প্রোটিন
বানান বিশ্লেষণ: প্+র্+ও+ট্+ই+ন্+অ
উচ্চারণ: প্রো.টিন্ [
a.proʈin]
শব্দ-উৎস:

প্রাচীন গ্রিক prōtos (প্রথম)>নব্য গ্রিক prōteios  (প্রাথমিক)>ফরাসি protéine >ইংরেজি protein>বাংলা প্রোটিন।

পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {  | বৃহৎ-অণু | অণু | নির্মাণ একক | স্বতন্ত্র সত্তা | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
    বা
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {
জৈব-যৌগ | রাসায়নিক যৌগ | বস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}}
অর্থ:
ইংরেজি ভাষায় protein শব্দটি দ্বারা আমিষ জাতীয় খাদ্য এবং জৈব রসায়নে এ্যামিনো এ্যাসিডের পলিপেপটাইড অবস্থাকেও বুঝানো হয়। বাংলাতে আমিষ বলতে খাদ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে জৈবযৌগ হিসেবে প্রোটিন শব্দটি বলতে জৈব-রসায়নের পারিভাষিক অর্থটিই গ্রহণ করা হয়।
ইংরেজি: protein

প্রোটিন হলো- রাসায়নিক পদার্থের এক প্রকার জটিল ও বৃহৎ-অণু। ক্রমিক পেপটাইড বন্ধনের দ্বারা দীর্ঘ এ্যামিনো এ্যাসিড সৃষ্টি হলে- রসায়নবিদ্যায় তাকে পলিপেপটাইড নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত ৫০ থেকে ৩০টিরও বেশি এ্যামিনো এ্যাসিড আব্দ্ধ হয়ে যে পলিপেপটাইড অণু তৈরি হয়, তাকে জৈব রসায়নে প্রোটিন নামে অভিহিত করা হয়। এই কারণে রসায়ন বিদ্যায় একে বৃহৎ-অণু হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। প্রোটিন থেকে সৃষ্টি হয় উৎসেচক। এই উৎসেচক কোষের ভিতরে নানা ধরনের বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ডিএনএ এবং আরএনএ তৈরিতে প্রোটিন অন্যতম উপদান হিসেবে কাজ করে।

জৈবঅণুর আদি উপাদান হলো এ্যামিনো এ্যাসিড।
৪১০-৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি মহাসাগের জলে দ্রবীভূত মৌলিক পদার্থের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের জৈবযৌগ। শুরুর দিকে এদের ভিতরে এ সকল জৈবযৌগের ভিতরে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কিন্তু এদেরই দ্বারা সৃষ্ট কার্যকরীমূলকগুলো নানা যৌগের সাথে মিলিত হয়েছিল পর্যায়ক্রমে। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল জীবজগতের আদিম উপাদান এ্যামিনো এ্যাসিড

হেডিন কালের শেষের দিকে এই জাতীয় সরল এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু এই এ্যাসিডগুলো দীর্ঘ দিন স্বাধীনভাবে থাকতে পারলো না। তৎকালীন সমুদ্রজলের তাপ, অতি-বেগুনি রশ্মি ছাড়াও নানা ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদি মিলে এ্যাসিডগুলোর ভিতরে নতুন রাসায়নিক আসক্তির জন্ম দিয়েছিল। এর ফলে এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়া শুরু করেছিল। প্রাথমিকভাবে দুটি এ্যামিনো এ্যাসিডের মিলনে তৈরি হয়েছিল যে দীর্ঘ অণু, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ডিপেপটাইড। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের উদাহরণ হিসেবে গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine) -এর উল্লেখ করা যেতে পারে। মূলত দুটি গ্লাইসিন নামক এমিনো এ্যাসিড মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছিল গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine)। উল্লেখ্য যে বন্ধনের দ্বারা দুটি এ্যামিনো এ্যাসিড যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় পেপটাইড বন্ধন।

এক সময় মনে করা হতো যে, এ্যামিনো এ্যাসিডের মতো জটিল অণু রসায়নাগারে তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র স্ট্যানলি মিলার এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।  আদি সমুদ্রে নানা ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রাকৃতিক নিয়মে। স্ট্যানলি মাত্র এক ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আদি সাগরজলে কত ধরনের এ্যামনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল, তা জানা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০০ ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিডকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

এ্যামিনো এ্যাসিড থেকে প্রোটিন
ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই এ্যামিনো এ্যাসিড থেকে তৈরি হলো প্রোটিন নামক জীবজগতের অপর একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। ক্রমিক পেপটাইড বন্ধনের দ্বারা দীর্ঘ এ্যামিনো এ্যাসিড সৃষ্টি হলে- রসায়নবিদ্যায় তাকে পলিপেপটাইড নামে অভিহিত করা হয়। প্রকৃত পক্ষে এই নামটি প্রোটিনেরই নামান্তর। সাধারণত ৫০টিরও বেশি এ্যামিনো এ্যাসিডআব্দ্ধ হয়ে যে পলিপেপটাইড অণু তৈরি হয়, তাকে জৈব রসায়নে প্রোটিন  নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত এ্যামিনো এ্যাসিড সরল শৃঙ্খল হিসেবে বিরাজ করে। কিন্তু প্রোটিনে একাধিক পলি-এ্যামিনো এ্যাসিড শিকল একটি বিশেষবন্ধনের দ্বারা সমান্তরালভাবে বিরাজ করে। ফলে শৃঙ্খলাবদ্ধ এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে যায়। এই কারণে প্রোটিনের ধর্ম এ্যামিনো এ্যাসিডের সাধারণ ধর্মকে অতিক্রম করে। এই কারণে প্রোটিনকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৪০০ থেকে ৩৯০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই কার্বোহাইড্রেড এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষের াইরের আবরণ তৈরি হয়েছিল।