গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ
glucose, dextrose

এটি একটি মোনোস্যাকারাইড জাতীয় কার্বোহাইড্রেড। এর অপর নাম ডেক্সট্রোজ। এতে ছয়টি কার্বন থাকায়, মোনোস্যাকারাইডের হেক্সোজ শ্রেণিতে ফেলা হয়। এর আণবিক গঠনে এ্যাল্ডিহাইড গ্রুপ (
- CHO) থাকায়, একে অনেক সময় এ্যাল্ডোহেক্সোজ বলা হয়।
তে একটি - CHO মূলক এবং ৫টি OH থাকায় এটি অ্যালডিহাইড ও অ্যালকোহল উভয়ের মতো আচরণ করে।

এর রসায়নিক সঙ্কেত
 C6H12O11 এর রঙ সাদা। সাধারণ অবস্থায় দানাদার। জলে দানায়িত করলে গ্লূকোজের প্রতি অণুতে একটি করে জলের অণু থাকে এবং এই জলযুক্ত গ্লূকোজের গলনাঙ্ক ৮৬° সেলসিয়াস । অনার্দ্র গ্লূকোজের গলনাঙ্ক ১৪৬° সে.।  এটি চিনির চেয়ে কম মিষ্ট।এর আণবিক ভর ১৮০.১৬ গ্রাম/মৌল। ঘনত্ব ১.৫৪ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার।

এর স্বাদ মিষ্টি। প্রকৃতিতে মধু ও মিষ্টি ফলে পাওয়া যায়। পাকা আঙুরে প্রায় ১২ থেকে ৩০ ভাগ গ্লুকোজ থাকে। তাই একে অনেক সময় 'আঙুর শর্করা' বলা হয়।

গবেষণাগারে অ্যালকোহলের উপস্থিতিতে সুক্রোজকে HCl বা H2SO4 দ্বারা আর্দ্র বিশ্লেষিত করে গ্লূকোজ তৈরি করা যায়। অ্যালকোহলে গ্লুকোজ অপেক্ষা ফ্রুক্টোজ অনেক বেশি দ্রবণীয়। তাই  দানায়ন পদ্ধতিতে গ্লুকোজ পৃথক করার জন্য দ্রাবক হিসাবে অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে একটি পাত্রে ৪ সি সি গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক  এ্যাসিড ১০০ সি সি ৯০% ইথাইল অ্যালকোহল এবং ৪০ গ্রাম চূর্ণ চিনি নিয়ে ৫০ উষ্ণতায় গরম করা হয়। এর ফলে চিনি আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়ে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ তৈরি হয়। ম্রিশ্রণটিকে ঠাণ্ডা করে কেলাসনের সাহায্য করার জন্য কিছু গ্লুকোজের দানা যোগ করলে কম দ্রবণীয় গ্লুকোজ দানায়িত হয় এবং দ্রবণে ফ্রুক্টোজ থেকে যায়। এই গ্লুকোজকে ছেঁকে পৃথক করার পর অ্যালকোহলে পুনরায় দানায়িত করলে প্রায় বিশুদ্ধ গ্লুকোজ পাওয়া যায়।
C12H22O11 (সুক্রোজ)+ H20 = C6H12O6 (গ্লুকোজ) + C6H12O6 (ফ্রুক্টোজ)

শিল্পক্ষেত্রে স্টার্চ বা শ্বেতসার জাতীয় দ্রব্যকে পাতলা এসিড দিয়ে ভেজালে গ্লুকোজ তৈরি হয়। চাল, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি শ্বেতসার জাতীয় দ্রব্যের সাথে অতিরিক্ত জল মিশিয়ে, পাতলা H2SO4-এর সঙ্গে উচ্চ চাপে উত্তপ্ত করা হয়। এর ফলে আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে উক্ত শ্বেতসার গ্লুকোজে পরিণত হয়। এরপর সোডিয়াম কার্বনের দ্বারা অতিরিক্ত এসিড প্রশমিত করা হয়। এই মিশ্রণটি ছেকে নিয়ে সক্রিয় কয়লা দিয়ে বর্ণহীন করার পর, তাপের সাহায্যে গাঢ় করা হয়। এরপর ওই দ্রবণ ঠাণ্ডা করলে দানার আকারে গ্লুকোজ পৃথক হয়ে যায়। এই গ্লুকোজে সামান্য পরিমাণে মল্টোজ ও ডেক্সট্রিন থাকে। একে মিথাইল অ্যালকোহলে আবার দানায়িত করলে প্রায় বিশুদ্ধ গ্লুকোজ পাওয়া যায়।

গ্লুকোজের বলয় গঠন

গ্লুকোজের ১ নম্বর কার্বন এবং ৫ নম্বর কার্বন নিকটবর্তী হলে, এদের ভিতরে ১টি অক্সিজেন এসে একটি বলয় তৈরি করে। এর ফলে ১ নম্বর কার্বনে ১টি -OH তৈরি হয়। এই -OH ১ নম্বর কার্বন আলফা (α) বা বিটা (β) স্থানে থাকে। এই সূত্রে গ্লুকোজকে α গ্লুকোজ বা β গ্লুকোজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর ভিতরে α গ্লুকোজ স্টার্চ তৈরি করে এবং β গ্লুকোজ সেলুলোজ তৈরি করে।

গ্লুকোজের ৫ নম্বর কার্বনে  -OH ডান দিকে থাকলে তখন তাকে D গ্লুকোজ বলা হয়। পক্ষান্তরে -OH বাম দিকে থাকলে তখন তাকে L গ্লুকোজ বলা হয়।