ব্যাক্টেরিয়া
ইংরেজি : Bacteria

এককোষী আনুবীক্ষণিক জীবের একটি স্বক্ষেত্র (Domain)। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের এর নামকরণ করেন- Woese, Kandler এবং Wheelis ৫০ -১৬০ কোটি বৎসর আগে (আর্কিয়ান কাল), প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-ভিত্তিক আদি জীবকণিকা বিভাজিত হয়ে দুটি ধারার জীবজগতের সূচনা করে। এই ভাগ দুটি হলো ব্যাক্টেরিয়া এবং আর্কিয়া  (archaea)। জীববিজ্ঞানের শ্রেণিকরণে এই দুই জাতীয় জীবকে জীব-স্বক্ষেত্র (Domain) বলা হয়।

জীবন (life)
   জীব-স্বক্ষেত্র
(Domain) : Bacteria

এদের কোষে নিউক্লিয়াস নেই। এদের কোষে বৃ্ত্তাকারে  ডিএনএ থাকে। দৈহিক গঠনের বিচারে ব্যাক্টেরিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো- গ্রাম পজেটিভ ব্যাক্টেরিয়া গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া। এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়াকে শনাক্ত করার জন্য- ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ডেনিশ বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান গ্রাম এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই পদ্ধতিতে প্রথমে ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত সমাগ্রীকে ক্রিস্টাল ভায়োলেট রঞ্জক দ্বারা রঞ্জিত করা হয়। এরপর একে আয়োডিন দ্রবণ যুক্ত এই রঞ্জকটি স্থায়ী করা হয়। এরপর এর সাথে ইথাইল অ্যালকোহল অথবা অ্যাসিটোন দ্রবণ যোগ করা হয়। এক্ষত্রে ইথাইল অ্যালকোহল বা অ্যাসিটোন নিরঞ্জক হিসাবে কাজ করে। এরপর ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত উপকরণটিতে স্যাফ্রানিন যা কাউন্টার স্টেইনইং এজেন্ট হিসাবে যোগ করা হয়। সর্বশেষে উপকরণটিকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পরীক্ষা করা হয়। যদি উপকরণটিতে বেগুনী বর্ণ পাওয়া যায়, তাহলে গ্রাম পজিটিভ ব্যাক্টেরিয়া আছে এমনটা ধরে নেওয়া হয়। আর যদি উপকরণটি স্যাফ্রানিনের লাল বর্ণ ধারণ করে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় এতে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে।
গঠনের বিচারে ব্যাক্টেরিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো

ব্যাক্টেরিয়া ছোটো-বড় নানা ধরণের হয়ে থাকে। সাধারণতঃ আকারে যেকোনো সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ-এর এক-দশমাংশ হয়ে থাকে। এদের দৈর্ঘ্য ০.৫-৫.০ মাইক্রোমিটারের মধ্যেই দেখা যায়। তবে কিছু ব্যাক্টেরিয়া এর চেয়ে একটু বেশি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। যেমন Thiomargarita namibiensis এবং Epulopiscium fishelsoni - এর দৈর্ঘ্য প্রায় .৫০ মিলিমিটার। এর ভিতরে কোনো কোনো Epulopiscium fishelsoni দৈর্ঘ্যে ০.৭০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের ব্যাক্টেরিয়াগুলো প্রায় ০.৩ মাইক্রোমিটার হয়।

দৈহিক আকারের বিচারে ব্যাক্টরিয়া: ব্যাক্টেরিয়া প্রজাতি ভেদে নানা আকারের হতে পারে। এই বিচারে ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন

সালোকসংশ্লেষণের বিচারে ব্যাক্টেরিয়ার বিভাজন: কিছু কিছু ব্যাক্টেরিয়ার শরীরের আলো শোষণ উপযোগী উপকরণ থাকে। এ সকল উপকরণ দ্বারা শোষিত আলো ব্যাক্টেরিয়ার দেহগত উপকরণ দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়ে শক্তিতে পরিণত হয়। এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়াকে বলা হয় সালোকসংশ্লেষণী ব্যাক্টেরিয়া (photosynthetic bacteria)। সালোকসংশ্লেষণের পর এ সকল ব্যাক্টেরিয়া বিভিন্ন ধরনের পদার্থ তৈরি করে। এই উৎপন্নকৃত পদার্থের বিচারে- সালোকসংশ্লেষণী ব্যাক্টেরিয়াকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

১. অক্সিজেন-উৎপাদক সালোকসংশ্লেষণী ব্যাক্টেরিয়া (Oxygenic photosynthetic bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া সবুজ উদ্ভিদের মতই, শোষিত আলো এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহের পর সালোকসংশ্লেষণের দ্বারা শক্তি উৎপাদন করে এবং পরে অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই জাতীয় সালোকসংশ্লেষণী ব্যাক্টেরিয়ার ভিতরে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে  সায়ানোব্যাক্টেরিয়াপ্রোটেরোজোই কালের পালেপ্রোটারোজোয়িক যুগে ২৫০ থেকে ১৬০ কোটি বৎসরের ভিতরে সাগরের জলে এই শৈবালের উদ্ভব হয়েছিল। এদের দ্বারা তৎকালীন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। ২৪০ কোটি বৎসর আগে বাতাসের CO2 এতটাই কমে গিয়েছিল যে, সারা পৃথিবী অত্যন্ত একটি শীতল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে এই শীতল পরিবেশে সারা পৃথিবী জুড়ে শৈতপ্রবাহের সৃষ্টি করে। এর ফলে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জলভূমি জমে বরফ হতে থাকে এবং  ব্যাপক তুষারপাতে পৃথিবীর স্থলভূমি বরফে ঢেকে যায়। ফলে পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো বরফযুগের আবির্ভাব ঘটে।  এই বরফযুগকে বলা হয় হুরোনিয়ান বরফ যুগ

২. অক্সিজেন-অনুৎপাদক সালোকসংশ্লেষণী ব্যাক্টেরিয়া (Anoxygenic photosynthetic bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া সালোকসংশ্লেষণের পর অক্সিজেন ত্যাগ করে না। বিষয়টি নির্ভর করে ব্যাক্টেরিয়ার শোষিত উপাদানের উপর। এখন পর্যন্ত অক্সিজেন-অনুৎপাদক সালোকসংশ্লেনী ব্যাক্টেরিয়াকে ৭টি ভাগ ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো-

২.১. পার্পেল ব্যাক্টেরিয়া (Purple bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া হাইড্রোজেন সালফাইড গ্রহণ করে এবং গন্ধক ত্যাগ করে। এই কারণে এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায় গন্ধকসমৃদ্ধ জলাশয় বা ঝর্নায়।

গন্ধক উৎপাদনের প্রক্রিয়ার বিচারে এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়াকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

২.১.১. ক্রোমাটিয়াসি (Chromatiaceae): এই জাতীয় ভাইরাসের গন্ধক উৎপন্ন হয়, কোষের অভ্যন্তরে।
২.২.১. এক্টোথিয়োরোডোস্পিয়ারাসি (Ectothiorhodospiraceae): এই জাতীয় ভাইরাসের গন্ধক উৎপন্ন হয় কোষের বাইরে।

২.২. পার্পেল গন্ধকহীন ব্যাক্টেরিয়া (Purple non-sulphur bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া অল্প পরিমাণ সালফাইড শোষণ করে। হাইড্রোজেন গ্রহণ করে। ফলে এরা  গন্ধক ত্যাগ করার পরিবর্তে পানি ত্যাগ করে।

৩. সবুজ ব্যাক্টেরিয়া (Green bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া গন্ধক বা হাইড্রোজেন ত্যাগ করে। এই বিচারে এদেরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-

৩.১. সবুজ গন্ধক ব্যাক্টেরিয়া  (Green sulphur bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্রহণ করে এবং পানি ও সালফার ত্যাগ করে।
 
৩.২. সবুজ গন্ধকহীন ব্যাক্টেরিয়া  (Green non-sulphur bacteria): এই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানি গ্রহণ করে এবং হাইড্রোজেন ত্যাগ করে।