জীবন (life) |
Pyrococcus Abyssi -নামক আর্কিব্যাকটেরিয়া |
আর্কিব্যাক্টেরিয়া
ইংরেজি
:
archaebacteria।
একক প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotes)- বিশিষ্ট জীবকণিকা। এই প্রজাতির সূত্রে জীববিজ্ঞানে আর্কিয়া নামক জীবজগতের একটি শাখার পত্তন হয়েছে। প্রকৃতিতে এদের আবির্ভাব ঘটেছিল ব্যাক্টেরিয়া আবির্ভাবের আগে। এদের ক্ষুদ্রতম প্রজাতির আকার এক মাইক্রোমিটারের ১০ ভাগের একভাগ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় প্রজাতির আর্কিব্যাক্টেরিয়ার আকার হয় ১৫ মাইক্রোমিটার।
আর্কিব্যাক্টেরিয়ার প্রকৃতি অনুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হলো—
মিথেনোজেনাস (methanogens)
: এই জাতীয়
আর্কিব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায় জলাভূমিতে ও আর্দ্র স্থানে। এরা
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে কিন্তু
মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
হ্যালো-ব্যাক্টেরিয়া (halobacteria)
: এরা উচ্চ লবণাক্ত পরিবেশে বসবাস করে। এরা আলো থেকে শক্তিগ্রহণ করতে পারে। সাধারণ
সবুজ উদ্ভিদ যেভাবে
সালোকসংশ্লেষণ করে, এদের আলো থেকে শক্তিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি তেমন
নয়।
চরম থার্মোফিলিস (extreme thermophiles): এরা অত্যন্ত উত্তপ্ত পরিবেশে বসবাস করে। এছাড়া এরা অতি অম্লীয় পরিবেশেও স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে। এদের কোষ প্রাচীরে peptidoglycan থাকে না। অনেক আর্কিব্যাক্টেরিয়া গন্ধক সমৃদ্ধ এলাকায় থাকে। এই কারণে আগ্নেয়গিরির জ্বালমুখে এদের পাওয়া যায়। অনেক ব্যাক্টেরিয়া গন্ধককে শারীরিক বিপাকে ব্যবহার করে এবং সালফিউরিক এ্যাসিড উৎপন্ন করে।
এক সময় প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotes)-যুক্ত জৈবসত্তা এবং ব্যাক্টেরিয়াকে আর্কিব্যাক্টেরিয়া রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আর্কিয়া, ব্যাক্টেরিয়া এবং সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic cell) -যুক্ত জৈবসত্তাকে আলাদা আলাদা দলে ভাগ করা হয়েছে।
আর্কিব্যাক্টেরিয়ার
প্রাচীনতম নমুনা পাওয়া
গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের |
আর্কেব্যাক্টেরিয়ার প্রকৃতি ও বিকাশ
এই ব্যাক্টেরিয়াগুলোতে ছিল
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotes)।
অর্থাৎ এই সকল কোষে কোন নিউক্লিয়াস, ক্লোরোপ্লাস্ট,
মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষ গহ্বর ইত্যাদি ছিল না। ৩৫০-৩০০
কোটি বছরের এই জীবকণিকাগুলো বিকশিত হয়েছিল। ৩০০ কোটি বৎসরের ভিতরে এই
জীবকণিকাগুলোর কোনো কোনো প্রজাতি বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল
আর্কিয়া
এবং
ব্যাক্টেরিয়া জাতীয় প্রজাতিগুলো।
এরা ভিন্ন
প্রক্রিয়ায়
সালোকসংশ্লেষণের কাজ করতো। আদি পৃথিবীর কর্দমাক্ত পরিবেশে এরা সবুজ
এবং
লোহিতনীল
বর্ণের
গন্ধকসমৃদ্ধ
অঞ্চলে বসবাস করতো। এরা মূলত
সালোকসংশ্লেষণ
প্রক্রিয়া
হাইড্রোজেন সালফাইড
ব্যবহার করতো। ফলে
অক্সিজেনের
পরিবর্তে এরা বাতাসে
গন্ধক
পরিত্যাগ করতো।
এই কারণে এদের শরীরের
চিনি
তৈরি হতো না।
১৯৯৯ সালে ভূতত্ত্ববিদরা উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে কিছু পাথরের সন্ধান পান। এই পাথরগুলো ২৭০ কোটি বৎসর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। এই পাথরের গায়ে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এই তেলের ভিতর পাওয়া গেছে স্টেরয়েড এ্যালকোহল। যেহেতু এই এ্যালেকোহল-যুক্ত ফ্যাটি এ্যাসিড একমাত্র নিউক্লিয়াস কোষযুক্ত জীবকোষে পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা যায়— নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবকোষের [সু-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic cell)] উদ্ভব এই যুগেই হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষের আবির্ভাব ঘটেছিল দুটি পৃথক ধরনের একক জীব কণিকার সমন্বয়ে। এই ধরনের জীব-কণিকাগুলো পারস্পরিক স্বার্থে একটি অপরটি ভিতরে জায়গা করে নিতো। এদের একটি অক্সিজেন থেকে চিনি জাতীয় জৈবিক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারতো এবং এই চিনি অপর জীবকণিকাকে প্রদান করতো। অপর জীবকণিকা এই চিনি গ্রহণ করে, তা থেকে শক্তি উৎপাদন করতো এবং তা উভয় জীবকণিকা ভাগাভাগি করে নিত। চিনি উৎপাদনকারী এই জীবকণিকা বা ব্যাক্টেরিয়াগুলো অর্গানেলস (organelles) বলা হয়ে থাকে। এরা নিজেদের বংশ বিস্তার করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল।