গ্রাফাইট
ইংরেজি
Graphite>গ্রাফাইট।

দানাদার কার্বন বিশেষ। কার্বন-এর বহুরূপক দশার একটি। গ্রীক শব্দ গ্রাফাইটের অর্থ –'আমি লিখি'। ঘর্ষণের ফলে দাগ পড়ে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। এর রং গাঢ় ধূসর, পিচ্ছিল, ধাতুর ন্যায় উজ্জ্বল, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.২৫। অতি উচ্চ তাপমাত্রায় গ্রাফাইট গলে যায় বা পুড়ে যায়। গ্রাফাইট ৬০০-৭০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। গাঢ় সালফিউরিক এ্যাসিড, নাইট্রিক এ্যাসিড ও পটাশিয়াম ক্লোরেটসহ ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে গ্রাফাইটিক এ্যাসিড উৎপন্ন হয়। গ্রাফাইটের কঠিনতা ১.০-২.০ এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.৯-২.৩।

গ্রাফাইড হেক্সাগোনাল স্ফটিক পদ্ধতি (hexagonal crystal system)-র কার্বন-বিন্যাস দ্বারা গঠিত। উল্লেখ্য,  এই পদ্ধতির স্ফটিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য, এদের কোণগুলো ৯০ ডিগ্রির কম হয়। এর মোট ১৪ পরামাণু ১৪টি বিন্দুতে স্থাপিত থাকে। ছয়টি পরমাণু নিয়ে একটি ষড়ভুজ তৈরি হয় এবং তার কেন্দ্রীয় বিন্দুতে একটি পরমাণু থাকে। এই রকম দুটি সেটের পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকলে, এর এক সেটের কেন্দ্রীয় পরমাণুর সাথে অপর সেটের কেন্দ্রীয় পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে না। এর বাহুগুলো পরস্পর সমান হয়।

গ্রাফাইট কাঠপেন্সিলের শীস রূপে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। তাপের ফলে যেখানে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, সেখানে তেলের পরিবর্তে গ্রাফাইট চূর্ণ ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ পরিবাহী বলে, গ্রাফাইট ইলেকট্রিক চুল্লীতে ইলেকট্রোড হিসাবে, শুকনো ব্যাটারী ও ইলেট্রো-টাইপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ধাতু গলানোর ক্রুসিবল তৈরিতে, ক্লোরিন উৎপাদনে এ্যানোড রূপে, লৌহদ্রব্য পালিশের জন্য, পারমাণবিক চুল্লীতে মন্দনকারী উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

যতদূর জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রাব্দে ইউরোপের মারিতা সভ্যতায় মাটির পাত্রের গায়ে ছবি আঁকার জন্য গ্রাফাইড ব্যবহার করা হতো। গোড়ার দিকে গ্রাফাইডকে বলা হতো Plumbago (কালো সীসা)। কারণ সেকালের মানুষের ধারণা ছিল গ্রাফাইড হলো সীসার একটি মিশ্ররূপ। সীসার ল্যাটিন নাম ছিল plumbum। এই শব্দ থেকে Plumbago শব্দটি তৈরি হয়েছিল। এই সময় মলিবডেনাইট, গ্যালেনা এবং গ্রাফাইডকে একই পদার্থ মনে করা হতো। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কার্ল ইউলহেলম শীলে (Carl Wilhelm Scheele) প্রমাণ করেন যে মলিবেনাইড হলো- মলিডবডেনাম সালফাইড, গ্যালেনা হলো লিড সালফাইড। আর গ্রাফইড হলো ভিন্নতর পদার্থ।

কার্বনের একটি বিশেষ শ্রেণি হলো গ্রাফেন। (
Graphene)। এর ভিতরে রয়েছে গ্রাফাইড, কয়লা, কার্বন ন্যানোটিউব এবং ফুলেরেন্স। গ্রাফেন থেকেই প্রাকৃতিকভাবে গ্রাফাইড উৎপন্ন হয়। প্রকৃতিতে গ্রানাইট, নাইস, মাইকা সিস্ট এবং স্ফটিকীয় চুনাপাথরের ফাটলে গ্রাফাইট বিরাট পিণ্ড আকারে অথবা আঁশযুক্ত স্তর হিসেবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।