ম্যাগ্‌মা
বানান বিশ্লেষণ: ম্+য্+আ+গ্+ম্+আ
উচ্চারণ: ম্যাগ্.মা  [mæg.ma]
শব্দ উৎস: গ্রিক : μάγμα > ইংরেজি : magma> বাংলা ম্যগ্‌মা
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  {শিলা | স্পর্শনীয় বস্তু  | বস্তু  | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

পৃথিবীর উপরিতলের নিচে প্রাপ্ত গলিত বা অর্ধগলিত শিলা, উদ্বায়ী এবং কঠিন পদার্থের সংমিশ্রিত উপাদানকে ম্যাগমা বলা হয়।

পৃথিবীর উপরিতলকে বলা হয় ভূত্বক। সাধারণত মহাদেশীয় ভূত্বকের উপরিতল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার গভীরে প্রথিত শিলার তাপমাত্রা প্রায় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ৩৫ কিলোমিটার গভীরে এই তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৫০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থায় শিলা অর্ধ গলিত দশায় থাকে। ১০০-১৫০ কিলোমিটার গভীরে তাপমাত্রা থাকে ১২০০-১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এই তাপমাত্রায় শিলা তরল দশায় থাকে। মূলত ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই শিলা তরল রূপ লাভ করে। মূলত ভূত্বকের নিচের এই তরল শিলাকেই বলা হয় ম্যাগমা। অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরি থেকে অনেক সময় ম্যাগমার প্রবাহ ভূত্বকের উপরে উঠে আসে। ম্যাগমার এই শ্রোতধারাকে লাভা বলা হয়। লাভার তাপমাত্রা থাকে ৬৫০ থেকে ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভিতরে।

ম্যাগমার উপরের অবস্থিত ভূত্বকের চাপ, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এবং সেই সাথে ম্যাগমার প্রবাহের সূত্রে এর ভিতরে অজৈব উপাদানগুলোতে নানা ধরণে বস্তুগত সমন্বয় এবং বিন্যাস চলতে থাকে। এই সময় নানা ধরনের স্ফটিক, মণিকা ইত্যাদি আদি রূপ লাভ করে। ম্যাগমাতে জলীয় অংশ এবং বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের মতো বায়বীয় অংশ থাকে। যখন ম্যাগমা ক্রমান্বয়ে শীতল হতে থাকে, তখন এর অজৈব উপকরণগুলো সঙ্কুচিত হতে থাকে। এর ফলে বায়বীয় অংশ, বুদ্বুদাকারে উপরে দিকে উঠে আসে এবং এক সময় বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় তরল শিলা
দ্রুত তাপমাত্রা হারায়। একই সাথে এসব বায়বীয় পদার্থ মণিকার প্রকৃতি পাল্টাতে সাহায্য করে।

ভূত্বকের গভীর থেকে যখন ম্যাগমা ভূত্বকের উপরে দিকে উঠে আসে, তখন এর তাপমাত্রা থাকে ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময় ভূত্বকের নিচের দিকে থাকে অর্ধ গলিত বা প্রায় তরল শিলা। এদের তাপমাত্রা থেকে ৬৫০ থেকে ৮০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার ভিতরে। যখন
১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গলিত শিলা উপরে দিকে উঠতে থাকে, তখন উত্থানের পথের চারপাশের শিলার তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।  ফলে উত্থিত গলিত শিলার সাথে আশপাশের শিলাও গলিত দশায় চলে আসে। উভয় গলিত শিলা যখন ভূত্বকের উপরিতলে বেরিয়ে আসে তখন, প্রবল লাভাস্রোতে পরিণত হয়।

ম্যাগমার গাঠনিক উপকরণ:
ম্যাগামার অন্যতম উপকরণ হলো সিলিকন এবং অক্সিজেন। এই দুটি মৌলিক পদার্থ রসায়নিক বিক্রিয়ায় সিলিকন ডাই অক্সাইড (
SO2) গঠন করে। এর সাথে এ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেশিয়ামের আয়ন। আয়নিত দশায় থাকার কারণে এরা সহজেই স্থান বদল করতে পারে এবং অন্য অায়নের সাথে মিলিত হয়ে নতুন যৌগিক পদার্থ তৈরি করতে পারে। মূলত আয়নিত দশায় উচ্চতর ধনাত্মক আধান হিসেবে থাকে সিলিকন (Si4+), এ্যালুমিনিয়াম (Al3+) এবং লৌহ (Fe3+)। অন্য দিকে ঋণাত্মক আয়ন হিসেবে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থাকে অক্সিজেন (O2−)। উৎতপ্ত ম্যাগমায় এই আয়নগুলো থেকে তৈরি হয় (SiO4)4−, (AlO4)5− এবং (FeO6)9−। এছাড়া সামান্য পরিমাণ ঋণাত্মক আয়নযুক্ত মৌলিক পদার্থ হিসেবে থাকে ফ্লোরিন, ক্লোরিন। আয়োনিত দশায় অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে তৈরি হয়  হাইড্রোক্সাইড (OH)−, যা পরবর্তী দশায় পানি সৃষ্টি করে। অন্যান্য পদার্থের সমন্বয়ে তৈরি হয় হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিড. কার্বন-ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাজিড ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ। এর ভিতরে জলীয় বাস্পের পরিমাণ থাকে প্রায় ৫০ ভাগ, আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে ২০ ভাগ।

ম্যাগমার এ সকল উপকরণের মধ্যে শক্তিশালী আয়ন হিসেবে থাকে
সিলিকা (SiO4)4−। ম্যাগমার উচ্চতর তাপদশাতে এই আয়নটি সুস্থির দশায় থাকে। আয়োনিত সিলিকার সাথে নিকটবর্তী সিলিকেটগুলো- অক্সিজেনের সাথে অংশভাগীয় তৈরি  হয়ে থাকে Si-O-Si  সেতুবন্ধ। এরূপ সরল সিলিকেট যৌগ হতে পারে (Si2O7)6−  আয়ন। একইভাবে অন্যান্য পদার্থ যুক্ত হয় বৃহত্তর জটিল আয়োনিক সিলিকাদলের সৃষ্টি হয়। এ্যালুমিনিয়ামযুক্ত সিলেকেটের (AlO4)5−  আসক্তি তীব্রতর থাকায় সিলিকেট আয়নের সাথে যুক্ত হয় এ্যালুমিনিয়ামসমৃদ্ধ সিলিকেট আয়নের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ বড় ধরণের আয়নদলে সিলিকন এবং এ্যালমুনিয়াম একই সাথে যুক্ত থাকতে পারে।


ম্যাগমার ধরন:  গাঠনিক উপকরণের বিচারে ম্যাগমাকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগে প্রাধান্য পায় সিলিকন ডাই অক্সাইড। এর সাধারণ নাম সিলিকা। এর পাশাপাশি প্রাধান্য পায় ম্যাগনেশিয়াম ও লৌহের অক্সাইডসমূহ। এসকল উপাদনের ভিত্তিতে ম্যাগমাকে যে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, তা হলো-


সূত্র