পিউরিন
Purine
এক ধরনের হেটারোসাইক্লিক সুগন্ধি জৈবযৌগ। এর রাসায়নিক সংকেত
C5H4N4
। এর স্ফুটনাঙ্ক ২১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানিতে এই যৌগটি গলে যায়।
জীবদেহে এই জৈবযৌগটি পাওয়া যায়-নিউক্লেইক
এ্যাসিডে। এটি
নাইট্রোজেন ক্ষারক হিসেবে
নিউক্লেইক এ্যাসিডে
সক্রিয় থাকে। মূলত
নিউক্লেইক এ্যাসিডে
দুই ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারক পাওয়া যায়। এই প্রকার দুটি হলো- পিউরিন ও
পাইরিমিডিন।
এদের ভিতরে পিউরিনগুলোতে দুটি বলয় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে
পাইরিমিডিনে
পাওয়া যায় একটি বলয়। এদের আণবিক ওজন অপেক্ষাকৃতভাবে পিরামিডিনের চেয়ে বেশি।
গঠনপ্রকৃতির বিচারে পিউরিনে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-
এ্যাডেনিন
ও গুয়ানিন।
৪১০-৪০০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি মহাসাগের জলে দ্রবীভূত মৌলিক পদার্থের পারস্পরিক
বিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের জৈবযৌগ।
পেন্টোজ
কার্বোহাইড্রেড-এর
রাইবোজ এর
সাথে পিউরিনের
এ্যাডেনিন,
গুয়ানিন এবং
পাইরিমিডিনের
সাইটোসিন
ও
ইউরাসিল
যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল নিউক্লিওসাইড। আর নিউক্লিওসাইডের সাথে
ফসফরিক এ্যাসিড
যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল নিউক্লিওটাইড। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে তৈরি হয়েছিল একসূত্রী
আরএনএ।
মানবদেহর পিউরিন
মানবদেহের প্রতিটি কোষেই পিউরিন রয়েছে। মানুষ খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করে, তার
ভিতরে এমন কিছু খাবার আছে- যেগুলোর ভিতরে পিউরিন রয়েছে। মানুষের খাদ্য দ্রব্যে
পিউরিনের পরিমাণের উপর সাধারণভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
- অধিক পরিমাণ পিউরিন:
মাংস সুপ, কলিজা, মগজ, কিডনী, মাছের ডিম,
ইস্ট, হাঁসের মাংস, শুটকি মাছ, বেগুন, সীম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি।
- মধ্যম পরিমাণ পিউরিন:
মুরগির মাংস, মাছ, মাসরুম, শুকনা সীম,
ছোলা, মুসুরি ডাল, মটরশুটি, ফুলকপি ইত্যাদি।
- অল্প পরিমাণ পিউরিন:
ফল ও সবজি, চিনি, গুর, মধু, দুধ ও দুধ জাতীয়খাদ্য, ডিমের সাদা অংশ, তেল ও
চর্বি, চাল, পাউরুটি ইত্যাদি।
খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের মাধ্যমে পিউরিন কোষে চলে যায়। কোষস্থ পিউরিন ভেঙে গিয়ে ইউরিক
এসিড তৈরি হয়। এই ইউরিক এসিড সরসারি রক্তে চলে আসে। রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক এ্যাসিড
শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। নারীর ক্ষেত্রে রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ২
দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৪ থেকে ৭
দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল।
রক্তের ইউরিক এ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। রক্তে
যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় এই অবস্থাকে বলা হয়
হাইপারইউরিসেমিয়া। এই অতিরিক্ত ইউরিক এসিড সূক্ষ্ম স্ফটিক (ক্রিস্টাল) আকারে
জয়েন্টের মধ্যে বিশেষ করে পায়ের আঙ্গুলে ব্যথা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া আমাদের দেহের
শ্বেত কণিকা এই ইউরিক এসিড স্ফটিককে বহিরাগত জীবাণু হিসেবে শত্রু হিসেবে গণ্য করে
এবং আক্রমণ করে ধ্বংস করা শুরু করে। এর ফলে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয় বা ফুলে যায়।
এই অবস্থাকে টোফেস বলে।