চন্দ্রগ্রহণ
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চন্দ্র আবর্তিত হয়। এই আবর্তনের সময় কখনো কখনো, পৃথিবী চন্দ্র   সূর্যের মাঝখানে চলে আসে। এর ফলে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পতিত হয়। এর ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদকে আংশিক বা  সম্পূর্ণরূপে দেখা যায় না। এই ঘটনাকে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ।

পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তিত হয়। পৃথিবীকে এক বার আবর্তন করতে  সময় লাগে সাড়ে ২৭ দিন। আর যেহেতু চাঁদ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তিত হয়,  তাই ওই সাড়ে ২৭ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। আর তার পর এক বার সবচেয়ে দূরে চলে যায়।

চাঁদ আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বটা যখন সবচেয়ে কমে যায়, তখন সেটাকে বলে ‘অনুভূ’  অবস্থান। আর পৃথিবী ও চাঁদ যখন একে অন্যের থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে, সেই অবস্থানকে বলে ‘অপভূ’ অবস্থান।

সূর্যের সামনে আবর্তনশীল পৃথিবীর ছায়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। এর মাঝের অংশটিতে আলো প্রবেশ করতে পারে না। এই অংশকে বলা হয়  প্রচ্ছায়া । এই প্রচ্ছায়াকে ঘিরে হাল্কা ছায়া বিরাজ করে। একে বলা হয় উপচ্ছায়া।

সূর্যের আলো পৃথিবীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় যখন চাঁদের উপর পড়ে, তখন চাঁদ কখনো প্রচ্ছায়া অংশ প্রবেশ করে, তখনই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়। চাঁদ যখন উপচ্ছায়া অংশে থাকে তখন চাঁদকে দেখায় লালচে গোলকের মতো। কক্ষপথে চাঁদ যখন সেই প্রচ্ছায়া কোণটির ঠিক মাঝামাঝি অংশ দিয়ে যায়, তখন চাঁদের গতি মন্থর হয়ে যায়। ফলে, পৃথিবীর প্রচ্ছায়া কোণের ঠিক মাঝখানের অংশটিকে অতিক্রম করতে চাঁদের সময় লাগে অনেক বেশি।

শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জুলাই শতাব্দীর দীর্ঘ চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় ২৭শে জুলাই রাত ১১টা ১৩ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে, শেষ হয়েছিল ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। এই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে ছিল মঙ্গল গ্রহ। এছাড়া সূর্য, পৃথিবী, চন্দ্র এবং মঙ্গলগ্রহ একই সরলরেখায় ছিল। এই কারণে এই দিন সংঘটিত হয় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের পূর্বে ও পরে সংঘটিত হয় আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। সব মিলিয়ে চন্দ্রগ্রহণটি ঘটে প্রায় পৌণে ছয় ঘণ্টা ব্যাপী। এর মধ্যে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়ে ১০৩ মিনিট। এরূপ চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা আবার ঘটবে ২১২৩ খ্রিষ্টাব্দে।

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের এই সময় পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখা যাবে লালচে রঙে। তাই এই সময়ের চাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ব্লাড মুন। বাংলায় রক্তিম চাঁদ।


সূত্র: