে রবিউল আউওল মাসের ১লা তারিখ আরম্ভ হইয়াছিল।
৫. জন্মদিনের তারিখ নির্দেশ স
ম্বন্ধে মতভেদ আছে বটে, কিন্তু রবিউল-আউওল মাসের ৮ই হইতে ১২ই পর্যন্ত এই মতভেদ সীমাবদ্ধ রহিয়াছে। সোমবার সম্বন্ধেও কাহারও মতভেদ নাই।
৬. ৮ই হইতে ১২ই রবিউল আউওলের মধ্যে ৯ই ব্যতীত সোমবার নাই।

হজরতের মা আমিনা- এঁর নাম রেখেছিলেন আহম্মদ। কথিত আছে, হজরতের মা গর্ভাবস্থায় এক স্বপ্নে একজন স্বর্গীয় দূত মারফত এই নাম পেয়েছিলেন। আরবের চিরাচরিত প্রথা অনুসারে, হজরতের জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিদের আহার শেষে- হজরতের পিতামহ আব্দুল মোত্তালিব তাঁর নাম রাখেন মুহম্মদ। তাঁর উভয় নামই শৈশব থেকেই প্রচলিত ছিল। ইনি অত্যন্ত বিশ্বাসী ছিলেন বলে- সাধারণ মানুষ তাঁকে 'আল্-আমীন' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

ইনি মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে, এঁর পিতা আব্দুল্লাহ ব্যবসা উপলক্ষে ইয়াস্রিব (মদিনা) নগরে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে পিতৃহীন এতিম মুহম্মদ (সাঃ), তাঁর পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হন। তৎকালীন অভিজাত আরব পরিবারের রীতি অনুসারে, ভদ্রসমাজের মহিলাগণ, নিজ সন্তানদের স্তন্যদানকে অগৌরবের কাজ মনে করতেন। সে কারণে হজরতের জন্মের পর প্রথম স্তন্যপান করিয়েছিলেন, আবুলাহাবের ছোওয়ায়বা নামক একজন দাসী। এরপর তাইফবাসিনী ছা-আদ বংশের বিবি হালিমার উপর হজরতের প্রতিপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হালিমা তাঁকে দুই বৎসর স্তন্যপান করানোর পর, আমিনার কাছে নিয়ে আসেন। কথিত আছে, এই সময় একদিন নবী এবং হালিমার সন্তান আব্দুল্লাহ বাড়ির কাছে পশু চরাচ্ছিলেন। এই সময় দুইজন ফেরেস্তা এসে নবীর বক্ষ বিদীর্ণ করে, হৃদপিণ্ড থেকে শয়তানের অংশ অপসারিত করেন।

তৎকালীন মক্কায় সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ায়, পুনরায় হালিমাকে হজরতের প্রতিপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হজরতের পাঁচ বৎসর বয়সে ধাত্রী হালিমা, তাঁর মায়ের কাছে হজরতকে ফিরিয়ে দেন। তাঁর যখন ছয় বৎসর বয়স, তখন তাঁর মাতা আমিনা তাঁকে ও একজন দাসী উম্মে আয়মনকে সাথে নিয়ে মদিনায় যান। মদিনায় তাঁর পিতার মামার কাছে একমাস থাকার পর মক্কায় ফেরার সময় আবওয়া নামক স্থানে আমিনার মৃত্যু হয় (৫৭৬ খ্রিব্দ)।

এরপর উম্মে আয়মনের সাথে ইনি তাঁর পিতামহের কাছে নীত হন। তাঁর আট বৎসর বয়সের সময়
, অর্থা ৫৭৯ খ্রিব্দে তাঁর পিতামহের মৃত্যু হলে, ইনি তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে প্রতিপালিত হন। এই সময় ইনি মাঠে মাঠে মেষ ও ছাগল চড়াতেন। ফলে, ইনি অক্ষরজ্ঞানহীন থেকে যান।

৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে
, অর্থা তাঁর বার বৎসর বয়সের সময়, ইনি তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে, চাচার ব্যবসার সঙ্গী হিসাবে সিরিয়া যান।  যাত্রাপথে বসরায় (তৎকালীন রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী) আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। কথিত আছে, সে সময়ে বসরায় বসবাসকারী জারজিস সামে (অন্যা নাম বুহাইরা বা বহিরা) নামক এক খ্রিষ্টান পাদ্রী, মুসাফিরদের করতেন। যথারীতি সেবারও সেবা করতে এসে,তিনি বালক মুহম্মাদ (সাঃ) কে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
   

 পবিত্র কৃষ্ণপাথর (হজরে আসওয়াত)

সিরিয়া থেকে ফিরে ইনি চাচার সাথে হর্বে ফিজর বা অপবিত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই যুদ্ধে ইনি সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নি। যুদ্ধকালে নিক্ষিপ্ত তীর সংগ্রহ করে তাঁর চাচার হাতে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর একমাত্র কাজ ছিল। এই আত্মঘাতী যুদ্ধে বহু লোকের মৃত্যু দেখে, হজরত এবং অপর কয়েকজন যুবকের চেষ্টায় একটি শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংঘটির নাম ছিল- হিল্‌ফ-উল-ফুজুল। এর কিছুদিন পর, কাবাগৃহ পুননির্মিত হয়। পবিত্র কৃষ্ণপাথর (হজরে আসওয়াদ) সংস্থাপনের মর্যাদা লাভের জন্য কুরাইশ গোত্রগুলির মধ্যে ভীষণ বিবাদ শুরু হয়। মুহম্মদ (সাঃ) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে পাথরটি রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরে তা স্থানান্তরের বিধান দিয়ে বড় ধরনের সংঘাতের হাত থেকে আরববাসীদের রক্ষা করেন।

প্রথম বিবাহ : তাঁর বিশ বৎসর বয়সের সময়, বংশ ও পারিবারিক রীতি অনুসারে ইনি ব্যবসা শুরু করেন। এই সময় তাঁর সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে, মক্কার ব্যবসায়ীরা তাঁকে আল্-আমীন বা বিশ্বস্ত আখ্যায়িত করেছিলেন। তাঁর সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় আকৃষ্ট হয়ে মক্কা খাদিজা (রাঃ) নামক এক ধনবতী রমণী তাঁকে তাঁর সাথে ভাগে ব্যবসা করার প্রস্তাব করেন। মুহম্মদ (সাঃ) তাঁতে রাজি হন এবং বাণিজ্য-যাত্রা করেন। এই ব্যবসায় প্রচুর লাভ হওয়ায়, খাদিজা (রাঃ) তাঁর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। মুহম্মদ (সাঃ) -এর বিবিধ গুণে অকৃষ্ট হয়ে ইনি তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। ফলে ইনি তাঁর ২৫ বৎসর বয়সে, ৪০ বৎসর বয়স্কা খাদিজা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। এঁর গর্ভে তাঁর দুই পুত্র ও চার কন্যার জন্ম হয়। এর মধ্যে সকল পুত্রই শৈশবেই মারা যান।

হজরতের নিভৃতে আধ্যাত্মিক সাধনা
এবং নবুওত লাভ : তৎকালীন আরবের বিবেকবুদ্ধি বিবর্জিত বর্বরোচিত মারামারি
, কাটাকাটি, জুয়াখেলা, মদ্যপান, ব্যভিচার ইত্যাদি দেখে তাঁর মন তিক্ততায় ভরে ওঠে। অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে এবং এই অন্ধকারময় অবস্থান থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে তিনি মক্কার তিন মাইল দূরের
জাবাল-আল্-নুর পাহাড়ের হেরা নামক পাহাড়ের গুহায় ধ্যান শুরু করেন। এইভাবে দীর্ঘদিন তিনি তাঁর প্রার্থনা অব্যহত রাখেন। অবশেষে চল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহর প্রেরিত জিব্রাইল (আঃ) নামক ফেরেস্তার দ্বারা তিনি সুশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। উল্লেখ্য, ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগষ্ট (সোমবার ২১শে রমজান) রাতে, ফেরেস্তা জিব্রাইল তাঁর কাছে আসেন- এবং নবীকে বলেন-

১.'তুমি পড় তোমার সেই রব্বের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে।

৩. পড় এবং তোমার রব্ব মহামহিমান্বিত,

৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।

৫. তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে (এমন জ্ঞান) যা সে জানতো না।

কোরান শরীফে এই পাঁচটি আয়াত-সহ মোট ১৭টি আয়াত সুরা 'আলাক' নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ইসলাম প্রচার ও দ্বিতীয় বিবাহ : জিব্রাইল (আঃ) দ্বারা আল্লার বাণীসমূহ ইনি গোপনে প্রচার শুরু করেন। এই বাণীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন- তাঁর স্ত্রীঁ খাদিজা (রাঃ)। প্রথম তিন বৎসরে মাত্র ৩০জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। চতুর্থ বৎসরে ইনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এই সময় তত্কালীন আরবের পৌত্তালিকরা, খ্রিন ও ইহুদীরা মুসলমানদের বিরোধিতা শুরু করে। এই বিরোধিতা অত্যাচারের রূপলাভ করলে, নবুয়তের পঞ্চম বৎসরে একদল মুসলমান মক্কা ত্যাগ করে আবসিনিয়ায় গমন করেন। ষষ্ঠ বৎসরে আরবের কতিপয় বীর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে, মক্কায় মুসলমানরা প্রকাশ্যে ধর্মাচরণ শুরু করেন। ফলে ইসলাম বিরোধীদের অত্যাচারও বৃদ্ধি পায়। এক সময় এরা মুসলমানদের সাথে চরম অসহযোগিতা শুরু করে। তিন বৎসরকাল মুসলমানদের একটি গিরিসংকটে অবরুদ্ধ রেখেছিল। এই সময় খাদ্য পানীয়ের অভাবে মুসলমানদের নিদারুণ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। কিন্তু এই অবরোধের দ্বারা মুসলমানদের ইমান ধ্বংস করতে অপারগ হয়ে, নবুয়তের দশম বৎসরে তা পরিত্যাক্ত হয়। এই সময় হজরত খাদিজা (রাঃ) মৃত্যু হয়। এর একমাস পরে এঁর চাচা আবু তালেবের মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পর হজরত তাঁর ৫১ বৎসর বয়সে, সাওদা (রাঃ) নামক এক ৫৫ বৎসর বয়স্কা নিঃস্ব বৃদ্ধাকে বিবাহ করেন।    

এই সময় ইনি ম
ক্কা ছেড়ে তাইফে ইসলাম প্রচারের জন্য যান। কিন্তু তাইফবাসীদের প্রতিরোধে ও প্রস্তরাঘাতে ইনি আহত অবস্থায় মক্কায় ফিরে আসেন। এরই মধ্যে ইনি তাঁর দূত মারফত ইসলাম প্রচার করেন। উল্লেখ্য এর ফলে মদিনাবাসীদের অনেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

তৃতীয় বিবাহ ও মিরাজ : নবুয়তের দশম বর্ষের সওয়াল মাসে, হজরত আবু বক্কর (রাঃ) এর কন্যা আয়সা (রাঃ) এর সাথে হজরতের সাথে আকদ্-হয়। আর বিবাহ হয় হিজরী দ্বিতীয় বর্ষে। কথিত আছে তৎকালীনকালীন আরবের প্রধান দুটি সংস্কার ভঙ্গের জন্য হজরত এই বিবাহ করেছিলেন। সংস্কার দুটি ছিল এরূপ-

    ১। রীতি ছিল যে, রক্তের সম্পর্ক নেই এমন ভাই সম্বোধনকারী ব্যক্তির কন্যার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। উল্লেখ্য, আয়সা (রাঃ)-এর পিতা আবু বক্কর (রাঃ), হজরতের এরূপ ভাই ছিলেন।
    ২। প্রাচীন আরবে কোন এক সময় প্লেগ রোগ মহামারী আকার গ্রহণ করেছিল। এই মহামারী সওয়াল মাসে হয়েছিল বলে- এই মাসে কোন বিবাহ হতো না। উল্লেখ্য এই বিবাহ সওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

নবুয়তের দ্বাদশ বর্ষে মিরাজ সংঘটিত হয়।

হিজরত
: বিধর্মীদের অত্যাচারের কারণে মুসলমানরা ধীরে ধীরে মক্কা থেকে মদিনায় চলে যান। এক সময় এরা হজরতের হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, ইনি মক্কা থেকে মদিনায় গমন করেন। হজরতের জন্মভূমি মা পরিত্যাগ করে মদিনায় যাওয়া
হিজরত নামে অভিহিত হয়ে থাকে। আল্লাহ'র নির্দেশ আসার পর, তিনি হজরত আলী-কে ডেকে, তাঁরে শয্যার উপর চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে নির্দেশ দেন এবং রাতের অন্ধকারে আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন তিনি ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর এঁরা মদিনার নিকটবর্তী কুবা নামক স্থানে উপস্থিত হন। হজরত মুহম্মদ (সাঃ) একটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। বর্তমানে এই মসজিদটি কুবা মসজিদ বা মাজিদ আল-কুবা নামে খ্যাত। এখানে চারদিন অবস্থান করার পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আওয়াল) তারিখে তাঁরা মদিনাতে পদার্পণ করেন। হজরতের মদিনা থেকে মদিনায় যাওয়ার ঘটনাকে ইসলামের ইতিহাসে হিজরত নামে অভিহিত করা হয়। এখানে এসে ইনি তাঁর প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। অল্পদিনের মধ্যেই ইহুদিরা ব্যতীত মদিনার প্রায় সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

নামাজের প্রবর্তন, মদিনা চুক্তি এবং কেবলা পরিবর্তন : ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে অজু, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজের প্রবর্তন হয়। মদিনা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইনি একটি সাধারণ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। মোট ৪৭টি শর্ত সম্বলিত এই চুক্তিটি মদিনা চুক্তি বা মদিনা সনদ নামে পরিচিত।

৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বকাল পর্যন্ত মুসলমানেরা জেরুজালেমের
আল্-আকসা মসজিদের দিকে কেবলা করে নামাজ পড়তেন। এই বৎসর থেকে আল্লাহর নির্দেশে হজরত কেবলা পরিবর্তন করে কাবা-শরীফ ('মসজিদুল হারাম'
) নির্ধারণ করেন। সূরা আল-বাক্বারাহ-র ১৪৪ আয়াতে এই নির্দেশ পাওয়া যায়। 'নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর যারা আহ্‌লে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে আল্লাহ্ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।'  [সূরা আল-বাক্বারাহ-র ১৪৪]এই সময় থেকে রোজার প্রবর্তন হয়। 

বদরের যুদ্ধ ও চতুর্থ বিবাহ : হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে (১৭ মার্চ, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মক্কার এক হাজার কুরাইশ সৈন্য মদিনা আক্রমণ করে। হজরত মাত্র ৩১৩জন সঙ্গী নিয়ে এই আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য মদিনার নিকটবর্তী বদর নামক স্থানে উপস্থিত হন। ইসলামের ইতিহাসে এই যুদ্ধকেই প্রথম যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হন। বদরের যুদ্ধের পর, মদিনাতে ইসলাম ধর্ম দৃঢ়তর হয়েছিল। এই যুদ্ধের পর হরত আলী (রাঃ)-এর সাথে হজরতের কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এই বৎসরেই আয়সা (রাঃ) হজরতের গৃহে বধূ হিসাবে পদার্পণ করেন। বদরের যুদ্ধের কিছুদিন পর ইনি হজরত উমর (রাঃ)-এর কন্যা হজরত হাফসা (রাঃ) -কে বিবাহ করেন।

ওহদের যুদ্ধ ও হজরতের পঞ্চম ষষ্ঠ ও সপ্তম বিবাহ : ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ তারিখে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বদরের যুদ্ধের পরাজয়ের পর কুরাইশরা প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য, হিজরী তৃতীয় বর্ষে ৩০০০ হাজার সৈন্যসহ মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। হজরত এই আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ১০০০ সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হন। কিন্তু পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বিশ্বাসঘাতকতা করে তার ৩০০ অনুসারী অনুচর নিয়ে কুরাইশদের পক্ষে যোগদান করেন। ফলে হজরতের অধীনে শুধু মাত্র ৭০০ সৈন্য অবশিষ্ট থাকে। উভয় বাহিনী ওহদ নাম পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হন। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী অংশত পরাজিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে হজরতের সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায় ও হামজাসহ ৭০ জন মুসলিম সৈন্য নিহত হন। অপরদিকে কুরাইশদের ২৩ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল। এই যুদ্ধে, আব্দুল্লাহ ইবনে জাহ‌্‌শ শহীদ হলে- হজরত তাঁর বিধবা পত্নী জয়নব (রাঃ) -কে বিবাহ করেন। এই যুদ্ধে আবদুল্লাহ ইবন আবদিল আসাদ নামক অপর একজন সাহাবী শহীদ হলে, ইনি তাঁর বিধবা পত্নী, উম্মে সালামা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। এরপর হিজরী পঞ্চম সনে, ইনি তাঁর পালকপুত্র জায়েদ বিন হারিসার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন।

মুরাইসীর যুদ্ধ ও অষ্টম বিবাহ : এই বৎসরেই বনী মুস্তালিক গোত্রের প্রধান হারেস বিন আবু দিরার একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এই সংবাদ মদিনায় পৌঁছিলে- এদেরকে বাধাদানের উদ্দেশ্যে হজরত অগ্রসর হন। মুরাইসী নামক স্থানে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উক্ত যুদ্ধে বনী মুস্তালিক গোত্রের যোদ্ধারা পরাজিত হয়। উক্ত যুদ্ধে, বনী মুস্তালিক গোত্রের প্রধানের কন্যা জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস বন্দী হন। পরে হজরত তাঁকে বিবাহ করেন।

খন্দকের যুদ্ধ : ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে কুরাইশ, ইহুদী ও বেদুঈন- এই তিন শক্তি একত্রিত হয়ে, আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মদিনা আক্রমণের জন্য রওনা হয়। এই সম্মিলিত বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০,০০০। হজরত এই বিশাল বাহিনীর প্রতিরোধের জন্য মাত্র ৩,০০০ সৈন্য সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। হজরত প্রথমে সাহাবাদের সাথে আলোচনা করে স্থির করেন যে, এই প্রতিরোধ তাঁরা শহরের ভিতরে থেকে করবেন। এই সময় সালমান ফারসী নামক জনৈক পারস্যবাসী মুসলমানের পরামর্শে, এবং হজরতের নির্দেশে মদিনার উত্তর-পশ্চিমাংশের অরক্ষিত অংশে মুসলমানরা পরিখা খনন করেন। পরিখা খননের কিছুদিনের মধ্যে- আক্রমণকারী সম্মিলিত বাহিনী পরিখার অপর প্রান্তে এসে হাজির হলো।

৩১ মার্চ তারিখে তাদের আক্রমণ শুরু হয়। সম্মিলিত বাহিনী পরিখা অতিক্রমের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে
, তারা মদিনা অবরোধ করে রাখে। তারা মোট ২৭ দিন এই অবরোধ অটুট রাখতে সমর্থ হয়েছিল। ইতিমধ্যে, ঝড় ও প্রবল হিমেল হাওয়ায় সম্মিলিত বাহিনী সদস্যরা কাহিল হয়ে পড়ে। এক সময় এদের খাদ্যাভাব দেখা দিলে, সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক আবু সুফিয়ান অবরোধ তুলে ফেলে স্বদেশে যাত্রা করলো। এই যুদ্ধে পরিখা খনন করে মদিনা রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে- এই যুদ্ধ খন্দকের যুদ্ধ নামে খ্যাত। উল্লেখ্য আরবী খন্দক শব্দের অর্থ হলো পরিখা। মদিনা অবরোধ কার্যকরী না হওয়াতে, মুসলমানরা বিভিন্নভাবে যথেষ্ঠ লাভবান হয়। প্রথমেই ইহুদী ও বেদুঈনরা, কুরাইশদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ফলে আক্রমণকারী কুরাইশদের শক্তি হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে মদিনা রক্ষা পাওয়ায়- হজরতের সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং মদিনাবাসীরা তাঁকে একমাত্র নেতা হিসাবে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেন। এই সাথে দিন নব-মুসলমানরা এসে মুসলমানদের জনশক্তিকে বৃদ্ধি করে তোলে।

হোদায়বিয়ার সন্ধি ও নবম বিবাহ : খন্দকের যুদ্ধের পর মদিনায় হিজরতকারী মুসলমানরা মক্কায় প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলে, হজরত ষষ্ঠ হিজরীতে (৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ) ওমরাহ হজ ও মাতৃভূমি দর্শনের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। জিলকদ মাসে আরবে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল বলে- ১৪০০ নিরস্ত্র মুসলমান নিয়ে ইনি অগ্রসর হন। কুরাইশরা এই দলকে বাধা প্রদানের জন্য, খালিদ ও ইকরিমরার নেতৃত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করে। হজরত এই সংবাদ অবগত হওয়ার পর, ঘুর পথে মক্কার নয় মাইল দূরে হোদায়বিয়া নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করেন। এই স্থানে কুরাইশদের সাথে হজরতের যে সন্ধি হয় তাকেই এই সন্ধি হোদায়বিয়ার সন্ধি বলা হয়।

এই সময় হজরতের সাথে খালেদ বিন ওয়ালিদের খালা মায়মুনা (রাঃ) -এর বিবাহ হয়। হোদায়বিয়ার সন্ধির পর হজরত ম
ক্কা মদিনার আশেপাশের রাষ্ট্রগুলিতে দূত মারফত ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। এই দাওয়াতের জবাবে মুকাউস ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করেও, হজরতের সম্মানার্থে কিছু উপহারসহ দুজন খ্রিন রমণীকে পাঠান। এই দুজনের নাম ছিল মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ) ও শিরিন। এঁরা দুজন হজরতের অনুরোধে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হজরত মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ) -কে নিজের জন্য রেখে শিরিনকে তাঁর এক সাহাবীর কাছে প্রেরণ করেন। মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ) কে বিবাহ না করলেও ইনি তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন। এঁর গর্ভে হজরতের একটি পুত্র সন্তান জন্মেছিল। এই পুত্রের নাম ছিল- ইব্রাহিম।

খাইবার বিজয় ও দশম, একাদশ ও দ্বাদশ বিবাহ : ইতিপূর্বে বিশ্বাসঘসাতকতার কারণে যে সকল ইহুদী মদিনা থেকে বিতারিত হয়েছিলেন। সে সকল ইহুদীরা মদিনার শতাধিক মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত খাইবার নামক স্থানে হজরতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য প্রায় চার সহস্রাধিক লোক সংগ্রহ করেন। হজরত এই বিষয় অবগত হয়ে সপ্তম হিজরীতে ১৬০০ জন সৈন্য নিয়ে খাইবার অভিযানে বের হন। এই যুদ্ধে ইহুদীরা চরমভাবে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে। এই সময় ইনি ইহুদী কন্যা সাফিয়া (রাঃ)-কে সাথে খাইবারের সাবিহা নামক স্থানে বিবাহ করেন। এরপর মদিনায় ফিরে এসে ইনি হজরত উম্মে হাবিবা (রাঃ) -কে বিবাহ ও করেন। ধারণা করা হয়, ষষ্ঠ বা সপ্তম হিজরীতে রেহানা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন।

