অণুবীক্ষণযন্ত্র
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
বিবর্ধক |
বৈজ্ঞানিক যন্ত্র |
যন্ত্র
|
ডিভাইস |
যন্ত্রকরণতা |
মানবসৃষ্টি |
সমগ্র |
দৈহিক
লক্ষ্যবস্তু
|
দৈহিক সত্তা
|
সত্তা
|}
সমার্থক শব্দাবলি : অণুবীক্ষণযন্ত্র,
সূক্ষ্মদর্শনযন্ত্র।
ইংরেজি : Microscope।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে
যেসকল বস্তু
দেখা
যায় না,
এই যন্ত্রের সাহায্যে
সে সকল বস্তু বড় করে
দেখা যায়। গোড়ার দিকে দূরের
বস্তু দেখার জন্য বা ছোট বস্তু বড় করে দেখার জন্য লেন্স ব্যবহারের রীতি প্রচলিত
ছিল। পরবর্তী সময়ে- লেন্সের সাহায্যে দেখার উপযোগী
যন্ত্রের বিকাশ ঘটে দুটি বিপরীত ধারায়। এর একটি- দূরের লক্ষ্য বস্তু দেখার জন্য,
অপরটি হলো– নিকটবর্তী ক্ষুদ্রবস্তুকে বড় করে দেখার জন্য। দূরের লক্ষ্য বস্তু
দেখার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র হলো- দূরবীক্ষণ এবং নিকটবর্তী ক্ষুদ্র বস্তু দেখার
যন্ত্রের নাম অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
আধুনিক কালে
অনুবীক্ষণযন্ত্রের গঠন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি
হলো– আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্র এবং বৈদ্যুতিন অণুবীক্ষণযন্ত্র।
স্বাভাবিক
দৃষ্টিতে যে
সকল বস্তু দেখা
যায় না,
এমন বস্তুকে বর্ধিত আকারে
দেখার জন্য–
অনেক আগে থেকে
লেন্সের ব্যবহার হতো। সবচেয়ে
প্রাচীন যে লেন্সের কথা জানা যায়,
তার নাম ল্যানিয়ার্ড লেন্স (Lanyard Lens)।
এই লেন্সটি খ্রিষ্ট-পূর্ব ৭২১-৭০৫ অব্দে
আবিষ্কার
করেছিলেন
Lanyard
নামক একজন গবেষক। উল্লেখ্য ল্যানিয়ার্ডের লেন্সটি
ছিল উত্তল লেন্স। কিন্তু এই লেন্সের উপরিভাগ অনেকটাই সরল ছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম
শতাব্দীর দিকে এই লেন্সের উপরিভাগকে গোলাকার করা
শুরু হয়।
এই লেন্সগুলো ছিল
বেশ ঘোলাটে। ফলে
বস্তুকে বর্ধিত আকারে
দেখালেও তার মান খুব ভালো ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্র গহনার সাথে এই লেন্সগুলো
ব্যবহার করা হতো। তাই তখন পর্যন্ত ঠিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে
লেন্সকে বিচার করা হয়
নি। লেন্সের ভিতর দিয়ে
দৃশ্যমান
কেন
পরিবর্তিত
হয়,
এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য
গবেষণা
শুরু হয়
অনেক
পরে।
প্রথম দিকে
আরবের
বিজ্ঞানী আলহাজেন
মানুষের চোখ ও আলোর
আচরণ
নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা
করেছিলেন।
তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল– চোখের লেন্স,
এর ফোকাস ও চোখের রেটিনা।
কাছের জিনিস বড় করে দেখার জন্য লেন্সের ব্যবহার করে চশমা তৈরির পদ্ধতি শুরু হয়েছিল চীনে। কিন্তু ভালো লেন্স তৈরির পদ্ধতি না জানার কারণে, এই চশমার ব্যবহার ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি। আধুনিককালের চশমা এবং এর লেন্সের বিকাশ ঘটে ১২৮০-১২৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে। তবে কে এই চশমার উন্নয়ন করেছিল তা জানা যায় না। অনেকে মনে করেন আমাটি (Amati) নামক জনৈক গবেষক এই চশমা তৈরি করেছিলেন। উল্লেখ্য আমাটি ১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম দিকে ধীরে ধীরে ফ্লোরেন্স শহরে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
হ্যানস এবং তাঁর পুত্র জ্যাকারিয়াস জ্যানেসন অনুবীক্ষণযন্ত্র |
এই সময়ে চশমা তৈরির পাশাপাশি কেউ কেউ এমন বিবর্ধক কাঁচ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন–
যেগুলো চোখে না লাগিয়েই বস্তুকে বড় করে দেখা যেতে পারে। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল সরল
অনুবীক্ষণ যন্ত্র।
১৫৯০ -১৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ডাচ্ লেন্স প্রস্তুতকারক হ্যানস এবং তাঁর পুত্র জ্যাকারিয়াস জ্যানেসন (Zacharias Jansen) এক জোড়া উত্তল লন্স ব্যবহার করে একটি যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। মূলত এই সময়ে জ্যাকারিয়াস ছোট ছিলেন। তিনি পরে বড় হয়ে এই যন্ত্রটির ব্যাপক উন্নয়ন করেন।
১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে কপলার লেন্স বিন্যাসরূপ |
এই অনুবীক্ষণ
যন্ত্রটি কেমন ছিল তার কোন নমুনা কোথাও পাওয়া যায় না। তবে হল্যান্ডর জাদু ঘরে
এর একটি নমুনা রক্ষিত
আছে
বলে অনেকে
দাবি করে থাকেন। ১৬০০-১০
খ্রিষ্টাব্দের দিকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে তিনটি লেন্স ব্যবহারের প্রক্রিয়া
শুরু হয়। সম্ভবত
১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে কপলার নামক অপর একজন বিজ্ঞানী আইপিসের সংযোজন করেন।
|
|
এটি তৈরি করেছিলেন Giuseppe Campani |
এটি তৈরি করেছিলেন Eustachio Divini |
অনুবীক্ষণ যন্ত্রের
সাহায্যে জীববিজ্ঞানের নূতন নূতন বিষয়
আবিষ্কৃত
হতে থাকলে, গবেষণার জন্য এই যন্ত্রের জনপ্রিয়তা
ও
চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে এই
যন্ত্রের উন্নয়নে
অনেকেই এগিয়ে আসেন।
১৬১০-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বেশ কিছু উন্নত সংস্করণ বাজারজাত হয়।
ভ্রূণবিদ্যা (embryology)
এবং কলাস্থানবিদ্যার (histology)
জনক হিসাবে পরিচিত
মার্সেল্লো মালপিঘি (Marcello
Malpighi)
ইটালীতে নির্মিত
বিশেষ ধরনের কিছু
অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর ব্যবহৃত এমনি দুটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র
নিচে দেখানো হলো।
এই সময় অনুবীক্ষণ যন্ত্রের
গবেষণায় ইতালি ও ইংল্যাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে ছিল। অবশ্য
আকৃতির
বিচারে ইংল্যাণ্ডের অনুবীক্ষণ যন্ত্রগুলো বেশ বড় ছিল।
রবার্ট হুকের ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র |
১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রবার্ট হুকের (Robert Hooke) নকশা অনুসারে তৈরি হয়েছিল একটি উন্নতমানের অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এই যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিস্টোফার কক (Christopher Cock)।
|
John Yarwell -এর নতুন মডেলের অনুবীক্ষণ যন্ত্র |
রবার্ট হুক এই যন্ত্রের সাহায্যে একটি কর্কের ভিতরের অংশ পরীক্ষা করে প্রথম
জীবকোষ সম্পর্কে
ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ককের
তৈরি এই অনুবীক্ষণ যন্ত্রটি ছিল প্রায় দুই ফুট উঁচু। সেই সাথে ছিল এর বেশ
মোটসোটা দেহনল।
১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের পর ক্রিস্টোফার কক এই যন্ত্রটি আরও উন্নত করেন এবং এর কয়েকটি সংস্করণ বাজারজাত করেন।
|
Antoni van Leeuwenhoek -এর অণুবীক্ষণযন্ত্র |
১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে John Yarwell একট নতুন মডেলের অনুবীক্ষণ যন্ত্র উপস্থাপন করেন। ব্যবহারিক সুবিধার বিচারে এই যন্ত্রটিকে আধুনিক প্রজন্মের প্রথম অনুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়। এটি আকৃতিতে ছোট হলেও ব্যবহারিক সুবিধা ছিল ককের যন্ত্রের চেয়ে ভালো।
এই সময় ইংল্যাণ্ডে আরও বেশ কিছু ত্রিপদী অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারে এসেছিল। কিন্তু খুব একটা সাড়া জাগাতে পারে নি।
এরপরের সাড়া
জাগানো অনুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করলেন–
Antoni van Leeuwenhoek।
১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে উন্নয়নকৃত এই অনুবীক্ষণ যন্ত্রটি ছিল তখনকার দিনের শ্রেষ্ঠ সরল
অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে এবং পরবর্তী
বছরগুলোতে জন মার্শাল বিভিন্ন মডেলের অনুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাত করেন। প্রতিটি
ক্ষেত্রেই তিনি আকৃতিগত
ও গুণগত উৎকর্ষতা
আনতে
সক্ষম হয়েছিলেন।
|
এডমুন্ড কালপেপের অণুবীক্ষণযন্ত্র |
১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দে এডমুন্ড কালপেপের (Edmund Culpeper) একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারে ছাড়েন। এই যন্ত্রটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। ব্যবহারিক সুবিধার বিচারে এটি সেই সময়ের আধুনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। পর্যাপ্ত আলো পাওয়ার জন্য এতে আয়নার ব্যবহার করা হয়েছিল।
|
Pocket Reflecting Microscope |
১৯ শতক পর্যন্ত কালপেপের প্রণীত নকশা অনুসারে অনেকেই অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেছিল।
১৭৩৮
খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের বেনজামিন মার্টিন (Benjamin Martin)
নামক একজন গবেষক,
সরল অনুবীক্ষণ যন্ত্রকে একটি নলের ভিতর ঢেকে উপস্থাপন করেন। এই
নকশাটিই ড্রাম-শৈলী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এটি ছিল মূলত বোতল
আকৃতির। মার্টিন অবশ্য এর নামকরণ
করেছিলেন-
Pocket Reflecting Microscope।
মার্টিনের এই যন্ত্রের বাইরের স্তর বা নলটি নির্দিষ্ট থাকলেও ভিতরের মূল
পর্যবেক্ষণ নল
স্ক্রুর সাহায্যে
উঠানামা করা যেতো। এর
আকৃতিও
ছিল বেশ ছোট। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে তিনি এই যন্ত্রের সাথে প্রতিফলক
আয়না
যুক্ত করেছিলেন।
এ্যাডামসের অণুবীক্ষণ যন্ত্র |
১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে জর্জ এ্যাডামস (George Adams) একটি নূতন মডেলের অণুবীক্ষণযন্ত্র বাজারে ছাড়েন। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে বার্কারের প্রবন্ধ অনুসরণে এ্যাডামস এই যন্ত্রটি তৈরি করেন বলে- বার্কার অভিযোগ করলেও, এটি এ্যাডামসের মডেল নামেই স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দের পর এ্যাডামস আরও কিছু মডেলের অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারে ছাড়েন।
এই সময়ের অণুবীক্ষণ যন্ত্রে
লক্ষ্যবস্তুর
রঙ দেখা নিয়ে সমস্যা হতো। উৎকৃষ্ট লেন্সের অভাবে এক্ষেত্রে
লক্ষ্যবস্তুর
রঙ বিকৃত হতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকেই গবেষণা শুরু করেন। কিন্ত ১৭৫৯
খ্রিষ্টাব্দে ডোনাল্ড এ্যাক্রোমেটিক লেন্সের উন্নয়ন করে এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম
হন। প্রায়ই একই সময় এই জাতীয় লেন্স তৈরিতে
এ্যাডামস্
সক্ষম হলেও পেটেন্ট
পান ডোনাল্ড। এই কারণে এই লেন্সের প্রথম
আবিষ্কার
কে– এ নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব
আছে।
উল্লেখ্য এই লেন্স বাজারজাত করে ডোনাল্ড একজন ধনী ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
১৮ শতকের শেষার্ধে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয় নি। এই সময়টি ছিল মূলত অণুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে মার্টিন ও এ্যাডামসের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে এ্যাডামস মারা গেলে এই প্রতিযোগিতায় চলে আসে তাঁর ছেলে জর্জ এ্যাডামস (জুনিয়ার)-এর কাছে। ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এডওয়ার্ড নাইর্ন (Edward Nairne) কাফ স্টাইলের অনুসরণে অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির একজন গবেষক এবং অধ্যাপক গিভান বাত্তিস্তা এ্যামিসি (Giovan Battista Amici) রিফ্লেক্টর অনুবীক্ষণ তৈরি করেন।
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য লেন্সের সমন্বয় নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়ন চলছিল। ১৮২০-৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জোসেফ জ্যাকশন লিস্টার ( Joseph Jackson Lister) নামক একজন গবেষক- অনুবীক্ষণ যন্ত্র উন্নয়নের চেষ্টা করেন।
১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে লিষ্টারের ভাতিজা Richard Beck-এর ব্যবসায়ের অংশভাগী হন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে এই সময় জোসেফ বেক (Richard Beck) তার ভাইয়ের ফার্মে যোগদান করেন। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে স্মিথ এই ফার্ম থেকে অবসর নেন। এই কোম্পানির এত অংশভাগী পরিবর্তনের সাথে সাথে নামেরও পরিবর্তন হয়েছে। এই নামগুলি হলো-Smith & Beck”, “Smith, Beck & Beck”,এবং সবশেষে “R&J Beck ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০টি কোম্পানি এই যন্ত্র তৈরি করা শুরু করে। |
এই সূত্রে ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে
জেজে লিস্টারের জন্য জেমস স্মিথ কিছু যন্ত্র তৈরি করেছিল। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের অল্প
ক্ষমতার লেন্সসমূহ বিভিন্ন দূরত্বের কারণে বিবর্ধনের যে তারতম্য সৃষ্টি করে তার
উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন জ্যাকশন লিস্টার। এই সময়ে তাঁর
সূত্র ধরে কেউ নূতন অণুবীক্ষণ বাজারজাত করার ক্ষেত্রে এগিয়ে
আসেন
নি।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের
পরে লিস্টার,
টুলি ও তাঁর ছেলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র
তৈরিতে হাত দেন।
১৮৩৭
খ্রিষ্টাব্দে এন্ড্রু রস নামক একজন অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান লিস্টারের
ডিজাইনে অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করা শুরু করেন। এই যন্ত্রে তিনি বাঁকানো হাতল
ব্যবহার যুক্ত করেন। এই সময় এই হাতলের নামকরণ করা হয়
The Lister Limb
হিসাবে। এরপর লিস্টার তাঁর নকশায়
আরও
কিছু সংশোধন
আনেন।
১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এঁরা দাপটের সাথে তাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাতকরণে সক্ষম
হন।
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত এই জাতীয় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Charles Spencer স্বল্পমূল্যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে বাজারজাত করা শুরু করেন। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের হিউ পাওয়েল (Hugh Powell)একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে বাজারজাত করেন। পরে ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিটার লীল্যান্ডের (Peter Lealand) সাথে ব্যবসা শুরু করেন। এঁদের কোম্পানি উন্নতমানের বিভিন্ন আকৃতির Peter Lealand অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে বাজারজাত করেছিল। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এঁরা একটি চমৎকার একটি মডেলের অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাত করেছিলেন। পাশের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিভুজাকৃতির স্ট্যান্ড ভিত্তিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাত হয়। এই স্টাইলটি পরে Ross style হিসাবে প্রতিষ্ঠত হয়।
১৮৫০-৬০
খ্রিষ্টাব্দের ভিতর ইংল্যাণ্ডের তিনটি প্রতিষ্ঠান অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাতকরণে অগ্রণী
ভূমিকা পালন করে। এই প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো-
Andrew Ross, Powell & Lealand
এবং
R. & J. Beck.।
যুক্তরাষ্ট্রের
Charles Spencer
কোম্পানি
তাদের
Trunnion
অণুবীক্ষণ যন্ত্র বাজারজাত করে।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে
আর্নেষ্ট
এ্যাবে আলোর
তরঙ্গ্
সম্পর্কিত
বিষয়াবলি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই সময়ে ইংল্যান্ডের
আরও
যে সকল প্রতিষ্ঠান অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে অল্পপবিস্তর
বাজার দখল করতে সক্ষম হয়েছিল,
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল
Swift & Son
এবং
Watson & Sons।
পরবর্তী কালে এই দুটি কেম্পানি
এই যন্ত্রের বাজারজাতকরণে উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। ফ্রান্সের
কোম্পানিগুলোর
ভিতর উল্লেখযোগ্য ছিল-
Chevalier, Oberhauser
এবং
Nachet।
জার্মানীর
Carl Zeiss
এবং
Leitz
বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে
নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ছোট, সস্তা ও সহজ বহনযোগ্যতার কারণে ১৮২০-১৮৬০ পর্যন্ত এই যন্ত্র নির্মাণে ইংল্যান্ড বেশ এগিয়ে ছিল। পরের দিকের কিছু যন্ত্রে নিরেট তামা ব্যবহার করার ফলে যন্ত্রগুলো বেশ ভারি হয়ে পড়েছিল। তবে কাজের দিক থেকে এই যন্ত্রগুলো আরো বেশি উপযুক্ত হয়ে উঠেছিল। মার্টিনের ড্রাম স্টাইলের অনুকরণে ফ্রান্সে কিছু অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি হয়েছিল ১৮৪০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর। এগুলিও বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করেছিল। ২০ শতক পর্যন্ত এই জাতীয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র ফ্রান্সে প্রচুর তৈরি হয়েছে।
এই
জাতীয়
অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি বাজারজাত হওয়ার কিছু পরে- তৈরি হয়েছিল
সৌর-প্রজেক্ট অণুবীক্ষণ যন্ত্র। জন বাকরে তাঁর
The Microscope Made Easy
রচনায় এই অণুবীক্ষণ
যন্ত্রের কৌশলের কথা উল্লেখ করেন। এই যন্ত্রটি জানালার পাশে বসিয়ে- সূর্যের
আলো
ব্যবহার করে অবজেক্টকে
আলোকিত
করা হতো। পরে এই অবজেক্ট অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা বিবর্ধিত হয়ে বিপরীত দিকের
দেওয়ালে বড় করে দেখানো হতো।
অণুবীক্ষণ
যন্ত্রের শ্রেণীবিভাজন
সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র
Simple Microscope)
অণুবীক্ষণ
যন্ত্র,
যৌগিক
Compound Microscope) |
অণুবীক্ষণ
যন্ত্র,
বৈদ্যুতিন
(Electronic
Microscope)
দৃশ্যমান আলোকে
ব্যবহার করে
লক্ষ্যবস্তুকে বড়
করে দেখানোর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়
আলোক-অনুবীক্ষণ
যন্ত্রে। পক্ষান্তরে
বৈদ্যুতিন
অনুবীক্ষণ যন্ত্রে
লক্ষ্যবস্তুকে
বড় করে দেখার জন্য ব্যবহার করা হয় ইলেক্ট্রন কণা। যেহেতু ইলেক্ট্রনের
তরঙ্গদৈর্ঘ্য
আলোর তরঙ্গ
দৈর্ঘ্য অপেক্ষা অনেক ছোট। তাই ইলেক্ট্রন অনেক বেশি ক্ষুদ্র কাঠামোর
পরিমণ্ডলকে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে। দৃশ্যামান
আলোর
সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম তরঙ্গ
দৈর্ঘ্য হলো ৪০০০
এ্যাংস্ট্রোম।
সেখানে বৈদ্যুতিন
অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় .৫ এ্যাংস্ট্রোম।
এই অনুবীক্ষণ যন্ত্রে এক ধরনের ইলেক্ট্রন নিক্ষেপক উপকরণ
ব্যবহার করা হয়। এই উপকরণ দ্বারা
লক্ষ্যবস্তুর
উপর ইলেক্ট্রন নিক্ষেপ করা হয়। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রন নিক্ষেপের উৎস হিসাবে
টাংস্টেনের তৈরি সূক্ষ্ম
তার ব্যবহার করা হয়। এই তারের অগ্রভাগ থেকে নিক্ষিপ্ত ইলেক্ট্রন বস্তুর অতি
সুক্ষ্ম
অংশে গিয়ে পৌঁছায়। ফলে উক্ত ইলেক্ট্রনগুলো একটি বিবর্ধিত ছবির সৃষ্টি করে।
যেহেতু বাতাসের মতো উপকরণ দ্বারা ইলেক্ট্রন বিক্ষিপ্ত হতে পারে। তাই এই
অনুবীক্ষণ যন্ত্রের এই অংশকে বায়ু শূন্য করা হয়। এই অংশে চৌম্বকক্ষেত্র
তৈরি করে ইলেক্ট্রন কণার গতিপথের দিক সুনির্দিষ্ট করা হয়। এই চৌম্বকক্ষেত্রকে
বলা হয় ইলেক্ট্রন লেন্স
(electron lens)।
এই লেন্সের
দ্বারাই ইলেক্ট্রনের ফোকাসও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বিদ্যুৎ
প্রবাহকে কম বেশি করে এই লেন্সের ক্ষমতা হ্রাসবৃদ্ধি করা হয়। এই ব্যবস্থায়
প্রাপ্ত ছবিকে একটি ধারক অংশে গৃহীত হওয়ার পর,
তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
গঠন বৈশিষ্ট্যের
বিচারে ইলেক্ট্রনিক অনুবীক্ষণ যন্ত্রকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই শ্রেণি
দুটির সমন্বয়ে আবার
তৃতীয় আর
একটি শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান দুটি
শ্রেণি
১।
Transmission Electron Microscope (TEM):
এই যন্ত্রে ইলেক্ট্রন রশ্মি আকারে সরাসরি
লক্ষ্যবস্তুর
উপর নিক্ষেপ করা হয়
এবং লক্ষ্যবস্তুর বর্ধিত ছবি গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে কিছু কিছু
ইলেক্ট্রন লক্ষ্যবস্তু দ্বারা শোষিত হয় বা বাধা প্রাপ্ত হয়ে অন্য দিকে চলে যায়। কিন্তু
বাকি আর সকল ইলেক্ট্রনের
সঠিকভাবে যে ছবির সৃষ্টি করে, এক্ষেত্রে তাকেই গ্রহণ
করা। প্রয়োজনীয় অংশকে প্রদর্শনের পূর্বে এই ছবির অনেকাংশ
আপনাআপনি
কর্তিত হয়ে যায়। ফলে এই যন্ত্রটি বর্ধিত অংশের সামান্য অংশই প্রদর্শন করে থাকে।
কিন্তু অনেক বেশি বিস্তারিতভাবে ছবিকে উপস্থান করে। মূলত ইলেক্ট্রনিক অণুবীক্ষণ
যন্ত্রের জগতে এই জাতীয় যন্ত্রকে উচ্চস্তরের বিবেচনা করা হয়।
২।
Scanning Electron Microscope (SEM):
এই যন্ত্রে
লক্ষ্যবস্তুর
পিছনে একটি ফটোগ্রাফিক প্লেট বা ফ্লুরেসেন্ট
পর্দা
ব্যবহার করা হয়।
লক্ষ্যবস্তুর উপর
ইলেক্ট্রন কণা আঘাতজনিত
কারণে যে চৌম্বকনকশার
তৈরি হয়,
এই পর্দা
সেই নকশাকে ধারণ করে। ফলে পুরো
লক্ষ্যবস্তুর
একটি বড় ছবি গ্রহণ করা সম্ভব
হয়। এক্ষেত্রে ছবিটি তৈরি হয় বিট বাই বিট পদ্ধতিতে। এই যন্ত্র দ্বারা ১০,০০০,০০০গুণ
বর্ধিত ছবি পাওয়া যায়। অতি উচ্চস্তরের গবেষণায় এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এই
অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বস্তুর উপরিতলের ছবিকে চমৎকারভাবে গ্রহণ করা যায়।
প্রয়োজনে সত্যিকারের ত্রিমাত্রিক ছবি এই যন্ত্র দ্বারা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
অন্যন্য শ্রেণী
ক।
Scanning Transmission Electron Microscope (STEM):
এই যন্ত্রটি
SEM
এবং
TEM
সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে।
খ।
electron probe microanalyser:
এই যন্ত্রটিতে এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটি সাহায্যে বিভিন্ন পদার্থের
অণু-পরমাণুর অবস্থা জানার জন্য ব্যবহার করা হয়।