কার্বন
বানান বিশ্লেষণ: ক্+আ+র্+ব্+ন্+অ
উচ্চারণ:
kar.bon (কার্.বোন্)
শব্দ-উৎস: প্রাচীন ল্যাটিন
carbo (কয়লা) + ফরাসি Carbone ল্যাটিন carbon > ইংরেজি Carbon> বাংলা কার্বন
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা অর্থ: এটি একটি অধাতু, কঠিন, মৌলিক পদার্থ।  বাংলায় একে অঙ্গার বলা হয়। এর প্রতীক হলো
C । পারমাণবিক সংখ্যা ৬। ইলেক্ট্রনিক বিন্যাস হলো ২, ৪। এর পারমাণবিক ভর ১২.০১১১৫ ও যোজ্যতা ৪। এর যোজ্যতা সহজ ভাবে দেখানোর সময় সমতলে দেখানো হয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এগুলি একটি কাল্পনিক ত্রিমাত্রিক সুষম ঘনতল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ফলে কার্বনের যোজ্যতার একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থান পাওয়া যায়। যে কোন দুইটি যোজ্যতার মধ্যবর্তী কোণের পরিমাণ হয় ১০৯ ডিগ্রী ২৮ মিনিট। এর আইসোটোপ রয়েছে তিনটি। এদের নিউট্রোন সংখ্যা যথাক্রমে 12 (12C), 13 (13C), 14 (14C)

কার্বনবনের বহুরূপক দশাগুলো হলো
হীরক, গ্রাফাইট এবং অনাদার পদার্থ হিসাবে কয়লা এবং কার্বনগুড়ো। জৈব রসায়নবিদ্যার মূল উপাদান তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও কার্বনের সমন্বয়ে। এই কারণে, হাইড্রোজেন ও কার্বন দিয়ে গঠিত দ্বিমৌল জৈব যৌগকে রসায়নবিদ্যার ভাষায় হাইড্রোকার্বন বলা হয়। যেমন— মিথেন (CH4), ইথিন (C2H4), প্রোপেন (C3H8), বেনজিন (C6H6) ইত্যাদি।

শুধু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে, একাধিক ধরনের গ্যাসীয় যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে। এই গ্যাসীয় যৌগিক পদার্থগুলো হলো কার্বন মনোক্সাইড (CO), কার্বন-ডাই-অক্সাইড  (CO2), ডাইকার্বন-মনোক্সাইড (C2O), কার্বন সাব-অক্সাইড C3O2

বাতাসের অনুপস্থিতে শর্করাকে তাপ বিয়োজন দ্বারা বিশুদ্ধ কার্বন তৈরি করা যায়। এর কার্বহাইড্রেট জাতীয় যৌগ পদার্থ জ্বালানী হিসাবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। যেমন : কাঠ
, কয়লা, পেট্রোল, প্রকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। এর ১৪ ভর সম্পন্ন ইসোটোপটি গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যাপক কাজে লাগে।

মৌলিক কার্বন হীরকগ্রাফাইট রূপে কেলাসিত অবস্থায় পাওয়া যায়। কার্বন  পানি, লঘু এ্যাসিড, ক্ষারক এবং জৈব-দ্রাবকে অদ্রবণীয়। উচ্চতাপে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা কার্বন-সাব-অক্সাইড উৎপন্ন করে। হ্যালোজন গ্রুপের মধ্যে ফ্লোরিনের সাথে কার্বনের বিক্রিয়া হয়। তবে হ্যালোজেনের সবার সাথেই মিলিত হয়ে যৌগ উৎপন্ন করে থাকে। উচ্চতাপে ধাতব মৌলের সাথে কার্বাইড গঠন করে। দেখুন : হীরক 

অলঙ্কার হিসাবে হীরকরূপ কার্বনে ব্যাপক ব্যহৃত হয়। রাবার শিল্পে, ছাপার কালিতে কার্বন ব্লাক ব্যবহৃত হয়। গ্রাফাইড থেকে র্ক-লাইট, পেন্সিল ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। কার্বনের অকেলাস রূপ কাঠকয়লা গ্যাসের পরিশোষক ও বিবর্ণকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

কার্বন চক্র (Carbon cycle)
প্রকৃতিতে কার্বন কতকগুলি সুনির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করে বারবার ব্যবহৃত হয়। এই পর্যায়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পথ অতিক্রম করে তাকেই কার্বন চক্র বলে। কার্বনের একটি যৌগিক উপাদান কার্বন-ডাই-অক্সাইড। বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড সবুজ উদ্ভিদ বা সালোকসংশ্লেষীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়ে সবুজ উদ্ভিদ বা সালোকসংশ্লেষীয় ব্যাকটেরিয়া'র কোষে বদ্ধ হয়। অন্যান্য প্রাণী কর্তৃক সবুজ উদ্ভিদ খাদ্যরূপে গৃহীত হয়। সকল ক্ষেত্রে এই সকল প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যুর পর অণুজীব দ্বারা বিগলিত হয়ে জৈব-যৌগের কার্বন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইড বার বাতাসে ফিরে সে।

কার্বন ব্লাক (Carbon Black)
কার্বনের নির্দিষ্ট কৃতিবিহীন রূপ বিশেষ। হাইড্রোকার্বনকে জ্বালিয়ে বা অক্সিজেন দ্বারা হাইড্রোকার্বনকে বিশ্লেষিত করে কার্বন ব্লাক তৈরি করা হয়। রাবার জাতীয় পদার্থে, রঞ্জক পদার্থে, ছাপার কালিতে কার্বন ব্লাক ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোকার্বন (যেমন মিথেন) অপর্যাপ্ত বায়ুতে পরিপূর্ণ দহন করলে, ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। উক্ত ধোঁয়াকে কোন শীতল লোহার চেম্বারের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে কার্বনের ভস্মকে সংগ্রহ করা হয়।