মুতার যুদ্ধ : রোমীয় সামন্তরাজ শোরাইবিল মুতা নামক স্থানে মুহম্মদ (সাঃ) প্রেরিত মুসলিম রাজদূতকে হত্যা করে। ফলে, অষ্টম হিজরীতে জায়েদ বিন হারিসের নেতৃত্বে একদল সৈন্য মুতায় প্রেরিত হয়। সিরিয়া সীমান্তের কাছে মুতা প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম দিকে যুদ্ধে মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে এই যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হয়।

ক্কা বিজয় : মুতার যুদ্ধের জয়ের পর মুসলমানদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়। অপর দিকে রাজনৈতিক মতভেদ, কুরাইশদের প্রখ্যাত বীরদের ইসলামধর্ম গ্রহণ ইত্যাদি কারণে- কুরাইশরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে মুসলমানদের পক্ষে যোগদানকারী খোজা সম্প্রদায়কে- কুরাইশদের আশ্রয়পুষ্ট বানু সম্প্রদায় আক্রমণ করে এবং খোজা সম্পদায়ের কয়েকজনকে হত্যা করে। ফলে হোদায়বিয়ার সন্ধি লঙ্ঘিত হয়। এরপর মুহম্মদ (সাঃ) এই হত্যার বিচার ও মীমাংশার জন্য কুরাইশদের কাছে প্রস্তাব তুললে, কুরাইশরা তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে মুহম্মদ (সাঃ) প্রায় দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা অভিযানে অগ্রসর হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয়।

এই বিজয়ের পর কুরাইশদের সকল অতীত কার্যাবলীর জন্য মুহম্মদ (সাঃ) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই সময় কাবা শরীফে রক্ষিত ৩৬০টি মূর্তি অপসারিত করা হয়।

হুনায়ুনের যুদ্ধ : ক্কা বিজয়ের পর, ক্কা তায়েফের মধ্যবর্তী অঞ্চলের হাওয়াজিন ও সাকীফ গোত্রদ্বয় ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এরা বেদুইনদের সাথে নিয়ে প্রায় ২০,০০০ সৈন্যে বলিয়ান হয়ে মক্কার তিন মাইল দূরে হুনায়ুন উপত্যাকায় সমবেত হয়। মুসলমানদের সাথে এই যুদ্ধে বিদ্রোহীরা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়।

তাবুক অভিযান : ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত রোম সম্রাট আরব তথা নূতন-মুসলিম রাষ্ট্র দখল করার সিদ্ধান্ত নিলে- মুহম্মদ (সাঃ) রোমান বাহিনীকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে- একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে তাবুক নামক স্থানের দিকে অগ্রসর হন। মুসলমানদের বিশাল আয়জনের সংবাদ পেয়ে- রোমান সৈন্যরা পলায়ন করে। ফলে বিনা যুদ্ধে অভিযান শেষ হয়। এই অভিযান শেষে মুহম্মদ (সাঃ) আরবের বিভিন্ন গোত্রকে ধর্মীয় আদর্শে একক নেতৃত্বের অধীনে আনেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। দশম হিজরীতে (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি) ইনি লক্ষাধিক মুসলমান নিয়ে মক্কায় হজ পালন করেন। এই হজকে বিদায় হজ বলা হয়। হজ শেষে ইনি আরাফাত পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বিদায় হজ শেষে ইনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। সিরিয়ায় একজন মুসলিম দূতকে হত্যার কারণে, ইনি সিরিয়া অভিযানের নির্দেশ দেন। এই অভিযানে ইনি ক্রীতদাসপুত্র ওসামাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু বিবিধ কারণে এই অভিযানে বিলম্ব ঘটে। ইতিমধ্যে মুহম্মদ (সাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ রোগভোগের পর ইনি একাদশ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জুন) ৬৩ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।


সূত্র: