এ্যামিনো এ্যাসিড
Amino acid
ভিন্ন বানান: অ্যামিনো অ্যাসিড

এ্যামিনো এ্যাসিড মূলত একটি শ্রেণিগত নাম। এই এ্যাসিডে α কার্বনের সাথে এ্যামিনো মূলক -NH2 এবং (-COOH) মূলক। এটি হচ্ছে এ্যামিনো এ্যাসিডের মূল কাঠামো। এই মূল কাঠামোর সাথে অতিরিক্ত কোনো একক পরমাণু বা যৌগমূলক যুক্ত হয়ে এ্যামিনো এ্যাসিড পূর্ণরূপ পায়। অতিরিক্ত পার্শ্ব শিকল এই উপাদানকে রসায়ন বিজ্ঞানে একে R বর্ণ দ্বারা প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সব মিলে এর গাঠনিক রূপটি পাশের চিত্রের মতো।

 

এ্যামিনো এ্যাসিডের কার্বোক্সিল কার্যকরী মূলকের কার্বনকে বলা হয় ১ কার্বন। এর সাথে যুক্ত পরবর্তী কার্বনটিকে বলা হয় আলফা-কার্বন। এই আলফা কার্বনের সাথেই থাকে এ্যামিনো মূলক। এরপর এই কার্বনের সাথে অন্য কার্বন যুক্ত হলে, তাকে বলা হয় বিটা কার্বন। এরূপ কার্বনের সাথে কার্বন জুড়ে যখন জৈবঅণুটি দীর্ঘ হয়, তখন কার্বনের নাম হয় যথাক্রমে গামা, ডেল্টা ইত্যাদি। পাশের চিত্রে এর একটি নমুনা দেখানো হলো। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের নামকরণও করা হয়, গ্রিক বর্ণানুসারে। যেমন- আলফা এ্যামিনো এ্যাসিড, বিটা এ্যামিনো এ্যাসিড ইত্যাদি।

 

এ্যামিনো এ্যাসিডের পার্শ্ব শিকল বা  R-এর সাথে নানারকম উপাদান যুক্ত হতে পারে। একে পার্শ্ব শিকলের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।  অতিরিক্ত উপাদানই এ্যামিনো এ্যাসিডের ধর্ম পাল্টে দেয়। রসায়ন বিজ্ঞানে এই বিচারে R-এর প্রকৃতি অনুসারে, এ্যামিনো এ্যাসিডগুলোকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। নিচে এরূপ কিছু এ্যামিনো এ্যাসিডের নমুনা তুলে ধরা হলো।

 

R যুক্ত উপাদান সংকেত নাম
H-  হাইড্রোজেন গ্লাইসিন
CH3- মিথাইল এ্যালানিন
(CH3)2-CH আইসোপ্রপাইল ভ্যালিন
HO-CH2 হাইড্রোক্সি মিথাইল সেরাইন


হেডিন কালের শেষের দিকে এই জাতীয় সরল এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু
এই এ্যাসিডগুলো দীর্ঘ দিন স্বাধীনভাবে থাকতে পারলো না। তৎকালীন সমুদ্রজলের তাপ, অতি বেগুনীরশ্মি ছাড়াও নানা ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদি মিলে এ্যাসিডগুলোর ভিতরে রাসায়নিক আসক্তির জন্ম দিয়েছিল। এর ফলে এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হলো। দুটি এ্যামিনো এ্যাসিডের মিলনে তৈরি হয়েছিল যে দীর্ঘ অণু, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ডিপেপটাইড। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের উদাহরণ হিসেবে গ্লাইসিলগ্লাসিন (
Glycylglycine) -এর উল্লেখ করা যেতে পারে। মূলত দুটি গ্লাইসিন নামক এমিনো এ্যাসিড মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছিল গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine)। উল্লেখ্য যে বন্ধনের দ্বারা দুটি এ্যামিনো এ্যাসিড যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় পেপটাইড বন্ধন।

 

এ্যামিনো শ্রেণির যৌগমূলকের সাথে যে কার্বক্সিল যৌগমূলক যুক্ত হয়, তার যুক্ত হওয়ার স্থানের হেরফের ঘটে। উচ্চতর রসায়ন বিজ্ঞানে এই সংযুক্তির প্রকৃতি অনুসারে কার্যকরী স্থানকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষত্রে সংযুক্তিস্থানের বিচারে হতে পারে আলফা, বিটা, গামা বা ডেল্টা এ্যামিনো ‌এ্যাসিড হতে পারে। এছাড়া এ্যামিনো এ্যাসিডের  পার্শ্ব শিকলে অবস্থিত শ্রেণিতে কি ধরনের অণু যুক্ত আছে, শ্রেণিকরণে তার গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যুক্ত অণু হতে পারে- এ্যালিফ্যাটিক, এসিলিক, এ্যারোমেটিক, হাহড্রোক্সিল বা সালফার-ঘটিত উপকরণ। বিচার করা হয়ে থেকে এর ক্ষারকত্ব বা অম্লত্ব ইত্যাদি।
 

প্রোটিনে এ্যামিনো এ্যাসিডের দীর্ঘ শিকল সমান্তরালভাবে যুক্ত থাকার প্রকৃতি অনুসারে, প্রোটিনকে তিনটিভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো-

৪১০-৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি মহাসাগের জলে দ্রবীভূত মৌলিক পদার্থের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের জৈবযৌগ। শুরুর দিকে এদের ভিতরে এ সকল জৈবযৌগের ভিতরে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কিন্তু এদেরই দ্বারা সৃষ্ট কার্যকরীমূলকগুলো নানা যৌগের সাথে মিলিত হয়েছিল পর্যায়ক্রমে। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল জীবজগতের আদিম উপাদান এ্যামিনো এ্যাসিড

হেডিন কালের শেষের দিকে এই জাতীয় সরল এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু এই এ্যাসিডগুলো দীর্ঘ দিন স্বাধীনভাবে থাকতে পারলো না। তৎকালীন সমুদ্রজলের তাপ, অতি-বেগুনি রশ্মি ছাড়াও নানা ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদি মিলে এ্যাসিডগুলোর ভিতরে নতুন রাসায়নিক আসক্তির জন্ম দিয়েছিল। এর ফলে এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়া শুরু করেছিল। প্রাথমিকভাবে দুটি এ্যামিনো এ্যাসিডের মিলনে তৈরি হয়েছিল যে দীর্ঘ অণু, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ডিপেপটাইড। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের উদাহরণ হিসেবে গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine) -এর উল্লেখ করা যেতে পারে। মূলত দুটি গ্লাইসিন নামক এমিনো এ্যাসিড মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছিল গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine)। উল্লেখ্য যে বন্ধনের দ্বারা দুটি এ্যামিনো এ্যাসিড যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় পেপটাইড বন্ধন।  
ক্রমিক পেপটাইড বন্ধনের দ্বারা দীর্ঘ এ্যামাইনো এ্যাসিড সৃষ্টি হলো তাকে রসায়নবিদ্যায় তাকে পলিপেপটাইড বলা হয়। এরই নামান্তর হলো প্রোটিন। জৈবঅণুর ক্রমবিবর্তনের এ্যামিনো এ্যাসিডকে যদি প্রাথমিক ধাপ বলা যায়, তা হলে এই এ্যাসিডের ধারায় প্রোটিন সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি ছিল দ্বিতীয় ধাপ। জৈবঅণুর ক্রমবিবর্তনের ধারায় প্রোটিন থেকে পরবর্তী ধাপে অন্যান্য জৈবঅণুর সৃষ্টি সম্ভব হয়েছিল।


এক সময় মনে করা হতো যে, এ্যামিনো এ্যাসিডের মতো জটিল অণু রসায়নাগারে তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র স্ট্যানলি মিলার এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।  আদি সমুদ্রে নানা ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রাকৃতিক নিয়মে। স্ট্যানলি মাত্র এক ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আদি সাগরজলে কত ধরনের এ্যামনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল, তা জানা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০০ ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিডকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।