নিউক্লিক এ্যাসিড
Nucleic Acid

ফসফরিক এ্যাসিড, চিনি এবং পিউরিন ও পিরিমিডিন ক্ষারকের পুনঃআবর্তন দ্বারা গঠিত বিশাল আকারের শিকলাবদ্ধ জৈব অণু বিশেষ। জীবন্ত কোষে এই এ্যাসিড বংশগত তথ্য সংরক্ষণ-সহ অন্যান্য সহায়ক ভূমিকা রাখে। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এই এ্যাসিড আবিষ্কার করেন
Friedrich Miescher

নিউক্লিক এ্যাসিডের উপাদান
নিউক্লিক এ্যাসিডর বড় ধরনের তিনটি যৌগ থাকে। এগুলো হলো
পেন্টোজ কার্বোহাইড্রেড, নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক ও ফসফরিক এ্যাসিড

নিউক্লিক এ্যাসিডের গাঠনিক বিন্যাস
এই এ্যাসিডের ভিত্তি তৈরি হয় নিউক্লিওসাইড
(Nucleoside)।  পেন্টোজ কার্বোহাইড্রেডের-এর সাথে বিশেষ ধরনের নাইট্রোজেন ভিত্তিক যৌগিক পদার্থ যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় নিউক্লিওসাইড। উল্লেখ্য, এই নাইট্রোজেন ভিত্তিক যৌগিক পদার্থগুলো হলো- এ্যাডোনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, থাইমিন, ইউরাসিল।

পেন্টোজ কার্বোহাইড্রেডের- দুটি প্রকরণ রয়েছে। এই প্রকরণ দুটি হলো- রাইবোজ ডিঅক্সিরাইবোজরাইবোজ ভিত্তিক নিউক্লিক এ্যাসিডকে বলা হয় রাইবোনিউক্লিক এ্যাসিড এবং ডিঅক্সিরাইবোজ ভিত্তিক নিউক্লিক এ্যাসিডকে বলা হয় ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এ্যাসিড।

নিউক্লিওসাইডের সাথে ফসফরিক এ্যাসিড (H3PO4) যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নিউক্লিওডাইড (Nucleotide)। এই সংযোজন হয়ে দুটি ধারায়। এই ধারা অনুসৃত হয় রাইবোজ ডিঅক্সিরাইবোজ এবং নাইট্রোজেন ক্ষারকের প্রকৃতি অনুসারে।
নিউক্লিক এ্যাসিড সৃষ্টির সময়।

নিউক্লেইক এ্যাসিড-এর উদ্ভব
৪১০-৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি মহাসাগের জলে দ্রবীভূত মৌলিক পদার্থের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের জৈবযৌগ। শুরুর দিকে এদের ভিতরে এ সকল জৈবযৌগের ভিতরে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কিন্তু এদেরই দ্বারা সৃষ্ট কার্যকরীমূলকগুলো নানা যৌগের সাথে মিলিত হয়েছিল পর্যায়ক্রমে। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল জীবজগতের আদিম উপাদান এ্যামিনো এ্যাসিড

হেডিন কালের শেষের দিকে এই জাতীয় সরল এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু এই এ্যাসিডগুলো দীর্ঘ দিন স্বাধীনভাবে থাকতে পারলো না। তৎকালীন সমুদ্রজলের তাপ, অতি-বেগুনি রশ্মি ছাড়াও নানা ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদি মিলে এ্যাসিডগুলোর ভিতরে নতুন রাসায়নিক আসক্তির জন্ম দিয়েছিল। এর ফলে এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়া শুরু করেছিল। প্রাথমিকভাবে দুটি এ্যামিনো এ্যাসিডের মিলনে তৈরি হয়েছিল যে দীর্ঘ অণু, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ডিপেপটাইড। এই জাতীয় এ্যামিনো এ্যাসিডের উদাহরণ হিসেবে গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine) -এর উল্লেখ করা যেতে পারে। মূলত দুটি গ্লাইসিন নামক এমিনো এ্যাসিড মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছিল গ্লাইসিলগ্লাসিন (Glycylglycine)। উল্লেখ্য যে বন্ধনের দ্বারা দুটি এ্যামিনো এ্যাসিড যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় পেপটাইড বন্ধন।

এক সময় মনে করা হতো যে, এ্যামিনো এ্যাসিডের মতো জটিল অণু রসায়নাগারে তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র স্ট্যানলি মিলার এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।  আদি সমুদ্রে নানা ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল প্রাকৃতিক নিয়মে। স্ট্যানলি মাত্র এক ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আদি সাগরজলে কত ধরনের এ্যামনো এ্যাসিড তৈরি হয়েছিল, তা জানা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০০ ধরনের এ্যামিনো এ্যাসিডকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

এ্যামিনো এ্যাসিড থেকে প্রোটিন
ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই এ্যামিনো এ্যাসিড থেকে তৈরি হলো প্রোটিন নামক জীবজগতের অপর একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। ক্রমিক পেপটাইড বন্ধনের দ্বারা দীর্ঘ এ্যামিনো এ্যাসিড সৃষ্টি হলে- রসায়নবিদ্যায় তাকে পলিপেপটাইড নামে অভিহিত করা হয়। প্রকৃত পক্ষে এই নামটি প্রোটিনেরই নামান্তর। সাধারণত ৫০টিরও বেশি এ্যামিনো এ্যাসিডআব্দ্ধ হয়ে যে পলিপেপটাইড অণু তৈরি হয়, তাকে জৈব রসায়নে প্রোটিন  নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত এ্যামিনো এ্যাসিড সরল শৃঙ্খল হিসেবে বিরাজ করে। কিন্তু প্রোটিনে একাধিক পলি-এ্যামিনো এ্যাসিড শিকল একটি বিশেষবন্ধনের দ্বারা সমান্তরালভাবে বিরাজ করে। ফলে শৃঙ্খলাবদ্ধ এ্যামিনো এ্যাসিডগুলো কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে যায়। এই কারণে প্রোটিনের ধর্ম এ্যামিনো এ্যাসিডের সাধারণ ধর্মকে অতিক্রম করে। এই কারণে প্রোটিনকে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আদি সাগরজলে একদিকে যখন এ্যামিনো এ্যাসিডের পলিমারের দ্বারা তৈরি হচ্ছিল প্রোটিন, সেই সময় হাইড্রোকার্বেনর অন্য একটি ধারায় সৃষ্টি হয়েছিল নিউক্লেইক এ্যাসিড। আর এই দুটি জৈব-অণুর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছিল নিউক্লিয়োপ্রোটিন (Nucleoprotein)। মূলত এই নিউক্লিয়োপ্রোটিন গঠনের মধ্য দিয়ে জীবজগত সৃষ্টির নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। বিশেষ করে নিউক্লিয়োপ্রোটিনের অন্যতম অংশ নিউক্লিক এ্যাসিড বংশগতির ধারকের ভূমিকা গ্রহণ করলে- জৈব-অণু হয়ে উঠলো জীবের আদি সদস্য। গাঠনিক বিন্যাসের বিচারে এই জৈব-অণুকে দুটি ধারায় ভাগ করা হয়। এর একটি হলো আরএনএ, অপরটি ডিএনএ।